বাল (Bangladesh Awami League = BAL), অর্থাৎ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মাশাল্লাহ, দেশের মানুষ এই ঘোষণায় পরম আনন্দিত। দীর্ঘ ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনের গুম, খুন, দুঃশাসন, দুর্নীতি আর বিচারহীনতার দুঃসহ স্মৃতি নিয়ে মানুষ আজ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে। মনে হচ্ছে, বুকের উপর থেকে যেন এক জগদ্দল পাথর সরে গেছে।
তবে বাস্তবতায় দেখা যাচ্ছে—শুধু ‘কার্যক্রম’ নিষিদ্ধ হলেও দলটি এখনো আইনত বহাল। তাদের নিবন্ধন বাতিল হয়নি, সাংগঠনিক কাঠামো অক্ষত, প্রচারযন্ত্রও সচল। ফলে প্রশ্ন উঠছে—শুধু কার্যক্রম বন্ধ করলেই কি একটি দল ও তার ফ্যাসিবাদী আদর্শ নির্মূল হয়?
বালের অনলাইন কর্মী ও তথাকথিত বিশ্লেষকরা এখনো ফেসবুক, ইউটিউব, সামহোয়্যারইন ব্লগসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে সক্রিয়। তারা ইতিহাস বিকৃত করছে, বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে, লেখকদের মতপ্রকাশে বাধা দিচ্ছে। নিষিদ্ধ কার্যক্রমের এই ছায়া-রূপ এখনো সক্রিয় রয়েছে, যা রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তকে কার্যত ব্যঙ্গ করে চলেছে। প্রশ্ন হচ্ছে—যদি দলটির কার্যক্রম নিষিদ্ধ হয়েই থাকে, তাহলে এই অনলাইন প্রেতাত্মারা এখনো কীভাবে সক্রিয়? তারা কাদের ছত্রচ্ছায়ায়, কাদের মদদে চলমান?
এই পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। কারণ ফ্যাসিবাদ শুধু দলীয় কার্যালয়ে সীমাবদ্ধ থাকে না—এটা ছড়ায় চিন্তায়, সংস্কৃতিতে, ডিজিটাল পরিসরে। শুধু মঞ্চের পর্দা নামিয়ে দিলে ফ্যাসিবাদ থেমে যায় না; নাট্যকার ও অভিনেতাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হয়। অন্যথায় তারা আড়ালেই রচনা করবে নতুন নাটক—নতুন নামে, নতুন মুখোশে।
অতএব, প্রয়োজন—
দলীয় নিবন্ধন বাতিল, সাংগঠনিক কাঠামো বিলুপ্তি, সম্পদের তদন্ত, অনলাইন-অফলাইনে নজরদারি, এবং যারা এখনো ডিজিটাল মাধ্যমে ‘বাল’-এর প্রচার চালাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ।
এখন সময় এসেছে একটি সর্বাত্মক রাজনৈতিক শুদ্ধি অভিযানের। সত্যিকারের রাষ্ট্রীয় শুদ্ধি ও রাজনৈতিক ময়লা পরিষ্কারের। শুধু কার্যক্রম নিষিদ্ধ করলেই চলবে না—দল, দলীয় ফ্যাসিবাদী আদর্শ, এবং দালালদেরও নির্মূল করতে হবে—যদি আমরা সত্যিই একটি মুক্ত, গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ গড়তে চাই।
কার্যক্রম বন্ধ—তবে দল বহাল থাকলে প্রভাবও অক্ষত থাকে। তাই চাই অর্ধেক নয়, পূর্ণ মুক্তির পদক্ষেপ।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মে, ২০২৫ সকাল ৯:৩০