পুনরায় উল্লেখ করি, অনেকের বিবেচনায় লালন একজন খুবই উচু মর্যদার সুফী সাধক। আমরাও বলি, তিনি একজন অত্যুচ্চ মাকামের সুফীই বটে। কিন্তু সেই উচ্চ মার্গীয় মাকামটা যে কি জিনিষ, আল্লাহপাক ভালো জানেন। তবে আমরা যেটুকু দেখি তাতে বুঝতে পারি, এই গোসাঁইগুরু কামালিয়াত এতটাই হাসিল করে ফেলেছেন যে, তিনি কামের ঘরে কপাট বন্ধ করে কামক্রীড়ায় অটল রূপে বিহার করতে জানেন। শুধু তাই নয় গোপনাঙ্গের রঙমহল ঝলক দেয়া থেকে শুরু করে শুদ্ধ প্রেমরসের রসিক ত্রিবেণীতীর্থে প্রেম ডুবারু এই লালন যে আরো যে বহু অকথ্য করণ কারণ এরই এক অপরাজেয় গ্রান্ড মাষ্টার, সে বিষয়েও রসিকজনেরা সম্যক ওয়াকিবহাল। এবং আমরাও অস্বীকার করবো না, কামলোলুপতা অশ্লীল যৌনাচার যদি কামালিয়াত হয়, তাহলে লালন অবশ্যই একজন বড় মাপের কামেল পুরুষ, আধ্যাত্নবাদের এক মহানায়ক।
কিন্তু ইসলাম কি বলে? ইসলামের অকাট্য ও স্বাভাবিক অনুশাসন থেকে আমরা কি পাই? ইসলাম কারো জন্যই কোন কারণে কোন অবস্থাতেই সুক্ষ্মতম অশ্লীলতাকেও অনুমোদন করে না। পাক নাপাক শ্লীলতা-অশ্লীলতার প্রশ্নটি ইসলামে একটি গুরুতর প্রশ্ন; যে কারণে মাহরাম পুরুষ ছাড়া একাকী কোনো নারীর পক্ষে কারও সঙ্গে বসাই নিষিদ্ধ, মুসলমানের জন্য নির্জন বাথরুমেও নগ্ন হওয়া নিষেধ, এবং সামান্য বায়ু-নিঃসরিত হলেও তাকে পুনরায় অজু করে পবিত্র হতে হয়।
কিন্তু কি আফসোস, অনেক মুসলমান আজ এতটাই গাফেল ও আত্নবিস্মৃত যে, লালনের চুড়ান্ত অশ্লীলতাকেও পরম শ্রদ্ধায় মনে করছে মুক্তির পথ ও পাথেয় এক অমূল্য আধ্যাত্নিকতা। অথচ এই গ্রান্ডমাষ্টার কামেল সম্পর্কে তার জীবদ্দশাতেই লেখা হয়েছিল, সাধুসেবা নামে লালনের শিষ্য ও তাহার সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যাভিচার চলে। যা আজও বিদ্যমান।
আসলে লালনের পুরো ধর্মকর্মই হলো ব্যভিচার নির্ভর। লালন যে গূঢ় আধ্যাত্নিকতার কথা বলে, সেখানে আছে টলে জীব অটলে ঈশ্বর, আছে সে অটলরূপে উপাসনা, সে ভাব কেউ জানে কেউ জানে না। অথবা অটলকে চিনতে পারে কোন জনা। অন্য কিছু নয়, এখানে যৌনমিলনকালে পুংবীর্যকে ধারণ করে রাখার কথা বলা হয়েছে। এবং অটল সাধনার নামে নানা ধরণের অস্বাভাবিক নোংরা যৌনাচারই হলো লালনের গুপ্তভেদ গুপ্তমন্ত্র ও সাধনপ্রক্রিয়া। যারা ইসলাম একেবারেই না মানে, তাদের কথা আলাদা, কিন্তু যার মধ্যে ইসলামের সামান্য নামগন্ধও অবশিষ্ট আছে, তার পক্ষে কি এই ধরণের নিকৃষ্ট ইন্দ্রিয়সেবাকে মহৎ বলে মেনে নেয়া সম্ভব? আর শুধু ইসলামের কথা বলি কেন, পৃথিবীর কোন ধর্মই কি এই ধরণের কামাচারকে ভালো চোখে দেখে বা দেখতে পারে? এতদসঙ্গে উল্লেখ করি, নরনারীর যৌনমিলনের মধ্যেই যেহেতু লালনের মোক্ষ নিহিত, যুগলভজনই হলো লালনের সকল সিদ্ধিসাধনার উর্বর কৃষিক্ষেত্র। অবশ্য লালনকে অধিকাংশ সময়ই তার প্রকৃত রূপে শনাক্ত করা কঠিন হয়; কারণ এই কবি সর্বদায় এক আপাত-নির্দোষ পরিভাষায় আড়ালে নিজেকে লুকিয়ে রাখে। উদাহরণতঃ লালনের একটি বিখ্যাত গানের কথা “সময় গেলে সাধন হবে না”; এখানে সময় অর্থ মহাযোগের মূহুর্ত। আর এই মূহুর্তটির শুভাগমন ঘটে নারীদেহে রজঃস্রাবের প্রথম তিনদিনের মধ্যে; যে কারণে লালন বলে, ও সে তিন দিনের তিন মর্ম জেনে একদিনেতে সেধে লয়।
সত্যিই লালনের কোন তুলনা হয় না। এবং এটাও সত্য যে, ইবলিসের সার্বক্ষণিক ও প্রত্যক্ষ সহায়তা না পেলে এত নিপুণভাবে কেউ কখনো কদর্য যৌনাচারকে ধর্মের মোড়কে লোকসমক্ষে সাফল্যের সঙ্গে উপস্থাপন করতে পারে না।
১ম পর্ব
২য় পর্ব
৩য় পর্ব
৪র্থ পর্ব