
ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল সম্প্রতি বলেছেন, “অদক্ষ শাসনের কারণেই বাংলাদেশ, নেপাল ও শ্রীলঙ্কায় সরকার পরিবর্তন হয়েছে।” এই বক্তব্য শুনে মনে হয়, এ যেন ভূতের মুখে রাম নাম। কারণ, দক্ষিণ এশিয়ার বাস্তবতায় ভারতই সেই দেশ, যে প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর রাজনীতিতে সবচেয়ে বেশি হস্তক্ষেপ করে। গণতন্ত্রের মুখোশ পরে স্বৈরশাসন টিকিয়ে রাখার পেছনে ভারতের ভূমিকা সবসময়ই গভীর। তাই দোভালের মুখে এমন কথা নিছক ভণ্ডামি ছাড়া আর কিছুই নয়।
ভারতের ভূমিকা: বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট
বাংলাদেশে শেখ হাসিনার ১৬ বছরের একচ্ছত্র শাসন, বিরোধী দমন, মানবাধিকার লঙ্ঘন, ভুয়া নির্বাচন ইত্যাদি সবকিছুর পেছনে ভারতের প্রত্যক্ষ সমর্থন ছিল। ২০০৮ সালের নির্বাচন থেকেই RAW ও নীতিনির্ধারক মহল “আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা”র নামে হাসিনা সরকারকে সমর্থন দিয়ে এসেছে। অজিত দোভাল নিজে RAW-এর সাবেক কর্মকর্তা, যিনি প্রতিবেশী দেশগুলোর রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তারে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন। এর ফল, বাংলাদেশের গণতন্ত্রের মৃত্যু এবং রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ সিদ্ধান্তে বিদেশি প্রভাবের দখল।
“অদক্ষ শাসন” নাকি “নির্দেশিত রাজনীতি”?
দোভাল যেন নিজেকে দক্ষিণ এশিয়ার নৈতিক অভিভাবক ভাবেন। কিন্তু যে সরকার ১৬ বছর ধরে ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে, হাজার মানুষকে গুম-খুন করেছে, ভারতের স্বার্থে সীমান্ত, পানি ও বাণিজ্যে ছাড় দিয়েছে, তার পতনকে “অদক্ষ শাসন” বলা আসলে ভারতীয় কৌশল ব্যর্থতার আড়াল। বাংলাদেশের জনগণ ভারতের ছায়ায় দাঁড়ানো সেই শাসনব্যবস্থাকে ইতিহাসের বর্জ্যস্তূপে ফেলে দিয়েছে।
ভারতের আসল মনোভাব
ভারত প্রতিবেশী দেশগুলোকে সহযোগী নয়, বরং “কৌশলগত প্রভাববলয়” হিসেবে দেখে। তাদের চোখে বাংলাদেশ, নেপাল বা শ্রীলঙ্কা স্বাধীন রাষ্ট্র নয় বরং নিরাপত্তা বলয়। তাই তারা জনগণের ইচ্ছা নয়, ভারতঘেঁষা সরকার টিকিয়ে রাখতে আগ্রহী। যখন সেই সরকার ভেঙে পড়ে, তখন “অদক্ষ শাসন” বলে দোষ চাপায়।
অন্তর্নিহিত ভয়
বাংলাদেশে শেখ হাসিনার পতনের পর ভারতের পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে। এই পরিবর্তনের ধারা যদি অন্য প্রতিবেশী দেশেও ছড়িয়ে পড়ে, ভারতের প্রভাব কমে যাবে, এই আশঙ্কাই দোভালের মন্তব্যের মূল কারণ। তাই এটি আসলে আত্মরক্ষার কূটনৈতিক নাটক।
শেষ কথা
অজিত দোভালেরা কখনও প্রতিবেশী দেশের জনগণের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষার প্রতি আন্তরিক ছিলেন না। তারা চান এমন সরকার, যেটি ভারতের স্বার্থ রক্ষা করবে, অন্যান্য নিজ দেশের জনগণের নয়। তাই “অদক্ষ শাসনের কারণে সরকার পরিবর্তন” মন্তব্যটি নিছক আরেকটি ভণ্ডামি। আজকের বাস্তবতা প্রমাণ করেছে, বিদেশি মদদ নয়, জনগণের শক্তিই পরিবর্তনের আসল চালিকাশক্তি। ইতিহাসের আদালতে দোভালদের মুখোশ অবশেষে খুলেই গেছে।
সংবাদ সূত্র: অদক্ষ শাসনের কারণেই বাংলাদেশ, নেপাল ও শ্রীলঙ্কায় সরকার পরিবর্তন: অজিত দোভাল
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা নভেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৩৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




