somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার দেখা থাইল্যান্ড

০২ রা এপ্রিল, ২০১৩ সকাল ১১:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
ঢাকা টু ব্যাংকক


[আকাশ থেকে ব্যাংকক শহর]
ইমিগ্রেশনের শক্ত গেড়ো কোন রকম প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই পার হয়ে গেলাম। সাধারণত দেখা যায়, এয়ারপোর্টে কোথাও না কোথাও গিট্টু লাগে। হয় ফ্লাইট ডিলে অথবা বোর্ডিং পাসে সমস্যা বা ইমিগ্রেশনে শক্ত গেড়ো। এবার কোনরকম ঝামেলা ছাড়াই ঠিক একটায় বাংলাদেশ বিমান আমাদের নিয়ে ব্যাংককের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলো। ছোটবেলা থেকে বিমালবালাদের রুপের যে অপরুপ বর্ণনা শুনে এসেছি বাংলাদেশ বিমানে তার ছায়াও মেলে না। বিমানবালাদের কড়া মেকাপে বয়স ঢাকা আপ্রাণ চেষ্টা দেখে মায়াই লাগে। আহারে বেচারীরা ! টলটলে চেহারার বিমানবালা মুখে তার সদা মিষ্টি হাসি না পেলাম অন্তত সুন্দর ব্যবহার তাদের কাছে আসা করতেই পারি। ব্যবহারে তারা প্রাইমারি স্কুলের কড়া মেজাজের হেডমিস্ট্রেস। কথা বলেন ধমকের সুরে, এই যে খাবারটা ধরেন। বিমান আকাশে উড্ডয়নের পরপর খাবার এলো। পুরাই বাঙালী খাবার। ভাত, মাংস, সবজি, ফিন্নি, কোকাকোলা আর চা। পেট পুরেই খেলুম। আবার কবে বাঙালী খাবার খেতে পারি তার তো ঠিক না। থাই্ল্যান্ডে কেমন ধারার খাবার অপেক্ষা করছে কে জানে? খাওয়া পর্ব শেষ হতে না হতেই টয়লেটে বিশাল লাইন পরে গেল। প্রথমে ভাবলাম বাংলাদেশ বিমানের অবদান। পরে বোঝাগেল এসবই আদমব্যবসায়ী কারসাজি। বিমানে মালয়েশিয়াগামী প্রায় পশ্চাশজনের শ্রমিকের একটা দল উঠেছে। তারা ব্যাংকক হয়ে মালয়েশিয়া যাবে। আশ্চর্যের ব্যাপার মালয়েশিয়াগামী শ্রমিকদের কারোরই পাসপোর্ট নেই। ভুয়া পাসপোর্ট দিয়ে বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন পার হয়েছে। সেই পাসপোর্ট প্লেন-এ উঠেই ছিড়ে ফেলল। এক দালালকে দেখলাম সবাইকে নতুন আরেকটা পাসপোর্ট দিল। যে পাসপোর্টে সবার নাম পরিচয় চেঞ্জ। কামালের হয়ে গেল জামাল, পিতার নাম আক্কাসের এর পরিবর্তে বক্কার। এমনকি নিজের চেহারার সাথে পাসপোর্টের ছবির কোন মিল নাই। মালয়েশিয়া শ্রমিকের সবাই নিরক্ষর। নতুন পাসপোর্টে কী আছে কেউই পড়তে পারে না। এই পাসপোর্ট নিয়ে এরা কিভাবে মালয়েশিয়া যাবে আল্লাহই জানে। এরা নাকি একেকজনে দালালকে আড়াই লক্ষ টাকা দিয়েছে। এখন দালালের খেলার পুতুল। যখন যা বলছে তাই করছে। দালালের নির্দেশে পুরানো পাসপোর্ট ছিড়ে কমোডে ফেলছে। কমোডের ব্যবহার হয়তো এদের জানা নেই। ফলাফল কমোডে পাসপোর্টের জ্যাম বেধেছে। বিমান ক্রুরা এমনিতেই সবসময় ত্যক্ত বিরক্ত থাকে এখন পুরাই ফায়ার। প্লেনে উঠেছি না ছয় নম্বর বাসে এই মুহুর্তে বলা মুশকিল। প্লেন জার্নিতে কখনই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি না। মাথায় বেশ চাপ লাগে। কানে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব হয়। আজকে আদমব্যবসায়ীদের কর্মকান্ড দেখতে দেখতে সময়টা খুব দ্রুতই কাটলো। স্থানীয় সময় সোয়া চারটায় আমরা সুভর্নভুমি বিমানবন্দরে অবতরণ করলাম।


[ব্যাংককের মাটিতে বাংলাদেশ বিমানের প্রতিবিম্ব]
গ্রিনিচমিন সময় অনুসারে থাইল্যান্ড বাংলাদেশ থেকে একঘন্টা এগিয়ে। আমাদের পরবর্তী কর্মসূচী থাইল্যান্ড সময় অনুসারে হবে। তাই ঘড়ির কাটাটা থাইল্যান্ড সময় অনুসারে বদলে নিলাম। সুভর্নভুমি বিমানবন্দরে পা দিয়ে চোখ ধাধিয়ে গেল। ঝকঝকে চকচকে মেঝে। কিছুদূর পরপরই এস্কেলটর। বাংলাদেশ এস্কেলটরগুলো এক ফ্লোর থেকে উপরের ফ্লোরে নিতে ব্যবহার করা হয়। এখানে দেখলাম এরা হাটার বদলে এস্কেলটর ব্যবহার করে। আপনি অনেকদূর থেকে কষ্ট করে থাইল্যান্ড এসেছেন আপনার হাটার কষ্ট কিছুটা উপশমের জন্য ইমিগ্রেশন লাইন পর্যন্ত এস্কেলটরের ব্যবস্থা রয়েছে। এস্কেলটর পা রাখলে এস্কেলটর আপনাকে ইমিগ্রেশন পর্যন্ত এগিয়ে নিয়ে যাবে। ইমিগ্রেশনের সামনে বিশাল লাইন। একই সময়ে সুভর্নভূমির বুকে অনেকগুলো প্লেন অবতরণ করেছে। বিভিন্ন দেশের নানা বর্ণের মানুষ, নানা রকমের পোশাক, ভাষা আমার চারপাশে ভীড় জমাচ্ছে। সামনের কয়েকদিন অপরিচিত শব্দের চ্যাংব্যাং শব্দ শুনতে হবে। ইমিগ্রেশনের লাইনে দাড়িয়ে তার মানসিক প্রস্তুতি নিচ্ছি। ভাষা বিড়ম্বনা প্রথম অভিজ্ঞতা হলো ইমিগ্রেশন দাড়িয়েই। ইমিগ্রেশন অফিসারকে অ্যারাইভাল কার্ড আর পাসপোর্ট দিয়ে সামনে দাড়িয়েছি। ইমিগ্রেশন অফিসার ইংরেজি অথবা থাই ভাষা ব্যা ব্যা জাতীয় কিছু বলল। আমি কিছুই না বুঝে বোকার মতো দাড়িয়ে রইলাম। উনি আবারও ব্যা ব্যা জাতীয় কিছু বলল এবং হাতের ইশারা করলো। হাতের ইশারায় বুঝলাম, উনি পিছনে সরে ক্যামেরার সামনে দাড়াতে বলছে। আর মুখে বলছিল, 'ব্যাক'। এমনি থাই উচ্চারণ যে প্রথমে কিছুই বুঝবার পারি নাই। এক মিনিটেই ইমিগ্রেশনের ঝামেলা শেষ হয়ে গেল। এবার লাগেজ সংগ্রহের পালা। লাগেজের পঁচিশটা বুথ। কোনটায় বাংলাদেশ বিমানের লাগেজ কে জানে? কেউ একজন বলল ১৬ নম্বর কাউন্টারে বাংলাদেশ বিমানের লাগেজ পাওয়া যাচ্ছে। ১৬ নম্বর কাউন্টারে লাগেজ ঠিক সময়ে হাজির হলো।


[যে যার লাগেজ বুঝে পেয়েছে। সবার মনে আনন্দ ধরে না]
সুভর্নভূমির সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে প্রথমবারের মতো ব্যাংককের মাটিতে পা রাখলাম। প্রথমবারের মতো সাদা হাতির দেশে।
(চলবে...)
আমার দেখা থাইল্যান্ড পর্ব-২
আমার দেখা থাইল্যান্ড পর্ব-৩
আমার দেখা থাইল্যান্ড পর্ব-৪
আমার দেখা থাইল্যান্ড পর্ব-৫
আমার দেখা থাইল্যান্ড পর্ব-৬
আমার দেখা থাইল্যান্ড পর্ব-৭
আমার দেখা থাইল্যান্ড পর্ব-৮
আমার দেখা থাইল্যান্ড পর্ব-৯
আমার দেখা থাইল্যান্ড পর্ব-১০
আমার দেখা থাইল্যান্ড পর্ব-১১
আমার দেখা থাইল্যান্ড পর্ব-১২
আমার দেখা থাইল্যান্ড (শেষ পর্ব)
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:০৪
১১টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×