মিলাদে কিয়াম করা এবং জামাই বেচারার দুরবস্থা
শ্বশুর মহাশয় দাঁড়িয়ে মিলাদের পক্ষে। বাবা মিলাদ পড়েন বসে বসে। এই নিয়ে দুই বেয়াইর মধ্যে তুমুল মন কষাকষি। এই দাঁড়ানো আর বসা নিয়ে দুই বেয়াইর রসি টানাটানিতে জামাই বেচারার অবস্থা বেগতিক। বেচারা পড়ে গেছেন মহাবিপদে। ভদ্রতা এবং আদব কায়দা রক্ষার তাগিদে না বাবাকে কিছু বলতে পারছেন, আর না শ্বশুর মহাশয়কে কিছু বুঝাতে সক্ষম হচ্ছেন। তার ধারণা, বাবার পক্ষাবলম্বন করলে কি না আবার শ্বশুর বাবাজিকে অপমান করা হয়! আবার অন্যদিকে, শ্বশুরের পক্ষে গিয়ে দাঁড়িয়ে মিলাদ পড়লে বাবা যদি ধরে নেন যে, ছেলে তাকেই হেয় করার জন্য এই কাজ করেছে! কি যে কঠিন একটা অবস্থা!
কিছু দিন পরের ঘটনা। পারিবারিকভাবে আয়োজিত ধর্মীয় এক অনুষ্ঠানে শুরু হল মিলাদ। দুই বেয়াই উপস্থিত সেই মিলাদে। মিলাদ শুরু হতেই রীতিমত দাঁড়িয়ে গেলেন শ্বশুর আব্বা এবং বাবাকে দেখলেন তিনি তার নিয়ম মেনে পূর্বের মত বসে বসেই মিলাদ পড়ছেন। জামাই বেচারা চিন্তা করে কুল কিনারা পাচ্ছিলেন না যে, কার দলে যাবেন! কিংকর্তব্যবিমূঢ় অবস্থা! তিনি পড়েছেন বিশাল এক ফাঁপড়ে। একবার শ্বশুর আব্বার দিকে তো আরেকবার বাবার দিকে তাকান। শেষমেষ কার পক্ষে যাবেন বুঝতে না পেরে না দাঁড়ানো, না বসা অর্থাৎ, মাঝামাঝি রুকূতে চলে গেলেন এবং সেই অবস্থায় থেকেই মিলাদ শেষ করলেন।
একবার ভাবুন, বেচারার অবস্থাটা।
আারেকবার দাঁড়িয়ে এবং বসে মিলাদের পক্ষের দুই দল ঝগড়া করে রাস্তায় নেমেছে। উভয় পক্ষই মারমুখী। অবস্থা গুরুতর। যে যাকে পায় তাকেই অপদস্ত করে চলেছে। রাস্তা দিয়ে এক পথচারী হেটে যাচ্ছিলেন। দাঁড়িয়ে মিলাদের পক্ষের লোকেরা তাকে ধরে বললেন, এই ব্যাটা তুই কোন দলের লোক? দাঁড়ানোদের পক্ষের না কি, বসাদের?
ভদ্রলোক তো থ'। কোনটা বলে আবার কোন বিপদে ফেঁসে যান বুঝতে পারছিলেন না। লোকজনের মারমুখী হাবভাব দেখে সমূহ বিপদ আঁচ করতে তার কষ্ট হল না। বুদ্ধি করে চট করে বলে ফেললেন, আরে ভাই, আমি তো মিলাদই পড়ি না। বেহুদা আমাকে কেন ধরেছেন আপনারা? যারা মিলাদ পড়ে তাদের ধরলেই তো পারেন!
নেতা গোছের একজন বললেন, এই বেআক্কলের দল, ও তো মিলাদই পড়ে না। ওকে কেন ধরেছো? ছেড়ে দাও ব্যাটাকে।
বুঝুন, অবস্থা! তার মানে কি দাঁড়ালো? মিলাদ না পড়লে কোন ক্ষতি নেই! আর যত সমস্যা পড়ুয়াদের নিয়ে?
পুনশ্চঃ প্রিয় নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপরে সালাত ও সালাম এবং দরূদ পাঠের গুরুত্ব অপরিসীম। তাতে রয়েছে অশেষ সাওয়াব এবং ফায়দালাভের সুযোগ। তবে তা হতে হবে সুন্নাহসম্মত পদ্ধতিতে।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ সকাল ১০:১৯