somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নৈশ শিকারী
জীবন সংগ্রামে হেরে যাওয়ার মাঝে কোনো বীরত্ব থাকেনা; তাই জীবনের এই যুদ্ধ ক্ষেত্রে সাহসীকতার সাথে লড়াই করার মাঝেই জীবনের প্রকৃত বীরত্ব লুকিয়ে থাকে, আর ভাগ্য সবসময় সাহসীদের পক্ষেই কাজ করে।

মিথ্যাবাদী মা!

০১ লা জুলাই, ২০১৫ ভোর ৪:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


এতটা দিন পেরিয়ে আজো মায়ের জন্য কাঁদি,
কারণ আমার মা যে ছিল ভীষণ মিথ্যাবাদী।
বাবা যেদিন মারা গেল আমরা হলাম একা,
সেদিন থেকেই বাঁক নিয়েছে মায়ের কপাল রেখা।
মা বলতো বাবা নাকি তারার ভিড়ে আছে,
লেখাপড়া করি যদি নেমে আসবে কাছে।
তারায় তারায় বাবা খুঁজি তারার ছড়াছড়ি,
আমার মায়ের মিথ্যে বলার প্রথম হাতে খড়ি।

পাড়া পড়শী বলল এসে এই বয়সেই রাঢ়ি?
একা একা এতটা পথ কেমনে দিবে পাড়ি?
ভাল একটা ছেলে দেখে বিয়ে কর আবার,
মা বলল, ওসব শুনে ঘেন্না লাগে আমার।
একা কোথায় খোকন আছে, বিয়ের কী দরকার?
ওটা ছিল আমার মায়ের চরম মিথ্যাচার।

রাত্রি জেগে সেলাই মেশিন চোখের কোণে কালি,
নতুন জামায় ঘর ভরে যায় মায়ের জামায় তালি।
ঢুলু ঢুলু ঘুমের চোখে সুই ফুটে মা’র হাতে,
আমি বলি, শোওতো এবার কী কাজ অত রাতে?
মা বলত ঘুম আসে না শুয়ে কী লাভ বল?
ওটা ছিল আমার মায়ের মিথ্যা কথার ছল।



স্কুল থেকে নিতে আসা গাড়ী ঘোড়ার চাপে,
আমার জন্য দাড়ানো মা কড়া রোদের তাপে।
ঘামে মায়ের দম ফেটে যায়, দুচোখ ভরা ঝিম;
ভ্যানিটি ব্যাগ খুলে আমায় দিত আইসক্রিম।
মায়ের দিকে বাড়িয়ে ধরে বলতাম একটু নাও,
মলিন হেসে মা বলত, খাও তো বাবা খাও।
আমার আবার গলা ব্যাথা, ঠান্ডা খাওয়া মানা,
ওটা ছিল আমার মায়ের নিঠুর মিথ্যাপনা।

বড় হয়ে চাকুরী নিয়ে বড় শহর আসি,
টুকটুকে বউ ঘরে আমার বউকে ভালবাসি।
আবাসিক এলাকায় বাসা নিয়ে ডেকোরেটর ধরে,
ঘরকে আমার সাজিয়ে নিলাম অত্যাধুনিক করে।
মা তখনো মফস্বলে কুশিয়ারার ঢালে,
লোডশেডিং এর অন্ধকারে সন্ধ্যা বাতি জ্বালে।
নিয়ন বাতির ঢাকা শহর আলোয় ঝলমল,
মাকে বলি গঞ্জ ছেড়ে এবার ঢাকা চল।
মা বলল এই তো ভাল খোলা মেলা হাওয়া,
কেন আবার তোদের ওই ভিড়ের মধ্যে যাওয়া?
বদ্ধ ঘরে থাকলে আমার হাঁপানি ভাব হয়,
ওটা ছিল আমার মায়ের মিথ্যা অভিনয়।



তারপর আমি আরো বড়, স্টেটস এ অভিবাসী,
বিশ্ব ব্যাংকের বিশেষজ্ঞ সুনাম রাশি রাশি।
দায়িত্বশীল পদে আমার কাজের অন্ত নাই,
মায়ের খবর নিব এমন সময় কমই পাই।
মা বিছানায় একলা পড়া খবর এল শেষে,
এমন অসুখ হয়েছে যার চিকিৎসা নেই দেশে।
উড়ে গেলাম মায়ের কাছে অনেক দূরের পথ,
পায়ে পড়ে বলি মাকে এবার ফিরাও মত;
একা একা গঞ্জে পড়ে কী সুখ তোমার বল?
আমার সংগে এবার তুমি এমেরিকা চল।

এসব অসুখ এমেরিকায় কোন ব্যাপার নয়,
সাত দিনের চিকিৎসাতেই সমুল নিরাময়।
কষ্ট হাসি মুখে এনে বলল আমার মা,
প্লেনে আমার চড়া বারণ তুই কি জানিস না ?
আমার কিছু হয়নি তেমন ভাবছিস অযথা,
ওটাই ছিল আমার মায়ের শেষ মিথ্যা কথা।
ক’দিন পরেই মারা গেল নিঠুর মিথ্যাবদী,
মিথ্যাবাদী মায়ের জন্য আজো আমি কাঁদি।


উৎসর্গ: কবিতাটা সেই সকল মায়েদের জন্য উৎসর্গকরা হল যারা বিনিদ্র রজনী জেগে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে নিজের সন্তানকে মানুষ করে তোলেন। আপনি হয়তো জানেন না আপনার জন্মের পর থেকে এ পর্যন্ত তার সব কষ্টগুলোকে চাপা দিয়ে রেখেছে শুধু আপনার মুখে একটু হাসি ফুটানোর জন্য । আপনাদের কাছে শুধু একটাই অনুররোধ মা কে কখনো কষ্ট দিবেন না, কারন আপনার দেয়া কষ্টগুলি মায়ের মনকে নীরবে কাঁদায় যা আপনাকে বুঝতে দিবে না, আপনিও কোনদিনই বুঝতে পারবেন না ।

আল্লাহ বলেন,
" তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারও এবাদত করনা এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব-ব্যবহার কর। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়; তবে তাদেরকে ‘উহ’ শব্দটিও বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিওনা এবং বল তাদেরকে শিষ্ঠাচারপূর্ণ কথা।" [১৭-২৩]
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৪:২৪
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দেশে এমপি হওয়ার মতো ১ জন মানুষও নেই

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১০ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৪



দলগুলোতে মানুষই নেই, আছে হনুমান।

আমেরিকায় যদি ট্রাম্প ক্ষমতায় না'আসতো, বাংলাদেশে হ্যাঁ/না ভোট দিয়ে ইউনুসকে দেশের প্রেসিডেন্ট করে, দেশ চালাতো প্রাক্তন মিলিটারী অফিসারেরা ও বর্তমান জামাতী অফিসারা মিলে। দুতাবাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

গ্রামে থেকে যাওয়ার চিন্তা করছি

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ১০ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২৬

ঢাকা ছেড়ে গ্রামে
ঢাকা ছেড়ে আমার নিজ গ্রামে থাকছি প্রায় দুই সপ্তাহ হতে চললো। শান্ত নিরিবিলি পরিবেশ বেশ ভালোই লাগছে! যদিও শীতের রাতে বাড়ির পাশে শিয়ালদের হুক্কাহুয়া মাঝে মাঝে ছওমকে দেয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসুন সুন্দর একটা ব্লগ পরিবেশ গড়ে তুলি

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ১০ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৪৯


ব্লগ লেখার আগে আমাদের জানা উচিত আসলে ব্লগ কি ?
ব্লগ মানে তথ্য সম্পূরণ ও গন সংযোগ সোসাল নেটওরাকিং প্লাটফরম । এখানে বিভিন্ন মর্তাদেশের,বিভিন্ন শ্রেণীর
পেশার বিভিন্ন ধরনের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মজনু নামাজ পড়ার পর মোনাজাত ধরল তো ধরলই, আর ছাড়তে চাইল না | পাক আর্মির বর্বরতা!!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১০ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৭



১৯৭১ সালে পাকিস্তানী আর্মি পুরো বাঙালী জাতির উপর যে নৃশংস হত্যাংজ্ঞ, বর্বরতা চালিয়েছে যা বিশ্বের ইতিহাসে বিরল। সত্যি বলতে ১৯৭১ সালে বাঙালী জাতির উপর পাকিস্তানী আর্মি কর্তৃক... ...বাকিটুকু পড়ুন

সব দোষ শেখ হাসিনার !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১০ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৫৬


অনেকদিন পর zahid takes এর ডা. জাহেদুর রহমানের এনালাইসিস ভিডিও দেখলাম। জুলাই আন্দোলনের পূর্বে বিশেষত যখন র‍্যাব স্যাংশন খায় তখন থেকেই উনার ভিডিও দেখা আরম্ভ করি। শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×