হুমায়ুন আহমেদ পুরা একটি প্রজন্মকে হিমু বানিয়ে রেখে গেছেন । আমরাই সেই হিমু । অদৃশ্য এক হলুদ পাঞ্জাবী গায়ে । হুমায়ুনের বই এর মাধ্যমেই আমরা জগত টাকে দেখি ।
হুমায়ুনের বই এ আছে বিদেশে হাসপাতালে অসুস্থ রোগীদের মানুষিক জোর বাড়ানোর জন্য ধর্মের আশ্রয় নেয়া হয় । তারা রিলিজিয়াস কাউন্সেলিং করে । তাতে করে রোগির মনোবল বৃদ্ধি পায় ।
আমাদের এখানে এমন সিস্টেম নাই । বাড়িতে শুধু মৃত্যুর সময় তওবা পড়ানোর জন্য হুজুরদের আনা হয় । এমন হলে কেমন হত ? হুজুরদের হাসপাতালে নিয়োগ দেয়া হল । তারা সফেদ পাঞ্জাবী পরে রোগীর বেডের কাছে গিয়ে কাউন্সেলিং করবেন । দোয়া পড়ে ফু দিবেন ।
যার অসুখ হয় , সে আর তার কাছের মানুষ রা বুঝে কি কষ্ট টা যে লাগে । রোগ থেকে সুস্থ হয়ে উঠার সময় টা আসলে অনেকটাই ধৈর্যের । সবার সিম্পেথি হেল্প করে এ সময়টাকে পাড়ি দিতে ।
আমার এক রোগীর সাথে পরিচয় হয় , যার প্রথম হল সিজার , তারপরই তার বড় বাচ্চার ধরা পড়লো থ্যালাসেমিয়া , তার পরপরই তার নিজের ব্রেস্ট এবসেস । তার পরপরই এনাল ফিসার । ব্রেস্ট এবসেস , এনাল ফিসার খুব পেইনফুল ।এত কিছু সহ্য করে রোগীর মনের জোর শূন্যের কোঠায় । রোগী বলে আমি আর পারছিনা । আমি বিষ খাইতে চাই ।
অনেকে আবার সামান্য কিছু হলেও ভেংগে পড়েন । আমি নিজেই একবার আমার খারাপ কয়েকটি রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর কান্না কাটি করেছি । অনেক ক্ষেত্রে রিলিজিয়াস কাউন্সেলিং এর হেল্প নিতে হয় । যেহেতু ডাক্তারের কাছে রোগী সুখ দুঃখের কথা বেশি বলে কাউন্সেলিং জানলে ভাল । রোগীর কাছের মানুষরা জানলে আরো ভাল । সামান্য দু একটি সুন্দর কথা দামী দামী অষুধের থেকেও বেশি কাজ করে ।
আসলে আমরা যারা ধর্ম মেনে চলতে চাই , আল্লাহ আছেন সব সময় আমাদের জন্য এটাই আমাদের এক বিরাট সান্তনা । তিনিই আমাদের কষ্ট দূর করবেন ।
অসুখ বিসুখ ও কিন্তু এক প্রকারের পরীক্ষা । কুরআনে আছে ,
“ আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করবো কিছুটা ভয় , ক্ষুধা এবং ধন , প্রাণ ও ফল ফলাদির ক্ষতি দিয়ে । আপনি সুসংবাদ দিন ধৈর্যশীল দের । তাদের উপর যখন বিপদ আপতিত হয় তখন যেন বলে , “ ইন্না লল্লাহি অইন্না ইলাইহি রাজিউন “ আমরা আল্লাহর ই এবং তার নিকট ই ফিরে যাব । “
ঐ সকল লোকদের জন্য রবের নিকট থেকে শান্তি ,করুণা , আর তারাই হেদায়াত প্রাপ্ত । ( ১৫৬, ১৫৭, ১৫৮ সুরা বাক্বারাহ )
বুখারী শরীফের ৯ম খণ্ডের ৫২৩৯ হাদিস টি হল ,
মহানবী (সাঃ ) বলেছেন , “ মুসলিম ব্যক্তির উপর যে সকল যাতনা , রোগ ব্যাধি , উদ্বেগ , উৎকণ্ঠা দুশ্চিন্তা , কষ্ট ও পেরেশানি আপতিত হয় , এমনকি তার দেহে যদি একটা কাঁটাও বিদ্ধ হয় এ সব কিছুর দ্বারা আল্লাহ তার গুনাহ মাফ করে দেন । “
৫২৫৯ হাদিসে আছে , মহানবী( সাঃ ) বলেন কোন মুসলিম ব্যক্তির উপর কোন কষ্ট আপতিত হলে তার উপর থেকে গুনাহ গুলো এভাবে ঝরে যায় , যেমন গাছ থেকে পাতা ঝরে যায় ।
তাহলে আর কি , কিছু গুনাহ যাদি মাফ হয়ে যায় সেটাই ভাল । আল্লাহ যেন আমাদের ধৈর্য ও তওফিক দেন খারাপ সময় গুলকে পিছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যাবার ।
চিকিৎসায় রিলিজিয়াস কাউন্সেলিং ; দ্বিতীয় পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১০:২৩