somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার দেখা থাইল্যান্ড (পর্ব-৫)

০৭ ই মে, ২০১৩ সকাল ১১:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
প্যারাগ্লিডিং


ছোট বেলায় স্কুল ম্যাগাজিন আমি একটা কবিতা লিখেছিলাম। কবিতার প্রথম লাইন দুইটি ছিল এমন 'আমি যদি হতাম পাখি, হতাম আমি নীল আকাশের সাথী।'


পাখি হবার আজন্ম সাধ কিছুটা হলে পূর্ণতা পেল এই পাতায়া শহরে। প্যারাগ্লিডিং এর কল্যাণে ক্ষণিকের জন্য পাখির মতো উড়ার দারুন অভিজ্ঞতা হলো। মাথার উপর নীল আকাশ, পায়ের নিচে নীল জল, মাঝখানে আমি কাধে প্যারাস্যুট কাধে ঝুলিয়ে শুন্যে হাওয়ায় ভাসছি। এ এক দারুন অভিজ্ঞতা।


ও প্যারাগ্লাইডিং ব্যাপারটা কী সেইটাও তো বলা হলো না। প্যারাগ্লাইডিং হলো স্টীমারের পিছনে প্যারাস্যুট বেঁধে অভিযাত্রীকে পাখির মতো উড়তে সাহায্য করা। পাতায়া থেকে কোরাল আইল্যান্ড যাবার পথে আমাদের গাইড প্যারাগ্লাইডিং এর জন্য মাঝ সমুদ্রে আমাদের নামিয়ে দিল। পাতায়া সৈকত থেকে স্টীমারে মিনিট পাঁচেক দূরে সমু্দ্রের মাঝে প্যারাগ্লাইডিংএর আয়োজন করা হয়েছে। প্যারাগ্লাইডিং জন প্রতি পাঁচশ বাথ। বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ১৪০০ টাকা। প্রতিজন পাঁচ থেকে সাত মিনিটের জন্য প্যারাগ্লাইডিং-এ আকাশে উড়া সুযোগ পায়। এত অল্প সময়ের জন্য এমন আকাশ ছোয়া মূল্য! কিন্তু আকাশে উড়া বলে কথা, দলে দলে ছোট বড় সব বয়সী পর্যটকই প্যারাগ্লাইডিং-এর রোমাঞ্চ লুফে নিতে সারিবদ্ধ লাইনে দাড়িয়েছে।


প্যারাগ্লাইডিং থেকে অপেক্ষায় যেন রোমাঞ্চ বেশি। সেফ জ্যাকেট পরে প্রায় আধাঘন্টা লাইনে দাড়িয়ে আছি। আর দেখছি, প্যারাগ্লাইডিং সম্পন্নদের উচ্ছ্বাস। প্যারাগ্লাইডিং করা একেকজনের চোখে মুখে যে আনন্দের হল্কা দেখা যায় তাতেই অপেক্ষমানদের রোমাঞ্চ বাড়িয়ে দেয়। নিঃসন্দেহে প্যারাগ্লাইডিং-এ অন্যরকম এক অভিজ্ঞতা, যা সচারচর পাওয়া যায় না।


দেখতে দেখতে আমার টার্নও এলো। আমার সেফ জ্যাকেটের সাথে প্যারাস্যুটা বিশেষ হুকের মাধ্যমে আটকে দেওয়া হলো, আমি হাত পা সবই যেমন খুশি তেমন নাড়াতে পারবো কিন্তু নিচে পড়ে যাবো না। পিঠে প‌্যারাস্যুট বাঁধা শেষে প্যারাস্যুটের সাথে বাঁধা স্টীমার যেই ছুটলো ওমনি আমি এক পলকে আকাশে। আহা কী আনন্দ! দুই হাত প্রসারিত করলাম। পাখিরা কেমনে হাওয়ায় ভাসে উপলব্ধি করার চেষ্টা করলাম। আকাশে উঠে নিজেকে কেমন হালকা হালকা লাগছে। উপস্থিত সবাই আমার দিকে তাকিয়ে। হঠাৎ সবার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হতে বেশ লাগছে। সারাটা দিন যদি এমনি আকাশে ভেসে থাকা যেন! সেটা তো সম্ভব না। তাই মনে মনে প্রার্থনা করলাম ইস যদি প্যারাস্যুটটা ছিড়ে যায়! তাহলে মাঝ সমুদ্রে হাবুডুবু খাওয়া অভিজ্ঞতাও হয়ে যাবে। আমি জানি যথেষ্ট নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেওয়া আছে, তাই মাঝ সমুদ্রে পড়ে অন্তত ডুবে মরবো না এইটা নিশ্চিন্ত। অতএব প্যারাস্যুট ছিড়ে নিচে পড়ার প্রার্থনা করা যেতেই পারে। এখানে ব্যতিক্রম কিছু ঘটুক। কিন্তু প্রার্থনা কবুল হলো না আর সবার মতো নির্দিষ্ট সময় পর আমাকেও নিচে নামিয়ে দেওয়া হলো।


প্যারাগ্লাইডিং শেষ হলেও এর রেস অনেকক্ষণ রয়ে যায়। সবচেয়ে অবাক হলাম যখন দেখলাম আমার অজান্তেই ওরা আমার প্যারাগ্লাইডিং এর মুহুর্তটা ওরা ফ্রেমবন্দি করে রেখেছে। ফ্রেমেবাধা ছবিটা এতটাই লোভনীয় যে ওদের কাছ থেকে না কিনে পারা গেল না। সামান্য প্লাস্টিকের ফ্রেমে একটা ছবি, ১০০ বাথ। নো বার্গেনিং। প্রতি মিনিটেই একজন করে প্যারাগ্লাইডিং করছে। তাদেরকে সনাক্ত করে ঠিক তাদের কাছেই নির্দিষ্ট সময় পরে ছবি পৌছে প্রমাণ করলো থাইবাসী বিপনণটা ভালোই রপ্ত করেছে। প‌্যারাগ্লাইডিং-এর ঘন্টা চারেক পরে আমরা যখন কোরাল আইল্যান্ড ঘুরে পাতায়া সৈকতে নামলাম তখন দেখি একজন আমাদের দলের সবার ছবি নিয়ে দাড়িয়ে আছে।


আমরা সবাই একের পর এক প‌্যারাগ্লাইডিং করেছি এমন নয়। দেখা গেছে আমি করেছি আমার পিছে অপরিচিত একজন সামনে অপরিচিত একজন। এর মাঝেই ঠিকই ওরা ঠিকই আমাকে আলাদা করে রেখেছে। তাই সবাই যখন নিজের প‌্যারাগ্লাইডিং এর আকর্ষণীয় ছবি ফ্রেমে বাঁধা অবস্থায় পেলাম। তখন মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি। ১০০ বাথ তো ব্যাপারই না। পাতায়া শহরে এমন অনেক কিছুই আছে, কেউ আপনাকে জোর করবে না কিন্তু এমনভাবে ওরা উপস্থাপন করবে যে আপনার পকেট থেকে বাথ এমনি এমনিই বের হয়ে যাবে। থাইবাসী টাকা কামানো ফন্দী ভালই রপ্ত করেছে।
(চলবে...)
আমার দেখা থাইল্যান্ড পর্ব-১
আমার দেখা থাইল্যান্ড পর্ব-২
আমার দেখা থাইল্যান্ড পর্ব-৩
আমার দেখা থাইল্যান্ড পর্ব-৪
আমার দেখা থাইল্যান্ড পর্ব-৬
আমার দেখা থাইল্যান্ড পর্ব-৭
আমার দেখা থাইল্যান্ড পর্ব-৮
আমার দেখা থাইল্যান্ড পর্ব-৯
আমার দেখা থাইল্যান্ড পর্ব-১০
আমার দেখা থাইল্যান্ড পর্ব-১১
আমার দেখা থাইল্যান্ড পর্ব-১২
আমার দেখা থাইল্যান্ড (শেষ পর্ব)

সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:০৮
৭টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×