আমাকে বসিয়ে রেখে নমিতা গেছে তার বোনের বাড়ি। আমি সহ গেলে সমস্যা। উদ্ভ্রান্তের মতো এদিকে সেদিকে ঘুড়লাম ঘন্টা খানেক। কাজটা প্রায়ই করি। ভালো লাগে। রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে মানুষ দেখার মাঝে চরম বিনোদন পাই। সেই সাথে নতুন পরিবেশ দেয় বাড়তি আনন্দ। এক সময় বেছে বুছে একটা জায়গায় বসে পড়লাম। মানুষ আসছে যাচ্ছে। দেখতে ভালো লাগছে।
এর মধ্যেই স্লোগান মুখরিত একটা মিছিল চলে এলো। "জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু"। আমাকে অনেক পেছনে নিয়ে গেলো। প্রায় দশ বছর। দুই হাজার এক সালের উত্তপ্ত দিন গুলোর কথা মনে হলো। হরতাল-পিকেটিং-মিছিল-পুলিশের বাধা-টিয়ারগ্যাস-রাবারবুলেট-লাঠিচার্জ। কতো কি!
একটা কথা ভেবে মজা পেলাম। প্রত্যেকটা ছাত্রসংগঠনের আলাদা একটা টাইটেল স্লোগান আছে। ছাত্রলীগদের তো বিখ্যাত "জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু"। স্লোগান যিনি লিড দেন, তিনি সুর করে জোরে বলেন, জ-য়-য় বাংলা, পেছনের সবাই সমস্বরে বলেন, জ-য়-য় বঙ্গবন্ধু। এরপরে আবার লিডার বলেন, জ-য়-য় বঙ্গবন্ধু, সবাই বলেন, জ-য়-য় বাংলা। এদিক দিকে ছাত্রদলের স্লোগানটা একটু ভিন্ন স্বাদের। স্লোগান যিনি লিড দেন তিনি সুর করে বলেন, জ্বা-লো--ও জ্বা-লো, পেছনের সবাই সমস্বরে বলেন, আ-গু-ন জ্বা-লো। এর পরেই লিডার বলেন, জ্বালোজ,জ্বালোজ,জ্বালোজ,জ্বালো। সবাই বলেন, আগুন জ্বালো আগুন জ্বালো। আমি বেশ মজা পেতাম। ইসলাম পন্থিরা স্লোগান দেন নারায়ে তাকবীর বলে। তারপরে আর কি। একে অন্যের গদিতে আগুন একসাথে আগুন জ্বালান। চামড়া তুলে নেন। ইত্যাদি ইত্যাদি।
নমিতা চূড়ান্ত রকমের করছিল। যখন ফোনে বললাম চলে যাচ্ছি, সে বের হলো। রিকশায় বাসস্ট্যান্ডে আসছিল। কিন্তু আমি ছিলাম, কোথায় তা নিজেও জানিনা। একটা রিকশা নিলাম। কিছুদূর যেতেই শুরু হলো বাতাশ, তারপরে ধূলিঝড়। কিন্চিৎ চিন্তিত বোধ করলাম। নমিতা একা দাঁড়িয়ে থাকবে। যখন বৃষ্টি পড়া শুরু হলো, ছাগল যেমন সামনের দিকে দুপা বাড়িয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে। সামনে যায় না। হার্ড ব্রেক কষে রিকশা ওয়ালাও ঘোষনা করল, বৃষ্টি না কমলে সেও যাবেনা। গলার রশি ধরে অনেক টানাটানি করলাম, কাজ হলো না। শেষে দুই চার ঘা দিয়ে দিলাম মুখে মুখেই। রিকশা থামিয়ে পাশে দাঁড়ালাম। সেকি বৃষ্টি। বাতাশে একটা গাছের ডাল ভেঙে গেলো। টিনের চালা এমন ভাবে ওড়া উড়ি করছিল, আমার বারবার মনে হচ্ছিল, এই বুঝি একটা উড়ে এসে পড়ে। হঠাৎ আমার মনে হলো, আমার ডান হাতে বুঝি কেউ গুলি করেছে। তাকিয়ে দেখি শিলা। ঠান্ডায় জমে যাচ্ছিলাম। ও, আমি ছিলাম " মেড ইন জিঞ্জিরা" র সেই বিখ্যাত জিঞ্জিরায়।
আমার মনে পড়ল, আরে আজ না বছরের পয়লা বৃষ্টি। এমন দিনে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকলে চলে। রিকশার ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে,প্রথম স্পর্শের আনন্দে বুদ হয়ে আমি পথে নামলাম। কৌতুহলি কিছু চোখ আমার দিকে চেয়ে রইলো।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ৮:৩৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



