somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নৈশ শিকারী
জীবন সংগ্রামে হেরে যাওয়ার মাঝে কোনো বীরত্ব থাকেনা; তাই জীবনের এই যুদ্ধ ক্ষেত্রে সাহসীকতার সাথে লড়াই করার মাঝেই জীবনের প্রকৃত বীরত্ব লুকিয়ে থাকে, আর ভাগ্য সবসময় সাহসীদের পক্ষেই কাজ করে।

আমার জীবনে ঘটে যাওয়া ভয়ংকর এবং সত্যিকারের কিছু ভৌতিক ঘটনা!!! (পর্বঃ১)

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ঘটনা ১ঃ ১৯৯৬ এর মাঝামাঝি সময় সেটা কোন মাস ছিলও মনে নাই, তখন আমি একটা হাফিজিয়া মাদ্রাসার ছাত্র, কোরানের মধ্যে কিছু সূরার আমল লেখা থাকে; সেখানে একটা আমলে পেয়েছিলাম যে সূরা জ্বীন ৭০০বার পাঠ করলে সমগ্র জ্বীন জাতি তার বশীভূত হয়। তাই আমিও আমল শুরু করেছিলাম তাছাড়া দিনটা বৃহস্পতি বার ছিলও আর পরের দিন উস্তাদকে সবক শোনানোর ঝামেলাও ছিলনা বলে সেদিন দুপুরের পর থেকেই আমল শুরু করেছিলাম, মোটামুটি রাতের নয়টা পর্যন্ত প্রায় চারশো বারের মতো পড়ে ফেলেছিলাম, বাড়ি ফিরার সময় আমার কোরান শরিফটা বুকে নিয়ে আরেক হাতে তসবি নিয়ে সূরাটা পড়তে পড়তে বাড়ির কাছে চলে আসছি এমন সময় আমার চেয়ে প্রায় ৩গুন লম্বা একটা লোকের মুখোমুখি হয়েছিলাম, লোকটা আমার তসবি ধরা হাতটা চেপে ধরে প্রশ্ন করেছিল তুই কি পড়তাছছ? বলে রাখা ভালও লোকটার গায়ে এমন একটা পোশাক ছিলও যে ঐরকম পোশাক আমি কোনদিন কোনও মানুষকে পড়তে দেখি নাই।

অন্ধকারের মধ্যেও লোকটার চোখ, মুখ, চেহারা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল উজ্জল ভাবে! মোটা মোটা ভ্রু, কয়লার আগুনের মতো চোখ দুটি যেনো আমাকে সম্মোহিত করে ফেলেছিল। আমি তার প্রশ্নের উত্তরে এমন গগনবিদারি চিৎকার দিয়েছিলাম যে, যদি আমার চিৎকারের অনুভুতি তার উপর কাজ করতো তাহলে আমি নিশ্চিত তার কানের পর্দা ফেঁটে যেতো। আমি চিৎকার করার পর লোকটা আমার হাত ছেড়ে দিয়ে বলেছিল, যা চলে যা এখান থেকে; আর কোনদিন এইসব পড়বিনা। ছাড়া পাওয়া মাত্র আমি এক দৌড়ে ঘরের দরজার সামনে গিয়ে পরেই অজ্ঞান। আর অজ্ঞান হওয়ার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত কোরান শরিফটা বুক থেকে ছাড়ি নাই। পরের দিন থেকে আমার এমন জ্বর শুরু হয়েছিলো যে ১মাস পর্যন্ত ভুগে
পরে সুস্থ হয়েছিলাম।



ঘটনা ২ঃ উপরোক্ত ঘটনার সময় আমার বয়স ১৩বছর ছিল। তারও প্রায় ৩বছর পর একটা ছাত্র একা এসে আমাদের মাদ্রাসায় ভর্তি হয়েছিল। তার নাম ছিলো মোক্তার দেখতে আমাদের বয়সিই ছিল। সে আসার পর থেকে তার আচরণে অদ্ভুত কিছু ব্যাপার লক্ষনিয় হতে লাগলো; সে তেমন কারও সাথে মিসতোনা আর সবসময় একা থাকতো, আমাদের খাওয়ার সময় সে কোথায় যেনো চলে যেত, জিজ্ঞেস করলে বলতো আমি বাহিরে খেয়েছি এখানকার খাবার আমার ভাল লাগেনা, এমন আরো কিছু আজব ব্যাপার ছিল তার চরিত্রে। যাই হোক মূল ব্যাপারে আসি, আমাদের উস্তাদের কঠর নিষেধ ছিল রাত ১১টার পর কারও টয়লেটে যাওয়ার দরকার হলে সে যেন একা না যায়, প্রয়োজনে অন্য কোনও ছাত্রকে যেন অবশ্যই সাথে নিয়ে যায়। একদিন রাত বারোটার দিকে আমার এক বন্ধু আওলাদ হোসেনকে নিয়ে টয়লেটে গেলাম; গিয়েতো দুজনেরই চক্ষু ছানাবড়া! দেখি মসজিদের বারান্দায় বসে মোক্তার কোরান পড়তেছে!

টয়লেটে আসার সময় নিজের চোখে দেখেছি যে, ও হাসান ভাইয়ের সাথে ঘুমাচ্ছে! ২জায়গায়ই এক জনকে দেখে খুব অবাক হয়েছিলাম, পরে মোক্তারকে ডাক দিয়ে বললাম তুমি এখানে আসলা কিভাবে? (তাকে যে মাদ্রাসায় ঘুমাতে দেখেছিলাম ব্যাপারটা দুজনেই চেপে গিয়েছিলাম ভয়ে) মজার ব্যাপার হলোও মোক্তার আমাদের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে সে হাতে পায়ে ধরে কান্নাকাটি করেছিলো আর বলছিল ভাই তোমরা হুজুরকে কিছু বলো না উনি জানলে আমাকে মাদ্রাসা থেকে বের করে দিবে, পরে আমি বললাম, ঠিক আছে বলবোনা তুমিও আর এমন করোনা। পরবর্তীতে আমি কথা রাখলেও আওলাদ কথা রাখতে পারেনি। সে পুরো ঘটনার বৃত্তান্ত অনেকের কাছে প্রকাশ করে দিয়েছিল। এরপর ব্যাপারটা ২কান থেকে ৬কান হতে বেশী সময় লাগে নাই কিন্তু আমাদের সবায় যে ঘটনাটা যেনে গিয়েছিলাম এটা মোক্তার জানতো না।

তার কিছুদিন পর আমাদের সকলের সিনিয়ার ইমরান ভাই আমাদের উস্তাদের কাছে ব্যাপারটা জানান আর তিনি আরো কয়েকবার নিজে পরীক্ষা করে দেখেছিলেন যে দরজা বন্ধ থাকা অবস্থায় মোক্তার গায়েব সেটাও জানান। পরে হুজুর মাগরিব নামাজের পরে ইমরান ভাইকে দিয়ে সবাইকে জানিয়ে দেন যে, আজ সবায় যেন জেগে থাকি আজ মোক্তারকে ধরা হবে হাতেনাতে! রাত ৯:৩০ মিনিটে খেয়ে সবায় ১০:৩০ এর মধ্যে শুয়ে ঘুমানোর ভান করে পরেছিল। ছোট ২/১জন ছাড়া প্রায় সবায়ই জেগে রুদ্ধশ্বাসে অপেক্ষা করছিলাম মোক্তারের কান্ড সরাসরি প্রত্যক্ষ করার জন্য। ঠিক রাত ১:২০মিনিটে আমার চোখ লেগে আসছিল এমন সময় ডিমলাইটের আলোয় স্পষ্ট দেখলাম মোক্তারের বিছানা থেকে একটা আলো প্রকাশিত হচ্ছে পরে আলোটা প্রায় মানবের আকৃতি ধারণ করে ধীরে ধীরে দরজার দিকে যেতে দেখছিলাম। মনে মনে ভাবছিলাম যে ভুল দেখছিনা তো? আমার পাশের বিছানার আওলাদকে কনুই দিয়ে খোঁচা দিলাম, ও ইশারায় আমাকে চুপ থাকতে বললো।

আশ্চর্য জনক ব্যাপার হলোও মোক্তারের দেহটা আমরা তখনও শুয়ে থাকতে দেখছিলাম ওর বিছানায়! মানব আকৃতি যুক্ত আলোটা যখন দরজা ভেদ কর বেড়িয়ে গেল তখন ইমরান ভাই আর হাসান ভাই আমাদের সবাইকে অবাক করে দিয়ে তাদের বেড এর তোষক দিয়ে ঘুমন্ত মোক্তারকে চেপে ধরলো! এর মধ্যে আমাদের উস্তাদ লাইট এর সুইচ দিয়ে দিল। পুরো মাদ্রাসার মধ্যে হৈচৈ শুরু হয়ে গেলো আর অধির আগ্রহে সবায় অপেক্ষা করছিলাম ইমরান ভাই আর হাসান ভাইয়ের তোষকের নিচে কি আছে সেটা দেখার জন্য। তারা দুজনই তখন তাদের তোষক দিয়ে মোক্তারের বিছানা চেপে ধরে ছিল। পরে হুজুর এসে বললো তোষক সরাতে; তোষক সরানোর পর সবায় দেখলাম বিছানা মোক্তার শূন্য!!! সবায় অবাক হয়ে বসে রইলাম আর ভাবতে লাগলাম এটা কি হলোও? তারপর থেকে আর আমরা কোনদিন মোক্তারকে দেখতে পারি নাই।



ঘটনা ৩ঃ মোক্তারের ঘটনার ১বছর পরের কথা। শুক্রবার দিন সকাল ৭টা পর্যন্ত ক্লাস হয় পরে ছুটি হয়ে যায়; আর সেই দিনটাও শুক্র বার ছিল, ছুটি দিয়ে হুজুর একটু বাহিরে গিয়েছিলেন । এর মধ্যে আমি আওলাদ সহ ৬/৭জন বন্ধু গল্প করছিলাম, হঠাৎ আওলাদ চেচিয়ে উঠে বললো এই আমার মাথায় কে মারলো? আমি মারের আওয়াজ শুনলেও কে মেরেছে দেখি নাই, ভেবেছিলাম আমাদের মধ্যেই কেউ হয়তো দুষ্টামি করছে তাই ব্যাপারটা পাত্তাও দেই নাই। ৪/৫মিনিট যেতে না যেতেই দেখলাম আওলাদ শুধু চেঁচাচ্ছে আর বলছে আমারে মাইরা ফালাইলো আমারে বাঁচাও। আমরা অবাক হয়ে দেখছিলাম ওর নাকে মুখে স্পষ্ট আঘাতের চিহ্ন কিন্তু আঘাত কারিকে আবিষ্কার করতে পারছিলাম না। আঘাতের আওয়াজ শুনছি, চিহ্ন দেখছি অথচ আঘাত কারিকে দেখতে পারছিলাম না, কিভাবে সাহায্য করবো তা ও বুঝতে পারছিলাম না।

এরমধ্যে দেখলাম মেঝের উপর দিয়ে ওকে যেনো কেউ টেনে হিঁচড়ে দরজারদিকে নিয়ে যাচ্ছে, বুঝতেই পারি নাই যে এরচেয়ে অবাক করা কিছু দেখা আমাদের কপালে ছিলও। দেখলাম আওলাদ যখন দরজার প্রায় কাছে পৌঁছে গেছে তখন সে ধীরে ধীরে শূন্যে ভেসে উঠছে!! আওলাদ যখন চিৎকার করে বললো আমারে লইয়া গেলগা! আমারে লইয়া গেলগা!! তখন আমি সহ আমার আরো ৩ বন্ধু দৌড়ে গিয়ে ওর দুহাত টেনে ধরে থামানোর চেষ্টা করছিলাম। কি পরিমান অসুরিক শক্তি ওকে টানছিল দেখতে না পারলেও তার শক্তি অনুভব করছিলাম। এর মধ্যে হুজুর এসে এই ঘটনা দেখে কালবিলম্ব না করে ৩৩আয়াতের আমল শুরু করে দিলেন; আমলের সাথে সাথে সেই শক্তির মাত্রা কমতে কমতে এক সময় শেষ হয়েছিল। আওলাদের সুস্থ হতে পুরো এক সপ্তাহ অপেক্ষা করা লেগেছিল। সুস্থ হওয়ার পর আওলাদ আমাদের মাদ্রাসা ছেড়ে চলে গিয়েছিল। এগুলো ছাড়াও আরো কিছু প্যারানরমাল ঘটনার সাক্ষী আমি হয়েছি যার ব্যাখ্যা আমি আজও পাইনাই; সময় পেলে পরবর্তী পর্বে ইনশাআল্লাহ আপনাদের মাঝে সেগুলো শেয়ার করবো।

সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মার্চ, ২০১৮ সকাল ৯:৫৮
৩১টি মন্তব্য ২৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সকলের দায়িত্ব।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৮



এগুলো আমার একান্ত মতামত। এই ব্লগ কাউকে ছোট করার জন্য লেখি নাই। শুধু আমার মনে জমে থাকা দুঃখ প্রকাশ করলাম। এতে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দায়ী না। এখনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখনো নদীপারে ঝড় বয়ে যায় || নতুন গান

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২০

এ গানের লিরিক আমাকে অনেক যন্ত্রণা দিয়েছে। ২৪ বা ২৫ এপ্রিল ২০২৪-এ সুর ও গানের প্রথম কয়েক লাইন তৈরি হয়ে যায়। এরপর ব্যস্ত হয়ে পড়ি অন্য একটা গান নিয়ে। সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেতনার সময় জামায়াত বদ্ধ ইসলামী আন্দোলন ফরজ নয়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৮



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×