
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক ভয়ংকর অধ্যায় নেমে এসেছিল বিগত ফ্যাসিবাদী আমলে, যখন ক্ষমতার লালসায় আওয়ামী লীগ সভ্যতা ভব্যতার সমস্ত সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। মানুষের মৌলিক অধিকার কেড়ে নেওয়া, কথায় কথায় মানুষের ওপর অন্যায় অত্যাচার চালানো, বিরোধী দলের ওপর পাইকারি দমন-পীড়নের স্টিমরোলার ব্যবহার, অসংখ্য গুম-খুন, লাখ লাখ মিথ্যা মামলা, এবং অমানবিক অকথ্য নির্যাতনের মধ্য দিয়ে তারা প্রতিষ্ঠা করেছিল ইতিহাসের এক ভয়াল ফ্যাসিবাদী দুঃশাসন।
তখন সাধারণ মানুষের কোনো অধিকারই ছিল না। অপরাধী কোন দলের, তা যাচাই করে বিচার করা হতো। আওয়ামী লীগের সাঙ্গপাঙ্গরা খুন, ধর্ষণ কিংবা অন্যায় কর্মকাণ্ড করেও অনায়াসে পার পেয়ে যেত। আইন-আদালত তাদের টিকিটি পর্যন্ত ছুঁতে পারতো না; আদালত পরিণত হয়েছিল আজ্ঞাবহ দাসে। ভোটাধিকার ও নির্বাচনও পরিণত হয়েছিল এক প্রহসনে, রাতের ভোট, সাজানো ভোট, পাতানো নির্বাচন, যা তখন বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। দলীয় ষন্ডাপান্ডারা একের পর এক ব্যাংক দখল করে নিয়েছিল। বিলিয়ন বিলিয়ন টাকা পাচার করে দেশকে ফোকলা করা হয়েছিল।
সবচেয়ে মারাত্মক বিষয় ছিল তখন হাজারও নির্যাতন নীপিড়নের মুখেও মানুষের মুখ খোলার কোন উপায় ছিল না। প্রতিবাদের সকল পথ রুদ্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। রাস্তায় নামলেই হামলা গুলি, মুখ খুললেই মামলা মোকদ্দমা আইন আদালত শাস্তি, মুখ খুললেই চোখের সামনে ভেসে উঠতো অপহরন গুম খুনের বিভীষিকা, মুখ খুললেই তাদেরকে ধরে নিয়ে ফাঁসিয়ে দেওয়া হতো দেশবিরোধী, জঙ্গি মঙ্গি, জামাআত, হরকতুল জিহাদ ইত্যাদি ভয়ঙ্কর তকমায়।
এই সময়টাতে সাধারণ মানুষের মনে আওয়ামী লীগের প্রতি এতটাই ঘৃণা জন্মেছিল যে, তাদের অনেকেই আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকদের আর মানুষ হিসেবে ভাবতেও চাইতেন না। সমাজে তখন বিদ্রুপের সুরে প্রায়ই শোনা যেত বিখ্যাত একটি বাক্য, “তুই কি মানুষ না আওয়ামী লীগ?”
এই কথাটি শুধুমাত্র একটি রসিকতা ছিল না; এটি ছিল ভয়ঙ্কর ক্ষয়িষ্ণু এক দুঃসময়ে নির্যাতিত জনগণের কান্না, ঘৃণা, ও প্রতিবাদের প্রতীক। আওয়ামী লীগের তাণ্ডবের বিরুদ্ধে নিঃশব্দে উচ্চারিত সেই বাক্য যেন পরিণত হয়েছিল এই জাতির বেদনার প্রতিধ্বনিতে।
তবুও সত্য এটাই, যতই অপরাধী হোক, মানুষকে মানুষই ভাবা উচিত। আমরা তাদেরকে মানুষই মনে করি।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




