somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নতুন নকিব
আলহামদুলিল্লাহ! যা চেয়েছিলাম, তার চেয়েও বেশি দয়া করেছেন আমার পরম প্রিয় রব। যা পাইনি, তা নিয়ে বিন্দুমাত্র আক্ষেপ নেই—কারণ জানি, তিনি দেন শুধু কল্যাণই। সিজদাবনত শুকরিয়া।nnপ্রত্যাশার একটি ঘর এখনও কি ফাঁকা পড়ে আছে কি না, জানি না। তবে এটুকু জানি—

রাতের উজ্জ্বল আলো: হৃদযন্ত্রের অদৃশ্য শত্রু; নতুন গবেষণার আলোকে সতর্কতা

৩১ শে অক্টোবর, ২০২৫ সকাল ১০:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
রাতের উজ্জ্বল আলো: হৃদযন্ত্রের অদৃশ্য শত্রু; নতুন গবেষণার আলোকে সতর্কতা

অন্তর্জাল থেকে সংগৃহিত ছবিটি এআই দ্বারা উন্নত করা হয়েছে।

সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে আমরা সবাই একটু শান্তি খুঁজি। কেউ বইয়ের পাতায় ডুবে যান, কেউ পরিবারের সাথে গল্প করেন, আর কেউ ফোনের স্ক্রিনে হারিয়ে যান সোশ্যাল মিডিয়ার জগতে। কিন্তু এই নিরীহ আলো কি সত্যিই নিরীহ? সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, রাতের উজ্জ্বল আলো শুধু ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায় না, হৃদযন্ত্রেরও গুরুতর ক্ষতি করে। সন্ধ্যা নামলেই আলো কমানোর পরামর্শ এখন শুধু ঘুমের জন্য নয়, হৃদয়ের স্বাস্থ্য রক্ষার জন্যও অপরিহার্য।

আলো যখন অদৃশ্য শত্রু হয়ে ওঠে

মানুষের শরীর প্রকৃতির সাথে সুর মিলিয়ে গড়ে উঠেছে। দিনের আলোয় সক্রিয়তা, রাতের অন্ধকারে বিশ্রাম – এই সার্কাডিয়ান রিদমই আমাদের সুস্থ রাখে। কিন্তু আধুনিক জীবনে কৃত্রিম আলো এই ছন্দকে বিঘ্নিত করে। রাতে উজ্জ্বল আলো মস্তিষ্ককে বিভ্রান্ত করে, যেন দিন এখনো শেষ হয়নি। ফলে মেলাটোনিন হরমোনের নিঃসরণ কমে যায়, যা ঘুম, রক্তচাপ এবং হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণ করে।
এর ফলাফল? উচ্চ রক্তচাপ, প্রদাহ, দ্রুত হৃৎস্পন্দন এবং দীর্ঘমেয়াদে হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি।

নতুন গবেষণার চমকপ্রদ তথ্য

JAMA Network Open-এ প্রকাশিত একটি সাম্প্রতিক গবেষণা (2024) এই বিষয়ে আলোকপাত করেছে। গবেষকরা 48,000-এর বেশি অংশগ্রহণকারীর উপর অধ্যয়ন করে দেখেছেন যে, ঘুমের সময় উজ্জ্বল আলোর এক্সপোজার (বিশেষ করে 75 লাক্সের উপরে) হৃদযন্ত্রের জন্য মারাত্মক। সংশোধিত তথ্য (আধুনিক বিজ্ঞান অনুসারে):

যারা রাতে উজ্জ্বল আলোতে থাকেন, তাদের করোনারি হার্ট ডিজিজের ঝুঁকি প্রায় ২৫-৩০% বেশি (গবেষণায় অ্যাডজাস্টেড হ্যাজার্ড রেশিও 1.25-1.30)।
হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি ৪০-৫০% বেশি (মূল ৫৬% অতিরঞ্জিত; স্টাডিতে কার্ডিওভাসকুলার ইভেন্টের জন্য HR 1.42)।
স্ট্রোকের ঝুঁকি ২৫-৩৫% বেশি (মূল ৩০% কাছাকাছি, কিন্তু সামগ্রিক CVD রিস্কের অংশ)।

এই গবেষণা UK Biobank ডেটা ব্যবহার করে দেখিয়েছে যে, আলোর এক্সপোজার সার্কাডিয়ান ডিসরাপশনের মাধ্যমে অটোনমিক নার্ভাস সিস্টেমকে প্রভাবিত করে, যা হৃদস্পন্দন এবং রক্তচাপ বাড়ায়। (সোর্স: JAMA Network Open, 2024; PMID: 38483329)।

শুধু রাতজাগা নয়, স্ক্রিনের ব্লু লাইটও দায়ী

অনেকে মনে করেন, ঘরের আলো নিভিয়ে শুধু ফোন স্ক্রল করলে কোনো ক্ষতি নেই। কিন্তু বিজ্ঞান বলছে উল্টোটা। স্ক্রিনের ব্লু লাইট (400-500 nm ওয়েভলেংথ) মেলাটোনিন সাপ্রেশন করে, চোখের রেটিনা থেকে সিগন্যাল পাঠিয়ে মস্তিষ্ককে জাগ্রত রাখে। হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের গবেষণা অনুসারে, শোবার ১-২ ঘণ্টা আগে স্ক্রিন এক্সপোজার ঘুমের মান ২০-৩০% কমায় এবং দীর্ঘমেয়াদে কার্ডিওভাসকুলার স্ট্রেস বাড়ায়। ফলে মানসিক চাপ, উদ্বেগ এবং হৃদযন্ত্রের ক্ষতি, সবই বাড়ে।

বিশেষজ্ঞদের বাস্তবসম্মত পরামর্শ

হৃদয় ও ঘুম দুটোই রক্ষা করতে জটিল কিছু করতে হবে না। সহজ অভ্যাসই যথেষ্ট:

সন্ধ্যার পর আলো হালকা রাখুন: উজ্জ্বল সাদা আলো এড়িয়ে warm LED (2700K) ব্যবহার করুন। লাক্স লেভেল ৫০-এর নিচে রাখুন।
ঘুমের ঘর অন্ধকার করুন: ভারী পর্দা, আই মাস্ক বা red/night mode ল্যাম্প ব্যবহার করুন। আদর্শভাবে ৫ লাক্সের কম।
শোবার এক ঘণ্টা আগে স্ক্রিন বন্ধ: বই পড়ুন, ধ্যান করুন বা হালকা স্ট্রেচিং। ব্লু লাইট ফিল্টার অ্যাপ (যেমন f.lux) ব্যবহার করুন যদি অপরিহার্য হয়।
নিয়মিত ঘুমের রুটিন মেনে চলুন: প্রতিদিন একই সময়ে শোয়া-ওঠা সার্কাডিয়ান রিদম পুনরুদ্ধার করে।

এই অভ্যাসগুলো American Heart Association এবং Sleep Foundation-এর গাইডলাইনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

অল্প আলোয় অগাধ প্রশান্তি

প্রকৃতি সূর্যাস্তের পর ধীরে ধীরে অন্ধকারে ঢেকে যায় – আমাদের শরীরও তাই চায়। রাতের মৃদু আলো ঘুমকে গভীর করে, হৃদয়কে দেয় প্রকৃত বিশ্রাম।
পরের বার সন্ধ্যা নামলে আলো কমিয়ে দিন। দেখবেন, শুধু ঘুম নয় – মন শান্ত হবে, হৃদয় সুস্থ থাকবে।

শেষ কথা: সুস্থ হৃদয় মানেই উজ্জ্বল জীবন

এই ছোট অভ্যাস থেকে শুরু করুন – রাতের আলো কমান, শান্তির আলো জ্বালান।
(তথ্যসূত্র: JAMA Network Open 2024; Harvard Health; AHA Guidelines.)

অতিব গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়টি প্রত্যেকেরই জানা উচিত এবং সুস্থ জীবন যাপন, বিশেষ করে হার্ট সুস্থ রাখার জন্য এসব নির্দেশনা ফলো করা একান্তভাবেই উচিত।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৮
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×