শেকল ভেঙ্গে সিজদাঃ
আয়া সোফিয়াকে নামাজের জন্য খুলে দেয়া হয়েছে। অনেকের মনে কষ্ট। ব্যাথার ঢেউ। কেন এমন করা হলো। কেন করা হলো, প্রশ্নটা আমারও ছিল। কিন্তু আধুনিক তুরস্কের জনক খ্যাত মোস্তফা কামাল পাশার উদ্যোগ ও কর্মসূচীর সামান্য ইতিহাস জানা থাকলে প্রশ্নগুলোর উত্তর পেতে বেশি হয়রান হওয়ার প্রয়োজন হয় না। চলুন ইতিহাসের পাতায় ঘুরে আসি সামান্য সময়।
আধুনিক তুরস্ক গঠন এবং মোস্তফা কামাল পাশার ইসলাম ধর্মের প্রতি নির্মমতাঃ
এককালে সুদীর্ঘ সময় যাবত গোটা মুসলিম বিশ্বকে নেতৃত্বদানকারী তুরস্কের সার্বিক অবস্থা হঠাৎ পাল্টে যায় বিংশ শতাব্দির প্রথমার্ধের মাঝামাঝি সময়ে। এ সময় আধুনিক তুরস্কের জনক অভিধায় খ্যাত মোস্তফা কামাল পাশা দেশটির ক্ষমতার মসনদে আসীন হন। ১৯২২ সালে মুসলিম বিশ্ব থেকে খেলাফতের মর্যাদাকে মিটিয়ে দিয়ে তুর্কি প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করেন তিনি। হয়তো তিনি ‘ইউরোপের রুগ্ণ পুরুষ’ খ্যাতি পাওয়া তুরস্ককে উন্নতি ও অগ্রগতির দিক থেকে পাশ্চাত্যের সমকক্ষ করার স্বপ্ন দেখেছিলেন। হয়তো তিনি তুরস্ককে সামরিক, অর্থনৈতিক ইত্যাদি সকল দিক বিচারে বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় শ্রেষ্ঠত্বের আসনে বসাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য, তিনি সেই উন্নতি, অগ্রগতি ও শ্রেষ্ঠত্বের পথে প্রধান প্রতিবন্ধকরূপে চিহ্নিত করেছিলেন ইসলামকে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, দুঃখজনকভাবে আমরা লক্ষ্য করি, উসমানি খেলাফতের সর্বশেষ শাইখুল ইসলামের মাথায় পবিত্র কুরআন ছুঁড়ে তিনি বলেছিলেন, ‘তুরস্কের উন্নতির পথে এটাই সবচে বড় বাধা!’
স্বীকার করতেই হবে, আধুনিক তুরস্ক গড়ার পেছনে মোস্তফা কামাল পাশার অবদান অনেক। বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার অবদানকে ছোট করে দেখারও কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু তিনি আধুনিক তুরস্ক গড়ে তোলার পথে প্রধান অন্তরায় সাব্যস্ত করেছিলেন ইসলাম ধর্মকে, ইসলামের যাবতীয় ধর্মাচারকে তিনি অগ্রগতি উন্নতির পথে অন্তরায় মনে করে জাতীয় জীবন থেকে ইসলাম ধর্মের সাথে যুক্ত প্রতিটি বিধান, প্রতিটি আচরণ, প্রতিটি ইবাদত, প্রতিটি সভ্যতা, প্রতিটি সৌন্দর্য্য, প্রতিটি শিষ্টাচার, ইসলামী ঐতিহ্য ও নিদর্শন, তাহযিব ও তামাদ্দুনসহ ইসলামের যাবতীয় পরিচয় সূত্রগুলো মুছে ফেলার যে পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, তার একটি ছিল তুরস্কের অসংখ্য মসজিদ মাদরাসাকে বিরাণ করে সেগুলোকে বার, নৃত্যশালা, সরাইখানা কিংবা যাদুঘর ইত্যাদিতে পরিণত করা। শত শত বছরের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী মসজিদ ‘আয়া সোফিয়াকে শিকলবন্দি করা’ ছিল সেই ধারাবাহিকতারই অংশমাত্র। তবে কামাল পাশাকে ধন্যবাদ দিতে হয় এ জন্য যে, তিনি আয়া সোফিয়াকে খৃস্টানদের হাতে তুলে দেননি; এমনকি মসজিদরূপে ব্যবহারের জন্য নির্মিত এর মেহরাবটিকেও অক্ষত রেখে শুধু শিকল দিয়ে ঘেরাও করে দিয়েছিলেন। তুরস্কের হাজার হাজার মসজিদের মত এখানেও নামাজসহ সকল প্রকার ইবাদাত বন্দেগী নিষিদ্ধ করে দিয়েছিলেন। মুসল্লিদের প্রবেশ পর্যন্ত নিষিদ্ধ করে দেন মসজিদটিতে।
তুরস্ক থেকে ইসলামকে বিদায় করতে কামাল পাশার আরও কিছু অমর কীর্তিঃ
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর যখন ইসলামী খেলাফতের পতন হয়ে গেল তখন নাস্তিক কামাল পাশা (আতাতুর্ক) তুরস্কে এমন বদদ্বীনী শাসন প্রতিষ্ঠা করল যার নজির ইতিহাসে পাওয়া যায় না। ইস্তাম্বুল যা ছিল ইসলামী বিশ্বের প্রাণকেন্দ্র এবং দারুল খিলাফা, এই খোদাদ্রোহী সেখানে দাড়ি রাখা নিষিদ্ধ করে দেয়। আরবি ভাষায় আজান দেওয়া বন্ধ করে। কুরআন শরীফ পড়া-পড়ানো সে তো অনেক দূরের কথা, কুরআন শরীফ ছাপানো পর্যন্ত নিষিদ্ধ করে ইসলাম ধর্মের সত্যিকারের দুশমন এই কামাল আতাতুর্ক।
এই খোদাদ্রোহী তুরস্ককে পুরো দুনিয়া থেকে, বিশেষ করে মুসলিম বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। আর তুরষ্ককে মুসলিম বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য যে অস্ত্র সে ব্যবহার করে তা অত্যন্ত কষ্টদায়ক।
কামাল আতাতুর্কের মূল উদ্দেশ্য ছিল মূলতঃ তুরষ্ক থেকে ইসলামকে সমূলে উৎখাত করা। ইসলাম ধর্মের আচার আচরণ, শিক্ষা, তাহজিব তামাদ্দুন, ইসলামী শরিয়াতের বিধি বিধান, ইসলামী সংস্কৃতি সভ্যতার বিদায় ঘন্টা বাজানোর অসত উদ্দেশ্যে সে তার সকল প্রকার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখে। এ লক্ষ্যে যে সকল পদক্ষেপ সে গ্রহণ করে তার মধ্যে একটি হচ্ছে তুর্কি ভাষা যা আরবি বর্ণে লিখিত হত। ফার্সি উর্দু এর মত তুর্কি ভাষাও ছিল একসময় ইসলামী জ্ঞান বিজ্ঞানের ভাষা। তুর্কী ভাষা তখন মধ্য এশিয়ার বিশাল এলাকায় প্রচলিত ছিল, যার শুরু ছিল তুরস্ক থেকে এবং উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান, কিরগিজিস্তান, কাযাকিস্তান ও তুর্কমেনেস্তিান হয়ে শেষ হত জিনজিয়াং প্রদেশে। এই জিনজিয়াং পৃথিবীর অন্যতম বড় এবং ঐতিহাসিক প্রদেশ ছিল তখন, যেখানে মুসলমানরা আজ চীনাদের হাতে নিত্য নির্যাতিত।
এ সবগুলো দেশ নিয়ে ছিল তুর্কিস্তান, যার বড় একটা অংশ দখল করে নিয়েছিল রাশিয়া। এই বিশাল এলাকায় প্রচলিত ছিল তুর্কীভাষা। আরব দেশগুলোতে ছিল আরবী। ইরান, আফগানিস্তানে প্রচলিত ছিল ফার্সি আর আমাদের হিন্দুস্তানে প্রচলিত ছিল উর্দূ, বাংলাসহ এতদঞ্চলের আঞ্চলিক অন্যান্য ভাষা। কিন্তু আরবি, উর্দু, ফার্সি এই ভাষাগুলোর বর্ণ বা লিখনশৈলি ছিল এক ও অভিন্ন। কিন্তু কামাল পাশা এই ঘৃণ্য কাজটি করেছে যে সে মুসলিম বিশ্ব থেকে তুরস্ককে বিচ্ছিন্ন করার জন্য সে তুর্কী ভাষার অক্ষর পরিবর্তন করে দিয়েছে। পরিবর্তন করে এমন বর্ণ ব্যবহার করেছে যা আংশিকভাবে ইংরেজি। কিন্তু সে তার মূর্খতাবশত পুরো ইংরেজি লেখার শৈলিও গ্রহণ করেনি। যার ফলে যারা ইংরেজি জানতো তারাও তুর্কী ভাষা বুঝতে পারে না।
এদিকে জার্মানির লিপিশৈলি ইউরোপের অন্যান্য দেশের লিপি শৈলির কাছাকাছি। কিন্তু তুর্কী লিপি শৈলি জার্মানির মতও নয়। রাশিয়ার লিপি শৈলির মতও নয়। অবশেষে না ইংরেজির সাথে মিলে, না ইউরোপের কোনো দেশের সাথে। এর ফলাফল শেষমেষ এটা হয়েছে যে, মুসলিম বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হতে গিয়ে তুর্কি জাতি গোটা দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। মোটকথা কামাল পাশা তুর্কি জাতিকে গোটা মুসলিম বিশ্ব থেকে বরং দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিল।
এবার চিন্তা করুন সে ও তার তৈরি সেনাবাহিনী ইসলাম ও মুসলমানদের কত ক্ষতি করেছে। তার সেনাবাহিনীর মধ্যে বেশীর ভাগ ছিল সেকুলার। শুধু সেকুলার নয়, তারা ছিল ইসলামের ঘোর দুশমন। সেকুলার বলা হয় কোনো ধর্মের পক্ষে বা বিপক্ষে অবস্থান নিবে না। এটাও জায়েয নয়। কিন্তু তাদের অবস্থা এরচেয়ে আরও মারাত্মক। তার তৈরি সেনাবাহিনী, তার তৈরি নীতি সবই ছিল ইসলামের দুশমনীর উপর ভিত্তিশীল।
দুনিয়াতে আল্লাহ তার কাজের পরিণতি কিছু দেখিয়েছেন। তার একটি রাজমহল ছিল। সেটি নদীর পাশে, সাধারণ বাড়িঘর থেকে কিছুটা দূরে। কিন্তু মৃত্যুর পূর্বে তার এমন দুরারোগ্য ব্যাধি হয়েছিল যে, অনেক দূর থেকে এই পাপিষ্টের চিৎকার শোনা যেত। আশপাশের মানুষ এই নরাধমের নিকৃষ্ট পরিণতি দেখে আফসোস করতেন আর বলতেন- 'হায়, ইসলাম ধর্মকে মিটিয়ে দেয়ার ফল দেখো! কামাল পাশার এই শাস্তি তার নিজেরই অর্জন। এগুলো তার সেইসব জুলূম, অত্যাচরের ফসল। শুধুমাত্র ধার্মিক হওয়ার অপরাধে অগণিত মানুষকে খুন করেছেন তিনি। সেসকল অপকর্মের করুন পরিনতি ভোগ করছেন তিনি। আল্লাহর দ্বীনকে উতখাতের অপচেষ্টার ফলাফল কতই না নিকৃষ্ট!'
কুরআন-হাদিসে ইস্তাম্বুল শহরঃ
পবিত্র কুরআনে রোম বিজয়ের কথা বলে যে শহর বোঝানো হয়েছে এটিই আয়া সোফিয়ার শহর। হাদিসে শহরটির নাম ‘আল-কুস্তুন্তুনিয়া’। এর অপর নাম ‘মদিনা জানিব মিনহা আল-বাহার ওয়া জানিব মিনহা আল-বার’ অর্থাৎ এমন শহর, যার একদিকে সাগর, অন্যদিকে স্থল। ব্যাখ্যকাররা একমত, এটা তুরস্কের ইস্তাম্বুল। নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘অবশ্যই কুস্তুন্তুনিয়া বিজিত হবে; কতই না উত্তম ওই বিজয়ের আমির! আর কতই না উত্তম বাহিনী, সেই বাহিনী!’ (মুসনাদে আহমদ)।
আল্লাহ তাআলা মুহাম্মদ আল-ফাতিহকে বিজয়ের সেই নিয়ামত দিয়েছেন।
আয়া সোফিয়া মসজিদ হলো যেভাবেঃ
দ্বিতীয় খলিফা ওমর (রা.) জেরুজালেম বিজয়ের সময় পাদ্রিদের অনুরোধ সত্ত্বেও গির্জায় সালাত আদায় করেননি। তিনি আশঙ্কা করেছিলেন, এই অজুহাতে গির্জা মসজিদ বানিয়ে ফেলা হবে। তবে আয়া সোফিয়ার বিষয়টি ভিন্ন। কেননা জেরুজালেম বিজয় হয়েছিল চুক্তির মাধ্যমে। আর কনস্টান্টিনোপল বিজিত হয়েছিল যুদ্ধের মাধ্যমে। আয়া সোফিয়ার পতন নিশ্চিত হওয়ার পরও সুলতান ফাতিহ নিজে উদ্যোগী হয়ে সন্ধির প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু সাধুর আসমানি সাহায্যের আশায় তারা অত্যন্ত অপমানজনকভাবে সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিল। সুতরাং গির্জা রক্ষার দায় সুলতানের ওপর ছিল না। তা ছাড়া গির্জা সম্পর্কে খ্রিস্টানদের যে কুসংস্কার ছিল তা চিরতরে বিলুপ্ত করার জন্য হয়তো সুলতান এই পদক্ষেপ অপরিহার্য মনে করেছিলেন।
ইতিহাস সাক্ষী, সুলতান ফাতিহ গির্জায় আশ্রয়গ্রহণকারী একজন মানুষকেও তিনি হত্যা করেননি, সবাইকে নিরাপত্তা দান করেছিলেন।
প্রশ্ন আসতে পারে আরো যেসব ক্ষেত্রেঃ
সমালোচকরা স্পেন বিজেতা খ্রিস্টানদের সব নির্মমতা সম্পর্কে একেবারে নীরব। কর্ডোভা শহরটি খ্রিস্টানরা চুক্তির মাধ্যমে অধিকার করেছিল। চুক্তির একটি বড় শর্ত ছিল, কোনো মসজিদে কোনো রকম হস্তক্ষেপ করা হবে না। অথচ কর্ডোভা গ্র্যান্ড মসজিদের সঙ্গে কী ব্যবহার করা হয়েছে ইতিহাস জানে। শত শত মসজিদ ভেঙে গির্জা নির্মাণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ সীমান্তঘেঁষা ভারতে মালদহ জেলায় প্রাচীন গৌড় রাজ্যে প্রতিষ্ঠিত মসজিদগুলো নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলেছেন? লোটন মসজিদ, বড় সোনা মসজিদ বা বারো দুয়ারিকে শিকল পরিয়ে রাখা হয়েছে কেন? আয়া সুফিয়ায় যখন সালাত আদায়ের প্রসঙ্গ আসে তখন প্রবল আপত্তি আসে এথেন্সের পক্ষ থেকে। অথচ ইউরোপের সবচেয়ে প্রাচীন মসজিদে আগুন লাগিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়ার ঘটনা তারা অস্বীকার করতে পারবে না। ঐতিহ্য রক্ষার নাম করে সুলতান মেহমেত মসজিদ, আসলান পাশা মসজিদ, মেহমেত বেই মসজিদ, উসমান শাহ মসজিদ, হামজা বেই মসজিদ, সুলাইমানিয়া মসজিদসহ মুসলিমদের প্রতিটি মসজিদ শিকল পরানো হয়েছে! বিগত অর্ধ শতাব্দীর প্রচেষ্টার পরও একটি মসজিদ নতুন করে প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়নি।
মসজিদে আজানের জন্য ফাঁসির দড়িতে ঝুলতে হয়েছিল প্রধানমন্ত্রীকেঃ
মোস্তফা কামাল পাশা গোটা তুরস্কে আরবি ভাষায় আজান দেয়া নিষিদ্ধ করেছিলেন। মোস্তফা কামালের নেতৃত্বে তুর্কি সংসদে যখন একদিকে আজান নিষিদ্ধের প্রস্তাব পাশ করতে থাকেন স্পিকার, আর অন্যদিকে একজন সংসদ সদস্য দাঁড়িয়ে আজান দিতে শুরু করেন। পার্লামেন্টের ভাব গম্ভির পরিবেশে 'আল্লাহু আকবার' এর চিরচেনা শব্দমালা সুরের দোতনায় মুগ্ধতা ছড়ায়। কিন্তু বিস্ময়ে স্তব্ধ পার্লামেন্ট কক্ষে তখনই শোনা গেল রাইফেলের গুলির শব্দ। রাইফেলের গুলি মুহূর্তেই এফোড় ওফোড় করে দিল আজানের ধ্বনি উচ্চারণকারী সাংসদের কোমল শরীর। মেঝেতে লুটিয়ে পড়লেন তিনি। রক্তাক্ত সহকর্মীর লাশ সামনে রেখে আজানের বাকি অংশ সমাপ্ত করেছিলেন আরেক সংসদ সদস্য। অবশ্য তারপর, সেই ঐতিহাসিক আজান পরিসমাপ্তির সাথে সাথে ভেসে আসে রাইফেলের আরো কিছু গুলির শব্দ। কামাল পাশার নির্দেশে অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায় খুন করা হয় আজান সমাপ্তকারী সাংসদকেও। শুধু তাই নয়, মসজিদে আজান দেয়ার অপরাধে প্রধানমন্ত্রীকে পর্যন্ত যে ফাঁসির দড়িতে ঝুলতে হয়েছিল' সে ইতিহাস আজকের নতুন প্রজন্মের অনেকেরই হয়তো জানা নেই।
ধর্ম নিরপেক্ষ মতবাদের নামে, ইউরোপীয়দের নষ্ট এবং প্রত্যাখ্যাত ধ্যান ধারণায় বিশ্বাসী উন্নয়ন নামক ইউরোপীয় প্রতারণার শিকার কামাল পাশার নির্মমতা তুর্কিরা কোনো দিন হয়তো ভুলতে পারবে না। তবে, এরদোগানের যোগ্য নেতৃত্বে দীর্ঘ প্রায় পৌনে এক শতাব্দি বছরকাল পরে এসে তুর্কিরা প্রতারণার সেই জাল কিছুটা হলেও ছিঁড়তে সক্ষম হয়েছেন, মনে করা অযৌক্তিক নয়। আয়া সোফিয়ার শিকল খুলে ফেলার নজিরবিহীন ঘটনা তারই উজ্জ্বল বাস্তবতা। আয়া সোফিয়ায় আজানের ধ্বনি দিয়ে কাতারবন্দি হয়ে সালাত আদায় করা মুসলিমদের ন্যায়ানুগ এবং ন্যায্য অধিকার। আয়া সোফিয়ার আশপাশের ছাহাম ও চৌহদ্দিতে, আতরাফ ও আকনাফে যত মসজিদই থাক না কেন, যত সন্নিকটেই থাক না কেন, মসজিদকে যাদুঘরে পরিনত করার কোনো সুযোগ ইসলামী শরিয়া সমর্থন করে না। ইল্লা মা-শাআল্লাহ, অতি দরদী, অতি উদারতার মূর্ত প্রতীক কোনো কোনো মুসলিম না জেনে কিংবা ভিন্ন কোনো লাভে বা লোভে অথবা স্রেফ অন্যদের সাথে গলা মিলানোর আনন্দ উপভোগের উদ্দেশ্যে আয়া সোফিয়াকে তার আসল রূপ অর্থাৎ মসজিদের অবয়ব ফিরিয়ে দেয়ায় মনোকষ্ট পেলেও কিছুই করার থাকে না। তাদের জন্য দুঃখ প্রকাশই একমাত্র পথ ও পন্থা।
দীর্ঘ বিরহের পরে, প্রলম্বিত বিরতির অবসানে শিকল ভেঙ্গে সিজদার এই স্বাদ ভিন্ন। এর আবেদনও ভিন্ন। এর অনুভূতি অনন্য। অন্তর যাদের মরু বিয়াবান, হৃদয়ে যাদের অবিমৃশ্য মরিচিকা, তারা এই স্বাদ আস্বাদনের যৌক্তিকতা খুঁজে পায় না। এই স্বাদ অনুভবের জন্য হৃদয় থাকা চাই, হৃদয়ের গহীনে কান্নার শুভ্র মেঘের ভেসে বেড়ানোর দৃশ্য থাকা চাই, সে মেঘ বৃষ্টি ঝড়ায় না কখনো, হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটিয়ে শুদ্ধ-পরিশুদ্ধ করে অন্তরের আদিগন্ত গোটা প্রান্তর।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই অক্টোবর, ২০২০ সকাল ১০:৩৪