somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্মৃতির ডানায় "প্রবাসী ঈদ"

২৮ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ১২:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঈদ মানেই অনাবিল আনন্দ, ঈদ মানেই খুশি ।
ঈদ মানেই সকল বেদনা দুঃখ কষ্ট ভুলে এক চিলতে হাসি।
ঈদ মানেই যেন আলোর ঝর্ণাধারা,
ঈদ মানেই সকলকে একসাথে কাছে পাওয়া ।

বাংলাদেশের শ্যামল সুন্দর সবুজের সৌন্দর্য বৈচিত্র্য সবার মন যেমন আনন্দে ভরে দেয় তেমনি ঈদের আনন্দও বাংলার মানুষের মন প্রান কানায় কানায় ভরিয়ে দিতে প্রতি বছরই ঈদ আসে তার আনন্দের বার্তা নিয়ে। ঈদের আগমন শীতের ঝরা পাতার মতো আমাদের জীবনের দুঃখ কষ্টের করুন স্মৃতি গুলোও ঝরে যাবে।অতীতের সমস্ত দুঃখ বেদনার দাগ ভুলে পাওয়া না পাওয়ার হিসেব নিকেশ পিছনে ফেলে আবার নতুন রূপে, নতুন সাজে আমাদের মাঝে ফিরে আসছে পবিত্র ঈদ। ঈদ আরবী শব্দ। এর অর্থ খুশি, আনন্দ-উৎসব। রমজান মাসে দীর্ঘ এক মাস রোজা রাখার পর সকল মুসলিমদের মাঝে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সরূপ সকলের মাঝে আনন্দ বিলিয়ে দিতে আসে ঈদ। ঈদ মহাখুশি ও চরম আনন্দের একটি মহিমান্বিত দিন। মূলত, ঈদ মানুষের জীবনে নিয়ে আসে পরম আনন্দ আর পেছনে থাকে এর অন্তর্নিহিত তাৎপর্য। ঈদের সীমাহীন আনন্দ উপভোগের সঙ্গে সঙ্গে পরম করুনাময়ের উদ্দেশে নিজেকে নিবেদিত করতে হবে আর মানুষে মানুষে ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে ত্যাগের, ভ্রাতৃত্বের, ঐক্যের, সম্প্রীতির এবং সৌহার্দ্য-সহমর্মিতার মহান আদর্শ অনুধাবন করতে হবে। জীবনের দীর্ঘযাত্রায় অতীতের ঈদের স্মৃতি বাংলার মাটি ও মানুষের মতো আমার অস্তিত্বে গভীর নোঙর বেঁধে আছে আজও।

আমার ঢাকার কর্মব্যস্ত জীবন কেটেছে বেশিটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মহসীন হলে। ঈদের ছুটি কাটাতে যখন গ্রামের বাড়ীতে আসতাম তখন গ্রামের পুরনো বন্ধুদের নিয়ে চলে যেতাম পদ্মার তীরে। সেখানে আড্ডা চলত মাঝ রাত পর্যন্ত। জানি না আজ আর সে আড্ডা জমে কিনা, আমার জানা নেই হয়তোবা জমে নয়তোবা নয়। হয়তোবা বন্ধুরা আমার শূন্যতা অনুভব করে, নয়তো নয়! কিন্তু আমি আজও অতীতের সেই সোনাঝরা দিনগুলো হৃদয়ের ক্যানভাস থেকে কিছুতেই মুছতে পারিনি। সবাই হয়তো ভুলে গেছে, কেননা বড় বড় আনন্দ উৎসবের দিনগুলোতে তারা কেউ একটা এসএমএস দিয়েও মনে করে না। প্রথম প্রথম দেশের বন্ধুদের প্রচুর চিঠি লিখতাম। কিন্তু কখনো উত্তর পায়নি। ঈদ আসলে মোবাইল এসএমএসের মাধ্যমে ঈদের শুভেচ্ছা পাঠাতাম। এখন তাও অনেকটা কমিয়ে দিয়েছি তাদের কাজ থেকে সাড়া না পেয়ে। তারপরও অতীত স্বপ্নকে লালন করি সযতনে বুকের গভীরে। কর্মব্যস্ততার এই প্রবাসে মানুষের জীবনে অবসরের বড় অভাব। তবুও প্রতিদিন জীবনের এই পথ চলতে গিয়ে ২৪ ঘন্টার মধ্যে কোনো না কোনো সময় মন ছুটে যায় কোনো স্মৃতির পাতায়_ যা সীমাবদ্ধ থাকে না কোনো একটি মধুর বা বেদনাবিধুর স্মৃতিতে। ঈদ এলে সেটা আরো ভারাক্রান্ত করে এ হৃদয়কে। আসলে আমাদের জীবনে এমন পূর্ণ অবসর নেই তাই চিন্তাধারাগুলো এখন আর একটি জায়গায় সীমাবদ্ধ থাকে না। এক বর্ষণমুখর দিনে সোনার হরিনের আশায় দেশ ত্যাগ করি। এই প্রবাসে ঈদে যখন অবসরের স্বাদ নিতে চাই তখনই ফেলে আসা অতীতের কিছু মুখ ভেসে ওঠে স্মৃতির আয়নায়। একদিন যার কথা শুনতে চাইনি, আজ ঈদ অবসরে তার মধুর স্মৃতি বেশী মনে পড়ে। এখন ইদের অবসরে পড়ন্ত বিকেলে যখন আরব সাগরের তীরে গিয়ে দাঁড়াই, রাতের আঁধারে যখন ছোটখাটো অবসরগুলো কাটে তখন সেই সুখস্মৃতিগুলোই যেন স্থান করে নেয় সমস্ত মনজুড়ে। মনেপড়ে, সেই অগোছালো জীবনে ছিলো না কোন স্থিরতা। পরিচিত হলো দুটো মন সময়ের পথ ধরে এগিয়ে চললো তারই ধারাবাহিকতা। ওই মধুর স্মৃতি, সে আসবে বলে কত স্বপ্ন এঁকেছি জীবনের বাঁকে বাঁকে। এখনও যেন সেই স্বপ্নের রাজ্যে আছি। মাঝে মাঝে ভিড় করে স্কুল কলেজের ফেলে আসা সেই দিনগুলো এবং আরও কতস্মৃতি। কিন্তু সব স্মৃতিকে ভাসিয়ে সামনে চলে আসে স্বদেশে ঈদ আনন্দের স্মৃতি, মায়ের সেমাই, বাড়ীর পাশের ঈদগাহে নামাজ শেষে দীর্ঘক্ষন হাততুলে মোনাজাতের স্মৃতি। প্রবাস জীবনের কর্মব্যস্ততার মাঝে শুরু হল নতুন এক পথচলা। এখনও যেন স্বাপ্নিক চোখে ভেসে আসে নানা রঙের রাঙ্গায়িত স্বপ্নের সেই দিনগুলো_যা ঈদ আসলে দিয়ে যায় মৃদু আনন্দের ছোঁয়া। অবসরের মুহূর্তে ভেসে চলি ফেলে আসা সেই দিনগুলোতে।

প্রবাসের জীবন আমাকে বারবার পেছনে ফিরিয়ে নিয়ে যায়, আমি আমার অতীত জুড়ে মোহগ্রস্থের মতো এখনো হাঁটি। দুঃস্বপ্নের রাতের মতো এক একটি রাত আমাকে ঘোর বিষাদে আচ্ছন্ন করে রাখে এখনও। সন্ধ্যা রাতের তারা হয়তো আর আলো জ্বালবে না হৃদয় নিকুঞ্জে। পাল তোলা নৌকা আর বয়ে চলবে না জীবন গঙ্গায়। তারপরও দিগন্ত জুড়ে এক ফালি সরু চাঁদের অপেক্ষায় দরজায় কড়া নাড়ছে ঈদের আনন্দ-বারতা। রমজানের একটি মাসের সিয়াম সাধনায় পরে এলো খুশির ঈদ। বাঁধ ভাঙা আনন্দ উৎসবে মেতে উঠবে বিশ্বের মুসলমান সম্প্রদায়। আর আবেগ প্রবন বাংগালী মুসলমানের ঈদ মানে এক মহা উৎসব। চাঁদরাত থেকেই শুরু হয়ে যাবে এই বর্নিল আয়োজনের। টিভির পর্দায় গেয়ে উঠবে……

‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশীর ঈদ
আপনারে আজ বিলিয়ে দে শোন আসমানি তাগিদ’…।

ছোট বড়, ধনী গরীব যার যার পরিসরে সবাই ঈদের আনন্দে রঙ্গীন হবে মহা উৎসব। বাংলাদেশের এই ঈদের আমেজ অনেকটাই অনুপস্থিত আমাদের প্রবাসী জীবনে। তাই তো ঈদের দিনে নষ্টালজী পেয়ে বসে অনেকের মাঝে। ফেলা আসা হারানো দিনের ঈদের আনন্দ এখন কেবলই স্মৃতি।ঈদের সকালে ঘর থেকে বের হলে মনের ভিতরের ঈদের আনন্দ আর থাকে না। সবাই ব্যস্ত যার যার মত। প্রবাসে আমরা সংখ্যালঘু , তাই ঈদের আনন্দ অনুভুতিগুলি মনের গহীনেই আটকে থাকে ।এর বাহ্যিক আবরণটা খোলসা হয় না কখনও। তারপরও এত যান্ত্রিকতার মাঝেও ঈদ প্রবাসীদের জীবনে আনন্দের বার্তা নিয়ে আসে।প্রবাসে ঈদের আমেজ খুজে পাওয়া যায় ঈদের নামাজের আসরে গিয়ে। সকালে ঈদের নামাজ, তারপর নতুন বাহারী পোষাক আর ঘরোয়া পরিবেশে রকমারী সুস্বাদু খাবার খেয়েই ঈদের আনন্দ শুরু হয়। প্রবাসের ভিন্ন পরিবেশে তাই ঈদের বাহ্যিক আবরণটি ঘরের বাহিরে তেমন ভাবে দেখা যায় না।তাই প্রবাসের মুলধারার জীবন দর্পনে ঈদ তেমন প্রভাব ফেলে না। তবুও বাংগালী মুসলমানদের অন্তরে ঈদ লালিত হয় আবেগ অনুভূতি আর ভালবাসার অফুরন্ত উচ্ছাস নিয়ে। তারপরও ঈদের ছুটির অবসরে প্রীতিময় সামাজিকতার আঙ্গিকে ভরে উঠে প্রবাসীদের মন।

সকলকে ঈদের শুভেচ্ছা। ঈদের আগমন সকলের জীবনে বয়ে আনুক অনাবিল আনন্দ। জীবনের দুঃখবোধের সমস্ত গ্লানি মুছে যাক, জীবন গাঙ্গে বয়ে চলুক পূর্ন আনন্দের অমীয় ধারা।

ঈদ মোবারক………


১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অধুনা পাল্টে যাওয়া গ্রাম বা মফঃস্বল আর ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া শহুরে মানুষ!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০০


দেশের দ্রব্যমুল্যের বাজারে আগুন। মধ্যবিত্তরা তো বটেই উচ্চবিত্তরা পর্যন্ত বাজারে গিয়ে আয়ের সাথে ব্যায়ের তাল মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে- - একদিকে বাইরে সুর্য আগুনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪১

সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।
১. এফডিসিতে মারামারি
২. ঘরোয়া ক্রিকেটে নারী আম্পায়ারের আম্পায়ারিং নিয়ে বিতর্ক

১. বাংলা সিনেমাকে আমরা সাধারণ দর্শকরা এখন কার্টুনের মতন ট্রিট করি। মাহিয়া মাহির... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) পক্ষ নিলে আল্লাহ হেদায়াত প্রদান করেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪২



সূরা: ৩৯ যুমার, ২৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৩। আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম হাদিস, যা সুসমঞ্জস্য, পুন: পুন: আবৃত। এতে যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের শরির রোমাঞ্চিত হয়।অত:পর তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগটা তো ছ্যাড়াব্যাড়া হয়ে গেলো :(

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৫৭



আমি আমার ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে লেখালেখির মাধ্যমে। ব্লগটির প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কারণ প্রথম আলো ব্লগ আমায় লেখালেখিতে মনোযোগী হতে শিখিয়েছে । সে এক যুগ আগের কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন পারাবার: শঠতা ও প্রতারণার উর্বর ভূমি

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪০


অনার্সের শেষ আর মাস্টার্সের শুরু। ভালুকা ডিগ্রি কলেজের উত্তর পার্শ্বে বাচ্চাদের যে স্কুলটা আছে (রোজ বাড কিন্ডারগার্টেন), সেখানে মাত্র যোগদান করেছি। ইংরেজি-ধর্ম ক্লাশ করাই। কয়েকদিনে বেশ পরিচিতি এসে গেল আমার।

স্কুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×