অনুস্ঠানে দর্শক স্রোতাদের দুই তৃতীয়াংশ যে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধি সেটা গ্রীন রুমে বসে থাকার সময় বুঝিনি। স্টেজে উঠলাম। ধীর লয়ে বেজে উঠলো গান,নাচ শুরু হল। "আলো আমার আলো ওগো আলোয় ভুবন ভরা, আলো নয়ন ধোয়া আমার আলো হৃদয় হরা।"
পিন পতন নীরবতায়, হিম ঘরের স্তব্ধতা নেমে আসলো যেন চারিদিকে। হঠাৎ খেয়াল করলাম সারি সারি কালো চশমায় ঢাকা চোখ, ছোট ছোট শিশুমুখগুলি,অখন্ড মনোযোগে, হদয় দিয়ে উপভোগ করছে নাচ। এক সেকেন্ডের জন্য চমকে উঠলাম হয়তোবা। সাথে সাথেই সামলে নিলাম। চকিতে মনে পড়লো, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধিদের অন্যান্য ইন্দ্রীয়গুলি সাধারনদের তুলনায় অতিমাত্রায় প্রখর। অন্যরা চর্মচক্ষুতে তাল ,লয় ,সোম ফাঁকের যে সুক্ষভুল টুকু ধরতে পারবেনা , সামান্য সে ভুল অনেক বড় ভাবেই ধরে ফেলতে পারবে ওরা। কারন ওরা নাচটি চর্মচক্ষুতে দেখছিলোনা ওরা দেখছিলো হদয় দিয়ে।
ছোট্ট ছোট্ট শিশুগুলি , এদের মাঝে কেউ কেউ জন্মান্ধ। প্রকৃতির এত আলো, এত রুপ কখনও যাদের চোখে ধরা দেয়নি, কখনো প্রিয় মাতৃমুখটি ও যাদের দেখা হয়নি দুচোখের আলোয়। তারা মন দিয়ে উপভোগ করেছিলো সূরের মূর্ছনা। ওদের জন্য আমার এ ক্ষুদ্র উপহারটুকু।
ডিনার শুরুর আগে ওদের সাথে কিছুক্ষন সময় কাটাতে ইচ্ছে হল। স্বর্গের দেবশিশু আমি কখনও দেখিনি কিন্তু মর্ত্যের দেবশিশুদের কথা আগেই বলেছি। আর দৃষ্টিশক্তিহীন এই ফুলের মত শিশু গুলিকে আমি কিসের সাথে তুলনা করবো??ইচ্ছে হচ্ছিলো যদি পারতাম বুক দিয়ে শুষে নিতাম ওদের কষ্টগুলো। সব থেকে কষ্ট হচ্ছিলো এটা ভেবে যে,ছোট বেলার রংগীন চোখে আমি যে বর্ণীল পৃথিবী দেখেছিলাম, এই ফুলের মত শিশুগুলোর তা দেখা হলনা। ভাবনাটা আমাকে কষ্ট দিচ্ছিলো।
তখনই মাথায় এলো এদের জন্য কি আমি কিছু করতে পারিনা?
আমি কি পারিনা কিছুসময় হাসি আনন্দ গানে ওদের জীবনটা ভরিয়ে তুলতে। জগতে অনেক মানুষ, অনেক অনেক মহৎ মানুষ জন্মেছেন আমি তাদের তুলনায় অতি ক্ষুদ্র। তবে আমার মত পিছুটানহীন মানুষ গুলো এগিয়ে না এলে সংসারের শত বেড়াজালে আবদ্ধ কজন মানুষ পারবে ওদের জন্য এগিয়ে আসতে?
ভাবনাটা আমাকে ভাবাচ্ছে।
একটা সূর মাথায় গুন গুন করে ভেসে চলেছে...
পৃথিবী আমারে চায় , রেখোনা বেধে আমায়
খুলে দাও প্রিয়া, খুলে দাও বাহূডোর।
আমার সামনের পৃথিবীটা খোলা পড়ে রয়েছে। এইবার আমার সত্যি করেই কিছু ভাবার সময় হয়েছে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


