এটা তো খুবই সত্যি, টাকা অর্থমন্ত্রীকে যোগাড় করতেই হবে। কোন টাকাটা?
সরকারী ব্যাঙ্কগুলোতে হরিলুট হয়েছে। খেলাপি ঋণের পরিমান এখন ৫৭ হাজার কোটি টাকা। এই হিসেবেও জালিয়াতি আছে। অবলোপন করা ঋণগুলো হিসেবে নিলে এর পরিমান ২ লক্ষ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে! এর বড় অংশটাই ঘটেছে বর্তমান আওয়ামী লিগের আমলে। দলীয় নেতা-কর্মী-আত্মীয়রা এভাবে রাষ্ট্রায়ত্ত খাত থেকে বিপুল অর্থ মেরে দিয়ে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে। কিন্তু এই টাকা তো কাউকে না কাউকে শোধ করতে হবে। সেটা তোমরা, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ছাড়া আর কারা?
এই দেশে যে যত বড়লোক সে তত কম আয়কর দেয়। বড়লোকদের আয়কর দেয়ার হার এত কম যে, এই বছর হাকিমপুরী জর্দার মালিক হয়েছেন প্রধান আয়কর দাতা! দেশে বিশাল সব রফতানিমুখী পোষাক শিল্প, ওষুধ শিল্প, মোবাইল যোগাযোগ শিল্পসহ আমদানি রফতানি ব্যবসায়ীদের বড় অংশ আয়কর ফাঁকি দেন না শুধু, তাদের আয়ের ওপর করের পরিমানও যথেষ্ট কম। এদের কাছ থেকে আয়কর আদায় করার সাহস নেই বলে, কিংবা নিজেরাও একই গোত্রের বলে রাষ্ট্র চালাবার খরচটা তুলতে তাই নজর দিতে হয় অন্য দিকে। সেই অন্য দিকটাই হলো ভ্যাট। সাধারণ মানুষের ওপর করের বোঝা চাপিয়ে দেয়া।
২১ লক্ষ সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারির বেতন-ভাতা দ্বিগুন করা হয়েছে। সর্বোচ্চ বেতনধারী সচিবরা মূল বেতন পাবেন ৭৮ হাজার টাকা, সব মিলে পাবেন দেড় লাখের কাছাকাছি। পুরোপুরি কার্যকর হলে সর্বনিম্ন বেতনধারী পাবেন পাবেন আট হাজার ২৫০ টাকা, সব মিলে ১৫ হাজার টাকার কিছু কম! বেচারা কর্মচারির বৃদ্ধিটার দিকে তাকান, কোন মতে বাজারের সাথে তাল মেলেনি। আগের মতই হিমশিম খাবে পাঁচ বছর পর বৃদ্ধি পাওয়া বেতনটাতে। সচিব সাহেবের গাড়ি-আর্দালি-নাস্তা সবই বেতনের সাথে ধরে দেয়া হয়। ফলে তার বাড়বে বিলাস এবং সঞ্চয়।
সেটা বাড়ুক। আমাদের খুব আপত্তি নেই। কিন্তু এর জন্য এ বছরই যে ১৫ হাজার কোটি টাকা লাগবে, আগামী বছর লাগবে আরো প্রায় ২৪ হাজার কোটি টাকা, তা কোত্থেকে আসবে?
আমাদের জানা আছে কি মেয়র হানিফ উড়াল সেতুটি দুনিয়ার সবচে বেশি ব্যয়বহুল উড়ালসেতু! যেখানে ৮০-৯০ কোটি টাকা সাধারণভাবে ব্যয় হয় কিলোমিটার প্রতি, এই উড়ালসেতুটিতে ব্যয় হয়েছে ২১১ কোটি টাকা। নির্মাণ সামগ্রীর দাম কমছে, কিন্তু প্রকল্প ব্যয় বাংলাদেশে বাড়ছেই। এই টাকা কি ভূতে যোগাবে?
ধনীদের কাছ থেকে আয়কর যেহেতু আদায়ের কোন ইচ্ছা সরকারের নেই, এটা চাপিয়ে দিতেই হবে হবে সাধারণ মানুষের ওপর। এই কারণেই বিশ্ববাজারের চেয়ে দ্বিগুন মূল্যে এখানে তেল বিক্রি করা হচ্ছে, যার দায়টা শেষ পর্যন্ত পড়ছে সাধারণ মানুষেরই ওপর। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম যদি আরও কমতেই থাকে এ থেকে সাত থেকে দশ হাজার কোটি টাকা সরকার 'বাড়তি' মুনাফা করতে পারবে। বাড়ানো হয়েছে বিদ্যুতের দাম, যদিও তেলের দাম কমায় বিদ্যুতের উৎপাদন খরচও কমারই কথা ছিল। বাড়ছে গ্যাসের দাম। বাড়বে আর সব খাজনাই। শিক্ষার ওপর ভ্যাট আরোপও সেই কর্মসূচিরই অংশ। পানির ওপরও দাম বাড়ানো হয়েছে সম্প্রতি, গোপনে।
বিষয়টা তাই খুব পরিস্কার। নিজেদের লুণ্ঠন-বিলাস আর অপচয়কে পাকাপোক্ত করার জন্য এই ভ্যাট। হাড় কিপটা যেমন পিঁপড়া চিপেও চিনি বের করে নিতে চায়, বর্তমান সরকারের দশা সেইরকমই। আসলেই তার কিছু করার নেই। টাকা তার আরও লাগবে।
এটা এমন একটা ছাগল, যে বাগানের সব ডালপালা খেয়ে নিয়েছে, এখন গাছের গোড়াগুলোও মুড়ে খাচ্ছে। এটাই তার রাজনীতি।
এটা তার দর্শনও। সে মন্ত্রী-এমপিদের গাড়ির ওপর শুল্ক বসাবে না। সে গরিব শিক্ষার্থীর ওপরই কর বসাবে। সে গরিব মানুষেরই গাড়ির ভাড়া বাড়াবে।
কাজেই বন্ধুরা, শিক্ষায় ভ্যাটের বিরোধিতা করতে গিয়ে রাজনীতিই করতে হবে। ওদের রাজনীতি গাছশুদ্ধু মুড়িয়ে খাবার রাজনীতি। কারণটা তো সোজা। ওদের ভবিষ্যত কানাডাতে, যুক্তরাজ্যে, যুক্তরাষ্ট্রে। ছোটখাট হলে ওরা পাড়ি দেবে মালয়েশিয়ায়। বাগানটাকে সর্বভূক ছাগলটার হাত থেকে বাঁচাতে হলে পাল্টা রাজনীতি করতে হবে। নিজেদের নেতৃত্ব নির্মাণ করতেও হবে। নিজেদের নেতৃত্ব চিনেও নিতে হবে। অতীতের সবগুলো বিখ্যাত আন্দোলন এভাবেই নতুন দেশপ্রেমিক রাজনীতির সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছিল। নেতৃত্ব তৈরি করেছিল।
শিক্ষার ওপর ভ্যাটকে প্রতিহত করতেই হবে। সেই সাথে আসো সমাজের সর্বত্র জনগণের স্বার্থের পক্ষের রাজনীতিটাও নির্মাণ করি। ভ্যাট বিরোধী আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে দেশের অর্থনীতি নিয়ে, রাজনীতি নিয়ে, নেতৃত্ব নিয়ে ভাবি। মোঘল নেই, বৃটিশ নেই, পাকিস্তানীও নেই, কাদের লুণ্ঠনে সোনার বাংলা আজ শ্মশানে পরিনত হয়েছে, সেই প্রশ্নটা তুলি। এটাই হবে পাল্টা রাজনীতি।
পরিবর্তন সম্ভব। আমরা পরিবর্তন চাই। শিক্ষার্থীদের সচেতন আন্দোলন ভবিষ্যতের গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার হাতিয়ার হোক।
কারটেসি: ফিরোজ আহমেদ, ফেসবুক থেকে।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:২৬