somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নতুন নকিব
আলহামদুলিল্লাহ! যা চেয়েছিলাম, তার চেয়েও বেশি দয়া করেছেন আমার পরম প্রিয় রব। যা পাইনি, তা নিয়ে বিন্দুমাত্র আক্ষেপ নেই—কারণ জানি, তিনি দেন শুধু কল্যাণই। সিজদাবনত শুকরিয়া।nnপ্রত্যাশার একটি ঘর এখনও কি ফাঁকা পড়ে আছে কি না, জানি না। তবে এটুকু জানি—

ইসলাম পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান (Islam is the complete code of life) কথাটির ভিত্তি কি?

০৭ ই জানুয়ারি, ২০২১ দুপুর ১২:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছবিঃ অন্তর্জাল।

ইসলাম পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান (Islam is the complete code of life) কথাটির ভিত্তি কি?

প্রাককথনঃ

কিছু লোক ইসলাম ধর্মের পেছনে লেগে থাকেন। এতে তেমন আশ্চর্য্য হওয়ার কিছু নেই। কারণ, এটা সর্বকালের বাস্তবতা। ইসলাম ধর্মের সামান্যতম ভুল বা গলদ আবিষ্কারে তারা প্রতিনিয়ত নিখুতভাবে চেষ্টা চালিয়ে যান। এসব কাজ করতে গিয়ে তাদের কুরআন গবেষনা করতে হয়। হাদিস পড়তে হয়। পড়তে হয় মানে কি? গলদঘর্ম হতে হয় রীতিমত। যৌক্তিক হোক আর অযৌক্তিক, সঠিক হোক অথবা না হোক, তারা তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা প্রচেষ্টায় এই কাজের পেছনে নিজেদের একরকম উৎসর্গ করেন। তাদের ধৈর্য্য দেখে মাঝে মধ্যে আশ্চর্য না হয়ে পারা যায় না। বেশিরভাগ সময়েই এরা মিথ্যের আশ্রয় নিয়ে, মিথ্যেকে উপজীব্য করে, প্রতারণার অপকৌশলে, সত্যকে আড়াল করে ইসলাম ধর্মের ভুল প্রমান করতে আসতে দেখা যায়। বিশ্বজুড়ে সমাদৃত গুণী জ্ঞানী ইসলামী স্কলার, মুহাদ্দিস, মুফাসসির, ফকিহ এবং উলামায়ে মুতাকাদ্দিমীন - কুরআন হাদিসের জ্ঞানে যাদের পারদর্শীতা প্রবাদ তুল্য, তাদের তাফসীর, হাদিস ব্যাখ্যার ভেতরে ভুল খুঁজতে আসেন। আসলে এদের এসব কাজ আমাকে যুগপত কষ্ট দেয় এবং হাসায়ও। কারণ, কষ্ট পাই এজন্য যে, এই অনধিকার চর্চার মাধ্যমে তারা কিছুটা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির সুযোগ পাওয়ার ফলে কিছু সাধারণ মানুষ হয়তো সামান্য বিভ্রান্তিতে পড়ে যান। হাসি পায় তাদের মিথ্যে কসরত দেখে। সূর্যের সামনে প্রতিবন্ধকতা দিয়ে পৃথিবীতে তার আলোর আগমন এবং তাপের বিকিরণ ঠেকানোর প্রচেষ্টা যেমন চরম হাস্যকর, ইসলাম ধর্মের নানা বিষয়কে প্রশ্নবিদ্ধ করার এদের শত অপচেষ্টাও ঠিক তেমনই।

সম্প্রতি একজন পোস্ট দিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন যে, ইসলামকে পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান বলার যৌক্তিকতা ও ভিত্তি কি? তার অনুসন্ধানের আলোকে তিনি বলেছেন যে, এই কথাটা না কি কুরআনে নেই। সুতরাং, তার প্রশ্ন- এই যে আলেম উলামাগণ কথায় কথায় বলে থাকেন যে, Islam is the complete code of life তথা, ইসলাম পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান এ কথার ভিত্তি কি?

ভদ্রলোকের নাম বলতে চাই না। ভিন্ন মতের হলেও তিনি আমার বা আমাদের শত্রু কখনো নন। তার প্রতি আমাদের আন্তরিকতাপূর্ণ শুভকামনা সবসময়ই ছিল এবং তা বজায় রেখেই বলতে চাই, তার ইতোপূর্বেকার অধিকাংশ লেখা প্রমান করে যে, তিনি ইসলাম ধর্মের বিবিধ বিষয়ের ভুল ধরার কাজে কতটুকু পরিমান আত্মনিবেদিত!

যা-ই হোক, তার কাজ তিনি করে যাবেন এটাই স্বাভাবিক। তবে, অস্বাভাবিক যেটা তা হচ্ছে, তিনি সাধারণতঃ যুক্তির ধার তেমন একটা ধারেন না। তাকে কোনো কিছু বুঝাতে পারবেন, এই যুগে এমন কেউ থাকতে পারেন, বিশ্বাস করা কঠিন। কারণ, তাকে কুরআনুল কারিমের প্রাথমিক জামানার বরেণ্য মুফাসসিরগণের তাফসীরকেও এটা তো 'তাফসীর, কুরআন তো নয়', বলে পাশ কাটিয়ে যেতে দেখা যায়। তাফসীরে ইবনে কাসির, বায়জাভি, জালালাইনসহ প্রাচীন বিশুদ্ধ তাফসীর প্রণেতাগণের চেয়েও কুরআনের মর্ম যদি বর্তমান যুগের কেউ বেশি বুঝার দাবি করেন, তাদের তাফসীরের ভুল ধরার সাহস করে বসেন, এত বড় মুফাসসিরকে(!) বুঝাতে যাবে, এমন সাধ্য কার থাকতে পারে? এমন বুকের পাটাই বা কার হতে পারে?

যাক, তার হয়তো অনেক জ্ঞান, যা ইসলামের প্রাথমিক যুগের মহান তাফসীরকারণের ছিল না(!)। আমরা দোআ করি, আল্লাহ তাআ'লা তার জ্ঞানকে আরও বাড়িয়ে দিন। আমরা এই নিবন্ধে পবিত্র কুরআন এবং হাদিসের আলোকে তুলে ধরার চেষ্টা করবো যে, Islam is the complete code of life তথা, ইসলাম পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান কথাটি বলা বিধেয় কি না।

লক্ষনীয় বিষয় হচ্ছে, তাফসীরকারদের ভুল ধরতে পারদর্শিতা দেখাতে চাইলেও তিনি তার উক্ত পোস্টে যেভাবে প্রশ্নটি তুলেছেন, তার প্রশ্নটিই মূলতঃ সঠিক নয়। বিভ্রান্তি রয়েছে তার প্রশ্নের ভেতরেই। বুঝার সুবিধার্থে এখানে তার প্রশ্নটি তুলে ধরা হল। তিনি বলেন যে, আমরা আলেম হুজুরদের মুখে একটা কথা সব সময়ে শুনে থাকি সেটা হোল -- Islam is complete code of life
অর্থাৎ ইসলাম ধর্ম হোল একটি পরিপূর্ণ জীবন বিধান । আমরা এখন দেখি পবিত্র কোরান শরিফ নিজের সম্পর্কে কি বলে ---


প্রশ্নের প্রথমাংশে তিনি Islam is complete code of life অর্থাৎ, ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবন বিধান উল্লেখ করার পরে শেষাংশে এসে পবিত্র কুরআন নিজের সম্পর্কে কি বলে, সে প্রশ্ন তুলেছেন। বিষয়টা একটু চিন্তা করলেই পরিষ্কার হয়ে যায় যে, তার প্রশ্নের ভেতরেই ঘাপলা। এক্ষেত্রে তার বলা যৌক্তিক ছিল যে, পবিত্র কুরআন Islam is complete code of life অর্থাৎ, ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবন বিধান সম্পর্কে কি বলে....।

চলুন, ফিরে যাই মূল কথায়ঃ

এবার মূল আলোচনায় এগিয়ে যাই, চলুন। পবিত্র কুরআন এবং হাদিসে নববীতে ইসলাম ধর্মকে পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এটি বুঝানোর জন্য দ্বীন (دين) শব্দটির ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়। যদিও এই শব্দটির একাধিক অর্থে ব্যবহার রয়েছে পবিত্র কুরআন এবং হাদিসে নববীতে। এ কারণে দ্বীন (دين) শব্দটির ব্যাখ্যা জেনে নেয়া প্রয়োজন।

দ্বীন (دين) শব্দটির পরিচয়ে উইকিপিডিয়ায় যা লেখা হয়েছেঃ

দ্বীন (دين), একটি আরবি শব্দ, যা প্রধাণত ইসলাম ধর্মের সাথে অধিক সম্পৃক্ত, পাশাপাশি আরব খ্রিস্টানরাও তাদের উপাসনার ক্ষেত্রে এই শব্দটি ব্যবহার করে |একে প্রায়শই "ধর্ম" হিসেবে অনুবাদ করা হয়, কিন্তু ইসলামী প্রধান ধর্মগ্রন্থ কুরআনে শব্দটির দ্বারা একজন ন্যায়নিষ্ঠ মুসলিমের জন্য পালনীয় পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থাকে [১] বোঝানো হয়েছে, যা কুরআন ও হাদীস হতে প্রাপ্ত শিক্ষা, আদর্শ ও নির্দেশাবলী দ্বারা পরিচালিত হবে[২]। ইসলামী শরীয়াহ আইনকেও অনেক সময় দ্বীন হিসেবে নির্দেশ করা হয়| কিছু মুসলিমের মতে, দ্বীন শব্দটির প্রয়োগ পরিসর হল শুধুমাত্র মুসলিমদের ধর্মীয় জীবন। আবার কিছু মুসলিমের মতে, দ্বীনের প্রয়োগ সামষ্টিকভাবে মুসলিমদের জীবনের সকল শাখায় প্রযোজ্য হতে পারে।

ইসলাম ধর্মে দ্বীন শব্দের ব্যবহার প্রসঙ্গে উইকিপিডিয়ার বক্তব্য

বহু হাদিসে, দ্বীনকে মধ্যমপন্থী জীবনব্যবস্থা হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে:

আবু হুরায়রা বর্ণিত, নবী বলেছেন, "ধর্ম (দ্বীন) খুব সহজ এবং যে ব্যক্তি তার ধর্মে সাধ্যের অতিরিক্ত বোঝা নিজের উপর চাপিয়ে নেয়, সে তা উক্ত পন্থায় অব্যহত রাখতে পারে না। তাই তোমাদের চরমপন্থী হওয়া উচিৎ নয়, কিন্তু পূর্ণ সঠিকতার নিকটবর্তী হওয়ার চেষ্টা করা উচিৎ এবং ভালো কিছু পাওয়ার আশা করা উচিৎ, এবং দিনে ও রাতে উপাসনার মাধ্যমে (মানসিক) শক্তি অর্জন করা উচিৎ।"

— সহীহ বুখারী, ১:২:৩৯ (ইংরেজি), (ফাতহ-উল-বারি, পৃষ্ঠা ১০২, ভলিউম ১)

উইকি বর্ণিত তথ্যসূত্রঃ

For instance, translations of the Qur'an by Marmaduke Pickthall, Shakir, and others (ইংরেজি ভাষায়)
e.g. 1:4, 2:256, 4:46, 8:72, 9:11, 9:122, 15:35, 22:78, etc. (ইংরেজি ভাষায়)
"Inside the Gender Jihad", p. 92, Amina Wadud, Oneworld Publications, 2006 (ইংরেজি ভাষায়)

দ্বীন বলতে আসলে কি বুঝায়?

বস্তুতঃ আমরা পূর্বেই উল্লেখ করেছি যে, ‘দ্বীন’ শব্দের একাধিক অর্থ রয়েছে। কুরআন মজীদে বিভিন্ন অর্থেই এ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। এক্ষেত্রে কোন্ স্থানে শব্দটি কি অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে তা পূর্ণ বাক্য থেকে বুঝা যাবে। যে বাক্যে শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে তা থেকে বিচ্ছিন্ন করে ঐ শব্দের অর্থ সঠিকভাবে বুঝার উপায় নেই। ‘দ্বীন’ শব্দের কয়েকটি অর্থ কুরআন পাকে সুস্পষ্টভাবে বুঝা যায়। যেমনঃ

১। প্রতিদান, প্রতিফল, বিনিময় ইত্যাদি।
২। আনুগত্য করা বা হুকুম মেনে চলা।
৩। আনুগত্য করার বিধান বা আনুগত্যের নিয়ম (যা ওহীর মাধ্যমে নির্ধারিত)।
৪। আইন অর্থাৎ রাষ্ট্র ব্যবস্থা যে নিয়মের অধিনে চলে, অনুরূপ সমাজ ব্যবস্থার ক্ষেত্রেও ব্যবহার হয় (যা ওহীর মাধ্যমে নয় বরং মানুষের সৃষ্টি করা)।
৫। পুরস্কার অথবা শাস্তির হিসাব করা।

কুরআন পাকের বিভিন্ন আয়াত থেকে দ্বীন শব্দের উপরোক্ত অর্থ অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে বুঝা যায়। যেমন-

১। দ্বীন অর্থ, প্রতিদান বা বদলাঃ

যেমন, পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে:

مَٰلِكِ يَوْمِ ٱلدِّينِ

বিচার দিবসের মালিক। -সুরা ফাতিহা: ০১: ০৪

ইয়াউমুদ দ্বীন হচ্ছে ‘ইয়াউমূল জাযা’ বা বিনিময় দিবস। এ অর্থেই একটি আরবী প্রবাদ রয়েছে, 'কামা তাদ্বীনু তুদ্বানু' অর্থাৎ, 'যেমন কর্ম তেমন ফল'। এ অর্থেই আরবী সাহিত্যের প্রসিদ্ধ কিতাব হামাসাহ’তে বলা হয়েছে: শত্রুতা ছাড়া আমাদের আর কোন উপায় ছিল না, তাই আমরা তাদেরকে কর্মানুযায়ী উচিৎ বিনিময় দান করেছি।' -তাফসীরে বাইযাভীর সুরা ফাতেহার ৩ নং আয়াতের তাফসীর দ্রষ্টব্য

অপর এক আয়াতে বলা হচ্ছে:

كَلَّا بَلْ تُكَذِّبُونَ بِٱلدِّينِ

'না, তা নয়, বরং তােমরা প্রতিদানকে মিথ্যা মনে করেছো।' -সুরা ইনফিতার: ৮২: ০৯

এ আয়াত দুটিতে দ্বীন শব্দের অর্থ প্রতিদান, প্রতিফল, বদলা ইত্যাদি। আখেরাতে মানুষের কাজের যে বদলা দেয়া হবে তাই এখানে বুঝানাে হয়েছে।

২। দ্বীন অর্থ, আনুগত্য বা হুকুম মেনে চলাঃ

আরবী ভাষার প্রসিদ্ধ অভিধান ‘লিসানুল আরব’ এ দ্বীন শব্দের আরেকটি অর্থ বলা হয়েছে, আনুগত্য করা, বিনয় প্রকাশ করা। নিজেকে কারাে গােলাম বানানাে। -লিসানুল আরব ১৩ খন্ড ১৬৪ পৃষ্ঠা, দ্বীন শব্দের ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য

পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে:

أَفَغَيْرَ دِينِ ٱللَّهِ يَبْغُونَ وَلَهُۥٓ أَسْلَمَ مَن فِى ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضِ طَوْعًا وَكَرْهًا وَإِلَيْهِ يُرْجَعُونَ

'তারা কি আল্লাহর দ্বীনের (আনুগত্যের) পরিবর্তে অন্য কিছু তালাশ করছে? অথচ আসমানসমূহ ও যমীনে যা কিছু আছে সেগুলাে ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় তাঁরই আনুগত্য করে এবং তাদেরকে তারই নিকট প্রত্যাবর্তন করানাে হবে।' -আল ইমরান ০৩: ৮৩

এখানে 'দ্বীন' শব্দটি আত্মসমর্পণ বা আনুগত্য অর্থেই ব্যবহার করা হয়েছে। অপর আয়াতে বলা হয়েছে:

فَٱعْبُدِ ٱللَّهَ مُخْلِصًا لَّهُ ٱلدِّينَ

“অতএব আল্লাহর ইবাদাত কর তাঁরই আনুগত্যে একনিষ্ঠ হয়ে।” -আয যুমার ৩৯: ০২

অপর আয়াতে বলা হয়েছে:

وَقَٰتِلُوهُمْ حَتَّىٰ لَا تَكُونَ فِتْنَةٌ وَيَكُونَ ٱلدِّينُ لِلَّهِۖ

'আর তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর যে পর্যন্ত না ফিতনা খতম হয়ে যায় এবং দ্বীন (সকল প্রকারের আনুগত্য) আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট হয়ে যায়।' -আল বাক্বারা ০২: ১৯৩

এখানে ফিতনা অর্থ আল্লাহর আনুগত্যের পথে বাধা সৃষ্টিকারী ইসলাম বিরােধী শক্তি। যুদ্ধের নির্দেশ দিয়ে এখানে বলা হয়েছে যে, বিরােধী শক্তিকে এমনভাবে দমন কর যাতে আল্লাহর আনুগত্য করতে কেউ বাঁধা দিতে না পারে। এ তিনটি আয়াত নমুনা স্বরূপ দেয়া হলাে। আল কুরআনে এ জাতীয় আয়াত বহু আছে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, আনুগত্যই হলাে 'দ্বীন’ শব্দের প্রধান অর্থ।

৩। দ্বীন অর্থ, আনুগত্যের বিধান বা জীবন ব্যবস্থা (ওহীর মাধ্যমে নির্ধারিত):

পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে:

إِنَّ ٱلدِّينَ عِندَ ٱللَّهِ ٱلْإِسْلَٰمُۗ

'নিশ্চই আল্লাহর নিকট ইসলামই হচ্ছে একমাত্র মনােনীত দ্বীন (আনুগত্যের বিধান বা জীবন ব্যবস্থা)।' -সুরা আলে ইমরান ০৩: ১৯

এই আয়াতের তাফসীর করতে গিয়ে তাফসীরে বাইযাভীতে বলা হয়েছে: 'আল্লাহর কাছে ইসলাম ছাড়া অন্য কোন দ্বীন গ্রহণযােগ্য নয়। আর তা হলাে তাওহীদ ও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক আনীত জীবন বিধানকে লৌহ বর্ম পরিধান করার ন্যায় গ্রহণ করা। -তাফসীরে বাইযাভী সুরা আল ইমরানের ১৯ নং আয়াতের তাফসীরে দ্রষ্টব্য

অপর আয়াতে একই অর্থে ব্যবহার হয়েছে:

وَمَن يَبْتَغِ غَيْرَ ٱلْإِسْلَٰمِ دِينًا فَلَن يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِى ٱلْءَاخِرَةِ مِنَ ٱلْخَٰسِرِينَ

'যে ইসলাম ছাড়া অন্য কোন দ্বীন (জীবন ব্যবস্থা) চায়, তার কাছ থেকে তা কখনােই গ্রহণ করা হবে না এবং সে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভুক্ত হবে।' -সুরা আলে ইমরান ০৩: ৮৫

অর্থাৎ আল্লাহর নিকট একমাত্র জীবন ব্যবস্থা বা আনুগত্যের বিধান হচ্ছে ইসলাম।

অপর আয়াতে ঘােষণা দেওয়া হয়েছে:

شَرَعَ لَكُم مِّنَ ٱلدِّينِ مَا وَصَّىٰ بِهِۦ نُوحًا وَٱلَّذِىٓ أَوْحَيْنَآ إِلَيْكَ وَمَا وَصَّيْنَا بِهِۦٓ إِبْرَٰهِيمَ وَمُوسَىٰ وَعِيسَىٰٓۖ أَنْ أَقِيمُوا۟ ٱلدِّينَ وَلَا تَتَفَرَّقُوا۟ فِيهِۚ

'তিনি তােমাদের জন্য দ্বীন (জীবন ব্যবস্থা) বিধিবদ্ধ করে দিয়েছেন; (তা হচ্ছে ঐ জীবন ব্যবস্থা) যার ব্যাপারে তিনি নূহ আলাইহিস সালামকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। আর আমি (আল্লাহ) তােমার কাছে যে ওহী পাঠিয়েছি এবং ইবরাহীম, মূসা ও ঈসাকে যে নির্দেশ দিয়েছিলাম তা হল, তােমরা দ্বীন কায়েম করাে এবং এই ব্যাপারে (দ্বীন কায়েম করতে গিয়ে) একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়াে না।' -সুরা শু'রা ৪২: ১৩

অর্থাৎ আল্লাহ সব নবীকেই তাঁর নাজিলকৃত জীবন ব্যবস্থা কায়েম করার নির্দেশ দিয়েছেন। আমাদের রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ব্যাপারে ইরশাদ হয়েছে:

هُوَ ٱلَّذِىٓ أَرْسَلَ رَسُولَهُۥ بِٱلْهُدَىٰ وَدِينِ ٱلْحَقِّ لِيُظْهِرَهُۥ عَلَى ٱلدِّينِ كُلِّهِۦ وَلَوْ كَرِهَ ٱلْمُشْرِكُونَ

'তিনিই তাঁর রাসূলকে হিদায়াত ও সত্য দ্বীন দিয়ে প্রেরণ করেছেন, যাতে তিনি সকল দ্বীনের উপর এই দ্বীনকে বিজয়ী করে দেন। যদিও মুশরিকরা তা অপছন্দ করে।' -সূরা সফ ৬১ :০৯

সাথে সাথে এই ঘােষণাও দিলেন যে,

أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِى

'আজ আমি তােমাদের জন্য তােমাদের দ্বীনকে পূর্ণ করে দিলাম।' -সূরা মায়িদা ০৫ঃ ০৩

অর্থাৎ জীবনে একমাত্র আনুগত্যের বিধান যাতে পালন করা যায় এবং কোন ক্ষেত্রেই অন্য কোন বিধান থেকে কিছু নিতে না হয় সেজন্য তােমাদের জীবন বিধান পূর্ণ করে দিলাম। উপরের আয়াতগুলাের মাধ্যমে দ্বীন’ শব্দের অর্থ ‘জীবন ব্যবস্থা এটি প্রমাণিত হলাে।

৪। দ্বীন অর্থ, আইন অর্থাৎ রাষ্ট্র ব্যবস্থা যে নিয়মের অধিনে চলেঃ

দ্বীন শব্দটি যেভাবে আল্লাহ প্রদত্ত আইন, বিধান, রাষ্ট্র ও জীবন ব্যবস্থা অর্থে ব্যবহৃত হয় তেমনিভাবে মানব রচিত আইন, বিধান, রাষ্ট্র ও জীবন ব্যবস্থার ক্ষেত্রেও ব্যবহার হয়ে থাকে। যেমন: পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে:

لَكُمْ دِينُكُمْ وَلِىَ دِينِ

অর্থ: “তােমাদের জন্য তােমাদের দ্বীন আর আমার জন্য আমার দ্বীন। -সুরা কাফিরূন ১০৯: ০৬

এ আয়াতে আল্লাহ প্রদত্ত দ্বীনে হকৃকেও দ্বীন বলা হয়েছে। মানব রচিত দ্বীনে বাতিলকেও দ্বীন বলা হয়েছে। পবিত্র কুরআনে আরও ইরশাদ হয়েছে:

وَقَالَ فِرْعَوْنُ ذَرُونِىٓ أَقْتُلْ مُوسَىٰ وَلْيَدْعُ رَبَّهُۥٓۖ إِنِّىٓ أَخَافُ أَن يُبَدِّلَ دِينَكُمْ أَوْ أَن يُظْهِرَ فِى ٱلْأَرْضِ ٱلْفَسَادَ

'আর ফিরআউন বলল, আমাকে ছেড়ে দাও, আমি মূসাকে হত্যা করবাে এবং সে তাঁর রবকে ডাকুক; নিশ্চয়ই আমি আশঙ্কা করছি, সে তােমাদের দ্বীন পাল্টে দেবে অথবা সে যমীনে বিপর্যয় ছড়িয়ে দেবে।' -সুরা মু'মিন ৪০: ২৬

এখানে ফিরআউন তৎকালীন সমাজের মানব রচিত আইন, বিধান ও রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে দ্বীন বলে উল্লেখ করেছে। এমনিভাবে, ইউসূফ (আঃ) এর ঘটনা উল্লেখ করতে গিয়ে আল্লাহ পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন:

مَا كَانَ لِيَأْخُذَ أَخَاهُ فِى دِينِ ٱلْمَلِكِ إِلَّآ أَن يَشَآءَ ٱللَّهُۚ

'আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া বাদশার আইনে সে তার ভাইকে ধরা যায় না।' -সুরা ইউসুফ ১২:৭৬

অর্থাৎ যে চুরি করেছে তাকেই ধরতে হবে। দেশের আইনে দোষীর বদলে অন্য কাউকে ধরা যায় না।' এ আয়াতে 'দ্বীন’ শব্দটি মানুষ কর্তৃক রচিত আইন-বিধান এর অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে । অপর আয়াতে ইরশাদ হয়েছে:

قَٰتِلُوا۟ ٱلَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِٱللَّهِ وَلَا بِٱلْيَوْمِ ٱلْءَاخِرِ وَلَا يُحَرِّمُونَ مَا حَرَّمَ ٱللَّهُ وَرَسُولُهُۥ وَلَا يَدِينُونَ دِينَ ٱلْحَقِّ مِنَ ٱلَّذِينَ أُوتُوا۟ ٱلْكِتَٰبَ

অর্থ: “তােমরা যুদ্ধ কর সে সকল লােকদের বিরূদ্ধে যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসে প্রতি ঈমান রাখে না এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যা হারাম করেছেন তা হারাম মনে করে না এবং সত্য দ্বীন গ্রহণ করে না। -সুরা তাওবা ০৯: ২৯

এই আয়াতের মধ্যেও দ্বীন শব্দটি রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থা অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।

৫। পুরস্কার অথবা শাস্তির হিসাব করাঃ

কুরআনুল কারিমে আল্লাহ্‌ তাআ'লা বলেছেন,

يَوْمَئِذٍ يُوَفِّيهِمُ اللَّهُ دِينَهُمُ الْحَقَّ

সেই দিন আল্লাহ্‌ তাদেরকে যথাযথ প্রতিদান (দীনাহুম) দিবেন। -সূরাহ আন নূর, আয়াত ২৫

এবং অন্য আয়াতে এসেছে-

أَءِنَّا لَمَدِينُونَ

তখন কি সত্যিই (পুনরায় জাগিয়ে) আমাদের (কৃতকর্ম) অনুসারে পুরষ্কার ও শাস্তি দেয়া হবে? -সূরাহ আস- সফফাত, আয়াত ৫৩

এ প্রসঙ্গে একটি হাদীছে আছে,

الْكَيِّسُ مَنْ دَانَ نَفْسَهُ وَعَمِلَ لِمَا بَعْدَ الْمَوتِ

সেই ব্যক্তিই বুদ্ধিমান যে নিজেই নিজের কাজের হিসাব করে এবং পরবর্তী জীবনের জন্য কাজ করে।

উমার (র) বলেছেন, “হিসাব নেওয়ার আগেই তোমার তোমাদের হিসাব কর। তোমাদের কাজের বিচার হওয়ার আগে নিজেরাই নিজেদের কাজের বিচার কর। তাঁর সামনে সবচেয়ে বড় জনসমাবেশের জন্য নিজেকে প্রস্তুত কর, যিনি তোমার সব কাজের খবর রাখেন।”

يَوْمَئِذٍ تُعْرَضُونَ لاَ تَخْفَى مِنكُمْ خَافِيَة

সেদিন বিচারের জন্য যখন তোমাদেরকে নিয়ে আসা হবে, কোন গোপন কাজই আর গোপন থাকবে না। -৬৯ আল-হাক্কাহঃ ১৮

পরিশেষেঃ

দ্বীন ইসলামকে যাদের ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখতে ইচ্ছে, ইসলাম ধর্মের পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান হওয়ার বিষয়টি তাদের পক্ষে মেনে নিতে কষ্ট হওয়া খুবই স্বাভাবিক, যদিও কুরআন হাদিসের আলোকে এই বক্তব্য যতই প্রমানিত হয়ে থাকুক। আলহামদুলিল্লাহ, আমরা বক্ষমান নিবন্ধে কুরআন হাদিসের আলোকে আশা করি, বিষয়টি সহৃদয় সম্মানিত পাঠকদের সামনে দলিল প্রমান সহকারে ক্লিয়ার করতে পেরেছি। এরপরেও যদি উক্ত পক্ষের ভাইয়েরা গায়ের জোরে তাদের আপত্তি চালিয়ে যেতে চান তাহলে তাদের সাথে অর্থহীন তর্ক-বিতর্কের নামে কালক্ষেপন করার কোনো ইচ্ছে আমাদের আদৌ নেই। তবে, আমরা প্রত্যাশা রাখতে চাই, তারা ফিরে আসবেন, তারা বেরিয়ে আসবেন বিভ্রান্তির বেড়াজাল থেকে এবং ইসলামের পেছনে অহেতুক, অন্যায়ভাবে লেগে থাকার স্বভাব পরিহার করে দ্বীনে হক এর আলোয় আলোকিত হবেন।

নিরন্তর শুভকামনা তাদের জন্য। অন্যদের জন্য। সকলের জন্য। সকল মানুষের জন্য। বিশ্ব মানবতার জন্য। বিশ্বের সমগ্র প্রাণিকুলের জন্য।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জানুয়ারি, ২০২১ সকাল ৮:৪৯
২৫টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার কথা: দাদার কাছে—একজন বাবার কিছু প্রশ্ন

লিখেছেন সুম১৪৩২, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৫



দাদা,
কেমন আছেন? আশা করি খুবই ভালো আছেন। দিন দিন আপনার ভাই–ব্রাদারের সংখ্যা বাড়ছে—ভালো তো থাকারই কথা।
আমি একজন খুবই সাধারণ নাগরিক। ছোটখাটো একটা চাকরি করি, আর নিজের ছেলে–মেয়ে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×