somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শিক্ষার ওপর ভ্যাটের জন্য সরকার কেন মরিয়া?

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এটা তো খুবই সত্যি, টাকা অর্থমন্ত্রীকে যোগাড় করতেই হবে। কোন টাকাটা?

সরকারী ব্যাঙ্কগুলোতে হরিলুট হয়েছে। খেলাপি ঋণের পরিমান এখন ৫৭ হাজার কোটি টাকা। এই হিসেবেও জালিয়াতি আছে। অবলোপন করা ঋণগুলো হিসেবে নিলে এর পরিমান ২ লক্ষ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে! এর বড় অংশটাই ঘটেছে বর্তমান আওয়ামী লিগের আমলে। দলীয় নেতা-কর্মী-আত্মীয়রা এভাবে রাষ্ট্রায়ত্ত খাত থেকে বিপুল অর্থ মেরে দিয়ে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে। কিন্তু এই টাকা তো কাউকে না কাউকে শোধ করতে হবে। সেটা তোমরা, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ছাড়া আর কারা?

এই দেশে যে যত বড়লোক সে তত কম আয়কর দেয়। বড়লোকদের আয়কর দেয়ার হার এত কম যে, এই বছর হাকিমপুরী জর্দার মালিক হয়েছেন প্রধান আয়কর দাতা! দেশে বিশাল সব রফতানিমুখী পোষাক শিল্প, ওষুধ শিল্প, মোবাইল যোগাযোগ শিল্পসহ আমদানি রফতানি ব্যবসায়ীদের বড় অংশ আয়কর ফাঁকি দেন না শুধু, তাদের আয়ের ওপর করের পরিমানও যথেষ্ট কম। এদের কাছ থেকে আয়কর আদায় করার সাহস নেই বলে, কিংবা নিজেরাও একই গোত্রের বলে রাষ্ট্র চালাবার খরচটা তুলতে তাই নজর দিতে হয় অন্য দিকে। সেই অন্য দিকটাই হলো ভ্যাট। সাধারণ মানুষের ওপর করের বোঝা চাপিয়ে দেয়া।

২১ লক্ষ সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারির বেতন-ভাতা দ্বিগুন করা হয়েছে। সর্বোচ্চ বেতনধারী সচিবরা মূল বেতন পাবেন ৭৮ হাজার টাকা, সব মিলে পাবেন দেড় লাখের কাছাকাছি। পুরোপুরি কার্যকর হলে সর্বনিম্ন বেতনধারী পাবেন পাবেন আট হাজার ২৫০ টাকা, সব মিলে ১৫ হাজার টাকার কিছু কম! বেচারা কর্মচারির বৃদ্ধিটার দিকে তাকান, কোন মতে বাজারের সাথে তাল মেলেনি। আগের মতই হিমশিম খাবে পাঁচ বছর পর বৃদ্ধি পাওয়া বেতনটাতে। সচিব সাহেবের গাড়ি-আর্দালি-নাস্তা সবই বেতনের সাথে ধরে দেয়া হয়। ফলে তার বাড়বে বিলাস এবং সঞ্চয়।

সেটা বাড়ুক। আমাদের খুব আপত্তি নেই। কিন্তু এর জন্য এ বছরই যে ১৫ হাজার কোটি টাকা লাগবে, আগামী বছর লাগবে আরো প্রায় ২৪ হাজার কোটি টাকা, তা কোত্থেকে আসবে?

আমাদের জানা আছে কি মেয়র হানিফ উড়াল সেতুটি দুনিয়ার সবচে বেশি ব্যয়বহুল উড়ালসেতু! যেখানে ৮০-৯০ কোটি টাকা সাধারণভাবে ব্যয় হয় কিলোমিটার প্রতি, এই উড়ালসেতুটিতে ব্যয় হয়েছে ২১১ কোটি টাকা। নির্মাণ সামগ্রীর দাম কমছে, কিন্তু প্রকল্প ব্যয় বাংলাদেশে বাড়ছেই। এই টাকা কি ভূতে যোগাবে?

ধনীদের কাছ থেকে আয়কর যেহেতু আদায়ের কোন ইচ্ছা সরকারের নেই, এটা চাপিয়ে দিতেই হবে হবে সাধারণ মানুষের ওপর। এই কারণেই বিশ্ববাজারের চেয়ে দ্বিগুন মূল্যে এখানে তেল বিক্রি করা হচ্ছে, যার দায়টা শেষ পর্যন্ত পড়ছে সাধারণ মানুষেরই ওপর। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম যদি আরও কমতেই থাকে এ থেকে সাত থেকে দশ হাজার কোটি টাকা সরকার 'বাড়তি' মুনাফা করতে পারবে। বাড়ানো হয়েছে বিদ্যুতের দাম, যদিও তেলের দাম কমায় বিদ্যুতের উৎপাদন খরচও কমারই কথা ছিল। বাড়ছে গ্যাসের দাম। বাড়বে আর সব খাজনাই। শিক্ষার ওপর ভ্যাট আরোপও সেই কর্মসূচিরই অংশ। পানির ওপরও দাম বাড়ানো হয়েছে সম্প্রতি, গোপনে।

বিষয়টা তাই খুব পরিস্কার। নিজেদের লুণ্ঠন-বিলাস আর অপচয়কে পাকাপোক্ত করার জন্য এই ভ্যাট। হাড় কিপটা যেমন পিঁপড়া চিপেও চিনি বের করে নিতে চায়, বর্তমান সরকারের দশা সেইরকমই। আসলেই তার কিছু করার নেই। টাকা তার আরও লাগবে।

এটা এমন একটা ছাগল, যে বাগানের সব ডালপালা খেয়ে নিয়েছে, এখন গাছের গোড়াগুলোও মুড়ে খাচ্ছে। এটাই তার রাজনীতি।
এটা তার দর্শনও। সে মন্ত্রী-এমপিদের গাড়ির ওপর শুল্ক বসাবে না। সে গরিব শিক্ষার্থীর ওপরই কর বসাবে। সে গরিব মানুষেরই গাড়ির ভাড়া বাড়াবে।

কাজেই বন্ধুরা, শিক্ষায় ভ্যাটের বিরোধিতা করতে গিয়ে রাজনীতিই করতে হবে। ওদের রাজনীতি গাছশুদ্ধু মুড়িয়ে খাবার রাজনীতি। কারণটা তো সোজা। ওদের ভবিষ্যত কানাডাতে, যুক্তরাজ্যে, যুক্তরাষ্ট্রে। ছোটখাট হলে ওরা পাড়ি দেবে মালয়েশিয়ায়। বাগানটাকে সর্বভূক ছাগলটার হাত থেকে বাঁচাতে হলে পাল্টা রাজনীতি করতে হবে। নিজেদের নেতৃত্ব নির্মাণ করতেও হবে। নিজেদের নেতৃত্ব চিনেও নিতে হবে। অতীতের সবগুলো বিখ্যাত আন্দোলন এভাবেই নতুন দেশপ্রেমিক রাজনীতির সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছিল। নেতৃত্ব তৈরি করেছিল।

শিক্ষার ওপর ভ্যাটকে প্রতিহত করতেই হবে। সেই সাথে আসো সমাজের সর্বত্র জনগণের স্বার্থের পক্ষের রাজনীতিটাও নির্মাণ করি। ভ্যাট বিরোধী আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে দেশের অর্থনীতি নিয়ে, রাজনীতি নিয়ে, নেতৃত্ব নিয়ে ভাবি। মোঘল নেই, বৃটিশ নেই, পাকিস্তানীও নেই, কাদের লুণ্ঠনে সোনার বাংলা আজ শ্মশানে পরিনত হয়েছে, সেই প্রশ্নটা তুলি। এটাই হবে পাল্টা রাজনীতি।

পরিবর্তন সম্ভব। আমরা পরিবর্তন চাই। শিক্ষার্থীদের সচেতন আন্দোলন ভবিষ্যতের গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার হাতিয়ার হোক।

কারটেসি: ফিরোজ আহমেদ, ফেসবুক থেকে।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:২৬
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×