রানা প্লাজার ভয়াবহ দুর্ঘটনার দশ বছর পুরো হলো কয়েকদিন আগে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটি ভেঙে পড়ার সমস্ত পূর্ব সংকেত থাকা সত্তেও কর্তৃপক্ষের অবহেলায় কয়েকশো মানুষ মারা যায়। পঙ্গু হয়ে এই বিভীষিকাময় ঘটনার ট্রমা বয়ে নিয়ে বেঁচে আছে আরো অসংখ্য মানুষ।
যদি বলি যে এই ঘটনা নিয়ে একটা রাশিয়ান সিনেমা আছে, বিশ্বাস হবে?
সিনেমাটির নাম রাশিয়ান নাম Durak আর ইংরেজি নাম The Fool. ২০১৪ সালের ছবি। রানা প্লাজার ঘটনা নিয়ে অনুপ্রাণিত কি না জানি না, কিন্তু আশ্চর্য মিল আছে কাহিনীতে।
রাশিয়ার এক ছোট্ট শহরের ভবনের পানির পাইপ লিকের সারাইয়ের কাজ করতে গিয়ে প্লাম্বার নিকিতিন আবিষ্কার করে একটি ফাটল। ঐ বিল্ডিংটায় থাকে ৮২০ জন মানুষ। হতদরিদ্র সবাই। নিকিতিন প্লাম্বিংয়ের কাজ করার পাশাপাশি কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে সেকেন্ড ইয়ারে পড়ছিলো। সে হিসাব নিকাশ করে দেখে, যেকোনো মূহূর্তে ভবনটি ভেঙে পড়তে পারে।
খবরটি জানাতে সে ছুটে যায় গভীর রাতে শহরের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের এক পার্টিতে। সেখানে সবাই মদে আর নৃত্যে চুর হয়ে আছে। অনেক কষ্টে সে তাদেরকে বোঝাতে সক্ষম হয় সামনে মহাদুর্যোগ আসছে। দুজনকে সরেজমিনে দেখে আসতে পাঠানো হয় তার সাথে। ভবনটার অবস্থা এতটাই খারাপ ছিলো, যে দেখে এসে কারো সন্দেহ থাকে না যে এটা যেকোনো মুহূর্তে ভেঙে পড়তে পারে।
এখন করণীয় কী? অবশ্যই সব মানুষকে সরিয়ে নিতে হবে।
কিন্তু এখানে কিছু সমস্যা আছে।
৮২০ জন মানুষকে সরিয়ে নিয়ে রাখবে কোথায়? শহরে আর কোনো ভবন নেই।
তারপর, ভবন সংস্কারের জন্যে যে বরাদ্দ দেয়া হয়েছিলো, ১২০ মিলিয়ন রুবল, সেটাকে তারা কোন খাতে খরচ দেখাবে?
প্রতিটা মানুষের মধ্যে দুর্নীতি। শহরের শিরায়-উপশিরায়, প্রতিটি ইট-কাঠ-পাথর থেকে শুরু করে ধূলিকণা পর্যন্ত দুর্নীতির সাক্ষী। ৮২০ জন মানুষকে বাঁচানোর চেষ্টা করলে যে সত্যগুলি উঠে আসবে, তাতে চাকুরি তো বাঁচানোই যাবে না, জেলও খাটতে হতে পারে।
তাহলে উপায় কী? বোকা নিকিতিন কি সিস্টেমের সাথে লড়াইয়ে কুলিয়ে উঠতে পারবে?
নোংরা ভবনের অধিকারবঞ্চিত মানুষের জীবন যাপনের হাইপাররিয়েলিস্টিক, RAW চিত্র সেই জীবনের সাথে দর্শককে একাত্ম করবে। কাহিনীর জটিলতা, চরিত্র চিত্রন, স্নায়বিক দ্বন্দ্ব সৃষ্টিকারী সংলাপ সবসময় টানটান অনুভূতির মধ্যে রেখেছে। মিউজিক আর অভিনয় ছিলো টপ নচ।
রানা প্লাজার ঘটনার সাথে অবিশ্বাস্য যোগসাজশ বিমূঢ় করে রেখেছিলো, কিন্তু সেই বায়াস না থাকলেও আমি এই সিনেমাটিকে ক্লাসিক’ই বলতাম। নিকিতিনের মতো Durak বা বোকারা পৃথিবীতে আরো জন্ম নিক। অনুভূতিহীন, অর্থলোভী বুরোক্রেটিক পৈশাচিকতা থেকে মুক্ত হোক পৃথিবী।
সিনেমাটা দেখতে গিয়ে হিমুর কথা মনে পড়ছিলো। সে আরেক বোকা। রানা প্লাজার ঘটনায় জান লড়িয়ে পাগলের মতো উদ্ধারকার্যে অংশ নিয়েছিলো। সেই ঘটনার ট্রমা থেকে বের হতে না পেরে, সিস্টেমের প্রতি রাগ আর ক্ষোভ থেকে সে গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যা করে।
(দ্রষ্টব্য- সিনেমাটিতে ক্রসফায়েরর মতো ব্যাপারও আছে। এত মিল রাশিয়ার সাথে বাংলাদেশের! অদ্ভুত না?)
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৩ বিকাল ৩:১০