somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

কৃষ্ণপক্ষের বোষ্টমী
এক বোষ্টমী যে কৃষ্ণপক্ষের আধাঁরেই সুর বাধেঁ। তার ইচ্ছা কোন এক শুক্লাদ্বাদশীর দিন চাদেঁর আলোয় সে সুর বাধঁবে... সেই সুরের মূর্ছনায় কারো চোখ ভিজে আসবে...। তবে বোষ্টমীর সেই ইচ্ছা অপূর্ণই থেকে যায়.... কারণ শুক্লপক্ষে যে কৃষ্ণপক্ষের বোষ্টমীর সুর বাধাঁ বারণ।

জীবন নাকি লুডুর ডাইস?

০৬ ই মে, ২০২২ বিকাল ৫:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মেয়েদের জীবনটা একটা লুডুর ডাইসের মতোন।

কি??বিশ্বাস করলেন না? সত্যি বলছি, তিন সত্যি।

চলুন খানিকটা ভেবে দেখি। আমরা সবাই একই সিস্টেমের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। অনেকটা মেরি গো রাউন্ড এর মতোন, ঘুরবে তো ঘুরবেই, ঘুরে ঘুরে একই জায়গায় আসবে। আমরা নিয়মমতো জন্ম নিচ্ছি, বড় হচ্ছি, পড়াশোনা করছি, বিয়ে করছি, বাচ্চা নিচ্ছি, বাচ্চা মানুষ করছি, বুড়ো হচ্ছি তারপর একদিন ফট করে মরে যাচ্ছি। এটা আমাদের আপাতত রেগুলার সার্কেল ধরা যাক। কারণ ব্যতিক্রম অবশ্যই থাকবে কিন্তু ব্যতিক্রম কখনও উদাহরণ হয়না।

তো এবার জন্ম থেকেই শুরু করি। বা তার আগে থেকেই ধরা যাক, জন্মের আগে থেকে একটা তীব্র বৈষম্য দিয়েই আমাদের জীবনের সূত্রপাত হয়। ছেলে হবে নাকি মেয়ে হবে, কালো হবে নাকি সাদা হবে। লুডুর গুটির মতোন সবাই প্রথমে সবাই ছক্কা চায়। তো এক্ষেত্রে ছক্কা হিসেবে ছেলে এবং সাদা কে ধরে নেয়া হয়। বাকি মেয়ে কিংবা কালো হলেই মন খারাপ। আগেই বললাম ব্যতিক্রম ধরা যাবে না।

তারপর ধরে নিলাম ছক্কা পড়ল না। অর্থাৎ মেয়ে হইল আবার কালো হইল। তবুও লুডু খেলায় হারব না। এই মেয়েরে ছোটবেলা থেকেই বুঝিয়ে দেয়া হবে সে অন্যদের থেকে আলাদা, সে সুন্দর না এবং তারে তথাকথিত সুন্দর অর্থাৎ ফর্সা হইতে হবে। এজন্য মেয়ের মা থেকে শুরু করে পুরো পরিবার মেয়েকে ফর্সা বানানোর জন্য উঠেপড়ে লাগবে। জন্মদাত্রী মাকেও কাঠগড়ায় এনে দাড়ঁ করালাম বলে অভিসম্পাত করবেন না।

একজন মা জন্মের আগে থেকে চান তার একটা সুন্দর মেয়ে হোক, এখানে সুন্দর বলতে যে ফর্সা চামড়াকেই বুঝাচ্ছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এই মায়েরাই দোকানে গিয়ে ভিড় জমায়, দাদা, একটা ফর্সা হওয়ার ক্রিম দেন তো। মেয়ের পোশাক কিনার আগে পোশাক ভালো লাগবে কি লাগবে না তার আগে চিন্তা করেন, এই রঙে আমার মেয়েকে কালো দেখাবে না তো? এই মায়েরাই ছেলের বৌ ফর্সা হতে হবে এরূপ মনোভাব পোষণ করেন।

এ তো কেবল কলির সন্ধ্যে। মেয়ে বড় হচ্ছে, তার সাথে সমান তালে চলছে রঙ ফর্সা করার ক্রীম, হলুদ, মুলতানি মাটি, দুধের সর দিয়ে ঘষামাজা করে ফর্সা করার প্রচেষ্টা। তার সাথে তো পাশের বাসার ভাবীরা আছেই। "ভাবী, আপনার মেয়েকে ক্রিম, টোটকা দেন না ফর্সা হওয়ার জন্য? ও তো বড্ড কালো। বড় হলে তো বিয়ে দিতে সমস্যা হবে" এমন কথা মায়েদের মনে করিয়ে দেয় তারা লুডু খেলায় ছক্কা না পেয়ে হেরে গিয়েছেন।

তারপর আসে বড় হওয়ার সময়টুকু। আচ্ছা, কালো হইলে কি? এই মেয়েকেই সর্বগুণসম্পন্ন বানানো লাগবে যাতে শ্বশুর বাড়িতে কেউ কিচ্ছু বলতে না পারে। শুরু হয় মেয়েদের ট্রেনিং। রান্নাবান্না শিখো, ঘরের কাজ শিখো, তার সাথে হাতের দু একটা কাজ শিখতে পারলে ওইটা বোনাস। সব ধরনের খাবার খাওয়া শিখতে হবে যাতে পরের বাড়িতে গেলে নষ্ট ভাত থেকে শুরু করে বিরিয়ানি পর্যন্ত গিলতে অসুবিধা না হয়। কোন কিছুতেই যেন বলতে না হয় যে তুমি এইটা খাও না, তুমি এই কাজ পারো না।

এই ট্রেনিং এর পাশাপাশি মেয়ের পড়াশোনাও চলে। লক্ষ্য একটাই লুডুর ডায়াসে এইবার ছক্কা তুলতেই হবে। বেশিরভাগ বাবা মার মেয়েদের পড়ানোর উদ্দেশ্য একটাই, একটা ভালো পাত্রস্থ করা। এবার যেন ছক্কা আসে। মেয়েরা বিয়ের আগ পর্যন্ত থাকে ট্রেনিং সেন্টারে, যেখানে শ্বশুরবাড়িতে কিভাবে চলবে, কিভাবে বলবে, কি খাবে, কি করবে আদ্যোপান্ত ট্রেনিং দেয়া হয়। বাপের বাড়িতে সে পরের বাড়ির আমানত। ছোটবেলা থেকেই " একদিন তো পরের ঘরে যাওয়াই লাগবে" এই কথা শুনিয়ে বুঝিয়ে দেয়া হয় এই ঘরও তার কোনদিন ছিলনা, তার কোনদিন হবেও না। আর শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার পর শুনতে হয়, এ তো পরের বাড়ির মেয়ে। মানে লুডু খেলব, ছক্কা দান চাইব, কিন্তু ডায়াস টা আমারও না, তোমারও না। কিন্তু ডায়াসের দানগুলো আমি তুমি চেলে দিব, আমার তোমার ইচ্ছামতো দানগুলো পড়বে।

এভাবেই একজন মেয়ের জীবন লুডুর ডায়াসের মতোন অন্যের হাতে হাতেই কেটে যায়। জীবনের প্রথমাংশে সে বাবা মায়ের হাতের পুতুল, আর জীবনের পরবর্তী অংশে সে আরেকজনের মর্জিমাফিক রোবট। মেয়েদের নিজেদের কোন ইচ্ছা থাকতে পারেনা, নিজের ইচ্ছামত আর বাবা মায়ের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু করা মানে সে অবাধ্য ট্যাগ ধারণকারী মেয়ে/কন্যা। স্বামীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু করা মানে সে নারী অচ্ছুৎ, অসতী।

শোন মেয়ে, কান খুলে নিজের মননে মস্তিষ্কে ঢুকিয়ে নাও, তুমি একজন মেয়ে/নারী/মহিলা কিন্তু তুমি মানুষ নও। তোমার কোন ইচ্ছা থাকবে না, তুমি অন্ধ, তুমি বোবা, তুমি কালা শুধু তোমার ক্ষেত্রে। তোমার কোন মন নেই অবশ্য মন থাকার প্রশ্নই আসে না। যখন যেই কর্তা আসবে, তার ইচ্ছাই তোমার কর্ম।

জন্মই যখন আজন্ম পাপ, সেখানে তোমারে এই দুনিয়াতে আলো বাতাস দেখতে দিচ্ছে, খেতে পড়তে পারতেছো, এইটাই তো বেশি। মেয়ে মানুষ হয়ে আবার এত বেশি বুঝো কেন?? চুপ থাকবা!! বেশি কথা কইবা না।


ছবি: গুগল।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মে, ২০২২ বিকাল ৫:৩৫
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×