২৬শে মার্চ ২০২০ থেকে আজ ৭ জুলাই ২০২০। ১০৩ দিন সব মিলিয়ে। ৩৮ বছরের জীবনে আগে কখনই আমি এমন সময় পার করিনি। এরকম গৃহবন্দি জীবন কাটাইনি আগে কখনও। মনে পরে, লক ডাউনের প্রথম দিকে সপ্তাহে হয়ত একদিন বাইরে যেতাম বাজার কিংবা নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিশ-পত্র কেনার জন্য, গা ছম ছম করত, ভয় লাগত। ইদানিং মাঝে মাঝে অফিসে যাচ্ছি, ঐ ফিলিংসটা পাচ্ছিনা, নরমাল লাগে এখন সব কিছুই। কে জানে, সহ্য হয়ে গেছে। ও হ্যা, আমাদের অফিস খুলেছে কিছদিন হল। বাসায় আমার মেয়ে-বউ, বাবা-মা তারা ১৪ মার্চ থেকে কেও এক্টিবারে জন্যেও বাইরে যায়নি।
প্রথম দিকে, worldometers সাইট থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের আপডেট নিতাম দিনে ২/৩ বার। আগে ২টা পরে ২ঃ৩০ মিনিটে মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা ম্যাডামের আপডেট নিতাম। প্রতিদিন।। মৃতের সংখ্যা আমার মনে ভয় ধরিয়ে দিত। আমি মারাত্মক ভীত থাকতাম, না জানি আজ আবার কতগুলো আক্রান্ত হয়!!আস্তে আস্তে এটাও নরমাল হয়ে গেল, এখন worldometers সাইট খুলিনা অনেকদিন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বয়ানও শুনিনা অনেকদিন। হঠাত মনে হলে, দিনের যেকোন সময় যেকোন নিউজ পেপার থেকে জেনে নেই আজকের সংখ্যা।
ঢাকায় আমি যেই এলাকায় থাকি সেখানে মসজিদের শোক সংবাদ আগের চেয়ে গত ১০৩ দিনে অনেক ঘন ঘন প্রচার হয়েছে। প্রথমদিকে মাইকের আওয়াজ শুনলেই আঁতকে উঠতাম। ইদানিং কেমন যেন আগে থেকেই প্রস্তুত থাকি। "একটি শোক সংবাদ................" মাইকে শুনে এখন আর আগের মত আঁতকে উঠিনা।
বাসা থেকে বের হবার সময় মাস্ক নিতে ভুলে যেতাম খুব, এখন মাস্ক নিতেও ভুলিনা। সব নরমাল হয়ে গেছে। এটাই বোধ হয় নিউ নরমাল।
গত ১০৩ দিন আমি কী করেছি? একটা লিস্ট করা যাক-
১। প্রথম দিকে খুব রান্নায় সহযোগিতা করেছি, ম্যাক্স ১৫ দিন তার পর সটকে পড়েছি। ওমুখো আর হই নাই।
২। আব্বা-আম্মাকে নিয়ে অনেক টেনশন করেছি। মূলত তাদের স্বাস্থ্য নিয়ে। তাদের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেছি নতুন করে।
৩। বাবা-মায়ের সাথে ভাল-ব্যবহারের গুরুত্ব এবং তাদের দোয়ার ফলাফল উপলব্ধি করেছি। তাদের সাথে আর কোনদিন খারাপ ব্যবহার করব না বলে মনে মনে ওয়াদা করেছি।
৪। আমার মেয়েটার প্রতি ভালবাসা বেড়েছে অনেকগুন। বড় হয়ে যাচ্ছে, সাড়ে নয় বছর বয়স কবে হয়ে গেল বুঝতেই পারিনি। কয়দিন পরেই হয়ত বিয়ে দিয়ে দিতে হবে।
৫। স্ত্রীর প্রতিও ভালবাসা বেড়েছে, হয়ত আমি এখন অনেক বেশি ভাল হাসবেন্ড, এট লিস্ট আগের চেয়ে, আমি নিজেই বুঝতে পারি, আগে কতটা খারাপ ছিলাম।
৬। একটি ডোমেইন রেজিস্ট্রেশন করে নিয়েছি, রেডিটুরিডিং.কমনামে। ৬০ টার বেশি ব্লগ আমি নিজেই লিখে ফেলেছি কিভাবে কিভাবে। লিখতে গিয়ে অনেক পড়াশোনা করেছি। জেনেছি, শিখেছি।
৭। কিছু ছেলে-মেয়ে কিভাবে যেন জেনেছে আমার ব্লগ সম্পর্কে তারাও লিখছে সেখানে। তাদের খুবই সামান্য সম্মানী দিচ্ছি। তারাও ইদানিং মহা উৎসাহে লিখে যাচ্ছে। তাদের সাথে আমার কখনও কথা হয়নি, দেখাও হয়নি। যোগাযোগ ফেসবুক চ্যাট, ইমেইল কিংবা মোবাইল মেসেজেই হচ্ছে।
৮। অফিসে গিয়েছি ১০/১২ দিন, এরই মাঝে আমার সাইট চলছে মানিকগঞ্জ সাব-স্টেশনের ভিতরে। কিছুটা ব্যস্ত ছিলাম কয়েক দিন।
৯। একটা টেন্ডার নিয়ে কাজ করেছি, কিন্তু পাই নাই। আরেকটার কাজ চলছে।
১০। এসইও নিয়ে কিছুটা কাজ শিখেছি, মনে হচ্ছে ভবিষ্যতে এটা কিছুটা কাজে দেবে।যা শিখেছি লিখে রেখেছি ব্লগে।
১১। আরও কিছু করেছি কিন্তু লিস্ট আর লম্বা করতে ইচ্ছে করছে না।
আসলে, এই সময়ে আমরা যারা প্রাইভেট চাকুরি করি- তাদের মাঝে যাদের চাকুরি আছে, তারাই খুব লাকি। সৌভাগ্যবান। আমি সেই সৌভাগ্যবানদের মাঝে একজন। আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ সবাইকে ভাল রাখুন। প্রিথিবিকে মুক্ত করে দিন এই করোনার গ্রাস থেকে। আমরা সবাই মিলে একসাথে ভাল থাকতে চাই। আল্লাহ কবুল কর।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জুলাই, ২০২০ সকাল ৯:০৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



