somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হঠাৎ সন্ধ্যা (৩য় পর্ব )

১৬ ই অক্টোবর, ২০২২ দুপুর ১:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সেদিন হঠাৎ সন্ধ্যা নেমে বসলো। আকাশ কালো করে মেঘেরা ঝুম ঝুমিয়ে গাইতে লাগলো। আচমকা বিদ্যুৎ ঝলকানি মনে ভয় ধরিয়ে দেয়। মনে হয় কেউ জগৎকে আলোকিত করার বৃথা চেষ্টা করছে। এই আলো নিভুর খেলায় মীরা আপাকে খুব মনে পড়ছে। বৃষ্টির দিনে আমি আর আপা বাড়ীর পেছনে আমড়া গাছ তলায় চলে যেতাম। আঁচল ভরে আমড়া কুঁড়িয়ে আনতাম। আপার হাতে জাদু ছিল। আপা বেশী করে কাঁচা মরিচ দিয়ে আমড়া মাখাতো। আপার ঝাল ঝাল আমড়া মাখা অমৃত মনে হতো। সেই স্বাদ আজও মুখে লেগে আছে। কিন্তু আজ আপা নেই, গাছটিও নেই। গাছও হয়তো মানুষের ভালবাসা বুঝে। তাই আপার মত সেও অভিমান করে চলে গেছে। যে চলে যায় সে কখনো ফেরে না। আপাও চলে গিয়েছে তার রাজকুমারের হাত ধরে হয়তো সেও ফিরবে না।

মনের শত শত কল্পনা ভেঙ্গে গেল সদর দরজার শব্দের আঘাতে। এই বৃষ্টি সন্ধ্যাবেলায় কে এলো? বাবাতো এতো আগে বাড়ী ফেরেন না। অনেক রাতে যখন মায়ের কান্নার শব্দ শোনা যায় তখন বুঝি বাবা এসেছে। আজকাল বাবা খুব রাতে বাড়ী ফেরেন। পৈতৃক ব্যবসাটা ধংস্ব করে মদ খাওয়টা ভালই শিখেছেন। আসলে বাবা যে হোমিওপ্যাথিক বিদ্যা শিখছেন এটা তার ফলাফল। মোতালেব আংকেল যে হোমিওপ্যাথিক বিদ্যার নামে বাবাকে মদের নেশায় ডুবিয়েছেন সেটা আর কেউ না জানলেও আমি জানি। আজকাল বাবার মাতলামি সবাইকে আরোও অতিষ্ট করে তুলেছে। জানিনা মা কিভাবে সহ্য করে। তবে এজন্য আমি মাকে দোষ দেই তার অতিরিক্ত পতিভক্তি বাবাকে আরো হিংস্র করে তুলেছে। সেদিনকার ঘটনা- বাবা মদ খেয়ে অনেক রাতে বাড়ী ফিরছেন। রাস্তার কুকুরটা বাবাকে দেখে ঘেউ ঘেউ করতে লাগলো। বাবা সেখানে দাঁড়িয়ে হইচই করতে লাগলেন। বলতে লাগলেন-হারামজাদা আমার বড়ো মেয়েকে খেয়েছিস এখন আমাকে খাবি? আমি তোকে গুলি করে মারবো। এ বলেই বাবা গালি দিতে দিতে বাড়ীতে ঢুকলেন। হিংস্র হয়ে আলমারী থেকে বন্দুক বের করে আবার রাস্তায় নেমে পড়লেন। কুকুরটিকে গুলি করে মারলেন। তারপর শান্ত হয়ে হয়ে ঘরে ফিরে মাকে বললেন- মাগী একটি ছেলে জন্মাতে পারিস নাই। তোর মেয়েকে নিয়ে রাশেদ পালায়। শালাকে গুলি করে রাস্তায় ফেলে এলাম। ফের যদি তোর মেয়েকে রাশেদের সাথে দেখি ওই শালীকেও গুলি করে মারবো। বাবা এতেই চুপ রইলেন না। কথায় কথায় বন্দুক বের করতেন বলে পরের দিন আবারো বন্দুক নিয়ে হ্ট্টগোল শুরু করলেন। বড় চাচার সামনে বন্দুক রেখে বললেন- তিনি এই পুরনো বাড়ীতে আর থাকতে চান না। বাড়ীটা বিক্রি করে একটি নতুন বাড়ী কিনতে চান। মোতালেব আংকেলের এক পরিচিত লোক বাড়ীটা কিনতে আগ্রহী সে মোটা টাকা দিতে চাচ্ছে তার কাছে বাড়ীটা বিক্রি করে নতুন বাড়ী কিনবেন। বড় চাচা তার এমন পাগলামি দেখে কিছু বললেন না। চুপচাপ নিজের ঘরে চলে গেলেন। বাবা তখন কিছুটা হতাশ হলেও পরে লোক ডেকে বাড়ী মাপতে লাগলেন।

আমাদের বাড়ীটা অনেক পুরোনো। উঠান পেরিয়ে সদর দরজায় যেতে হয়। এই বৃষ্টি সন্ধ্যায় একা একা সদর দরজা খোলার সাহস হয় না কিন্তু আমাকে যেতে হবে। আজ দু-দিন হলো মা জ্বরে কাবু। জানি বড় চাচাকে ডাকলেও কাজ হবে না। তিনি সারাদিন নিজেকে ঘরে বন্দি করে রাখেন। ডাকলেও সাড়া দেন না। তাকে ডাকার বৃথা চেষ্টা না করে ছাতা নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। সকল ভয় ভেঙ্গে দরজা খুলতেই আমার সারা শরীর কাঁটা দিয়ে উঠলো। আমার সামনে জাকির মাস্তান দাড়িয়ে আছে।

(চলবে)

(হঠাৎ সন্ধ্যা) ১ম পর্ব পড়তে ক্লিক করুন

(হঠাৎ সন্ধ্যা) ২য় পর্ব পড়তে ক্লিক করুন



সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই অক্টোবর, ২০২২ দুপুর ২:১৯
৭টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×