somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নতুন নকিব
আলহামদুলিল্লাহ। যা চাইনি তার চেয়ে বেশি দিয়েছেন প্রিয়তম রব। যা পাইনি তার জন্য আফসোস নেই। সিজদাবনত শুকরিয়া। প্রত্যাশার একটি ঘর এখনও ফাঁকা কি না জানা নেই, তাঁর কাছে নি:শর্ত ক্ষমা আশা করেছিলাম। তিনি দয়া করে যদি দিতেন, শুন্য সেই ঘরটিও পূর্নতা পেত!

ইসলামে বিশ্ব ভালবাসা দিবস (Valentine day) এবং আমাদের করনীয়- রিপোস্ট।

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ১০:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বিদগ্ধ ব্লগার বন্ধুদের ভালবাসা প্রীতি সম্ভাষন জানিয়ে প্রথমেই একটি ছোট্ট প্রশ্ন এবং তার উত্তরের মাধ্যমে আলোচনা শুরু করতে চাই। আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি। এই দিনটিকে ঘিরে কিছু মানুষের ভিন্ন অনুভূতি। ভিন্ন আমেজ। কেউ কেউ এই দিনটির নাম দিয়ে থাকেন- 'বিশ্ব ভালবাসা দিবস' হিসেবে। এই দিবসটিকে ঘিরেই আজকের এই সংক্ষিপ্ত আলোচনা। সউদি আরবের অন্যতম আলেম মুহাম্মাদ ইবন সালেহ আল-উসাইমীন সাহেবের নিকট বিশ্ব ভালবাসা দিবস বা 'Valentine day' পালনের বৈধতার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি যে উত্তর প্রদান করেন, প্রথমেই এখানে তা হুবহু তুলে ধরছি। পাশাপাশি এ দিবসটির ইতিহাস, বাংলাদেশে এটির আগমন ইত্যাদি নিয়ে সামান্য আলোকপাত করার ইচ্ছে রয়েছে। আল্লাহ পাকই একমাত্র তাওফিকদাতা।

মুহাম্মাদ ইবন সালেহ আল-উসাইমীন সাহেবের নিকট প্রশ্নটি করা হয়েছিল যেভাবে:

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।

সাম্প্রতিক সময়ে ‘ভালবাসা দিবস’ বা 'Valentine day' উদযাপন অনেকের (বিশেষ করে ছাত্র-ছাত্রী ও তরুনদের) মাঝে ছড়িয়ে পড়েছে; যা মূলত: খ্রিষ্টানদের একটি উৎসব। তখন প্রত্যেকের বস্ত্র হয় সম্পূর্ন লাল রঙের— পোশাক-জুতা সবই; আর তারা পরস্পরের নিকট লাল ফুল বিনিময় করে। শ্রদ্ধেয় শাইখের নিকট এ-জাতীয় উৎসব উদযাপন করার বিধান বর্ণনা করার জন্য অনুরোধ রইল। তা-ছাড়া এ-রূপ বিষয়ে মুসলিমদের প্রতি আপনাদের দিকনির্দেশনা কী? আল্লাহ আপনাদের হেফাযত ও রক্ষা করুন।

উত্তরে তিনি যা বলেন:

বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম।

ওয়া ‘আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।

কয়েকটি কারণে ‘ভালবাসা দিবস’ বা 'Valentine day' উদযাপন জায়েয নয়:—

প্রথমত: এটি একটি নব-উদ্ভাবিত বিদ‘আতী দিবস, শরীয়তে যার আদৌ কোনো ভিত্তি নেই।
দ্বিতীয়ত: এটি অনৈতিক-প্রেম পরিণতির দিকে মানুষকে ধাবিত করে।
তৃতীয়ত: এর কারণে সালাফে সালেহীনের পথ-পদ্ধতির বিরোধী এরূপ অর্থহীন বাজে কাজে মানুষের মন-মগজ ব্যস্ত করার প্রবণতা তৈরি হয়।

তাই এ-দিনে দিবস উদযাপনের কোনো কিছু প্রকাশ করা কখনও বৈধ নয়; চাই তা খাদ্য-পানীয় গ্রহণ, পোশাক-আশাক পরিধান, পরস্পর উপহার বিনিময় কিংবা অন্য কিছুর মাধ্যমেই হোক না কেন।

আর প্রত্যেক মুসলিমের উচিত নিজ দ্বীন নিয়ে গর্বিত হওয়া এবং অন্যের অনুকরণপ্রিয় না হওয়া: কেউ করতে দেখলেই সেও করবে, কেউ আহ্বান করলেই তাতে সাড়া দিবে, এমনটি যেন না হয়।

আল্লাহর নিকট দু‘আ করি, তিনি যেন প্রত্যেক মুসলিমকে প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য যাবতীয় ফিতনা থেকে হেফাযত করেন; আর আমাদেরকে তিনি তাঁর অভিভাবকত্ব ও তাওফিক প্রদান করে ধন্য করেন।

এবার আসুন, এই দিবসটির জন্মের ইতিহাস, বাংলাদেশে এর সূচনা এবং ইসলামী দৃষ্টিকোন থেকে এর সাথে মুসলমানদের সম্পর্ক ইত্যাদি নিয়ে একটু আলোকপাত করি।

বিশ্ব ভালবাসা দিবস; একটু পিছনে ফিরে দেখা:

এক নোংরা ও জঘন্য ইতিহাসের স্মৃতিচারণের নাম বিশ্ব ভালবাসা দিবস। এ ইতিহাসটির বয়স সতের শত সাঁইত্রিশ বছর হলেও ‘বিশ্ব ভালবাসা দিবস’ নামে এর চর্চা শুরু হয় সাম্প্রতিককালেই। দুই শত সত্তর সালের চৌদ্দই ফেব্রুয়ারির কথা। তখন রোমের সম্রাট ছিলেন ক্লডিয়াস। সে সময় ভ্যালেন্টাইন নামে একজন সাধু, তরুণ প্রেমিকদেরকে গোপন পরিণয়-মন্ত্রে দীক্ষা দিত। এ অপরাধে সম্রাট ক্লডিয়াস সাধু ভ্যালেন্টাইনের শিরশ্ছেদ করেন। তার এ ভ্যালেন্টাইন নাম থেকেই এ দিনটির নাম করণ করা হয় ‘ভ্যালেন্টাইন ডে’ যা আজকের ‘বিশ্ব ভালবাসা দিবস’।

তথ্য সূত্র- ইসলামের দৃষ্টিতে বিশ্ব ভালবাসা দিবস (Valentine day)

এটি ছাড়া আরও একাধিক ঘটনার বিবরন পাওয়া যায় এই দিবসটির সূচনার বিষয়ে। যেমন-

আরেকটি ঘটনা, প্রাচীন রোমে ১৪ ফেব্রুয়ারি ছিল রোমান দেব-দেবীর রানী জুনোর সম্মানে ছুটির দিন। জুনোকে নারী ও প্রেমের দেবী বলে লোকে বিশ্বাস করত। কারো করোমতে ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবস হওয়ার কারণ ছিল এটিই। আবার কেউ বলেন, রোমের সম্রাট ক্লডিয়াস ২০০ খ্রিস্টাব্দে দেশে বিয়ে প্রথা নিষিদ্ধ করেন। তিনি ঘোষণা দেন, আজ থেকে কোনও যুবক বিয়ে করতে পারবে না। যুবকদের জন্য শুধুই যুদ্ধ। তার মতে, যুবকরা যদি বিয়ে করে তবে যুদ্ধ করবে কারা?সম্রাট ক্লডিয়াসের এ অন্যায় ঘোষণার প্রতিবাদ করেন এক যুবক। যার নাম ভ্যালেন্টাইন। অসীম সাহসী এযুবকের প্রতিবাদে খেপে উঠেছিলেন সম্রাট।রাজদ্রোহের শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় তাকে।১৪ ফেব্রুয়ারি ভোরবেলা মাথা কেটে ফেলা হয় তার।ভালোবাসার জন্য ভ্যালেন্টাইনের আত্মত্যাগকে স্মরণ করতে তখন থেকেই এ দিনটিকে পালন করা হয় ভ্যালেন্টাইন দিবস হিসেবে।

তবে এটিও সর্বজন স্বীকৃত নয়।এখানেও দ্বিমত আছে।কারও কারও মতে, প্রাচীন রোমে ভ্যালেন্টাইন নামে একজন চিকিৎসক ছিলেন। তিনি রোগীদের প্রতি ছিলেন ভীষণ সদয়। অসুস্থ মানুষের ওষুধ খেতে কষ্ট হয় বলে তিনি তেঁতো ওষুধ ওয়াইন, দুধ বা মধুতে মিশিয়ে খেতে দিতেন। সেই ডাক্তার খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেন। প্রাচীন রোমে খ্রিস্টধর্ম তখন মোটেও জনপ্রিয় ছিল না। এই ধর্মে বিশ্বাসীদের শাস্তি দেওয়া হতো।একদিন রোমের এক কারা প্রধান তার অন্ধ মেয়েকে ভ্যালেন্টাইনের কাছে নিয়ে এসেছিলেন চিকিৎসার জন্য। ভ্যালেন্টাইন কথা দিয়েছিলেন তিনি তার সাধ্যমতো চিকিৎসা করবেন। মেয়েটির চিকিৎসা চলছিল এমন সময় হঠাৎ একদিন রোমান সৈন্যরা এসে ভ্যালেন্টাইনকে বেঁধে নিয়ে যায়। ভ্যালেন্টাইন বুঝতেপেরেছিলেন, খ্রিস্টান হওয়ার অপরাধে তাকে মেরে ফেলা হবে। ২৬৯ খ্রিষ্টাব্দে বা কারও মতে ২৭০খ্রিস্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি রোম সম্রাট ক্লডিয়াসের আদেশে ভ্যালেন্টাইনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।তার আগে ভ্যালেন্টাইন অন্ধ মেয়েটিকে বিদায় জানিয়ে একটি চিরকুট লিখে রেখে গিয়েছিলেন। তাকে হত্যার পর কারা প্রধান চিরকুটটি দিয়েছিলেন মেয়েটিকে। তাতে লেখা ছিল, ‘ইতি তোমার ভ্যালেন্টাইন’ (‘From your Valentine’)। মেয়েটি চিরকুটের ভেতরে বসন্তের হলুদ ত্রৌকস ফুলের আশ্চর্য সুন্দর রং দেখতে পেয়েছিল কারণ, ইতোমধ্যে ভ্যালেন্টাইনের চিকিৎসায় মেয়েটির অন্ধ দু’চোখে দৃষ্টি ফিরে এসেছিল। ভালবাসার এসব কীর্তির জন্য ৪৯৬ খ্রিস্টাব্দে পোপ জেলাসিয়ুস ফেব্রুয়ারির ১৪ তারিখকে ভ্যালেন্টাইন্স ডে হিসেবে ঘোষণা করেন। সেই থেকে এই দিনটিকে মানুষেরা ভ্যালেন্টাইন্স ডে হিসেবে পালন করে আসছে।

ভ্যালেন্টাইন্স ডে’র উৎপত্তির বিষয়ে আরেকটি সম্পূর্ণভিন্নমত রয়েছে। এই মতের লোকেরা বলেন,ভ্যালেন্টাইনের সঙ্গে প্রিয়জনকে ভালোবাসার বার্তা পাঠানোর আদৌ কোনও সম্পর্ক নেই। প্রাচীনকালে মানুষের বিশ্বাস ছিল, ১৪ ফেব্রুয়ারি হলো পাখিদের বিয়ের দিন। পাখিরা বছরের দ্বিতীয় মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ডিম পাড়তে বসে। আবার কেউ বলেন,মধ্যযুগের শেষদিকে মানুষ বিশ্বাস করত এদিন থেকে পাখিদের মিলন ঋতু শুরু হয়। পাখিরা সঙ্গী খুঁজেবেড়ায়। পাখিদের দেখাদেখি মানুষও তাই সঙ্গী নির্বাচন করে এ দিনে।

তথ্যসূত্র: ভালবাসা দিবসের ইতিহাস, যেভাবে এল বিশ্ব ভালবাসা দিবস

বাংলাদেশে বিশ্ব ভালবাসা দিবস পালন শুরু হয় যেভাবে:

বাংলাদেশে এ দিবসটি পালন করা শুরু হয় ১৯৯৩ ইং সালে। কিছু ব্যবসায়ীর মদদে এটি প্রথম চালু হয়। অপরিণামদর্শী মিডিয়া কর্মীরা এর ব্যাপক কভারেজ দেয়। আর যায় কোথায়! লুফে নেয় বাংলার কিছু উঠতি বয়সের তরুণ-তরুণী। এরপর থেকে ঈমানের ঘরে ভালবাসার পরিবর্তে ভুলের বাসা বেঁধে দেয়ার কাজটা যথারীতি কমবেশি চলে আসছে। মানুষ যখন বিশ্ব ভালবাসা দিবস সম্পর্কে জানতো না, তখন পৃথিবীতে ভালোবাসার অভাব ছিল না। আজ পৃথিবীতে ভালবাসার বড় অভাব। তাই দিবস পালন করে ভালবাসার কথা স্মরণ করিয়ে দিতে হয়! আর হবেই না কেন! অপবিত্রতা নোংরামি আর শঠতার মাঝে তো আর ভালবাসা নামক ভালো বস্তু থাকতে পারে না। তাই আল্লাহ তা‘আলা মানুষের হৃদয় থেকে হয়তো ভালবাসা উঠিয়ে নিচ্ছেন ক্রমশ:।

তথাকথিত এই দিনের কিছু বাজে চিত্র:

বিশ্ব ভালবাসা দিবসকে চেনার জন্য আরও কিছু বাস্তব নমুনা পেশ করা দরকার। দিনটি যখন আসে তখন শিক্ষাঙ্গনের শিক্ষার্থীরা বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তো একেবারে বেসামাল হয়ে উঠে। নিজেদের রূপ-সৌন্দর্য উজাড় করে প্রদর্শনের জন্য রাস্তায় নেমে আসে। শুধু কি তাই! অঙ্কন পটীয়সীরা উল্কি আঁকার জন্য পসরা সাজিয়ে বসে থাকে রাস্তার ধারে। তাদের সামনে তরুণীরা পিঠ, বাহু আর হস্তদ্বয় মেলে ধরে পছন্দের উল্কিটি এঁকে দেয়ার জন্য। তারপর রাত পর্যন্ত নীরবে-নিবৃতে প্রেমিক বা প্রেমিকার সাথে খোশ গল্প। এ হলো বিশ্ব ভালবাসা দিবসের কর্মসূচি! এরকম একটি দিবসকে 'বিশ্ব ভালবাসা দিবস' না বলে 'বিশ্ব বেহায়াপনা দিবস' বললে অন্তত: নামকরণটির যথার্থতা কিছুটা প্রমান হতো।

বর্তমানে মুসলমানরা তাদের চালচলন, রীতিনীতি এবং উৎসব-উদযাপনের অধিকাংশ ক্ষেত্রে এমনিতেই বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুসরণ করে চলেছে। আমাদের দেশে প্রচলিত এরূপ বহু বিজাতীয় অপসংস্কৃতির বলা চলে লেটেস্ট সংযোজন ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’ বা ‘বিশ্ব ভালোবাসা দিবস’। যা আমাদের দেশে ক্রমেই বাড়ছে। পাশাপাশি বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃকও এই অপসংস্কৃতির শিশু বৃক্ষটিকে পরিপক্ক করে তুলতে জলসিঞ্চন করা হচ্ছে। তাদের পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছে।

সন্দেহ নেই, মূলত: ভালোবাসার নামে তরুণ-তরুণীদের অশ্লীলতার দিকেই ধাবিত করছে এ দিবসের যাবতীয় কার্যক্রম। এ দিবসকে কেন্দ্র করে পার্ক, রেস্তোরাঁ, বিশ্ববিদ্যালয়ের করিডোর, টিএসসি, চারুকলার বকুলতলাসহ সর্বত্র থাকে তরুণ-তরুণীদের তুমুল ভিড়।

এছাড়াও দেশের বিভিন্ন নামি-দামি হোটেলেও বসে তরুণ-তরুণীর মিলন মেলা। নানা রঙের বেলুন আর অসংখ্য ফুলে স্বপ্নিল করা হয় হোটেলের অভ্যন্তর। অনুষ্ঠানের সূচিতে থাকে লাইভ কনসার্ট, ডিজে শো, ডেলিশাস ডিনার এবং তরুণ-তরুণীদের উদ্যাম ড্যান্স। তারপর গভীর রাত পর্যন্ত নীরবে-নিবৃতে চলতে থাকে প্রেমিক-প্রেমিকার খোশ গল্প।

কিন্তু আমাদের তরুণ-তরুণীরা কি জানে- তারা যাদের অনুসরণে এসব দিবস পালন করছে, তাদের ভালোবাসা হচ্ছে নৈতিকতার বন্ধনমুক্ত নিষিদ্ধ ভালোবাসা। তাদের ভালোবাসার পরিণতি ‘ধরো ছাড়ো’ আর ‘ছাড়ো ধরো’ -গ্রহণ করো নতুন নতুন সঙ্গী। তাদের এ ধরা ছাড়ার বেলেল্লাপনা চলতে থাকে জীবনব্যাপী।

মানুষের অন্তর যদিও অনুকরণ প্রিয়, তবুও মনে রাখতে হবে ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে এ ধরনের কর্মকাণ্ড পরিত্যাগ করা সকল মুসলিমের ইমানি দায়িত্ব। মুসলমানদের জন্য এসব দিবস পালন করা জঘন্য অপরাধ।

পরিশেষে বলতে চাই:

অতএব দ্বীন এবং ঈমানপ্রিয় আখিরাতের অন্তহীন জীবনে বিশ্বাসীদের বিনীতভাবে নিবেদন জানাতে চাই, ভালবাসা কোন দিবস ভিত্তিক পর্বীয় বিষয় নয়। আমাদের ভালোবাসা সার্বক্ষনিক। আজীবনের। মৃত্যু অবধি আমরা ভালোবেসে যাব একে অপরকে। প্রত্যেকে প্রত্যেককে। সকলে সকলকে। বিশ্ব জাহানের স্রষ্টা আল্লাহ পাকের প্রতি আমাদের ভালোবাসা। আমাদের ভালোবাসা তামাম জগতের সকল মাখলূকাতের প্রতি। আমরা প্রিয়তম আব্বা আম্মাকে ভালোবাসি। তারা আমাদের জীবনের মূল্যে বড় করে তুলেছেন। সুন্দর এই পৃথিবীর আলো-বাতাস দেখার সৌভাগ্য আমাদের হত না, যদি না, প্রিয়তম মা তার জীবনকে বিপন্নতার ঝুঁকিতে ঠেলে দিয়ে আমাকে গর্ভে ধারণ করতেন, প্রসবের অবর্ণনীয় কষ্ট সহ্য যদি না করতেন। এমনি করেই আত্মীয়-অনাত্মীয় জগতের প্রতিটি মানুষের প্রতি, প্রতিটি প্রাণীর প্রতি আমাদের হৃদয়ে হৃদয়ে ভালোবাসার বহমান ফোয়ারা। বহতা নদী যেন আমাদের একেকটা বুক। সুদূর ইন্দোনেশিয়ায় যখন সুনামীতে ভেসে যায় কোনো বিপন্ন মানুষের ঘরবাড়ি আমরা আমাদের ভালোবাসা উথলে ওঠে তার ব্যথাকাতর দুরবস্থা অবলোকনে। আটলান্টিকের ওপাড়ের অচেনা ব্রাজিল কিংবা চিলির খনি দুর্ঘটনায় আহত নিহতদের জন্য অদেখা ভালোবাসায় কেঁদে ওঠে আমাদের হৃদয়। আমার বাড়ির পাশের অভূক্ত কুকুরটির জন্যও আমাদের ভালোবাসা থাকা উচিত। এমনকি আহত একটি গুবড়ে পোঁকা কিংবা পিপড়ার জন্যও। আমাদের এ ভালোবাসা চিরন্তন। প্রতি দিনের। প্রতি মুহূর্তের। প্রতি প্রভাতের। প্রতি নিশিথের।

জেনে অথবা না জেনে যারা এই দিবসটিকে নিছক একটি সুন্দর দিন হিসেবেই মনের ভেতরে স্থান দিয়েছিলেন, দয়া করে এই পোস্ট পড়ার পরে আশা করছি, আপনার নিকট সত্য উদ্ভাসিত হয়ে উঠবে। মিথ্যের অসারতা এবং ক্ষতির বিষয়টি অনুধাবন করতে সক্ষম হবেন আপনি। আর উপনীত হতেও সক্ষম হবেন সত্যের উপলোপল তীরে। আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন, ভালোবাসা মানব জীবনের সুখ-শান্তির জন্য একটি জরুরি সার্বক্ষণিক মানবিক উপাদান। সুতরাং আমাদের মধ্যে ভালবাসা ও সৌহার্দ্য বৃদ্ধির জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শিখানো সার্বক্ষণিক পন্থাটি অবলম্বন করতে আমরা সচেষ্ট হই। আল্লাহ পাক তাওফীক দান করুন। সেই সাথে 'বিশ্ব ভালবাসা দিবস' -এর নামে প্রচলিত ঈমান বিধ্বংসী কর্মকাণ্ড হতে আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে হেফাযত করুন। কারও প্রতি আমাদের ভালবাসা কিংবা কারও সাথে শত্রুতা- সব কিছুর মূলেই যেন উদ্দেশ্য থাকে শুধুমাত্র আল্লাহ তাআ'লার সন্তুষ্টি অর্জন। আমীন !!!

নিবন্ধে উল্লেখিত গুরুত্বপূর্ন কিছু তথ্যের উৎস-সূত্র এবং কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন:
১. কুরআনের আলো ডট কম এর সহযোগিতায় পোস্টটি তৈরি করা হয়েছে। কৃতজ্ঞতা কুরআনের আলো ডট কমকে।
২. পবিত্র আল কুরআন।
৩. (আব্দুল খালেক, নারী, (ই,ফা,বা.ঢাকা,১৯৮৪ইং) পৃ. ৯৬)।
৪. (ইবনু মাজাহ, কিতাবুল ফিতান, হাদিস নং-৪০০৯)।
৫. (বুখারী,কিতাবুল লিবাস,হাদিস নং৫৪৭৭)।
৬. (মুয়াত্তা মালিক, কিতাবুল জিহাদ, হাদিস নং-৮৭০)।
৭. (Baron& Byrne, Ibid., P. 329)।
৮. (মাসিক পৃথিবী, (ঢাকা, ডিসেম্বর, ১৯৯৯), পৃ. ৫)।
৯. (রয়টার্স, দৈনিক ইনকিলাব, (ঢাকা, ২রা ডিসেম্বর ২০০০ ইং) পৃ .১-২)।
১০. (দৈনিক ইনকিলাব, (স্টাফ রিপোর্টার, বিশ্ব এইডস দিবসে ঢাকায় আলোচনা সভা, ২রা ডিসেম্বর, ২০০০ ইং) পৃ.১)।
১১. (Baron & Byrne, Social psychology : Understanding Human Interaction, P. 329.)।

ছবি: অন্তর্জাল।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মার্চ, ২০১৯ সকাল ৮:৩০
১০টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×