নারী ও শিশু নির্যাতন : অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সফলতা প্রশংসনীয়
নারীর প্রতি নিষ্ঠুরতা, শিশুদের প্রতি অমানবিকতা সাম্প্রতিককালে দেশে ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। নারী ও শিশু নির্যাতনে পেছনের রেকর্ড সম্ভবতঃ ভেঙ্গে গেছে। পেপার পত্রিকায় প্রকাশিত নির্যাতন নিপীড়নমূলক সংবাদগুলো দেখে এমনটাই মনে হচ্ছে। নির্যাতনের ঘটনা বাড়ছে দিনকে দিন। এসব পাশবিকতা দেখে দেখে নিজের কাছে নিজেকে বড় অসহায় লাগে। নির্যাতিতা নারী শিশুদের জন্য কিছু করতে পারছি না ভেবে খারাপ লাগছে। কিভাবে আমাদের এই সুন্দর দেশকে ধর্ষকমুক্ত করা যায়, ভেবে পাচ্ছি না। চারিত্রিক সংশোধন স্কুল, কলেজ, মাদরাসার পড়াশোনার সিলেবাসে হয়তো কভার করে না। এর জন্য দরকার পারিবারিক, সামাজিক এবং ধর্মীয় অনুশাসনের। ধর্মীয় বিধি বিধানের সঠিক চর্চা ও যথাযথ প্রয়োগ। এইগুলোই একজন মানুষকে সত্যিকারের মানুষ বানাতে পারে।
সাম্প্রতিক আমরা বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করেছি, সিলেটের এমসি কলেজে সংঘবদ্ধ ধর্ষনের ঘটনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বেশ কিছু ধর্ষন ও নারী শিশু নির্যাতনের ঘটনা আলোচিত হয়েছে। কলেজ পড়ুয়া জেনারেল শিক্ষিতরা ধর্ষন ইত্যাদি অপরাধ করলেও এক্ষেত্রে কুরআন হাদিস যারা পড়েন এবং পড়ান, যারা আলেম, ইমাম- তাদেরকে আমাদের দেশের মানুষ বিশেষ সম্মান ও মর্যাদার চোখে দেখে থাকেন। আলাদা শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা পোষন করেন তাদের প্রতি। এই শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা কুরআন হাদিসের প্রতি, রাসূলে পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি, স্বয়ং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার প্রতি। এটি ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে। যারা এই শ্রদ্ধার শিকল কেটে দিতে চায়, যারা এই বিশ্বাসকে হত্যা করতে চায়, তাদের বিচার আরও কঠোরভাবে হওয়া উচিত।
গভীর রাতে মাদরাসা প্রধান ধর্ষন করেছেন ছাত্রীকেঃ
কওমি মাদরাসার প্রধান শিক্ষক ও পরিচালক গভীর রাতে আবাসিক মাদরাসায় থাকা ঘুমন্ত ছাত্রীকে ডেকে নিয়ে ধর্ষন করেছেন। মাদ্রাসায় ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ, সুপার পলাতক সংবাদে লেখা হয়েছে- তিনি না কি আলেম। তার নামের সাথে যুক্ত করা হয়েছে 'মাওলানা' শব্দটি। মাদরাসার প্রধান হিসেবে তার ডেজিগনেশনে বলা হয়েছে তিনি 'সুপার'। আমি বলি, তিনি জঙ্গলে পরিপূর্ণ আগাছায় ভরা খেত মাত্র। তার ভেতরে তো পশুর বিচরণ। মানুষ হবার শিক্ষা তিনি লাভ করেননি। তাকে সুপার বলা অন্যায়। কারণ, আমার বিশ্বাস, এই ভদ্রলোক 'সুপার' Super বা superintendent শব্দটি বানানও করতে পারবেন না। কেমনে পারবেন? জানলে তো? তার তো এগুলো জানার কথা নয়। তো প্রশ্ন হচ্ছে, এইসব লোককে সুপার বলে সুপার শব্দটির অবমাননা হচ্ছে কি না, সেটাই এখন প্রশ্ন। ইমাম, মুআজ্জিন আর মাদরাসার মুহতামিম যিনি বা যারাই এমন ঘৃণ্য কাজে লিপ্ত হবেন- এদেরকে প্রকৃত বিচারের আওতায় দরকার। তবে, অনেকে ধর্ষকদের মৃত্যুদন্ডের বিধান রেখে আইন সংশোধনের দাবি তুলেছেন। সরকারও এ বিষয়ে আন্তরিকভাবে কাজ করছেন বলে জানা গেছে। তবে এর পাশাপাশি, খোজাকরণের বিষয়টিও বিবেচনায় রাখা যায় কি না ভেবে দেখার অনুরোধ, কারণ, এটিও কিন্তু ভালো একটি প্রতিষেধক বটে।
তাদের এই আন্তরিকতাপূর্ণ সাহসী ভূমিকা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়ঃ
ইদানিংকার প্রায় প্রতিটি নারী-শিশু ধর্ষন ও নির্যাতনের ঘটনায় র্যাব, পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী অন্যান্য বাহিনীর দ্রুততার সাথে যথাযথ পদক্ষেপ আমাদের ন্যায় বিচারপ্রাপ্তির প্রত্যাশাকে বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। অপরাধ দমনে, অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার ক্ষেত্রে তাদের এই আন্তরিকতাপূর্ণ সাহসী ভূমিকা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। এজন্য তাদেরকে সর্বান্তকরণে সাধুবাদ জানাচ্ছি।
সাম্প্রতিককালে সংঘটিত প্রায় প্রতিটি অপরাধের ঘটনায় র্যাব, পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী অন্যান্য বাহিনীর সদস্যগণ অবিশ্বাস্য দ্রুততায় অপরাধীদের উল্লেখযোগ্য অংশকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে পেরেছে। এক্ষেত্রে আমরা দেখেছি, অধিকাংশ ঘটনায় আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চৌকষ সদস্যগণ আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে চমকপ্রদ নৈপূন্য দেখিয়েছেন এবং দারুন সাফল্য পেয়েছেন। এজন্য তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা।
কিন্তু জানি না, কোন অদৃশ্য কারণে নারী নির্যাতন, নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা, নারী ধর্ষন, শিশু ধর্ষন, ছেলে শিশু বলাৎকারের ঘটনাগুলো ঘটেই চলেছে! কার গোপন হাতের অঙ্গুলি হেলনে একই অপরাধের পুনরাবৃত্তি চলছেই। কমছে না, থামছে না অপরাধ, বেড়েই চলেছে অপরাধীদের সংখ্যা! প্রতি দিন, প্রতিনিয়ত কেন বেড়েই চলেছে এই সংখ্যা, এরও কারণ খুঁজে পাচ্ছি না।
আইনকে নিজের গতিতে চলতে দেয়া উচিতঃ
'আইনের ফাক ফোকর' বলে একটা কথা আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে। কথাটা কতটুকু সত্য বা মিথ্যা, অথবা, এ কথার বাস্তবতা আসলেই আছে কি না, তা প্রশ্ন সাপেক্ষ, ব্যাখ্যা সাপেক্ষও বটে। কিন্তু নারী ও শিশুদের প্রতি নৃশংসতার ঘটনায় সত্যিকারার্থে যারা যুক্ত এমন অপরাধীদের প্রতি মানবতাবোধ থাকা, তাদের পক্ষে আইনি সাপোর্ট দেয়া কতটুকু উচিত? কতটুকু নৈতিক? একজন ধর্ষকের পক্ষে আইনি সহায়তা দেয়ার বিষয়টি আসলেই কি উচিত?
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই অক্টোবর, ২০২০ সকাল ১১:১৬