somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার দেখা থাইল্যান্ড (পর্ব-১১)

০৬ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ১০:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Chao Praya রিভার ক্রজ


[আলোঝলমলে রিভার ক্রজ]
ঢাকা যেমন বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত। থাইল্যান্ডের রাজধান ব্যাংককও Chao Praya নদীর তীরে অবস্থিত। Chao Praya নদীকে ঘিরেই গড়ে উঠেছে ব্যাংকক জনপদ, পর্যটনশিল্প। ব্যাংককের মূল আকর্ষণ Chao Praya রিভার ক্রজ। তাই স্বভাবতই ব্যাংককে আসলে রিভার ক্রজে যাবার ইচ্ছা জাগে। ব্যাংককের প্রথম রাতেই আমাদের সেই ইচ্ছা পূর্ণ হয়ে গেল। আমরা সদলবলে সন্ধ্যায় রিভার ক্রজে অংশগ্রহণ করলাম। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা থেকে রিভার ক্রজের জন্য সসজ্জিত নৌযানগুলো অভিযাত্রীদের নিয়ে একে একে যাত্রা শুরু করে। কিন্তু মন্দ কপাল আমাদের ব্যাংককের বিশাল জ্যাম পাড়ি দিয়ে রিভার ক্রজ সংলগ্ন ব্যাংকক শপিং কমপ্লেক্সের নির্দিষ্ট স্থানে আমরা যখন পৌছায় ততক্ষণে রিভারক্রজগুলো Chao Praya নদীর মাঝে সাতার কাটছে! ব্যাংককের রাস্তায় এতো জ্যাম যে ঢাকার জ্যামকেও হার মানিয়ে দেয়। এদেশের ট্রাফিক ব্যবস্থা অনেক ভালো। গাড়ীগুলো রাস্তার ট্রাফিক সিগন্যাল মেনেই চলে। আমাদের দেশের জ্যামের মূল কারণ অব্যবস্থাপনা, ট্রাফিক সিগন্যালকে তোআক্কা না করে যেমন খুশি তেমন গাড়ি চালিয়ে নিজের নাক কেটে অন্যের যাত্রা ভঙ্গ। ব্যাংককের জ্যামের মূল কারণ রাস্তায় অত্যাধিক গাড়ী। রাস্তায় প্রচুর প্রাইভেট কার চোখে পড়ে। থাইল্যান্ড যে কয়টা শহরকে ঘিরে অর্থনীতির ভীত গড়ে তুলেছে তারমধ্যে ব্যাংকক এদেশের মূলচালিকা শক্তি। ক্রমবর্ধমান এই শহরে তাই প্রতিদিনই যেমন বিত্তশালীদের সংখ্যা বাড়ছে, তেমন তাদের জীবনযাত্রাও পরিবর্তন আসছে। বেড়ে চলেছে নিজস্ব পরিবহনের সংখ্যা। ফলাফল ব্যাংকক শহরে প্রচুর উড়ালপথ, রাজপথ থাকা সত্ত্বেও প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। এই অপ্রতুল রাজপথের ভুক্তভোগী হতে হলো আমাদের। তবে কী তীরে এসে তরী ডুবলো? রিভার ক্রজ মিস হয়ে গেল?

ব্যাংককে এসে আপনি ব্যর্থমন নিয়ে ফিরে যাবেন এরা তেমনটা হতে দিবে না। রিভারক্রজের নিমিত্তে এসেছি যখন রিভারক্রজ ভ্রমণ হবেই। শুধু একটু অপেক্ষা। স্বয়ং থাইরাজকন্যা যদি আপনাদের অভ্যর্থনা জানায়, অপেক্ষার সময়টা আপনাদের সাথে কাটায় তবে এই অপেক্ষার সময়টা মন্দ লাগবে না। হ্যা ঠিকই পড়েছেন, স্বয়ং রাজকন্যা আপনাদের অভ্যার্থনা জানাবে। কী বিশ্বাস হচ্ছে না? নিচের ছবিটা দেখুন।


সোজা বাঙলায় এটা ওদের টাকা আয়ের ফন্দি। রিভার ক্রজের জন্য নির্দিষ্ট কমপ্লেক্সে আসা মাত্রই রাজকন্যাবেশি সুন্দরী থাই রমনী প্রত্যেকের বুকে রিভার ক্রজের ব্যাচ লাগিয়ে, প্লাস্টিকের ফুল দিয়ে অভ্যর্থণা জানায়। পাশে দাড়িয়ে মিষ্টি হাসি দিয়ে ছবি তোলে। সেই রাজকন্যাবেশি থাই নারীর সাথে তোলা ছবিটা নিজের সংগ্রহে রাখতে হলে আপনাকে ২০০ বাথ খরচ করতে হবে। প্লাস্টিকের ফ্রেমে একটা ছবি বাংলাদেশী টাকায় প্রায় সাড়ে পাঁচশ টাকা। কিনবো না কিনবো করেও শেষপর্যন্ত অনেকেই ২০০ বাথ খরচ করেই ফেলে।


[ছবির ঝুড়ি হাতে রাজকন্যাবেশি থাই রমণী।]
দেখতে দেখতে আধাঘন্টা সময় রাজকন্যাবেশি রমনীর সাথে কেটে গেল। ততক্ষণে আমাদের রিভার ক্রজও তীরে এসে পৌছেছে। সারিবদ্ধ লাইন বেধে আমরা রিভার ক্রজে আহরণ করলাম। Chao Praya প্রিন্সেস রিভার ক্রজ সাক্সোফোনের সুমধুর সুর আগত ভ্রমণার্থীদের স্বাগত জানায়। ভ্রমণার্থীদের জন্য অপেক্ষায় থাকা সুপরিবেশিত কেদারাগুলো আমাদের আগমনে ধণ্য হয়। প্রত্যেকের জন্য কেদারা নির্দিষ্ট ছিল। যে যার আসন গ্রহণ করার পর শুভ সন্ধ্যা জানিয়ে Chao Praya প্রিন্সেস রিভার ক্রজ পিঙ্কলাও ব্রীজ অভিমুখে যাত্রা শুরু করে।
ক্যান্ডেল লাইট ডিনার উইথ লাইভ মিউজিক। গানের সুরে সুরে নৌশভোজ আর সান্ধ্যভ্রমণ। ভেজ, ননভেজ, ডেজার্টের আইটেম থরে থরে বিভিন্ন ডিশে সাজানো।



[খাওয়া দাওয়ায় এতোই ব্যস্ত ছিলাম যে ছবি তোলার কথা মনেই ছিল না। খাওয়া দাওয়ার একদম শেষমুহুর্তে তোলা ছবি]
যার যত খুশি পেট ভরে, মন ভরে খাও আর উপভোগ করো সামনে উপস্থিত শিল্পীর পরিবেশনায় সঙ্গীত, নদীর দু'পাশের রাতের আলো ঝলমলে ব্যাংকক শহর।


এ যেন বিয়ে বাড়ী। আমরা সকলে বিয়ের যাত্রী। বাদ্য বাজানা বাজছে, ভরপুর খানা পিনা চলছে। রিভার ক্রজের ভিতরে যেমন আলোয় উজ্জ্বল তেমনি Chao Praya নদীর দুইপাশের স্থাপত্যগুলোও রঙিন আলোয় আলোকিত।



রিভার ক্রজে বসেই ব্যাংককের ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্যশিল্প আর আধুনিক স্থাপত্যের সাথে পরিচয় হয়ে যাবে। পর্যটকদেরকে আকর্ষণ করতে স্থাপত্যভবনগুলোর আলোসজ্জার মাধ্যমে তা আরো বর্ণিলভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ব্যাংককের মূল আকর্ষণ ডন মন্দির, বৌদ্ধ মন্দির, প্রাচীন রাজধানীর ব্যাং খুনপ্রোম প‌্যালাস, আকাশচুম্বী পাঁচ তারকা হোটেলের আলোক প্রতিবিম্ব নদীর বুকে আরেকটা ভাসমান আলোর প্রাসাদ তৈরি করেছে।



Chao Praya নদীর মৃদমন্দ হাওয়ায় ফুরফুরে মেজাজে সুস্বাদু খাবার খেতে খেতে উপস্থিত শিল্পীর গানের সুরে মনভোলানো রোমান্টিক পরিবেশ। রিভার ক্রজের এই আনন্দময় সন্ধ্যার স্মৃতি অনেকদিন মনে থাকবে।



আর মনে থাকবে কাঁচা আমের স্বাদ। রিভার ক্রজে হরেকপদের খাবারের মধ্যে কেন যে কাঁচা আমটাই সবচেয়ে সুস্বাদু লাগলো। প্রথমে ভেবেছিলাম এটা হয়তো কাঁচা পেপে। মুখে দিয়ে বুঝলাম। আম। থাই আম বোধহয়। কাঁচা আম, মিষ্টি স্বাদ। আমাদের দেশের আমগুলো থেকে স্বাদটা সম্পূর্ণই অন্যরকম। কাঁচা আম কাঁচাই খেয়ে ফেললাম। কিছুক্ষণ ঘুরে ফিরে আমের ডিশে এসে দেখি আম নাই। অন্যরাও আমার মতো কাঁচাই খেয়ে ফেলেছে! (কাঁচা কথাটা বিশেষভাবে উল্লেখ করলাম এই জন্য যে এদের খাবারগুলো অধিকাংশই সিদ্ধ বা অর্ধসিদ্ধ। দেখে মনে হয়ে একদম কাঁচা।)


থাইল্যান্ডে অল্প এই কয়দিনে ঘোরাঘুরি ভালোই হয়েছে, খাওয়া-দাওয়া নিয়ে যারা একটু সমস্যার ভিতরে যাচ্ছিলেন তারা রিভার ক্রজের খাবারে পেটে আগামী দুইদিনের রসদ জমিয়ে ফেলেছেন আমি নিশ্চিত। শুধু একটা ডিজে পার্টির আকাঙ্খা বাদ ছিল। পাতায়া ব্যাংককে ডিজে পার্টি তো কোন ব্যাপারই না। কিন্তু নাইটক্লাবে যেয়ে নাচা-গানায় অংশগ্রহণে অনেকের সংস্কারে বাঁধে। তাই বলে থাইল্যান্ডে এসে ডিজে পার্টি হবে না। রিভার ক্রজে সব আয়োজন সম্পন্নই ছিল অপেক্ষা শুধু অংশগ্রহণকারীর। শুরুটা আমরাই করলাম। ধীরে ধীরে উপস্থিত প্রায় সব ভ্রমনার্থীরাও আমাদের সাথে যোগ দিল।


যারাকোমর দুলিয়ে নাচে অংশগ্রহণ করলো না তারা অন্তত দর্শক সেজে হাত তালি দিয়ে আমাদের উৎসাহিত করলো। নাচে গানে এতোটাই মশগুল যে কখন আবার রিভার ক্রজ তীরে তরী ভিড়িয়েছে টেরই পাইনি। তীরে তরী ভিড়ানোর সাথেই সাথেই আগত ভ্রমনার্থীদের ধণ্যবাদ জানিয়ে সুমিষ্ট ভাষায় বিদায় নিল রিভার ক্রজ ক্রুর দল। আমরাও বিদায় নিলাম রিভার ক্রজ থেকে। শুভ বিদায় Chao Praya প্রিন্সেস রিভার ক্রজ।
(চলবে...)

আমার দেখা থাইল্যান্ড পর্ব-১
আমার দেখা থাইল্যান্ড পর্ব-২
আমার দেখা থাইল্যান্ড পর্ব-৩
আমার দেখা থাইল্যান্ড পর্ব-৪
আমার দেখা থাইল্যান্ড পর্ব-৫
আমার দেখা থাইল্যান্ড পর্ব-৬
আমার দেখা থাইল্যান্ড পর্ব-৭
আমার দেখা থাইল্যান্ড পর্ব-৮
আমার দেখা থাইল্যান্ড পর্ব-৯
আমার দেখা থাইল্যান্ড পর্ব-১০
আমার দেখা থাইল্যান্ড পর্ব-১২
আমার দেখা থাইল্যান্ড (শেষ পর্ব)
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:১১
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×