somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন ( আত্ম সমালোচনা মূলক পোস্ট )

১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ৯:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ব্লগার শায়মা আপুনীর রাগ বিষয়ক পোস্ট টি পড়লাম , তারপর আত্ম সমালোচনা করতে বসলাম । রাগ সংগীত শোনার মতই বিরক্তিকর এই রাগ বিষয়ক পোস্ট আগেই বলেদিলাম , রেগে গিয়ে আমাকে কেউ বকা দিবেন না যেন ;)

আমার শিশুকালের কথা । আমি একটা বই পড়ছিলাম । তার একটা লাইন হল , “ অমুক রাশির মেয়েরা উগ্র মেজাজের । “ উগ্র মেজাজ শব্দটির মানে আমি বুঝতে না পেরে আম্মাকে গিয়ে বললাম , আম্মা আম্মা , উগ্র মেজাজ কি ?
আম্মা বললেন , “আমার মেজাজকে উগ্র মেজাজ বলে । “

সম্ভবত এই উত্তরটা দিতে আম্মার খারাপ লেগেছিল । নিজের মেজাজকে উগ্র মেজাজ বলে স্বীকার করে নেয়াটা কষ্ট কর তাই না? :( আপাতদৃষ্টিতে ভদ্র কিন্তু লেজবিশিষ্ট একেবারেই পিঠাপিঠি চারটা সন্তান কে একা হাতে মানুষ করা কতটা কঠিন ছিল আজ বুঝি । আব্বা চাকরির কারণে অন্য জায়গায় থাকতেন

বড়টা ( আমি ) সারাদিন বই নিয়ে পড়ে থাকে , খুব ভাল কথা । কিন্তু সব পাঠ্যবই এর নীচে গল্পের বই । লেপের নীচে , তোষকের নীচে , বালিশের ভিতর গল্পের বই আর গল্পের বই । আসল পড়ার আর সময় নাই । :P মেঝ জন অবশ্য লক্ষি ।

ছোট দুজন পুরা বিচ্ছু । ভিডিও গেমসের দোকান থেকে তাদের উদ্ধার করে আনতে হয় । ছলে , বলে , কৌশলে , রেগে গিয়ে , মেরে ধরে লাইনে রাখতে গিয়ে আম্মাকে হতে হয়েছে উগ্র মেজাজের ।
“ আমার মেজাজকে উগ্র মেজাজ বলে “ এই কথাটার সাথের দীর্ঘশ্বাস টুকু বুঝার ক্ষমতা ছোট্ট আমার ছিলনা ।

তারপর একটু বড় হবার পর একটা ইংরেজি মুভি দেখছিলাম , অনেকদিন আগে তো , নাম মনে নেই মুভির । :| এক মা তার ছোট ছোট সন্তানদের নিয়ে গ্রামে একলা থাকেন । সারাদিন ক্ষেতে খামারে কাজ করেন । একদিন তার কিশোর ছেলেটি বিড়ি খেয়ে স্কুল থেকে বাড়ি ফেরে ।
মা বললেন , বাবা আমি দুঃখিত , তোমাকে শাস্তি দিতে আমারও খারাপ লাগছে । কিন্তু তুমি একটা অপরাধ করে ফেলেছো । বেতের বাড়ি এর শাস্তি ।
কিশোর ছলছল চোখে তার পিঠ পেতে দেয় । তার পর সপাং সপাং করে বেতের বাড়ি পড়তে থাকে পিঠে ।

যেই সব মা বাবা একেবারেই রাগেনা , এমন একটা গল্প বলি এবার ।
এই গল্প অনেকের জানা । তবুও প্রাসঙ্গিক হওয়ায় আবার বলি । এক ডাকাতির আসামিকে ১০ বছরের জেল দিলেন বিচারক । তারপর জিজ্ঞেস করলেন , তার কিছু বলার আছে কিনা ।
আসামি বলল , আমার অনুরোধ আমার বাবা মাকেও জেলে পাঠিয়ে দিন ।
বিচারকের বললেন , কেন ??
আসামি জবাব দিল , আমি যখন ছোট ছিলাম , তখন স্কুলের একজনের পেন্সিল চুরি করেছিলাম । আমার বাবা মা এ নিয়ে আমাকে কিছু বলেন নি ।
পরে একটা পেন চুরি করলাম , তখন ও তারা চুপ ছিলেন । তখন আমি স্কুল থেকে প্রতিবেশীদের বাড়ি থেকে জিনিস চুরি করতে থাকলাম । শেষপর্যন্ত এটি অভ্যাসে পরিণত হল । বাবা মা সব ই জানতেন , কিন্তু এ বিষয়ে তারা কখনো কিছু বলেননি । “আমার সংগে যদি কারো জেলে যাওয়া উচিত মনে হয় তবে তাদেরই যাওয়া উচিত । “ একেবারে না রেগে যাওয়া কি সবসময় ভাল? নাহ!

আবারো আমার ছোট বেলার কথা । সেই সময় আমি এক মহিলাকে নিয়ে খুব ভাবতাম । তাঁর অত্যন্ত ব্যাক্তিত্বময়ী চেহারা । কিন্তু কোনদিন হাসতে দেখিনি । জানতাম তিনি খুব রাগী । তিনি আমাদের ভাইসপ্রিন্সিপল ম্যাডাম । আমি ভাবতাম , ‘ কেন ম্যাডাম এতটা রাগী ।

আমি কি রাগী ?
ডাক্তারি কিন্তু একটা টিম ওয়ার্কের ব্যাপার ।
একজন ভাল সার্জন ভাল অপারেশন করলেন , ( সিনেমার যেমন দেখায় ডাঃ ওটি থেকে বের হয়ে এসে বলে অপারেশন সাকসেসফুল B-) :P )
কিন্তু পোস্ট অপারেটিভ কেয়ার ভাল না হলে রোগী মরে যাওয়া স্বাভাবিক । অর্থাৎ ভাল সিস্টার , ব্রাদার এমন কি আয়াকেও দক্ষ হতে হয় ।
আমি গ্রামের একটি হাসপাতালে কাজ করতে আসি , তখন এদের কাছ থেকে স্কয়ার বা এপোলো হাসপাতালের দক্ষতা আশা অবশ্যই করবোনা । কিন্তু তাদের অদক্ষতা এমন পর্যায়ের আমার প্রায় মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ার মত অবস্থা ।
তারসাথে একটা খারাপ ব্যাপার যুক্ত হয়েছিল যে তারা আমাকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করে । দশবার বলেও অর্ডার ফলো করানো যায়না । কী আজব !!

সারাক্ষণ খেয়ালে না রাখলে এরা কি যে করে ফেলবে এ নিয়ে উৎকণ্ঠায় থাকতে হয় । তাদের ভুল রোগীদের জীবন আর মৃত্যুর মধ্যে ব্যবধান ঘুচিয়ে দেবে । আমার কোকিল কণ্ঠ কাকের কণ্ঠে বিবর্তিত হয়ে যাওয়ার এটা একটা ইতিহাস ।

আমি ইচ্ছে করে এমন পরিস্থিতি তৈরি করে রেখেছি যেন তারা ভাবে আপা অত্যন্ত রাগী । X( এই কাজ ঠিক মত না করলে আমাদের জবাবদিহি করতে হবে ।

আমাদের হাসপাতালের অন্যান্য ডাক্তারও এমন হয়ে গেছেন । রাগী লোকদের কেউ দেখতে পারেনা । সুতরাং কর্মচারীরা আমাদের পছন্দ করবে এটা ভাবার কোন কারণ নেই ।

কিন্তু দুনিয়া টা বড় আজব জায়গা । এত শাসনের ভিড়ে কোন দিক দিয়ে স্নেহ প্রকাশ পায় আমি জানিনা । কেন তাদের চোখে আমার জন্য মায়া দেখি ? আমি কি ভাল না তারা ভাল ?

আরেকবার এক গ্রাম্য ডাক্তার একজন রোগীকে আমার দেয়া টেস্টের উপর দিয়ে দামী দামী হরমোন টেস্ট দিয়ে দেয় কমিশনের আশায় । রোগী তো অতশত বুঝেনা , রোগীকে বলেছে এটা আমি ই করতে দিয়েছি ।
আমি কি করবো ? গ্রাম্য ডাক্তারের এই অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার ব্যাপারে হেল্প করব?
আমি তাকে বললাম , শুনেন আমি যা করতে দিয়েছি অগুলির রিপোর্ট আমি দেখবো । আপনি যা করতে দিয়েছেন অগুলি আপনি দেখবেন । ওই রিপোর্ট আমার কাছে আনার দরকার নাই । সে লোক আমার উপর রেগে গেলো

এরকম ভাবে আমাকে খারাপ হতে হয়েছে নকল ওষুধ বিক্রেতার কাছে । যে প্রতিটি ভিটামিন প্রেসক্রাইভ করলে ফোনে একশটাকা রি চার্জ করে দিবে বলেছে ।

আমি নকল ওষুধ আর গ্রাম্য ডাক্তারের কমিশন বান্ধব নই । তাই আমাকে কঠোর হতে হয়েছে আমার মত একটা জগত গড়ে তুলতে । সবকিছু মিষ্টি কথায় হয়ে যায়নি । :(

মেয়েরা রেগে যায় । জীবনের কোন কোন সময় হরমোনের এদিক সেদিকের কারণে খিটখিটে মেজাজের হয় । রাগ করা ভাল না ।

আপনি রাগ করে কাউকে চড় মারলে বিরাট সমস্যা কিন্তু রাগ করে ঠাণ্ডা মাথায় চুপচাপ খুন করে ফেললে অত সমস্যা নাই ।
এই কথাটা শুনলাম কয়েকদিন আগে ।

ঠাণ্ডা মাথার খুনিরা তাহলে এমনই হয় । হুম, আমি এই লম্বা জীবনে আমি এমন মানুষের সাথে পরিচিত হয়েছি যারা বলতে পছন্দ করে , “ আমার কোন রাগ নাই । আমি রাগী না । “

রাগ করলে আপনার মাথা থেকেও জিহ্বা আগে ছুটে । রাগের পর এর ফলাফল দেখলে নিজের ই কান্না আসে । হায় আমি কি করলাম ।
তবে সবচেয়ে ডেঞ্জারাস লাগে তাদের যারা রাগ পুষে রেখে দেয় । তারপর সব রাগ একত্রিত করে একদিন চরম প্রতিশোধ নেয় ।

কে আমার উপর রেগে আছে তাও মনে রাখতে পারিনা , আমি কার উপর রেগে আছি তাও মনে রাখতে পারিনা । ব্রেইনের সালকাস জাইরাস গুলকে বহু কিছু মনে রাখতে হয় । এই সব তথ্য কে তারা আজাইরা ভেবে ফেলে দেয় । :(


যাই হোক , রাগ করলে গুনাহ হয় ।
সুরা আল ইমরান ১৩৪ নং আয়াতে আছে ,

এবং যারা ক্রোধ দমন করে ও অন্যের দোষ ত্রুটি মাফ করে দেয় । এ ধরনের লোকদের আল্লাহ অত্যন্ত ভালবাসেন । :)

একই সুরার ১৫৯ নং আয়াতে আছে ,

( হে নবী ! ) এটা আল্লাহর বড়ই অনুগ্রহ যে , তোমার ব্যবহার তাদের প্রতি বড়ই কোমল । নয়তো যদি তুমি রুক্ষ স্বভাবের বা কঠোর চিত্ত হতে , তাহলে তারা সবই তোমার আশপাশ থেকে সরে যেত । তাদের ত্রুটি ক্ষমা করে দাও । তাদের জন্য মাগফেরাতের দোয়া করো । ।


এইবার হাদিসে যাই । বুখারি শরীফের ৯ম খন্ড থেকে ৫৬৮৪ নং হাদিসটি খুব সুন্দর ।

“ প্রকৃত বীর সে নয় যে কাউকে কুস্তীতে হারিয়ে দেয় । বরং সেই প্রকৃত বাহাদুর যে ক্রোধের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম । “

৫৬৮৫ নং হাদিস হল ,
একবার নবী ( সাঃ ) এর সামনে দুই ব্যক্তি গালাগালি করছিল । তারা এতই রেগেছিল যে তাদের চেহারা লাল হয়ে গিয়েছিল । তখন রাসুল ( সাঃ ) বললেন , আমি একটি কলেমা জানি যদি এ লোকটি পড়তো তাহলে তার ক্রোধ চলে যেত । লোকটি যদি আউজু বিল্লাহি মিনাশ শায়তানির রাজীম পড়তো ।


আজকের মত পড়াশোনা এখানেই শেষ । যতক্ষন বেলা আছে কারেকশানের জন্য চেস্টা করে যাই ।
রাগ হলে পড়বো আউজু বিল্লাহি মিনাশ শায়তানির রাজীম । আজকের সমালোচনা থেকে এটাই শিখলাম ।

কৃতজ্ঞতা ঃ ব্লগার শায়মা , তাঁর রাগ বিষয়ক পোস্ট টির জন্য
পোস্ট উতসর্গ আমার মামনি কে ।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১:৫৩
৪৫টি মন্তব্য ৫০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×