আতঙ্কের নাম এডিস মশা:
প্রায় প্রতি বছরই বর্ষার আগমনে এডিস মশার উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু অন্যান্য বছর মশার এ উপস্থিতি সহনীয় পর্যায়ে থাকলেও এবার এটি ছড়িয়ে পড়েছে মহামারী আকারে। উৎপাত উপদ্রব বেড়ে গেছে শহর নগর গ্রাম- সবখানে। পুরো দেশজুড়ে অন্যরকম এক আতঙ্কের নাম এখন এডিস মশা। ডেঙ্গু এবং চিকনগুনিয়ার বাহক এটি। রাজধানী ঢাকাসহ ডেঙ্গু বেড়ে যাওয়ায় আতঙ্কে ভুগছে দেশবাসী। আসুন, আতঙ্কিত না হয়ে জেনে নিই কীভাবে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষা করা সম্ভব-
এডিস মশার পরিচয়:
প্রথমেই জেনে নেয়া প্রয়োজন এডিস মশা সম্পর্কে। এডিস মশার পায়ে সাদা-কালো ডোরাকাটা দাগ থাকে। পেনসিলের সঙ্গে লাগানো রবারের মতো ছোট থাকে এগুলোর আকার। এডিস মশা দিনে কামড়ায়। তার মানে, বাড়িতে আপনি মশারির ভেতরে বসে নিরাপদ থাকলেও রাস্তায় দাঁড়িয়ে চা খাওয়ার সময় কিংবা ট্রাফিক সিগন্যালে আটকে বাসের সিটে বসে অপেক্ষা করার সময়ও এডিস মশার কামড় খাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।
আভিজাত্যে চেনা যায় এডিস মশা:
নালা নর্দমা, ময়লা আবর্জনা কিংবা অপরিষ্কার নোংরা কোনো স্থান এডিস মশার পছন্দ নয়। কোথাও জমে থাকা স্বচ্ছ পরিষ্কার পানি পেলেই কেবল ডিম পাড়ে এডিস মশা। সেটা হতে পারে ফুলের টবে জমে থাকা পানি, কিংবা ফেলে রাখা বোতলের ছোট্ট ঢাকনা জমে থাকা পানি, আবার অব্যবহৃত সুইমিং পুলের পানিও হতে পারে। জায়গা ছোট নাকি বড়, তা নিয়ে এডিস মশার মাথা ব্যথা নেই মোটেই।
এডিস মশার কামড় থেকে বাঁচার উপায়:
এডিস মশার কামড় থেকে বাঁচার জন্য পানি জমতে দেয়া যাবে না কোথাও। ঘরের বাথরুমের বালতি, ফুলের টব বা অন্য কোথাও পানি জমে থাকতে দেয়া যাবে না। মশা যেহেতু অনুমতি নিয়ে ঘরে ঢোকে না, তাই বাইরের মশাও প্রবেশ করতে পারে অনায়াসে। এজন্য রাস্তাঘাটে কিংবা অন্য কোথাও ডাবের খোসা বা অন্য কোনো কিছুতে এরকম স্বচ্ছ পানি জমে থাকতে দেখলে তা ফেলে দেয়ার ব্যবস্থা করা উচিত আমাদের নিজ দায়িত্বে।
এছাড়াও মশার কামড় থেকে বাঁচতে মশারি টাঙিয়ে ঘুমানোর অভ্যাস করা প্রয়োজন। কারণ, রাতে এডিস মশা না কামড়ালেও ভোর থেকে কামড়ানো শুরু করে এরা। সম্ভব হলে বাড়ির জানালাগুলোতে মশা প্রতিরোধক নেট ব্যবহার করা যেতে পারে। এর ফলে মশার ঘরে ঢোকা কিছুটা হলেও রুদ্ধ হবে। এরপরেও, বাড়িতে মশা না থাকলেও বাইরে মশা কামড়ানোর সুযোগটা থেকে যায়। সেক্ষেত্রে ভালো মানের মসকুইটো রিপিলেন্ট ব্যবহার করা যেতে পারে।
প্রাকৃতিক মসকুইটো রিপিলেন্ট হিসেবে নিম তেল, ইউক্যালিপটাস তেল, লেমন গ্রাসের তেল অথবা খাঁটি নারিকেল তেল ব্যবহার করা যেতে পারে। এগুলোর গন্ধে প্রায় ২/৩ ঘণ্টা পর্যন্ত মশা শরীরে বসে না। অভিজ্ঞতায় এমনটাই দেখা গেছে।
এর বাইরে বিশেষ কিছু গাছ রয়েছে যেগুলো ঘরের ভেতরে রাখলেও সাধারণত মশার উপদ্রব থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। লেমন গ্রাস, পুদিনা, বেসিল, ল্যাভেন্ডার, রসুন গাছ, রোজমেরি এবং গাঁদা ফুল গাছ সেগুলোর মধ্যে অন্যতম।
চাই পরিপূর্ণ সতর্কতা:
এডিস মশার হাত থেকে বাঁচতে হলে সর্বাত্মক সতর্কতা কাম্য। ঘরে বাইরে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। পরিবেশ সচেতন হতে হবে আমাদের। সর্বোপরি কারও জ্বর বা এজাতীয় সমস্যা দেখা দিলে আতঙ্কিত না হয়ে অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত।
সকলের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত হোক। এডিস মশার প্রাদুর্ভাব দূর হোক। শুভকামনা সকলের জন্য।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা আগস্ট, ২০১৯ বিকাল ৪:৩৮