somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নতুন নকিব
আলহামদুলিল্লাহ। যা চাইনি তার চেয়ে বেশি দিয়েছেন প্রিয়তম রব। যা পাইনি তার জন্য আফসোস নেই। সিজদাবনত শুকরিয়া। প্রত্যাশার একটি ঘর এখনও ফাঁকা কি না জানা নেই, তাঁর কাছে নি:শর্ত ক্ষমা আশা করেছিলাম। তিনি দয়া করে যদি দিতেন, শুন্য সেই ঘরটিও পূর্নতা পেত!

আয়া সোফিয়াকে লইয়া মায়াকান্নার সুযোগ নাই....

২৬ শে আগস্ট, ২০২০ সকাল ১০:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আয়া সোফিয়াকে লইয়া মায়াকান্নার সুযোগ নাই....

হায় হায়! এরদোগান ইহা কি করিলেন! তিনি ইহা কিভাবে করিলেন! কোন্ জ্ঞানে করিলেন! তিনি নেহায়েত গোস্তাখি করিয়াছেন! তাহার এই কাজ করা কস্মিনকালেও সমিচীন হয় নাই! তিনি মস্তবড় ভুল করিয়াছেন! তিনি এককালের অন্য ধর্মের উপাসনালয়কে মসজিদে রূপান্তর করিয়া মহাঅন্যায় করিয়াছেন!, তিনি বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ (World heritage) কে নামাজের ঘর করিয়াছেন - ইত্যাকার অর্থহীন বাতচিৎ করিয়া যাহারা ইদানিংকালে নিজেদের হতাশা ব্যক্ত করার নামে নিজেদের ভিতরে লুকায়িত ইসলাম বিদ্বেষকে অজান্তেই প্রকাশ করিতে যাইয়া অহেতুক গলধঘর্ম হইয়া পড়িতেছেন, তাহাদেরকে বিনীতভাবে বলিতেছি, প্রিয় ভাই/ বোন, আপনি কাঁদিতে চাহিলে কাঁদেন, কাঁদিতে তো নিষেধ নাই! কান্নায় মনের ভার অনেকটা কাটিয়াও যায়। বুকের জমানো ব্যাথা হাল্কা হইয়া ওঠে। আবার কিছু ব্যাথা আছে যাহাদের প্রশমনে কান্না অমোঘ বলিয়া স্বীকৃত! আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানকেও কদাচিত কান্নার উপকারিতা স্বীকার করিতে দেখা যায়! তাই ইচ্ছা হইলে আপনি কাঁদিতেই পারেন। কাঁদিয়া কাটিয়া বুক ভাসাইতে পারার অধিকার আপনার রহিয়াছে। ইহাতে কোনো অসুবিধাও নাই। কিন্তু আপনার সেই কান্নাটা তো হইতে হইবে যৌক্তিক। সেই কান্নার পিছনে যৌক্তিক কোনো কারণ তো থাকিতে হইবে। তাই কান্নাকাটি শুরু করিবার পূর্বে আমাদের জানিয়া নেওয়া প্রয়োজন যে, তুর্কি প্রেসিডেন্ট হাফেজ রিসেপ তাইয়্যেব এরদোগান আয়া সোফিয়াকে মসজিদে রূপান্তর করিয়া আসলেই কি কোনো অন্যায় করিয়াছেন কি না! আপাতঃদৃষ্টিতে মোটা চোখে তার এই কাজটিতে সাম্প্রদায়িকতার হাল্কা একটা ঘ্রাণ কাহারও কাহারও নাকে আসিয়া লাগিলেও লাগিতেই পারে। কিন্তু ইসলাম বিদ্বেষের চশমাটা একটু ঘষিয়া মাজিয়া ক্লিন করিয়া চোখ খুলিয়া ভালোভাবে তাকাইলে পরিষ্কার হইয়া যায় যে, কাজটি করিয়া মূলতঃ তিনি কোনো অন্যায় করেন নাই। ইতিহাসের বাস্তবতা অন্ততঃ ইহাই চোখে আঙুল দিয়া দেখাইয়াও দেয় আমাদেরকে। অবশ্য সত্য বিষয়গুলো দেখিতে কাহারও অনিহা থাকিলে অথবা বাস্তবতাকে পাশ কাটাইয়া যাইতে চাহিলে উহা একান্তই তাহার নিজের ব্যাপার। তাই এরদোগান বেচারার প্রতি অহেতুক রুষ্ট হইয়া সকল দোষের ঘানি তাহার কাঁধে চাপাইয়া দিয়া পড়িমরি করিয়া কাঁদিয়া বুক ভাসাইয়া আপনার আমার আসল লাভটা কি? তাহার চাইতে আসুন, কান্নাটা কিছুক্ষণের জন্য হইলেও দমাইয়া রাখিয়া ইতিহাসের পাতায় একটু ঘুরিয়া আসি! প্রকৃত সত্য ইতিহাস তুলিয়া না ধরা রীতিমত বেইনসাফি মনে করিয়াই অতি ক্ষুদ্র এই প্রচেষ্টা। তবে মূল আলোচনায় প্রবেশ করিবার পূর্বে ইহার নাম বিভ্রাটটা একটু দূর করা সঙ্গত মনে করিতেছি-

আয়া সোফিয়া, হায়া সোফিয়া না হাজিয়া সোফিয়া- কোনটা সঠিক?

আয়া সোফিয়াকে অনেকে বলেন হায়া সোফিয়া। কেউ বলেন হাজিয়া সোফিয়া। আবার কেউ হায়া সোফিয়াও বলেন। আসলে সঠিক কোনটা? ইহার উত্তর হইতেছে- তুর্কীগণ ইহাকে Ayasofya (আয়া সোফিয়া)ই বলেন। গ্রিক ভাষায়ও ইহাকে Ἁγία Σοφία (আয়া সোফিয়া), অর্থাৎ- 'পবিত্র জ্ঞান' বলিয়া উচ্চারণ করা হয়। আর লাতিন ভাষায় বলা হয়- Sancta Sophia বা Sancta Sapienti। তুর্কিরা অবশ্য এই স্থাপনাটিকে Hagia Sophia Grand Mosque (Turkish: Ayasofya-i Kebir Cami-i Şerifi) নামে অভিহিত করিয়া থাকে।

চলুন, এবার আসল কথায় ফিরিয়া যাই-

স্মরণযোগ্য যে, হাজিয়া সোফিয়া বা আয়া সোফিয়া নির্মিত হইয়াছিল ৫৩৭ খৃস্টাব্দে রোমান সম্রাট জাস্টিনিয়ান (প্রথম) এর শাসনামলে। এটি তদানীন্তন কনস্ট্যান্টিনোপলে (বর্তমান ইস্তাম্বুল) খৃস্টানদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হইতো এবং একই সাথে ইহা হইয়া উঠিয়াছিল বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানাদি, যেমন- রাজ্যাভিষেক ইত্যাদির জন্য প্রধান স্থাপনা। কিন্তু পরবর্তীতে ১৪৫৩ সালে উসমানিয় খলিফা আবুল ফাতিহ সুলতান মোহাম্মদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি ইস্তাম্বুল বিজয়ের পর খৃস্টান ধর্মীয় নেতাদের নিকটে এই স্থাপনাটি জমিসমেত ক্রয় করিয়া নেওয়ার প্রস্তাব দেন। তবে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের অর্থে নয়, বরং নিজের ব্যক্তিগত অর্থ দ্বারা। উভয় পক্ষ সম্মত হইলে উক্ত স্থাপনাটি ভূমিসহ উপযুক্ত অর্থের বিনিময়ে ক্রয় করিয়া নিয়াছিলেন শাসক ফাতিহ সুলতান মুহাম্মদ।

রাষ্ট্রীয় কোষাগারের অর্থব্যয় না করিয়া ব্যক্তিগত অর্থায়নে ইহা ক্রয় করার পেছনে আবুল ফাতিহ সুলতান মোহাম্মদ এর দূরদর্শিতার পরিচয় পাওয়া যায়। শত্রু এবং ইতিহাস সম্পর্কে তিনি ছিলেন অত্যন্ত বিচক্ষণ ও বুদ্ধিমান। শাসক হিসাবে রাজ্যের কোষাগার কিংবা মুসলমানদের 'বায়তুল মাল' হইতে কোনো অর্থের পরিবর্তে তিনি ভূমিসমেত ওই ভবন ক্রয়ের প্রস্তাব দেন একান্ত ব্যক্তিগত সম্পদ দ্বারা, যাহা ছিল এক নজিরবিহীন পদক্ষেপ।

খৃস্টান ধর্মীয় নেতারা 'আয়া সোফিয়া'কে বিক্রয় করিতে সম্মত হওয়ার পর একজন সাধারণ মুসলমান হিসাবেই তিনি উক্ত সম্পদ ক্রয় করিতে একটি ব্যক্তিগত চুক্তিপত্র স্বাক্ষর করেন তাহাদের সাথে। তিনি শাসক হওয়া সত্বেও সেই চুক্তির সাথে প্রশাসনিক কোনো সংশ্লিষ্টতা রাখেন নাই।

সম্পূর্ণ লেনদেনটি ক্রয় ও স্বত্বত্যাগের একটি চুক্তির মাধ্যমে নথিভুক্ত করা হইয়াছিল এবং মূল্য পরিশোধের বিষয়টিও ছিল ভাউচার দ্বারা প্রমাণিত।



১৪৫৩ খৃস্টাব্দে হরিণের চামড়ার উপরে লিখিত খৃস্টান ধর্মীয় নেতাদের নিকট হইতে আয়া সোফিয়া ক্রয়ের দলীল এবং (ডান পার্শ্বে) তৎকালীন সময়ের মানচিত্র। সূত্র- জিডিএলআরসি, ২০০৫/এ।

এইভাবেই 'আয়া সোফিয়া' খৃস্টানদের নিকট হইতে ক্রয় করিয়া নেওয়া হয় এবং ইহার পরপরই আবুল ফাতিহ সুলতান মোহাম্মদ (আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা তাঁর প্রতি রহম করুন) সেখানে একটি ওয়াকফ এসোসিয়েশন গঠন করিয়া দেন এবং আয়া সোফিয়া ভবনটিকে তাদের মালিকানায় দান করিয়া দেন এবং পরবর্তীতে তিনি ইহার পরিচালনা ও রক্ষনাবেক্ষন সম্মন্ধে একটি ওসিয়তনামাও লিখিয়া যান। যে অসিয়তনামায় অন্যান্য কথার সাথে নিম্নোক্ত কথাগুলোরও উল্লেখ ছিল-

'এই ভিত্তি কেউ যদি পরিবর্তন করে, তাহার এবং তাহাদের উপরে আজীবন ধরিয়া আল্লাহ পাকের, নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর, ফেরেশতাকুলের, সকল শাসকগণের এবং সকল মুসলমানের লানত পড়ুক! আল্লাহ পাক যাহাতে তাহাদের কবরের আজাব মাফ না করেন, হাশরের দিনে তাহাদের মুখের দিকে যাহাতে না তাকান!

এই কথা শোনার পরেও কেহ যদি ইহাকে পরিবর্তনের চেষ্টা চালাইয়া যায়, পরিবর্তনের গুনাহ তাহার উপরে পড়ুক! আল্লাহর আজাব পড়ুক তাহাদের উপরে! আল্লাহ পাক সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।'


– আবুল ফতেহ সুলতান মুহাম্মদ, (১লা জুন, ১৪৫৩)।

উসমানিয় খলিফা আবুল ফাতিহ সুলতান মুহাম্মদ এর তুরস্ক বিজয়ের প্রেক্ষাপটঃ

ইতিহাসের পাঠকমাত্রেরই জ্ঞাত থাকার কথা যে, মহান সুলতান মুহাম্মাদ ফাতিহ কন্সট্যান্টিনোপলে অভিযান শুরুর আগে ১৫-৫-৮৫৭হি/২৪-৫-১৪৫৩ খৃষ্টাব্দে বাইজেন্টাইন সম্রাটের নিকট এই মর্মে পত্র প্রেরণ করেন যে, তিনি যেন অস্ত্র সমর্পন করিয়া আত্মসমর্পন করেন। কিন্তু বাইজেন্টাইন সম্রাট তাঁহার এই কথার প্রতি কোন প্রকার ভ্রুক্ষেপ করেন নাই। ফলে সুলতান মুহাম্মাদ ফাতিহ (২০-৫-৮৫৭হি/২৯-৫-১৪৫৩ খৃ.) তারিখে কন্সট্যান্টিনোপলে অভিযান পরিচালনা করেন এবং বিজয়লাভ করেন। ইহার ফলে গোটা কন্সট্যান্টিনোপলে মুসলিম আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেন। এ ঘটনা হইতে প্রতীয়মান হয় যে, বিশাল এই ভূখন্ড মুসলিম জাতি জিহাদের মাধ্যমে লাভ করিয়াছেন, কোন সন্ধির মাধ্যমে নহে। তাই এই ভূখন্ডের প্রতিটি কণার উপর মুসলিমদের পূর্ণ অধিকার রহিয়াছে। অন্যান্য বিষয়ের মত এই ভূখন্ডের ধর্মীয় স্থাপনাদির উপরেও তাহাদের নিরঙ্কুস নিয়ন্ত্রন ও একচ্ছত্র অধিকার বিদ্যমান রহিয়াছে। উপরন্তু উক্ত আয়া সোফিয়া স্থাপনাটি তো ভূমিসমেত ক্রয় করিয়া নেওয়ার ফলে ইহাকে যে কোনো কাজে ব্যবহার করার পূর্ণ বৈধ অধিকার তাহাদের একান্তভাবেই রহিয়াছে। দেশ ও জাতির প্রয়োজনে দেশের প্রধান, সুলতান বা খলীফা যে কোন ব্যাপারে যে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিতে পারেন। নৈতিক ও সামরিক দৃষ্টিতে ইহাতে কোন প্রকারের বাধা থাকিতে পারে না।

২৭ হাজার নথিপত্রের ম্যানুয়ালি যাচাই করার পরে পাওয়া গেল আয়া সোফিয়া ক্রয়ের মূল দলিলঃ

তুরস্কের আদালত আয়া সোফিয়াকে জাদুঘর থেকে পুনরায় মসজিদে রূপান্তরের রায় দেওয়ার পরপরই কিছু দিন পূর্বে এই বিষয়টি তুরস্ককে সুশীল সমাজের ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়িতে হইয়াছিল। এই অন্ধ সমালোচনার কাজে শুধু তাহারাই ব্যস্ত ছিলেন বিষয়টি এমন নয়, অন্য ধর্মাবলম্বীগণের পাশাপাশি ইতিহাসে অজ্ঞ নামধারী কিছু মুসলিমকেও যখন আক্ষেপের তীর নিক্ষেপ করিতে দেখা যায় তখন তুরষ্কের রাষ্ট্রীয় মহাফেজখানায় রক্ষিত হাজার হাজার বছরের পুরানো ২৭ হাজার নথিপত্রের ম্যানুয়ালি যাচাই করা হইয়াছিল এবং সৌভাগ্যবশত তাহারা একটি মূল শিরোনাম দলিল (ওয়াকফ সম্পত্তির মালিকানা দলিল) স্পষ্টভাবে খুঁজিয়া পাইয়াছিলেন।



Title of deed of hagia Sophia..

এরপর প্রকৃত মালিক কর্তৃপক্ষ একটি দরখাস্ত দায়ের করে, যাহাতে তাহাদের সম্পত্তি তাহারা পূর্ণ স্বাধীনতার সাথে ব্যবহার করিতে পারে। একই সাথে তাহারা এটিকে একটি মসজিদে রূপান্তরিত করিয়া দিতে অনুরোধ জানায়, ঠিক যেভাবে এটি ক্রয়ের প্রথম দিন হইতে ব্যবহৃত হইয়া আসিয়াছে।

সমস্ত ঐতিহাসিক দলিল এবং হিস্টোরিক্যাল ফ্যাক্টস ইহাই প্রমাণ করিতেছে যে, আয়া সোফিয়াকে ঘিরিয়া খ্রিস্টান সম্প্রদায় ও পশ্চিমা বিশ্বের সকল অভিযোগ মিথ্যা। শুধু মিথ্যা নহে, বরং ডাহা মিথ্যা। এ ব্যাপারে তুরস্কের সমালোচনা করার কোনো নৈতিক অধিকার তাহাদের নাই, কারণ- এটি একান্তই তুরস্কের বিচারিক বিষয়। বাহিরের কোনো দেশ কিংবা পক্ষ ইহাতে কোনোভাবে হস্তক্ষেপ করার অধিকার কোনোভাবেই রাখেন না।

আল্লাহ তায়ালা রহম করুন প্রেসিডেন্ট এরদোগানের প্রতি। ৫৬৭ বছর পূর্বে আল্লাহর এক নিবেদিত গোলাম উসমানীয় খলিফা আবুল ফাতিহ সুলতান মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে আয়া সোফিয়াকে মসজিদে রূপান্তরিত করিয়াছিলেন অত্যন্ত স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এবং ৫৬৭ বছর পর আল্লাহ তাআ'লার আরেক নিবেদিত গোলাম রজব তাইয়েব এরদোগান পুনরায় সেটিকে অত্যন্ত স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পুনরায় মসজিদে রূপান্তরিত করিয়া উহাকে সেটির প্রকৃত মালিকানা প্রতিষ্ঠানের কাছে অর্পণ করিলেন।

আল্লাহ তাআ'লা এবং পরকালে বিশ্বাসী হিসাবে আমরা প্রিয় নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি যারা বিশ্বাস এবং ভালোবাসা পোষন করি তাহাদের বিশ্বাস করিতে হইবে যে, ইস্তাম্বুল বিজেতা খলিফা আবুল ফাতিহ সুলতান মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি ইনশা’আল্লাহ একজন জান্নাতী। কারণ, ইহাই ছিল রাসূলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ভবিষ্যত বাণী। তিনি বলিয়াছিলেন যে, মুসলমানদের যারা ইস্তাম্বুল বিজয় অভিযানে শামিল থাকিবে, তাহারা জান্নাতী। একজন জান্নাতী মানুষের অন্ত:স্থলের অব্যক্ত দুআ বর্ষিত হউক প্রেসিডেন্ট এরদোগান এবং তাঁহার সঙ্গী সাথীগণের প্রতি।

একনজরে আয়া সোফিয়ার জীবনকালঃ

কথা হইতেছে, অর্থের বিনিময়ে সন্নিহিত ভূমিসহ যে স্থাপনাটি ক্রয় করিয়া নেওয়া হইয়া থাকে, সেই স্থানে কি করা হইবে বা সেই জমি ও স্থাপনা কি কাজে ব্যবহার করা হইবে, ইহা তো জমি যাহারা কিনিয়া থাকেন একমাত্র তাহারাই নির্ধারণ করার অধিকার রাখেন। সুতরাং, আয়া সোফিয়াকে পুনরায় নামাজের জন্য উম্মুক্ত করিয়া দেওয়ায় 'নাঁকি কান্নার' সুযোগটা আর থাকিতে পারে কোথায়? আসুন, আয়া সোফিয়ার ধারাবাহিক সংক্ষিপ্ত ইতিহাসটাতেও একটু চোখ বুলাইয়া আসি-

-ইস্তাম্বুলের গোল্ডেন হর্ন নামক স্থানে একটি গির্জা আকারের বৃহৎ স্থাপনা তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেন তৎকালীন বাইজান্টাইন সম্রাট। তখন সম্রাট ছিলেন প্রথম জাস্টিনিয়ান। তার আদেশেই এই আয়া সোফিয়ার নির্মাণ কাজ শুরু হইয়াছিল ৫৩২ খৃষ্টাব্দে। ইস্তাম্বুল শহরের নাম ছিল তখন কনস্টান্টিনোপল, যাহা ছিল বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যের রাজধানী – পূর্ব রোমান সাম্রাজ্যও বলা হইত ইহাকে। আয়া সোফিয়ার নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয় ৫৩৭ সালে।

-১৪৫৩ সালে অটোমান সম্রাটদের হাতে কনস্টান্টিনোপল এর পতনের পর অটোমান বা ওসমানি সাম্রাজ্যের তৎকালীন মুসলিম শাসক ফাতিহ সুলতান মুহাম্মদ নিজ অর্থায়নে এটি খৃস্টানদের নিকট হইতে ক্রয় করিয়া মসজিদে রূপান্তরিত করেন

-তখন হইতে এখানে অটোমান সম্রাট নামাজ পড়ার ব্যবস্থা করেন এবং ইহাতে ৪ টি মিনার স্থাপন করেন। কুরআনের বানী দিয়ে ইহার সৌন্দর্য্যও বৃদ্ধি করা হয়।

-ইস্তাম্বুল বিজয়ের আগে ৯১৬ বছর আয়া সোফিয়া খৃস্টানদের দ্বারা ব্যবহার হইয়া আসিতেছিল।

-১৯২৩ সালে মুসলিম নামধারী পাশ্চাত্যের পদলেহী ধর্মনিরপেক্ষতাবাদে উদ্বুদ্ধ কামাল পাশা তুরস্ক কেন্দ্রিক উসমানি খেলাফতের বিলুপ্তি ঘোষণা করিয়া সেকুলার শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করিয়াছিলেন। তবে তাহার শাসনামলেও দীর্ঘ আট বছরকাল যাবত ইহা মসজিদ হিসাবেই ব্যবহৃত হইয়াছিল। অতঃপর ১৯৩৪ সালের দিকে ধর্ম নিরপেক্ষতা চালু করার প্রেক্ষাপটে তিনি মসজিদটিকে জাদুঘরে রূপান্তরের মহাঅপকর্মটি করিয়াছিলেন। আল্লাহ তাআ'লা তাহাকে ক্ষমা করুন।

-১৯৩৫ সালে জাদুঘরে রূপান্তর করার আগে তৎকালীন সরকার ৪ বছর পর্যন্ত মসজিদটিকে বন্ধ করিয়া রাখিয়াছিল। পরে ৮৬ বছরকালব্যাপী ইহা জাদুঘর হিসাবে ব্যবহৃত হইয়াছিল।

-অটোমান সাম্রাজ্যের কেন্দ্রবিন্দু আয়া সোফিয়া ১৪৫৩ থেকে ১৯৩৪ সাল পর্যন্ত (প্রায় ৫০০ বছর) ব্যবহার হইয়াছিলো মসজিদ হিসাবে

-১৯৮৫ এর দিকে তুরস্কের সবচেয়ে দর্শনীয় স্থান (প্রতি বছর প্রায় ৩৭ লক্ষ পর্যটক স্থাপনাটি দেখতে আসেন) আয়া সোফিয়া ইউনেস্কো এর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান করিয়া নেয়।

-১০ জুলাই/২০২০ তুরষ্কের আদালত আয়া সোফিয়াকে জাদুঘর বানানোর ডিক্রি (১৯৩৪ সাল) বাতিল করিয়া ইহাকে পুনরায় তাহার আসল অবস্থা অর্থাৎ মসজিদের রূপে ফিরাইয়া আনার আদেশ প্রদান করেন। তবে একই সাথে আদালত কর্তৃক সকল ধর্ম-বর্ণের মানুষের জন্য উম্মুক্ত ঘোষনা করা হয় বিশ্ব ঐতিহ্যের অন্যতম ধারক এই মসজিদটিকে। সকলেই ইহাতে প্রবেশাধিকার রাখিবেন এবং সকল শ্রেণির দর্শনার্থীদের জন্য ইহাকে বাধাহীন হিসাবে রাখার ঘোষনা প্রদান করা হয়।

ইহার অর্থ- আমরা দেখিতে পাইতেছি যে, ৫৩৭ খৃস্টাব্দে আয়া সোফিয়া নির্মাণের পর হইতে ১৪৫৩ খৃস্টাব্দ পর্যন্ত পরবর্তী ৯১৬ বছর ইহা খৃস্টানদের দ্বারা পরিচালিত হয়। ইহার পরে অর্থাৎ, ১৪৫৩ খৃস্টাব্দ হইতে স্থাপনাটি পরবর্তী দীর্ঘকাল, অর্থাৎ খৃস্টানদের নিকট হইতে মুসলিমগণ ইহাকে ক্রয় করার পর হইতে একটানা প্রায় ৫০০ বছর (১৪৫৩ থেকে ১৯৩৪ খৃস্টাব্দ) যাবত ইহা মুসলিমদের তত্ত্বাবধানে মসজিদ হিসাবে ব্যবহৃত হইয়া আসিতেছিল। এই একটানা ৫০০ শত বছরকালব্যাপী মসজিদ হিসাবে ব্যবহৃত হইয়া আসা এই স্থাপনাটিকেই পরবর্তীতে আবার জাদুঘরে রূপান্তর করিয়া পাশ্চাত্যের আস্থাভাজন হওয়ার চেষ্টা করিয়াছিলেন তুরষ্কের তৎকালীন পাশ্চাত্য প্রভাবিত শাসক মোস্তফা কামাল আতাতুর্ক পাশা।

এইভাবেই বিবর্তনের ধারাবাহিকতায় নানান চড়াই উৎড়াই পার করিয়া গত ২৪ জুলাই ২০২০ ইং তারিখ রোজ শুক্রবার জুমুআর নামাজ আদায়ের মাধ্যমে পুনরায় মসজিদের যুগে ফিরিয়া আসে আয়া সোফিয়া। সুতরাং, যাহারা না জানিয়া মায়াকান্নার মাতম তোলাদের দলে ভিড়িবেন কি ভিড়িবেন না ভাবিয়া দোটানায় আছেন, আশা করি, বিভ্রান্তির অপনোদনে সেইসব সত্যানুসন্ধানীদের জন্য এতটুকু সত্য ইতিহাসই যথেষ্ট হইবে। ইহাতে এরদোগান ভদ্রলোকও রেহাই পাইবেন অসত্য ক্ষোভ এবং তিরষ্কারের হাত হইতে।

একটি প্রশ্নঃ

তুরষ্কের আয়া সোফিয়া তো সেই ভূমিসমেত ১৪৫৩ সালে স্থাপনাটি ক্রয়ের পর হইতে কামাল পাশার অনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে জাদুঘরে পরিনত হওয়ার পর থেকে মাত্র ৮৬ বছর বাদে বাকি সময়টা অর্থাৎ প্রায় ৫০০ বছর (১৪৫৩ থেকে ১৯৩৪ খৃস্টাব্দ) যাবত মসজিদ হিসাবেই ব্যবহৃত হইয়া আসিতেছিল। আর এই পর্যায়ে আসিয়া জনাব এরদোগান তো অন্য কোনো ধর্মের প্রার্থনালয়কে জবরদখল করিয়া আনিয়া, সেই ধর্মের লোকদেরকে জোরপূর্বক বিতাড়িত করিয়া আয়া সোফিয়াকে মসজিদে রূপান্তর করেন নাই। অথচ এই আয়া সোফিয়াকে মসজিদে রূপান্তরের ঘটনায় কাহারও কাহারও হৃদয় ভাঙ্গিয়া চৌচির হইলেও আমাদের পার্শ্ববর্তী বন্ধুপ্রতিম(!) দেশ ভারত বাবরি মসজিদের ক্ষেত্রে যাহা ঘটাইয়া চলিতেছে তাহাতে তো দেখি, উহারা কোনো কথা বলিতে চাহেন না, বরং মুখে কেবলই কুলুপ আটকাইয়া নিরবতা পালনের ব্রত পালন করিয়া যাইতে ভালোবাসেন। ইহার মাজেজা বোধগম্য হইয়া উঠিতেছে না! কিন্তু জানিতে বড়ই ইচ্ছা হয়! এই প্রকারের বৈষম্য খুবই ভাবায়ও বৈকি! ইহাকে কোন প্রকারের চরিত্রে আখ্যায়িত করা যায়, দয়া করিয়া যদি কেহ বলিতেন!

যুগে যুগে দেশ দখলের পরে খৃস্টানদের অন্য ধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয় দখলের কিছু নমুনাঃ

ঐতিহাসিকভাবে এই কথার সত্যতা রহিয়াছে যে, খোদ ভ্যাটিক্যানে অবস্থিত সেন্ট পিটার্স বেসিলিকা যাহা খৃস্টানদের সবচেয়ে বড় গীর্জা, তাহা কিন্তু রোমান বিভিন্ন মন্দিরের উপরেই নির্মিত হইয়াছে। যখন স্পেনের খৃস্টানরা সরকারি তদন্তের নামে স্পেন হইতে মুসলমানদের বাহির করিয়া দিয়াছিল, তখন কিন্তু তাহারা কর্ডোভার সবচেয়ে বড় মসজিদটিকে গীর্জায় পরিনত করিয়াছিল - যেখানে আজও পর্যন্ত মুসলমানদের নামাজ পড়া নিষিদ্ধ রহিয়াছে।

অনেক মসজিদ তো একেবারেই ধ্বংস করিয়া দেওয়া হইয়াছে। অনেকগুলোকে চার্চে পরিনত করা হইয়াছে। একইভাবে স্পেনিশরা যেখানেই গিয়াছে, সেখানেই অন্যদের ইবাদতখানাকে তাহারা গীর্জায় রূপান্তরিত করিয়াছে। আজকের যে মেক্সিকো সিটি মেট্রোপলিটন ক্যাথড্রেল ইহা মূলতঃ নির্মিত হইয়াছে অ্যাজটেক মন্দিরের উপরে। স্পেন মেক্সিকো বিজয়ের আগে সেখানে অ্যাজটেক জাতির সাম্রাজ্য ছিল। স্পেনিশরা তাহাদের মন্দিরের উপর নির্মাণ করিয়া নিল আজকের মেক্সিকো সিটি মেট্রোপলিটন ক্যাথড্রেল।

গ্রীসের থেসেলোনিকিতে অবস্থিত প্রোফেট এলিজার চার্চ মূলতঃ ছিল একটি মসজিদ। ইহাকে গীর্জায় পরিণত করা হইয়াছে। বুলগেরিয়ার সেভেন সেন্টস চার্চও মসজিদ হইতে রুপান্তরিত চার্চ। ক্রোয়েশিয়াতে ৩টি উসমানিয় আমলের মসজিদকে চার্চ বানানো হইয়াছে। ভিয়েতনামে ফরাসীরা বৌদ্ধ মন্দির ধ্বংস করিয়া সেন্ট জোসেফ ক্যাথড্রেল নির্মাণ করিয়াছে।

এই পরিসংখ্যান দেখিয়া কেহ বিভ্রান্ত হইবেন না আশা করি। কারণ, ইহা অতি সামান্য পরিসংখ্যান। ইহার প্রকৃত সংখ্যা অনেক বড়। সুতরাং বুঝিতে না পারার কথা নহে যে, অন্য ধর্মের ধর্মীয় উপসনালয় কোনোক্রমে নিজেদের দখলে আসিয়া পড়িলে উহাকে যথেচ্ছ অপব্যবহার করার সুনাম ইতিহাসে কাহাদের যথেষ্ট পরিমানে রহিয়াছে। খৃস্টানদের ইতিহাসে অন্যদের ইবাদতখানাকে গীর্জা বানানোর নজির একটি দু'টি নয় অনেক অনেক। খোদ সাবেক বিশ্ব মোড়ল রাশিয়ায় বিগত কয়েক শতাব্দীতে শত শত মসজিদকে পানশালা, নর্তকীদের আসর কিংবা গো-শালা বানানোর ইতিহাস বিশ্ববাসীর সামনে এখনও জ্বলজ্বল করিয়া ফিরিতেছে। ইহাই যাহাদের ইতিহাস, তাহারাই কি না আজ আয়া সোফিয়ার আসল স্বরূপে অর্থাৎ, মসজিদে প্রত্যাবর্তনে মায়াকান্নার মাতম তুলিতে চায়! সত্যিই সেলুকাস! ধরণী তুমি দ্বিধা হও!

ইহার বিপরীতে মুসলমানদের দেড় হাজার বছরের ইতিহাস তালাশ করিয়া এমন একটি উদাহরণ কেহ খুঁজিয়া আনিতে পারিবেন? পাওয়া যাইবে না। পৃথিবীতে এমন কোনো নজীর নাই যে, মুসলমানেরা অন্য ধর্মের কোনো উপাসনালয়কে খারাপ কিছুতে রূপান্তরিত করিয়াছেন। স্পেনে মুসলমানদের ভাগ্য বিপর্যয়ের পরে সেখানকার বহু মসজিদকে মদের বার ও ড্যান্স ক্লাবে পরিণত করা হইয়াছে এবং বহু মুসলমানকে জোরপূর্বক খৃষ্টান ধর্মে দিক্ষিত করা হইয়াছে। ইহা তো সেদিনকার কথা, মুসলমানদের মসজিদকে মদের বার বানাইয়াছে দখলদার মধ্যপ্রাচ্যের বিঁষফোড়া ইসরাইল।

মুসলমান নামধারীদের মধ্যে যাহারা আজ ‘আয়া সোফিয়া’কে তাহার আসল পরিচয়ে ফিরাইয়া আনার ঘটনায় তীব্র উষ্মা প্রকাশ করিতেছেন, এমনকি ইতিহাসের পাতা উল্টাইয়া সত্য ঘটনাগুলো দেখিয়া লওয়ারও প্রয়োজন মনে করিতেছেন না- তাহাদের নিকট বিনীত প্রশ্ন, চীন, রাশিয়া প্রভৃতি দেশ সাম্প্রতিক কয়েক শতকে তাহাদের দেশের অসংখ্য মসজিদ মাদরাসাকে পানশালা ও পতিতালয়ে রূপান্তরিত করিয়াছে, এইসব ঘটনা কি আপনাদের চোখে পড়ে? না কি এসব সত্য আপনাদের দেখিতে অনিহা? এইসব বর্বরতা প্রত্যক্ষ করার পরেও আপনাদের কান্না আসে না কেন? অথচ এরদোগান তো ক্রয়কৃত জমিতে পুরাতন মসজিদকে তাহার আসল রূপে ফিরাইয়া নিয়াছেন মাত্র! তো ইহাতে এত মায়াকান্নার কি থাকিতে পারে!

পৃথিবীতে বহু স্থানে আজও মুসলমানগণ অমুসলিমদের বর্বর অত্যাচারে ধর্মীয় অধিকার হারাইয়া মানবেতর জীবনযাপনে বাধ্য হইতেছেন। মানবিক নূন্যতম অধিকার তাহাদের নাই।

চীনে কম করিয়া হইলেও দশ লক্ষাধিক মুসলমান বছরের পর বছর ধরিয়া বন্দিদশায় রহিয়াছেন। অধিকার বা মানবাধিকার বলিতে তাহাদের কিছু নাই। সর্বস্ব হারানো নিঃস্ব এইসব মুসলমানের চোখে এখন আর কোনো স্বপ্ন নাই। ভবিষ্যতের উজ্জ্বল রঙিন কোনো ছবি নাই। গাড়ি বাড়ি কিংবা একটু ভালোভাবে জীবনযাপনের কোনো আশা তাহাদের অবশিষ্ট নাই। তিলেতিলে নিঃশেষ হওয়াই যেন তাহাদের নিয়তি। প্রতিনিয়ত নির্যাতন আর নিষ্পেষনই তাহাদের বর্তমান। বাবা জানেন না, কখন তাহার কিশোরী মেয়েটিকে সরকারের লোকেরা নিজেদের ভোগের জন্য ধরিয়া নিয়া যাইবে। মা-ও জানেন না, সৈনিকদের মনোরঞ্জনের জন্য সংসার ছাড়িয়া কখন তাহাকে সেনা ক্যাম্পে ধরিয়া নিয়া যাওয়া হইবে। যুবক ছেলেটি জানে না, স্বজাতির সকল মানবাধিকার পদদলিত করার বিরুদ্ধে সামান্য প্রতিবাদের কারণে কখন তাহার বুকে সরকারের ঘাতক বাহিনীর শেষ বুলেটটি বিদ্ধ হইবে।

মূলতঃ তাহাদের ভবিষ্যত অন্ধকার। তাহারা জানেন না, তাহারা কোন অপরাধে অপরাধী। কিন্তু বস্তুতঃ তাহাদের অপরাধ একটাই। তাহা হইলো, তাহারা মুসলমান। মুসলমান হওয়ার মহাঅপরাধে তাহারা অপরাধী। তাহাদের ব্যাপারে আপনাদের বক্তব্য কি? তাহাদের কথা স্মরণ হইলে আপনার চোখ কখনো কি অশ্রুসজল হইয়া ওঠে? এই নিঃস্বদের জন্য দুই ফোটা অশ্রু বিসর্জন দেওয়ার ফুরসত কখনো কি আপনার হইয়াছে?

হাদিসের ভাষ্য, আযানের ধ্বনি শয়তানের গায়ে জ্বালাপোড়া ধরাইয়া দেয়ঃ

বস্তুতঃ তুরষ্কের মহান প্রেসিডেন্ট এরদোগান একটি ভালো কাজ করিয়াছেন। তিনি মসজিদকে মসজিদের অবস্থায় ফিরাইয়া আনিয়াছেন। কেহ কেহ ইহাকে খুব বড় কোনো কাজ মনে না করিলেও দীর্ঘ দিন থামিয়া থাকার পরে পৃথিবীর পুরাতন একটি স্থান হইতে অন্ততঃ আল্লাহ তাআ'লার বড়ত্বের ঘোষনা আবার উচ্চারিত হইতে থাকিবে, ইহাই শান্তি এবং প্রশান্তির কথা। আযানের মাধ্যমে 'আল্লাহু আকবার', 'আল্লাহ মহান' -এর সুউচ্চ আহবান যখন ধ্বনিত হইতে থাকে মসজিদের মিনার থেকে, হাদিসের ভাষ্যমতে, শয়তানের গায়ে তখন জ্বালাপোড়া ধরিয়া যায়। দিক বিদিক জ্ঞানশুন্য হইয়া সে বাঁচিবার জন্য পশ্চাদ্ধার দিয়া বায়ু ত্যাগ করিতে করিতে ভাগিয়া যাইতে থাকে। আয়া সোফিয়ার ঘটনায় যাহাদের জ্বালাপোড়া শুরু হইয়াছে, বুঝার প্রয়োজন রহিয়াছে- তাহারা কাহারা এবং কেন তাহাদের এই জ্বালাপোড়া!

শেষের প্রার্থনাঃ

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা তাহার বড়ত্বের এই আহবানকে আমাদের অন্তরের শান্তি এবং প্রশান্তিতে পরিণত করিয়া দিন। তুরষ্কের প্রেসিডেন্ট হাফেজ রজব তাইয়্যেব এরদোগানের এই মহান কাজটিকে কবুল করুন। বাইতুল মুকাদ্দাস, বাবরি মসজিদসহ বিশ্বের সকল প্রান্তে শিকল পড়া, জিঞ্জিরাবদ্ধ মসজিদগুলোকে মুক্ত করার হিম্মত ও যোগ্যতা বহুধাবিভক্ত মুসলিম জাতিকে দান করুন। চরম নির্যাতিত উইঘুর ও আরাকানের মুসলিম, মসজিদ, মকতব এবং মাদরাসাগুলোকে আবার পূর্বের চেয়ে ভালো অবস্থায় ফিরাইয়া আনার তাওফিক দান করুন।

তথ্যসূত্র ও কৃতজ্ঞতাঃ

www.wikipedia.org।
https://www.quora.com/Why-does-Turkey-want-to-turn-Hagia-Sophia-to-a-mosque-even-if-it-means-losing-a-lot-of-money-from-tourists-visiting-it
www.islamicity.org
https://www.dailyinqilab.com/article/310157/আয়া-সোফিয়ায়-প্রথম-জুমায়-মুসল্লির-ঢল
https://islamtime24.com/2020/07/14/ইতিহাস-ও-ইসলামের-আয়নায়-আয়/
https://islamtime24.com/2020/07/13/যুগে-যুগে-দেশ-দখলের-পর-খৃস/
https://www.ummah24.com/?p=31459
https://www.bbc.com/bengali/news-53527726
https://www.bbc.com/bengali/news-53267334
ইসলামের ইতিহাস সম্পর্কিত সংশ্লিষ্ট বইপত্র।
সাম্প্রতিক প্রকাশিত অন্যান্য পত্র পত্রিকা ও জার্নাল।



ছবিঃ অন্তর্জাল।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে আগস্ট, ২০২০ সকাল ৯:৩৭
২৩টি মন্তব্য ২৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পিরিতের সংস্কৃতিওয়ালা তুমি মুলা’র দিনে আইলা না

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৬


---- আমাদের দেশে ভাষা, সংস্কৃতি এবং সামাজিক সমুন্নয়ন তলানিতে। তেমন কোন সংস্কৃতিবান নেই, শিরদাঁড়া সোজা তেমন মানুষ নেই। সংস্কৃতির বড় দান হলো ভয়শূন্য ও বিশুদ্ধ আত্মা। যিনি মানবের স্খলনে, যেকোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসরায়েল

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮

ইসরায়েল
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

এ মাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ বাবাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
নিরীহ শিশুদের হত্যা করেছে ইসরায়েল
এই বৃ্দ্ধ-বৃদ্ধাদের হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ ভাইক হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ বোনকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
তারা মানুষ, এরাও মানুষ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

গ্রামের রঙিন চাঁদ

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১২


গ্রামের ছায়া মায়া আদর সোহাগ
এক কুয়া জল বির্সজন দিয়ে আবার
ফিরলাম ইট পাথর শহরে কিন্তু দূরত্বের
চাঁদটা সঙ্গেই রইল- যত স্মৃতি অমলিন;
সোনালি সূর্যের সাথে শুধু কথাকোপন
গ্রাম আর শহরের ধূলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১৭



পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের ধ্বংসাবশেষঃ
পালবংশের দ্বিতীয় রাজা শ্রী ধর্মপালদেব অষ্টম শতকের শেষের দিকে বা নবম শতকে এই বিহার তৈরি করছিলেন।১৮৭৯ সালে স্যার কানিংহাম এই বিশাল কীর্তি আবিষ্কার করেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরবাসী ঈদ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:২৩

আমার বাচ্চারা সকাল থেকেই আনন্দে আত্মহারা। আজ "ঈদ!" ঈদের আনন্দের চাইতে বড় আনন্দ হচ্ছে ওদেরকে স্কুলে যেতে হচ্ছে না। সপ্তাহের মাঝে ঈদ হলে এই একটা সুবিধা ওরা পায়, বাড়তি ছুটি!... ...বাকিটুকু পড়ুন

×