
২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লব বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অমোঘ মাইলফলক। এই বিপ্লবে ছাত্র-জনতার অদম্য সাহস এবং ঐক্যের মাধ্যমে বাংলাদেশ ভিনদেশী তাবেদার স্বৈরাচারের রাহুর কবল থেকে মুক্তি লাভ করেছে। শেখ হাসিনা এবং তার পরিবারের দুর্নীতি, লুটপাট এবং দেশ-ধ্বংসকারী নীতির বিরুদ্ধে কথা বলা যেন একটি অপরাধ হয়ে উঠেছিল। সেই অন্ধকার যুগে বাকস্বাধীনতা হরণ করা হয়েছিল, মানুষের মুখে তালা লাগানো হয়েছিল। কিন্তু আজ সেই চিত্র পাল্টে গেছে- বাংলাদেশ নতুন করে বেঁচে উঠেছে, স্বাধীনতার স্বাদ ফিরে পেয়েছে।
হাসিনার শাসনকালে বাংলাদেশে যেন এক অঘোষিত রাজতন্ত্র কায়েম হয়েছিল- যেখানে শাসকের নামে কোনো সমালোচনা বরদাশত করা হতো না। দুর্নীতি এবং লুটপাটের বিরুদ্ধে কথা বললেই টুটি চেপে ধরা হতো। মানুষের মনের কথা প্রকাশ করার সকল পথ রুদ্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। সামান্য একটি ফেসবুক পোস্ট বা কমেন্টের জন্য ৭ বছরের কারাদণ্ডের মতো ঘটনাও ঘটেছে, যা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। সমালোচকদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রের মামলা দায়ের করা হতো, হুলিয়া জারি করা হতো, গুম করা হতো এবং কারাগারে পাঠানো হতো।
আরও ভয়াবহ সব নির্যাতনের পদ্ধতি ব্যবহার করা হতো সমালোচকদের দমন করতে। আদালতে হাজির করার সময় হাতে-পায়ে-কোমরে ভারী শিকল, যাকে 'ডান্ডাবেরি' বলা হয়, তা পরিয়ে নিয়ে যাওয়া হতো, যেন তারা দুর্ধর্ষ অপরাধী। মোটকথা, একটি ভয়ের সংস্কৃতি, একটি ভয়ার্ত আবহ তৈরি করা হয়েছিল। যাতে সবার মনে গভীর আতঙ্ক সৃষ্টি করা যায়। রাজরাজাদের মতো উঁচু জাতের সমীহ করতে হবে- এমন একটি মিথ ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। তাদের নামে কিছু বললে জিহ্বা কর্তনের ভয়ে মানুষ কুঁকড়ে থাকতো। সাংবাদিক এবং গণমাধ্যমকর্মীদের ক্যামেরা-কলম থমকে যেত অদৃশ্য হাতের ইশারায়। লেখকদের কলম আটকে রাখা হতো ভয়ের বেড়াজালে। গুমোট অন্ধকার সেই সময়ে মতপ্রকাশের সকল পথে সেন্সর বসানো হয়েছিল, মানুষ গুমরে মরতো, কথা বলতে পারতো না, হাত কাঁপতো কমেন্ট লিখতে গিয়ে। বিচারকের পর্যন্তু স্বাধীনতা ছিল না সত্য রায় দেওয়ার। প্রতিটি রায় ঘোষনার আগে তাদের পরামর্শ নিতে হতো তাবেদার গোষ্ঠীর সাথে।
ভয়ঙ্কর এই রাজতন্ত্রের খপ্পড়ে পড়ে বাংলাদেশের গণতন্ত্র, মানবাধিকার, বিচার ব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, ভোটাধিকার এবং স্বাধীনতা সবকিছু ধ্বংসের মুখে পড়েছিল। জনগণের কণ্ঠ রোধ করে একটি ভয়ার্ত সমাজ গড়ে তোলা হয়েছিল, যেখানে সত্য প্রকাশ করা ছিল যুদ্ধের মুখোমুখি হওয়ার নামান্তর।
কিন্তু জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে সেই অন্ধকার যুগের অবসান ঘটেছে। আজ বাংলাদেশে বাকস্বাধীনতা ফিরে এসেছে, এটি সবচেয়ে বড় অর্জন। ফেসবুক, সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে পত্রপত্রিকা এবং গণমাধ্যমে বর্তমান সরকারের সমালোচনা এখন অবাধে প্রকাশিত হচ্ছে, যা হাসিনার শাসনামলে অকল্পনীয় ছিল। মানুষ আর ভয়ে নিজের মন্তব্য মুছে ফেলে না; তারা খোলামেলা আলোচনা করে, মতামত প্রকাশ করে।
এই পরিবর্তন শুধুমাত্র রাজনৈতিক নয়, এটি সমাজের প্রতিটি স্তরে অনুভূত হচ্ছে। সাংবাদিকরা এখন স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছেন, লেখকরা ভয়মুক্ত হয়ে কলম চালাচ্ছেন। জনগণের কণ্ঠ আর রোধ করা যাচ্ছে না, এটি একটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক পুনর্জাগরণ। বিপ্লবের শহীদদের রক্তের মূল্যে অর্জিত এই স্বাধীনতা বাংলাদেশকে নতুন দিশা দেখিয়েছে।
ভয়ঙ্কর রাজতন্ত্রের খপ্পড় থেকে মুক্ত হয়ে বাংলাদেশ আজ এক নতুন যুগে প্রবেশ করেছে। জুলাই বিপ্লব আমাদের শিখিয়েছে যে, ঐক্য এবং সাহসের মাধ্যমে যেকোনো স্বৈরাচারকে পরাজিত করা সম্ভব। কিন্তু এই অর্জনকে রক্ষা করতে হলে সতর্ক থাকতে হবে, দুর্নীতি, ভীনদেশী হস্তক্ষেপ এবং ভয়ের ছায়া যেন আর ফিরে না আসে। বাকস্বাধীনতা এবং গণতন্ত্রের এই আলোকে জ্বালিয়ে রাখুন, যাতে বাংলাদেশ সত্যিকারের স্বাধীনতা উপভোগ করতে পারে। এই বিজয় জনগণের, এবং এটিকে অটুট রাখার দায়িত্বও আমাদের সকলের।
ফেসবুকে মন্তব্যের জেরে জাবি শিক্ষার্থীর ৭ বছরের কারাদণ্ড
ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ায় ৭ বছরের কারাদণ্ড
ফেসবুকে কটূক্তি, এক ব্যক্তির ৭ বছরের দণ্ড
সাইবার ক্রাইম: তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের মামলায় ফেসবুক মন্তব্যের জেরে জাবি শিক্ষার্থীর ৭ বছরের কারাদণ্ড
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



