
লাগাতার মিথ্যাচার শুনতে কার ভালো লাগে? আমি পারি না। গত রাতে ইউটিউব লাইভে যখন দেখলাম ছাত্র জনতার বিশাল সমাগম ধানমন্ডির ৩২ নম্বরকে ঘিরে - তখন কৌতুহলবশতঃই ইউটিউব থেকে হাসিনার গতরাতের বক্তব্যটা খুঁজে বের করলাম এই উদ্দেশ্যে যে, তিনি আসলে এত দিন পরে কী বলতে চান, শুনে দেখি। ইচ্ছে ছিল বক্তব্যটা শেষ পর্যন্ত শোনারও। কিন্তু দুঃখিত, সেটা সম্ভব হয়নি। কিছুটা শুনেই বুঝতে কষ্ট হলো না, তার অভ্যাসগত মিথ্যাচার আগের মতই রয়ে গেছে। উস্কানিমূলক অপতথ্যও একটুও কমেনি।
দেশের মানুষকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করার ভয়ানক যে রোগটি তার রক্তের সাথে মিশে আছে, সেখান থেকে তিনি একচুলও সরে এসেছেন বলে আদৌ মনে হলো না তার কথা শুনে। যাই হোক, ফলাফল বরাবরের মতই, ঠান্ডা মাথার এই ভয়ঙ্কর খুনীর বক্তব্যটা শেষ পর্যন্ত শোনা তো দূরের কথা, সামান্য একটু শুনেই আগ্রহটা হারিয়ে ফেললাম। একরাশ বিরক্তি নিয়ে বিক্ষুব্ধ ছাত্র জনতার মিছিলের দিকে মনযোগী হলাম। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন, "আবু সাঈদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ", "স্বৈরাচারের আস্তানা, জ্বালিয়ে দাও পুড়িয়ে দাও", ইত্যাদি স্লোগানে গোটা ৩২ নম্বর এলাকাটাকে উৎসবমুখর করে রেখেছেন।
আসলে বিগত ১৬ বছরে শেখ হাসিনার অঙুলি হেলনে হাজারো মায়ের বুক খালি হয়েছে। হাজারো মানুষ আহত, নিহত এবং গুমের শিকার হয়েছেন। গোপন বন্দিশালায় বছরের পর বছর ধরে কত মায়ের সন্তান অমানবিক নির্যাতনে তিলে তিলে নিঃশেষ হয়েছেন, তার হিসাব কে দিবে? যাদের সাথে কথা হয়, অধিকাংশ লোককেই বলতে শুনি, এত এত অন্যায় অপরাধের সামান্য প্রতিফল এই পৃথিবীতে তিনি পাবেন না, এটা হতেই পারে না। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে হাট-বাজারে কোথাও কারও ভিতরে কোনো হা-হুতাশ দেখা যায় না। মনে হচ্ছে যেন, সাধারণ মানুষ জালিমের জুলূম, স্বৈরতন্ত্র থেকে মুক্তির নিঃশ্বাস নিতে পেরে আনন্দিত, উৎফুল্ল। আপামর জনতার কাছে ঠিক যেন এটাই হওয়ার ছিল। বাংলাদেশী সকলের কাছে এটাই যেন তার প্রত্যাশিত পরিণতি।
তবে আমার কাছে খুবই আশ্চর্য্যের বিষয়, এতকিছু করার পরেও তার ভেতরে বিন্দু পরিমাণ অনুশোচনা, আফসোস বা অনুতাপ নেই। তিনি যেন এখনও দুধে ধোয়া তুলসি পাতা! তার নেতৃত্বে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠীর মাধ্যমে বিলিয়ন বিলিয়ন টাকা পাচার করে দেশটাকে ফোকলা বানিয়ে দেওয়ার পরেও যেন তার কোনো দোষ নেই! এখনও তিনি নিজের কোনো ভুলই যেন খুঁজে পান না! তার ভেতরে আক্ষেপ এখন হয়তো একটাই- কেন বাংলাদেশকে ভারতের হাতে পুরোপুরি তুলে দিয়ে ভারতের অঙ্গরাজ্য করে দিতে পারলাম না! এই এক আফসোস নিয়েই হয়তো তিনি তার দিনরাত একাকার করে চলেছেন! অঙ্গরাজ্য বা করদরাজ্য করে ফেললে আজ ভারত সরাসরি বলপ্রয়োগে পরিস্থিতি হাসিনার পক্ষে রাখতে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারতো বলেই তার এই আফসোস।
একের পর এক ভূয়া/ ডামি নির্বাচন দিয়ে অবৈধভাবে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার পরেও তিনি যেন নিজের কোনো অন্যায়ই দেখতে পান না! দেশের মানুষের প্রতি এখনও আগের মতই বৃষ্টির মত বিদ্বেষ ঝাড়েন তিনি। এ দেশের মানুষকে আক্রমন করাই তার স্বভাব। তিনি অন্তর থেকে বাংলাদেশকে নয় বরং ভালোবাসেন ভারতকে। তার কথায়ও সেই স্বীকারোক্তি বিভিন্ন সময়ে পাওয়া গেছে। তিনি মিডিয়ার সামনে এমন স্বীকারোক্তিও দিয়েছেন যে, ভারতকে যা দিয়েছি ভারত তা সারা জীবন মনে রাখবে। আর সর্বশেষ তার ভারতপ্রেমের বাস্তব প্রমান হলো, পৃথিবীর কোনো দেশ যখন তাকে গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে তার প্রাণের প্রিয় ভারতই তাকে আশ্রয় দিয়েছে। সম্ভবতঃ এই কারণেই ৩২ নম্বরের বাড়িটি গুড়িয়ে দেওয়ার পরে এখন লোকজনকে "আলহামদুলিল্লাহ" বলে শুকরিয়া আদায় করতে দেখা যাচ্ছে।
আসলে পার্শ্ববর্তী প্রভূ দেশের অদৃশ্য ইশারায় সাময়িক সময়ের জন্য ক্ষমতার মোহে অন্ধ হয়ে দম্ভ আর অহংকারে গা ভাসিয়ে দেওয়া গেলেও ঔদ্ধত্য আর মিথ্যাচার দিয়ে একটি জাতিকে দীর্ঘ দিন দাবিয়ে রাখা যায় না। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বাংলাদেশের দামাল ছাত্র জনতা সেটাই প্রমান করে দেখিয়েছে। গুম, খুন, অন্যায়, অবিচার, সন্ত্রাস, দলীয় ক্যাডার বাহিনী লালন, দেদার লুটপাট, অর্থপাচার, ব্যাংক দখল, ব্যবসা-বানিজ্যে সিন্ডিকেটবাজী, চাঁদাবাজি, দখলবাজি, বিরোধীমত দলন, ভোটাধিকার হরণ, রাষ্ট্রীয় পুলিশ বাহিনীকে দলীয় ক্যাডারে পরিণত করা - এসব করে যে স্বৈরাচারের শেষ রক্ষা হয় না - শেখ হাসিনা এই তল্লাটে তার জাজ্বল্যমান উদাহরণ।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


