somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শেষ দেখা

১২ ই জুলাই, ২০১৬ দুপুর ২:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


অকারনে স্কুল পরিবর্তন করা আমার ছোটবেলা একটা বদঅভ্যাস হয়ে গিয়েছিল।
এটা ভালো না সেটা ভালো,এভাবেই চলছিল।
ক্লাস ফাইভে ফাইনাল পরিক্ষা দিলাম।তারপর দেখা গেল আমার প্রোগগ্রেস অনেক খারাপ।
বাবার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভর্তি হতে গেলাম স্থানীয় এক কিন্ডারগার্ডেনে।বাবা অফিসের ভিতরে গিয়ে কথা বলছিল।এর মধ্যে আমি একটু ঝমেলা পাকিয়ে বোসলাম।
একটা মেয়ে, নাম পুনম(ছদ্মনাম)।আমার সাথে কথা বলল।
ঐ বয়সে মানুষের মনে এরকম অনুভূতি আসতে পারে,এ নিয়ে আমি এখনো ভাবি।
আমার কাছে এগিয়ে এসে আমাকে পুনম বলছিলো
কোন ক্লাসে ভর্তি হবে?
-ফাইভে।
-তুমি কোন ক্লাসে পড়ো?
-ক্লাস ফোরে।
-ও...
পুনম আমার সাথে হেসে হেসে কথা বলছিল,আর চুল নাড়ছিল।সেদিনের সেই দৃশ্যটি আজও আমি ভুলতে পারিনি।


তারপর আমার বাবার কাছে গিয়ে আমি আবদার করলাম।আমি ক্লাস ফোরে ভর্তি হবো।এখানে পড়াশুনা অনেক কঠিন।কি আর করার,বেকায়দায় পড়ে বাবা ক্লাস ফোরেই ভর্তি করিয়ে দিলেন আমাকে।
তখন প্রেম -ভালবাসা কি জিনিস,সেটা হয়তো বুজতাম না।তবে মনের মধ্যে অন্য রকম একটা অনুভূতি ছিল।সে অনুভূতি অজানা, সে অনুভূতি অতুলনীয়।
প্রতিদিন ক্লাসে যাই আমার বাবার সাথে,মাঝে মাঝে ছোট চাচার সাথে।
ক্লাসে ছাত্র সংখ্যা তিনজন।আমি, হামিদ,আর পুনম।
পুনম আর হামিদ, খালি ঝগড়া করতো।তাই ওরা নিজেরা কথা বলতো না।একারনেই আমার সাথে পুনমের অনেক ভালো বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে।
আমরা সবসময় একই ডেক্সে বসতাম,পড়তাম একসাথে।

আমার কিন্ডারগার্ডেন লাইফ ছিল মাত্র ষাইট দিনের মত।আগে যখন স্কুল পরিবর্তন করেছি,আমি প্রথমে বাবাকে বলেছি।কিন্তু সেইবার আমার বাবা আমাকে বলল,অনেক হয়েছে।এবার অন্য স্কুলে চলো।
যাহোক,বাবার কথা মত,আমার ষাইট দিনের অজানা অনুভূতিকে সাথে নিয়েই আমি বিদায় হলাম,সেই স্কুল থেকে।

এবার ভর্তি হলাম, একটা প্রাইমারি স্কুলে।ক্লাস ফাইভে।
আমি ওখানে ভর্তি হবার কয়েকদিন পরেই,পুনমও ঐ স্কুলে ভর্তি হলো।কিন্তু ক্লাস ফোরে।
আমি তখন থেকেই শুধু ওকে একটু করে দেখতাম।কিন্তু কথা বলতাম না।পুনমও আমার সাথে কথা বলতো না।
ক্লাস ফাইভ থেকে সিক্সে উঠলাম।পুনম ক্লাস ফাইভে পড়ে।মাঝে মাঝে দেখা পেতাম।কিন্তু খুব কম।
পুনমও ক্লাস সিক্সে আমার স্কুলটাতেই ভর্তি হলো।
আমি শুধু ওকে দেখতাম।কথা বলতাম না।
তিনটি বছর এভাবেই কেটে গেয়েছিলো।

ক্লাস এইটে যখন পড়ি,ভেবেছিলাম ওকে বলেই দিবো,আমার অনুভূতির কথা।
কিন্তু তা আর হয়নি। শুধু দেখার মধ্যই আবদ্ধ থাকলো এক কিশোরের, অজানা অনুভূতি।

আমি ক্লাস নাইনে ভর্তি হলাম,শহরের একটা স্কুলে।
দুই বছর পর,একবার দেখেছিলাম পুনমকে।দেখেছিলাম বললে ভুল হবে,চিনে নিয়েছিলাম।
এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে আমি তখন বাড়িতেই থাকি।একদিন ঘুরতে ঘুরতে চলে গেলাম,ওদের বাড়ির সামনে।বাড়ির ওখানে গিয়ে দেখলাম,একটা মেয়ে বাড়ির ভিতরে চলে যাচ্ছে।পিছন থেকে দেখেই বুঝেছিলাম,এইটাই পুনম।
পুনমকে আমি শেষবার ভালোভাবে দেখেছিলাম,ক্লাস এইটে থাকতে।একই স্যারের কাছে আমরা গনিত প্রাইভেট পড়তাম।সেদিন স্যার পুনমকে একটা অংক বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন।আর আমি দেখছিলাম পুনমকে।সেই দেখা,শেষ দেখা।

বিগত সাত বছরে আমি কখনই ওর দেখা পাইনি।সেকমভাবে চেষ্টাও করিনি।শুধু ফেসবুকে ওর নামটা লিখে সার্চ দিতাম।আমি কতবার যে ফেসবুকে ওর আইডি খুঁজেছি,তার ইয়ত্তা নেই।
সাত বছরে খুব কম রাত এসেছে,যেদিন ওর কথা না ভেবে আমি ঘুমিয়েছি।

আজ ১২ই জুলাই,২০১৬।
আমি ইউনিভার্সিটির ৩য় বর্ষের ছাত্র।
এক বন্ধুর কাছে অনেক অনুরোধ করার পরে আমাকে পুনমের মোবাইল নাম্বার যোগার করে দিয়েছে।
পুনমের সাথে যোগাযোগের সবচেয়ে ভালো মাধ্যমটি এখন আমার হাতের মুঠোয়। মোবাইল হাতে নিয়ে ভাবছি দশ বছর আগের সেই অনুভূতির কথা।সেই হাসি,সেই চুল নেড়ে কথা বলা, ছোট্ট পুনমের কথা।

সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুলাই, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৫০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×