somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার দেখা থাইল্যান্ড (পর্ব-১০)

২৯ শে জুন, ২০১৩ দুপুর ১:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
স্কাইট্রেন
স্কাইট্রেনকে থাইল্যান্ডবাসীরা চেনে বিটিএস নামে। শুধু ট্রেন চলাচলের জন্য রাস্তার উপর ফ্লাইওভার করা। ব্যাপারটা এমন যে, আকাশপথে ট্রেনযাত্রা।


[বিটিএস স্টেশনে যাবার জন্য এস্কেলেটর]
প্রতি পাঁচমিনিট পর পর বিটিএস স্টেশনে এসে দাড়ায়। একমিনিট পরই আবার যাত্রী নিয়ে গন্তব্য রওনা হয়ে যায়। আমাদের দেশের লোকাল বাসের মতো ট্রেনের ভিতর তিল ধারনের জায়গা নেই। অধিকাংশ মানুষই দাড়িয়ে আছে। তবে ভিতরের পরিবেশ শান্ত। আমাদের দেশের লোকাল বাসে যেমন সবসময় গালাগালির উৎসব হয় এখানে এমনটা দেখা গেল না।


মিনিট পাঁচেক পরপরই ট্রেনটা নতুন একটা স্টেশনে আসে আর যে যার গন্তব্যে নেমে যায়। নতুন স্টেশন থেকে নতুন যাত্রী আবার ট্রেনটা ভরিয়ে ফেলে। প্রতিটা স্টেশনে আসলে ট্রেনের ভিতরে সেই স্টেশনের নাম এবং পরবর্তী স্টেশনের নাম ঘোষণা করে। ট্রেনের গায়েও ইলেকট্রনিক ম্যাপের মাধ্যমে জানা যায় ট্রেনটা এখন কোথায়। তাই অপরচিতিদের জন্য নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌছানো সহজ হয়ে যায়।
বিটিএস স্টেশনে একটা মজার ঘটনা ঘটেছিল। এখানে যার যার টিকিট তাকেই কাটতে হয়। প্রথমে গন্তব্যস্থল সিলেক্ট করে নির্দিষ্ট কয়েন বক্সে ঢুকিয়ে দিলে টিকিট অটোমেটিক বের হয়ে আসে। আমাদের একসঙ্গী গন্তব্যস্থল সিলেক্ট না করে প্রথমেই কয়েন দিয়ে তারপর গন্তব্যস্থল সিলেক্ট করে বসে আছে। ফলাফল তার টিকিট আর আসে না। স্টেশনে স্টেশনমাস্টারকে সমস্যাটা বলা হলো কিন্তু আগেই বলেছি এরা ইংরেজীভাষা কিছুই বোঝে না তাই কোন সমাধান পাওয়া গেল না। ব্যর্থমনোরথে আবারও কয়েন দিয়ে তাকে টিকিট কাটতে হলো। পরে জেনিছে কেউ এমন ভুল করলে ওই কয়েনগুলো টিকিট কাউন্টারের নিচে পড়ে থাকে। কেউ ভুল করলে তক্ষনিই টিকিট কাউন্টারের নিচে ফাকা বক্সে হাত দিয়ে তার কয়েনগুলো ফিরে পেতে পারে।
আমাদের দেশে যেমনটি হয় মিরপুর থেকে ফার্মগেটের টিকিট কেটে দিব্যি মতিঝিল চলে যাওয়া যায়। (সবাই এইটা করে না। কিছু কিছু মানুষের স্বভাবই এরকম। আমি নিজে দেখেছি বলেই বলছি।) ব্যাংককের বিটিএস স্টেশনে এমন অপ্রীতিকর ঘটনা রোধ করতে গন্তব্য স্টেশনে নেমে বক্সে টিকিট জমা দিলে তবেই গেট অটোমেটিক খুলে যায়।


[বিটিএস মাল্টিইউজ টিকিট]
টিকিটগুলো সব প্লাস্টিকের। তাই নস্ট হচ্ছে না। আর যেহেতু সবাই টিকিট জমা দিয়ে দিচ্ছে তাই এক টিকিট বারবার ব্যবহার করা যাচ্ছে। টিকিটের জন্য বাড়তি অপচয় করা লাগছে না। সিস্টেমটা ভালো।
ব্যাংককের বিটিএস সার্ভিসটা আমার ভালো লেগেছে। এর দুইটা কারণ- এক. ব্যাংককের রাস্তায় কর্মদিবসে ঢাকা শহরের মতোই জ্যাম থাকে। তাই টাক্সি বা টুকটুক থেকে বিটিএসে চেপে খুব দ্রুতই এক স্টেশন থেকে অন্য স্টেশনে চলে যাওয়া যায়। দুই. বিটিএসের ভিতরে পরিবেশটা অনেক সুন্দর।

সিয়াম সেন্টার
ঢাকা থেকে ইয়া বড় এক শপিং লিস্ট নিয়ে এসেছি। দেখতে দেখতে আবার ঢাকা ফেরার সময় হয়ে গেল কিন্তু এখন পর্যন্ত কিছুই কেনাকাটা করা হয় নি। অল্প একটু অবসর পেতেই দৌড় দিলাম শপিং সেন্টারে। ব্যাংককে আমরা উঠেছি হোটেল ম্যানহটন-এ। নানা(nana) স্টেশন থেকে সামান্য দূরে এই হোটেল ম্যানহটন। একটু অবসর সময় পেতেই দৌড়ে এলাম নানা স্টেশনে। ম্যাপ দেখে ধারে কাছে পাওয়া গেল সিয়াম সেন্টার। অত্যাধুনিক শপিং কমপ্লেক্স। দ্রুত স্কাই ট্রেনে এ উঠে বসলাম। গন্তব্য সিয়াম সেন্টার।


কিন্তু সিয়াম সেন্টারে এসে তো মাথা ঘুরে যাবার জোগাড়। সিয়াম সেন্টারে বিশ্বের বিখ্যাত সব ব্রান্ডের বিপনিবিতান। কি নেই এখানে। বিখ্যাত ব্রান্ডের পারফিউম, সু থেকে শুরু করে দামী ব্রান্ডের বিলাসবহুল গাড়ী।
ঝা চকচকে শপিং মল, চৌকস বিপনী কর্মী, ব্রান্ড সম্বলিত পণ্য এগুলো ঘুরে ফিরে দেখেই সন্তুষ্ট থাকতে হলো। বুঝতেই পারছেন। ব্রান্ড মানেই দামটা তার একটু বেশি। আমাদের কাছে অনেক বেশি। কিছুই কেনা হলো না। শুধু একটা ফ্লোর থেকে আরেকটা ফ্লোর ছোটাছুটি করলাম।



আমরা যখন শপিং মলে ঘুরঘুর করছি তখন নিচের তলায় শপিং মলের মাঝে উন্মুক্ত স্থানে কনসার্ট চলছে। বিখ্যাত সব শিল্পীই হবে হয়তো। আগত ক্রেতা থেকে শুরু করে শপিং মলের বিপনীকর্মী সবাই দেখলাম কনসার্ট এ অংশগ্রহণ করতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে।


তাদের দেখাদেখি কোনকিছু কেনার ব্যর্থ চেষ্টা না করে শেষেমেশে কনসার্ট দেখায় মনযোগী হলাম। কিন্তু তিন্তু তিড়িংবিড়িং নাচ ছাড়া আর কিছুই বোঝার উপায় নাই। থাইভাষায় গীত। ক্যামনে বুঝুম?
মজা পাইলাম সিয়াম ওশেন ওয়াল্ড-এ যেয়ে। সিয়াম সেন্টারের একদম নিচ তলায় সিয়াম ওশেন ওয়াল্ড।



উপর থেকে মনে হয় সমুদ্রের নিচে দর্শনার্থীরা হেটে চলে বেড়াচ্ছে। সিয়াম ওশেন ওয়াল্ড-এ যেয়ে দেখলাম ব্যাপারটা আসলে তা নয়। এমনভাবে সবকিছু সাজানো যে মনে হবে সমুদ্রের প্রাণীগুলো জীবন্ত। অনেকটা মাদাম তুসো যাদুঘরের মতো।


দেখে মনে হবে ইয়া বড় অক্টোপাস আপনার দিকে তেড়ে আসছে। হাঙরের ভয়ংকর বিশাল হা করা মুখের ভিতরে বসে কত সহজেই না ছবি তোলা যায়। এখানে না এলে জানতে পারতাম না।


ওশেন ওয়ার্ল্ডের সাথেই ৫ডি সিনেমা হলো। থ্রিডি সিনেমায় এখন পর্যন্ত দেখা হলো না আর ৫ডি। অন্যসময়ের জন্য ৫ডি সিনেমা দেখা কর্মসূচি তুলে রাখলাম।


স্পাইডারম্যানের সাথে ছবি তুলে ফিরে এলাম হোটেল ম্যানহটনে।


সন্ধ্যায় ব্যাংককের রিভার ক্রজে যোগ দিতে হবে। তার আগে প্রস্তুতির জন্য একটু সময় তো চায়। বিদায় সিয়াম সেন্টার।
(চলবে...)

আমার দেখা থাইল্যান্ড পর্ব-১
আমার দেখা থাইল্যান্ড পর্ব-২
আমার দেখা থাইল্যান্ড পর্ব-৩
আমার দেখা থাইল্যান্ড পর্ব-৪
আমার দেখা থাইল্যান্ড পর্ব-৫
আমার দেখা থাইল্যান্ড পর্ব-৬
আমার দেখা থাইল্যান্ড পর্ব-৭
আমার দেখা থাইল্যান্ড পর্ব-৮
আমার দেখা থাইল্যান্ড পর্ব-৯
আমার দেখা থাইল্যান্ড পর্ব-১১
আমার দেখা থাইল্যান্ড পর্ব-১২
আমার দেখা থাইল্যান্ড (শেষ পর্ব)

সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:১১
৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×