পবিত্র কুরআনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের নির্দেশনা যেভাবে এসেছেঃ
কুরআন হাদিসের জ্ঞানে পারদর্শী নন, অথচ নিজেদের অতি জ্ঞানী কিংবা মহাপন্ডিত ভাবেন এমন কিছু লোক বলে থকেন যে, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ তো কুরআন দ্বারা প্রমাণিত নয়। অথচ, প্রকৃত বাস্তবতা হচ্ছে, আল্লাহ তাআলা মিরাজের রাতে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ৫০ ওয়াক্ত থেকে কমিয়ে ৫ ওয়াক্ত নামাজ নির্ধারিত করে উম্মতের জন্য উপহারস্বরূপ দান করেছেন। আর মানুষের জন্য প্রতি দিন এ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা ফরজ বা অত্যাবশ্যক।
নামাজের এই ৫ টি ওয়াক্তও পবিত্র কুরআনুল কারিমের আয়াত দ্বারা প্রমাণিত। দিন এবং রাতের যেই যেই সময়গুলোতে এই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে হবে তারও নির্দেশনা এসেছে কুরআনুল কারিমে। যদিও অজ্ঞতার কারণে কেউ কেউ বলে থাকেন যে, কুরআনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের নির্দেশনা কোথায়? কুরআনে তো এ কথা উল্লেখ নেই।
উহাদের কথার ভিত্তি নেই, কুরআনের আয়াতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময় নির্ধারিতঃ
বস্তুতঃ পন্ডিতম্মন্য উক্ত ব্যক্তিগনের ধারণাপ্রসূত এসব কথার আদৌ ভিত্তি নেই এবং এগুলো মোটেই সঠিক নয়। বরং, পবিত্র কুরআনুল কারিমের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতি দিন ৫ ওয়াক্ত নামাজ নির্ধারিত। আল্লাহ তাআলা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময়গুলো সুস্পষ্ট করে দিয়ে বলেন-
فَسُبْحَانَ اللَّهِ حِينَ تُمْسُونَ وَحِينَ تُصْبِحُونَ
সুতরাং, তোমরা আল্লাহর তাসবিহ তথা পবিত্রতা ঘোষনা কর, যখন সন্ধ্যায় (মাগরিব ও ইশার নামাজ দ্বারা) উপনীত হবে এবং সকালে (ফজর নামাজ দ্বারা) উঠবে। -সুরা রূম : আয়াত ১৭
وَلَهُ الْحَمْدُ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَعَشِيًّا وَحِينَ تُظْهِرُونَ
আর অপরাহ্নে (আসর নামাজ দ্বারা) ও জোহরের সময়ে। আর আসমান ও জমিনে সব প্রশংসা একমাত্র তাঁরই।' -সুরা রূম : আয়াত ১৮
আল্লাহ তাআলা সুরা রূমের উল্লেখিত দু'টি আয়াতে তাসবিহ বলতে নামাজ পড়াকে বুঝিয়েছেন। এ আয়াতদ্বয়ে যে সময়ের কথা বলা হয়েছে তাহলো- পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময়ের কথা।
প্রথম আয়াতে 'তুমসুনা' (সন্ধ্যা) শব্দ দ্বারা মাগরিব ও ইশা, 'তুসবিহুন' (সকাল) শব্দ দ্বারা ফজর নামাজকে বুঝিয়েছেন। আর দ্বিতীয় আয়াতে 'আশিয়ান' (বিকাল/অপরাহ্ন) শব্দ দ্বারা আসর নামাজ এবং 'তুজাহিরুন' (দুপুর) শব্দ দ্বারা জোহর নামাজের সময়ের উল্লেখ করেছেন। -ফাতহুল কাদির, আহসানুল বয়ান
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ রাসূলে কারিম আজীবন আদায় করেছেনঃ
যারা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ কুরআনে নির্ধারিত নেই বলে নামাজীদের অন্তরে ওয়াসওয়াসা দিতে চান তাদের জন্য আরেকটি বিষয় জেনে রাখা উচিত যে, রাসূলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সারা জীবনের প্রাকটিস ছিল দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা। মুসলিম উম্মাহ তো তাঁর রেখে যাওয়া আদর্শই ফলো করে থাকে। সুতরাং, বিভ্রান্তির বীজ যতই বুনতে চান না কেন, প্রকৃত মুসলিম কোনও অবস্থায়ই ষড়যন্ত্রের জালে আটকে যাবে না। তারা রাসূলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আদর্শ অনুযায়ী প্রতি দিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করবেন। করেই যাবেন ইনশাআল্লাহ।
তাওফিক প্রার্থনা করছি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার নিকটেঃ
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা মুসলিম উম্মাহকে যাবতীয় ওয়াসওয়াসা ও কুমন্ত্রণা সৃষ্টিকারীদের চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে ইবাদতে মগ্ন-নিমগ্ন হওয়ার তাওফিক দান করুন। তাদের পেতে রাখা ঈমান বিধ্বংসী আকর্ষনীয় ও লোভনীয় বহুমাত্রিক রঙিন ফাঁদে পা না দিয়ে এবং সকল বিভ্রান্তির হাত থেকে নিজেদের মুক্ত রেখে যথাসময়ে ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ সকাল ১১:০৮