গত সপ্তাহে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ'দের প্রকৃত সংখ্যা নিয়ে বিতর্কে চমক সৃষ্টিকারী আরিফ রহমান ওপেন চ্যালেঞ্জ দিয়েছেন “মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ৩০ লাখের কম, পারলে প্রমাণ করেন”!!
এক ছোটো ভাইয়ের কথায় আরিফ সাহেবের প্রোফাইলে গিয়েছিলাম। গিয়ে দেখলাম আরিফ সাহেব এ্যাজ ইউজুয়াল মিথ্যা আর জালিয়াতির উপর ভর করে চেতনা ব্যাবসা করে বেড়াচ্ছেন। চ্যালেঞ্জটা খুজতে গিয়ে আবেগি কথাবার্তা ছাড়া তেমন সলিড কিছু পাইনি। তবে উনার ওয়ালে দেখলাম কেউ একজন একটা নিউজ পোর্টালের লিঙ্ক শেয়ার দিয়েছেন
ইউআরএল
ওই পোর্টালে আরিফ সাহেব একাত্তর চ্যানেলের টক শো একাত্তর জার্নালে ওনার চ্যালেঞ্জ এবং চ্যালেঞ্জের স্বপক্ষে তথ্য উপস্থাপন করে যে বিরাট ভাষন দিয়েছেন তার বর্ননা রয়েছে। তথ্যগুলা যে "ডাহা মিথ্যা" এবং উনি যে একজন "খাটি মিথ্যুক" সেইটা উনার বক্তব্য কোট করে করে পয়েন্ট বাই পয়েন্ট প্রমান সহ নিচে ব্যাখ্যা করছি।
"সত্যি কথা বলতে পৃথিবীতে এই পর্যন্ত যতগুলো যুদ্ধ হয়েছে কোনো যুদ্ধতেই বেসামরিক মৃত মানুষের তালিকা হয়নি। কারণ, যুদ্ধ কোনো সার্কাস না"
-- ১০০% ডাহা মিথ্যা কথা। বিংশ শতাব্দীর প্রতিটা যুদ্ধের ক্যাজুয়াল্টি সর্বোচ্চ যতখানি সম্ভব লিস্টেড এ্যান্ড কাউন্টেড। একটা একজাম্পল দেই। ইহুদি হলোকাস্ট গণহত্যায় নিহত ইহুদিদের টোটাল ক্যাজুয়াল্টির ৭৫% পারসেন্ট অর্থাত ৪৫ লাখ মানুষের'র নাম, পরিচয়, ঠিকুজি-কুষ্টী, পেশা, ঠিকানা ইত্যাদি তথ্য উদ্ধার করে ডেটাবেজ বানানো হয়েছে।
সাইট লিংক: Click This Link
ডাটাবেজ লিংক: Click This Link
"১৯৬০ থেকে ৬৫ সাল পর্যন্ত জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিলো ১৫.৩%, ১৯৬৫ থেকে ৭০ সাল পর্যন্ত জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিলো ১৫.৭%। কিন্তু ১৯৭০ থেকে ৭৫ সালে এসে সেই জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার হয়ে গেল ৫.৫%। অর্থাৎ, এই সময় কিছু একটা ঘটেছিল। আমরা বুঝতে পারি সেটা। এরপর ১৯৭৫ থেকে ৮০ সালে এসে সেই জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার হয়ে গেল ১৪.২%। অর্থাৎ ১৫.৭% থেকে হঠাৎ ৫.৫% এ চলে আসলো, এরপর আবার ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এলো।"
-- ওনার আবিস্ককৃত এই "বিশেষ" "চমকপ্রদ" "অকাট্ট" "হিসাব"এ শুধু যে মিথ্যা তথ্য রয়েছে তা না... আছে ভয়াবহ জালিয়াতি!!!
কারন একর্ডিং টু ইউনাইটেড নেশান্স পপুলেশান ডিভিশান ১৯৭০ সালে বাংলাদেশের পপুলেশান ছিলো ৬৪৯০৭০০০ জন আর ১৯৭৫ সালে পপুলেশান ছিলো ৭৩১৭৮০০০ জন। Click This Link
এবার আসেন একটু অঙ্ক করি।
৭৩১৭৮০০০ - ৬৪৯০৭০০০ = ৮২৭১০০০ জন বৃদ্ধি। তাইলে এই পাঁচ বছরে পপুলেশান গ্রোথ রেটঃ (৮২৭১০০০ / ৬৪৯০৭০০০)১০০ = ১২.৭৪% :O
গ্রোথের রেটের পার্থক্যঃ ১৫.৭% - ১২.৭৪% = ২.৯৭% :O :O
ন্যাচারাল প্রোজেক্টেড গ্রোথের সাথে গ্যাপ হইলোঃ ৬৪৯০৭০০০ * ২.৯৭% = ১৯২৭৭৩৭ জন! :O :O :O
ওমা!!!!! এইটা কি হইলো? আরিফ সাহেব যে ৫.৫% গ্রোথ রেট বইলা ৬৫ লাখের "গ্যাপ" আবিস্কার করলেন সেই গ্যাপ তো দেখি উনার গ্যাপেই ঢুকে গেলো!!! এখন উপায়??? :O
এই পয়েন্টে উনার এই মিথ্যা তথ্য এবং ইউএন'এর চার্ট জালিয়াতি ছাড়াও আরো কিছু গোজামিল আছে... যেমনঃ "সবগুলো মিলিয়ে যদি বিচার করি, ৭০ এর দুর্ভিক্ষে ৫ লাখ মানুষ মারা গিয়েছিল।"
অথচ মুক্তিযুদ্ধের সবচে বড় বিশেষজ্ঞ জনাব মুনতাসির মামুন দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকায় আরিফ সাহেবকে সাপোর্ট করে যে কলাম লিখেছেন... ওইখানেই তিনি বলতেছেন "১৯৭০ সালের টর্নেডোতে ১০ লাখ মারা গেছেন। সেটিই স্বীকৃত।" লিঙ্কঃ Click This Link
লে হালুয়া! আরিফ সাহেবের সংখ্যা তো আরো পাঁচ লাখ কইমা যায় দেখি!
তাহলে কি ধইরা নিবো যে আরিফ সাহেব পাকিস্তানের টাকা খেয়ে মিথ্যা তথ্য আর জালিয়াতির উপর বেজ করে এই রিপোর্ট বানাইছেন যাতে দুই দিন পর মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা উনার ফর্মুলায় প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় ফলে আরো বিতর্কিত হয়?
এই ভুয়া জালিয়াতের বক্তব্য সিরিয়াসলি নিছিলাম দেখে নিজের উপর বিরক্ত লাগতেছে এখন। তাই অল্প কথায় শেষ করি।
মিথ্যুক জালিয়াত আরিফ সাহেব ফরমাইছেন "গণহত্যা নিয়ে গবেষণা করেছেন আর জে রামেল, ডঃ রুডলফ যোসেফ রামেল। তিনি গণহত্যা নিয়ে গবেষণার একজন দিকপাল। তিনি তার ‘STATISTICS OF DEMOCIDE’ বইতে মুক্তিযদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন। রামেলের গ্রাফে ৩০ লাখ ৩ হাজার মানুষের হিসাব দেওয়া আছে।"
বাট রামেলের স্ট্যাটিস্টিক্স অফ ডেমোসাইড বই ঘেটে দেখলাম বলা আছে "Beneath the consolidated overall toll I show my calculation from the partial estimates. These are rather close. Consolidating both ranges, I give a final estimate of Pakistan's democide to be 300,000 to 3,000,000, or a prudent 1,500,000"
অর্থাৎ রামেল সাহেব বলতেছেন "ধরে নেওয়া যায় যে নিহতের সংখ্যা তিন লাখ থেকে ত্রিশ লাখের মধ্যে, অথবা ন্যায্যত ১৫ লাখ।"
ইউআরএল
উল্লেখ্য রামেল সাহেব কোনো সার্ভে বা জরিপ পরিচালনা করেন না। উনি যেটা করেন তা হলো গণহত্যা বিষয়ে সকল পক্ষ থেকে পাওয়া যাবতীয় তথ্য এবং দাবী একত্র করেন, এর পর ওই সব ডেটা নিয়ে ওনার আবিস্কৃত কিছু ফর্মুলা এ্যাপ্লাই করে সায়েন্টিফিক পদ্ধতিতে এ্যানালাইসিস করে প্রকৃত সংখ্যার যতদুর সম্ভব কাছাকাছি যাওয়ার চেস্টা করেন। রামেল সাহেব'এর রিপোর্টের ব্যাপারেও আমাদের বিশিষ্ট 'জালিবেষক' (জালিয়াত গবেষক) আরিফ সাহেব মিথ্যাচার করেছেন। এরকম মিথ্যাবাদি একটা লোক এতো গুলা মানুষের চোখে ধুলা দিলো কি করে সেই চিন্তা করতেছি।
যাই হোক... আরিফ সাহেব মুক্তিযুদ্ধের শহীদের সংখ্যা পারলে ৩০ লাখের কম প্রমান করার যে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিছেন সেই চ্যালেঞ্জে জেতার কোনো চেষ্টা আমি করিনি, করার ইচ্ছাও নাই। কারন মুক্তিযুদ্ধের শহীদের সংখ্যা কত সেটা বলার বা দাবি করার যোগ্যতা এবং অথোরিটি আমার নাই। আমি চাই সরকারী ভাবে জরীপ চালিয়ে অফিসিয়াল রিপোর্ট প্রকাশের মাধ্যমে এই বিতর্কের অবসান হোক ওয়ান্স এ্যান্ড ফর অল।
তবে......... আরিফ রহমান সাহেব যে একজন মিথ্যাবাদি, ভুয়া, ভন্ড এবং জালিয়াত (পাকি এজেন্ট হওয়ারও সম্ভাবনা আছে) সে কথা প্রমান করে দিলাম।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৭:৪৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



