somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হঠাৎ সন্ধ্যা (৫ম পর্ব )

০৬ ই নভেম্বর, ২০২২ দুপুর ১:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




বরাবরের মত সেদিনও খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠলাম। কলপাড়ে মুখ ধুতে গিয়ে দেখি বাবা উঠানে দাঁড়িয়ে কাদের চাচার সাথে কথা বলছেন। কাদের চাচা পেশায় একজন বাবুচি। তার রান্নার সুনাম আশে পাশে ১০ মহল্লা পর্যন্ত আছে। লোকে বলে তার কাছে চারটি জ্বিন আছে। বড় কোন অনুষ্ঠানে জ্বিনদের রান্নার দায়িত্ব পরে। জ্বিনদের মধ্যে একজন আবার অন্ধ। সেই অন্ধ জ্বিনের মাংসের রেজেলা নাকি বেহেস্তের খাবারকেও হার মানায়। কিন্তু মজার ব্যাপার হল সে মাংসের রেজালা কখনো কেউ খেয়ে দেখেনি। রান্না করতে বললে কাদের চাচা মাথা নিচু করে বলে- আইজ রান্না করা জাইবো না, আইজ একটু সমস্যা আছে!
বাবা উঁচু আওয়াজে কাদের চাচার সাখে কথা বলতে লাগলেন। এমন সময় মোতালেব আংকেল তাদের সাথে গিয়ে দাঁড়ালেন। আমাকে দেখে দূর থেকে হাত উঁচিয়ে ডাকলেন। অন্য সময় মোতালেব আংকেল ডাকলে সাড়া দেই না। কিন্তু এখন বাবা সাথে আছেন না গিয়ে উপায় নেই। কাছে যেতেই মোতালেব আংকেল দাঁত বের করে বললেন-কেমন আছ ইরা?
-জ্বি, ভাল।
-তোমার কি মন খারাপ?
-জ্বি না।
-তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে মন খারাপ। যাই হোক বিয়ের দিন মেয়েদের মন খারাপ করে থাকতে হয় না। এতে অমঙ্গল হয়। চেষ্টা কবরে সব সময় হাসি-খুশি থাকতে। সবার সাথে নিজে থেকে কথা বলতে। ঠিক আছে?
মোতালেব আংকেলের কথা শুনে আমি কোন কথা বলতে পারলাম না। শরীর জুড়ে জ্বরের স্রোত বয়ে গেল। মাথাটা ঝিমঝিম করতে লাগলো। গলা শুকিয়ে গেল। এমন সময় বাবা ফের চেঁচিয়ে বললেন-দাঁড়িয়ে মূর্তি হয়ে গেছিস? মুখ দিয়ে কথা বের হয় না? একটা মানুষ কিছু বলছেন সেদিকে কোন খেয়াল নেই, উনি মূর্তি মানবী হয়ে গেছেন। মেয়ে গুলো কোন ভদ্রতা শেখেনি। যা ভেতরে যা, গিয়ে তোর মাকে চা দিতে বল। এক ঘন্টা আগে চা চেয়েছি। তারও মুখে বন্ধ।
আমি দ্রুত সেখান থেকে রান্না ঘরের দিকে গেলাম। রান্না ঘরে ঢুকে দেখি মা মশলা বাটছে। আমার দিকে না তাকিয়ে বললেন-ইরা, চুলার উপরে গরম চা আছে কাপে ঢেলে বাবাকে দিয়ে আয়। আমি মায়ের কথা অনাগ্রহ করে এক দৃষ্টিতে মায়ের দিকে তাকিয়ে রইলাম। আমি জানি মা আমার সাথে চোখ মেলাতে পারছেন না। তবুও আমি মায়ের সামনে দাঁড়িয়ে রইলাম কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারলাম না।সকল না বলা কথা কন্ঠে আটকে গেল।

আজকাল বড় চাচা সারাদিন বই নিয়ে ব্যাস্ত থাকেন। আশে পাশে কি ঘটছে তা নিয়ে খবর রাখেন না। সারাদিন নিজেকে ঘরে বন্দি করে রাখেন। আমি বড় চাচার ঘরে ঢুকে দেখি তিনি চেয়ারে বসে বই পড়ছেন। আমাকে দেখে ভূত দেখার মত চমকে গেলেন। আমতা আমতা করে বলতে লাগলেন-তুই! তুই কখন এলি? কোথায় ছিলি এতোদিন? আমি হতাশ গলায় বললাম-বড় চাচা, আমি ইরা! মীরা নই। তুমি আজকাল এই ভুলটা খুব বেশী করছ। আমাকে মীরা মনে করছো। মীরা আপা চলে গেছে ১০ বছর হয়েছে। বড় চাচা চশমা খুলতে খুলতে বললেন-তুই দিন দিন একদম মীরার মত হয়ে যাচ্ছিস। তোর আর মীরার চেহরা একই রকম, দেখে বুঝা যায় না কে ইরা, কে মীরা? আচ্ছা বাদ দে, কিছু বলবি না হলে পরে আসিস আমি এখন খুব ইমপরটেন্ট একটা বই পড়ছি।
-বড় চাচা, আমিও তোমার সাথে জরুরী একটা কথা বলার জন্য এসেছি।
-বল, তোকে ২ মিনিট টাইম দেয়া হলো। ২ মিনিটের মধ্যে কথা শেষ করে চলে যা।
-তুমি কি জানো আজ আমার বিয়ে?
-জানি।
-তাহলে কার সাথে বিয়ে সেটাও জানো?
-জানি
-জানি, জানি, করবে না ! কার সাথে বিয়ে সেটা অন্তত বলো?
-কেন, তোর পাগল বাপ তোকে বলেনি।
-না।
-তোকে বিয়ের কথা কে বললো?
-মোতালেব আংকেল।
-তাহলে তাকে গিয়েই জিজ্ঞাসা কর কার সাথে বিয়ে?
এ পর্যায়ে বড় চাচা বই বন্ধ করে চেয়ার ছেড়ে দাঁড়ালেন। আমার সামনে এসে বললেন-তোর বাপ সারাজীবন আমার কথা শোনেনি। তার পাগলামিতে আমি অতিষ্ট। সে কখন কি করে সে নিজেও জানে না। দুই-তিন দিন আগে আমার ঘরে এসে বলল-ভাইজান, ইরার বিয়ের পাকা কথা বলে আসলাম। ছেলের বাপ মস্তবড় ব্যবসায়ী, নাম আসলাম তালুকদার। রায়পুরে বাড়ী, বাজারে অনেক গুলো দোকান আছে। টাকার কুমির। আমি বললাম-ভাল করেছিস। দেখে শুনে তুইও একটা বিয়ে করে নে। এ কথা শুনে সে চুপচাপ ঘর থেকে বেড়িয়ে গেল। আমি জানি তোর বাপ এখন তোর বিয়ে নিয়ে পরেছে তাকে কেউ আটকাতে পারবে না। আমি দোয়া করি তুই সুখী হ বলেই বড় চাচার গলা ধরে এলো। তিনি মাথা নিচু করে ফেললেন, চোখ দিয়ে টপ টপ পানি পরতে লাগলো। আমি নিজেকে সামলাতে না পেরে মাটিতে বসে বড় চাচার পা জড়িয়ে ধরলাম। হাউমাউ কেদেঁ ফেললাম। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বলতে লাগলাম-আমাকে বাঁচাও বড় চাচা, আমি মরে যাব, আমাকে বিয়ে দিও না, কিছু একটা করো! আমাকে বাঁচাও! বড় চাচা আমার মাথায় হাত রাখলেন। ভেজা গলায় বলতে লাগলেন-চলে যা, তোর দুই মিনিট শেষ, এক্ষুনি বেরিয়ে যা আমার ঘর থেকে।

চোখ মুছতে মুছতে ঘরে ঢুকে দেখি মা আমার ঘরে বসে আছে। তার হাতে নিজের বিয়ের পুরাতন শাড়ী সাথে কিছু রুপার গহনা। আমাকে দেখে বলতে লাগলেন-তারাতারি গোসল করে শাড়ীটা পরে নে। সময় মত রেডি না হলে তোর বাবা হুল্লো করবে। দেরি করিস না। আমি মায়ের হাত থেকে শাড়ীটা নিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দিলাম। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে রইলাম। আমাকে কোন কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে মা ঘর থেকে বেড়িয়ে গেলেন।

আট-দশটা বিয়ের মতো এ বিয়ে নয়। কোন ধুম-ধাম নেই, নেই কোন সানাইয়ের সুর। হৈই-হৈলো, বিয়ে বাড়ীর আমেজ কিছুই নেই।পাশের বাড়ীর মিতা দিদি আর পাড়ার কিছু মুরুব্বি ছাড়া কোন আত্নীয়-স্বজন চোখে পরলো না। সব কিছুর মূলে ছিল বাবা অর্থনৈতিক সমস্যা। এই বাড়ী ছাড়া বাবার হাতে আর কিছুই নেই। সব মদ খেয়ে শেষ করেছেন। শেষ সম্বল বাড়ীটাও বিক্রি করবেন আমি চলে যাবার পর। মিতা দিদি মীরা আপার বান্ধুবী ছিলেন। স্বামী মারা যাবার পর একমাত্র ছেলের হাত ধরে ফের বাপের বাড়ী চলে আসেন।পরিচিত মহিলাদের মধ্যে তিনিই এক মাত্র আমার বিয়েতে এসেছেন। ঘরে ঢুকেই আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। কপালে চুমু খেয়ে বললেন তোর কপালটা অনেক ভালরে অনেক বড় ঘরে বিয়ে হচ্ছে। সবাই অনেক ভাল। তোকে অনেক পছন্দ হয়েছে। আমি মৃদু হেসে বললাম-তুমি কিভাবে জানলে? তারাতো আমাকে দেখেইনি।
-সেকি বলছিস? কদিন আগেই তো তোকে দেখে গেল। তোর মনে নেই, মীরার কথা শুনে যারা চলে গিয়েছিল তারাই আবার তোকে নেবার জন্য আগ্রহ দেখাচ্ছে। ছেলে তোকে খুব পছন্দ করেছে। তোকে ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করতে রাজি নয়।
আমি আর কিছু বলতে পারলাম না। মিতা দিদি একা ধারে কথা বলে চললো। বাদ যোহর বরপক্ষ চলে এলো। মোতালেব আংকেল সবাইকে নিয়ে ঘরে বসালেন। বাবা খুব শান্ত থাকার চেষ্টা করলেন কিন্তু পারলেন না। চেচিঁয়ে মাকে বলতে লাগলেন-এতোক্ষন লাগে? তারাতারি ইরাকে নিয়ে আসো। বরপক্ষ কি রাতে থাকতে এসেছে? বিয়ে করে নিয়ে চলে যাবে।
মিতা দিদি আমার মাথায় আঁচল তুলে দিয়ে সকলের সামনে নিয়ে গেল। চেয়ার টেনে বরের সামনে বাসাতেই জাকির মাস্তান দরজা দিয়ে ঢুকলেন। জাকির মাস্তানকে দেখে বাবা উত্তেজিত হয়ে বলতে লাগলেন-বাবা জাকির, কাজী.. কাজী সাহেব কোথায়?

(চলবে)


হঠাৎ সন্ধ্যা (৪র্থ পর্ব )
হঠাৎ সন্ধ্যা (৩য় পর্ব )
হঠাৎ সন্ধ্যা (২য় পর্ব )
হঠাৎ সন্ধ্যা (১ম পর্ব)
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই নভেম্বর, ২০২২ দুপুর ১:২৯
৯টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×