somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নতুন নকিব
আলহামদুলিল্লাহ! যা চেয়েছিলাম, তার চেয়েও বেশি দয়া করেছেন আমার পরম প্রিয় রব। যা পাইনি, তা নিয়ে বিন্দুমাত্র আক্ষেপ নেই—কারণ জানি, তিনি দেন শুধু কল্যাণই। সিজদাবনত শুকরিয়া।nnপ্রত্যাশার একটি ঘর এখনও কি ফাঁকা পড়ে আছে কি না, জানি না। তবে এটুকু জানি—

আমেরিকায় পশু কুরবানিতে মানতে হয় যেসব নিয়ম-কানুন

০৯ ই জুন, ২০২৫ সকাল ৯:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আমেরিকায় পশু কুরবানিতে মানতে হয় যেসব নিয়ম-কানুন

ছবি এআই এর সহায়তায় তৈরিকৃত।

আমেরিকায় কুরবানি করা বাংলাদেশের মতো সহজ বা খোলামেলা নয়। এখানে কুরবানি পালন করতে হলে একাধিক বিষয় বিবেচনায় নিতে হয়—আইন, স্বাস্থ্যবিধি, সামাজিক রীতি এবং পরিবেশগত দিক। বাংলাদেশে কুরবানির সময় মানুষ হাট থেকে পশু কিনে এনে বাড়ির উঠোনে, রাস্তার পাশে কিংবা খোলা মাঠে জবাই করে থাকেন, যা সামাজিকভাবে স্বীকৃত ও প্রচলিত। কিন্তু আমেরিকার বাস্তবতায় এটি কার্যত অসম্ভব। সেখানে চাইলেও কেউ নিজের ইচ্ছেমতো জায়গায় পশু জবাই করতে পারেন না।

আমার কাছের একজনের এবারের কুরবানির অভিজ্ঞতা থেকে বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছি। সীমিত সংখ্যক হালাল স্লটারহাউজে কুরবানির সময় সাধারণত প্রচন্ড ভীড় হয়। তিনি একটি স্লটারহাউজে গিয়ে দীর্ঘ প্রায় ৫/৬ ঘণ্টা অপেক্ষা করে কুরবানি সম্পন্ন করতে পেরেছেন। ওখানে মূলতঃ স্লটারহাউজগুলোতে উপস্থিত হয়ে নিজের পছন্দমতো পশু কিনে তা জবাই করার সুযোগ থাকে। পাশাপাশি, অনলাইনেও অর্ডার দিয়ে পশু কুরবানি করানোর সুবিধা রয়েছে। এসব নিয়ম-কানুনের পেছনে রয়েছে বেশ কিছু যৌক্তিক ও আইনগত কারণ।

প্রথমত, আমেরিকায় পশু জবাইয়ের ক্ষেত্রে কঠোর আইন রয়েছে। বেশিরভাগ অঙ্গরাজ্যে বাসা বা খোলা জায়গায় পশু জবাই আইনত নিষিদ্ধ। নির্দিষ্ট এলাকার মধ্যে লাইসেন্সপ্রাপ্ত স্লটারহাউজেই জবাই করার অনুমতি দেওয়া হয়। পশুর প্রতি নিষ্ঠুরতা বা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে জবাই করলে তা আইন লঙ্ঘনের শামিল এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়। USDA এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষ পশু জবাইয়ের নিয়ম ও আচরণবিধি স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করে দিয়েছে।

দ্বিতীয়ত, স্বাস্থ্যবিধির দিকটি এখানে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়। বাসার উঠোনে বা রাস্তার পাশে পশু জবাই করলে রক্ত ও বর্জ্যজনিত কারণে জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়ে। এটি স্থানীয় স্বাস্থ্য আইনের গুরুতর লঙ্ঘন। যেকোনো মাংস প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণের জন্য নির্দিষ্ট অনুমতি ও স্বাস্থ্য সনদ প্রয়োজন হয়। এসব কারণে ব্যক্তিগতভাবে পশু জবাই করা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়।

তৃতীয়ত, আমেরিকার সমাজব্যবস্থা অনেক বেশি সংবেদনশীল। যদিও ধর্মীয় স্বাধীনতা রয়েছে, তথাপি সমাজে বসবাসরত অন্যান্য ধর্ম বা সংস্কৃতির মানুষের অনুভূতির প্রতিও সম্মান দেখাতে হয়। যদি কেউ নিজের বাড়িতে পশু জবাই করেন, তবে প্রতিবেশীরা বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারেন বা পুলিশে অভিযোগ করতে পারেন। তদুপরি, আমেরিকায় পশু অধিকার নিয়ে সচেতনতা অনেক বেশি, ফলে জনসমক্ষে পশু জবাইয়ের দৃশ্য নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিতে পারে।

এই প্রেক্ষাপটে আমেরিকায় বসবাসরত মুসলমানরা সাধারণত লাইসেন্সপ্রাপ্ত হালাল স্লটারহাউজে গিয়ে পশু কুরবানি করে থাকেন। এসব স্লটারহাউজে ইসলামি নিয়ম মেনে পশু জবাই হয় এবং সেখান থেকেই মাংস সংগ্রহ করা যায়। অনেক সময় ইসলামিক সংগঠন বা মসজিদ অনলাইনে কুরবানির অর্ডার নেয় এবং নির্দিষ্ট দিনে কুরবানি সম্পন্ন করে থাকে। কেউ চাইলে সেই মাংস নিজে নিতে পারেন অথবা দানও করতে পারেন। কেউ কেউ খামারে গিয়ে পশু কিনে স্থানীয় নিয়ম মেনে সেখানে কুরবানি দিয়ে থাকেন।

তবে এভাবে কুরবানি করার খরচ তুলনামূলকভাবে বেশি। পশু কেনা, পরিবহন, জবাই ও প্রসেসিং—সবকিছু মিলিয়ে ব্যয় অনেক বেড়ে যায়। স্লটারহাউজগুলোতে ওখানে পশুর দামও বেশ চড়া। মাঝারি সাইজের একটি খাসির দাম সাধারণত ৫০০ থেকে ৭০০ ডলারের মধ্যে, যা বাংলাদেশি হিসেবে প্রায় ৬০,০০০ থেকে ৮৫,০০০ টাকার মত (১ ডলার ≈ ১২০ টাকা)। বাংলাদেশে যেমন আত্মীয়স্বজন ও পরিচিতজন মিলে কুরবানির কাজ করে নেয়া যায়, আমেরিকায় তা সম্ভব নয়। এখানে সবকিছুই পেশাদার এবং অনুমোদিত লোকজনের মাধ্যমেই করতে হয়।

সব মিলিয়ে বলা যায়, আমেরিকায় কুরবানি একটি ধর্মীয় দায়িত্ব হলেও সেটি পালন করতে হয় আইন, স্বাস্থ্যবিধি এবং সামাজিক ভারসাম্য রক্ষা করে। মুসলমানদের উচিত স্থানীয় নিয়ম-কানুন ভালোভাবে জেনে নেওয়া, যথাযথ পদ্ধতি অনুসরণ করা এবং প্রতিবেশীদের ধর্মীয় সংবেদনশীলতা বোঝাতে সচেষ্ট হওয়া। এতে ইসলামের শিক্ষাও পালন করা যায় এবং সমাজেও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করা সম্ভব হয়।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুন, ২০২৫ সকাল ৯:২৮
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×