somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পথ।

২২ শে জুন, ২০১০ রাত ১১:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শুক্রবার। সোহেলের মনটা সকাল থেকেই খারাপ। মন খারাপ ব্যপারটা নিয়েই সে দোকান খুলছে। তার বড় ভাই সাইদ একটা ফোনের দোকান চালায়। সেই দোকানে তাকে প্রতি শুক্রবার বসতে হয়। সকালে যখন সে শুয়ে ছিল, সাইদ এসে খুব বাজে ভাবে ধমক দিয়ে তাকে বিছানা থেকে নামিয়েছে। সপ্তাহে সাত দিনই যারা ব্যাগ কাঁধে নিয়ে ভোরে টলতে টলতে অফিসে যায়, তারাও শুক্রবারে ঘুমায়। সোহেলের ও মন চায়। কিন্তু পারে না। শুধু এই কারনেই যে ওর মন খারাপ তা না। আরো কারন আছে। অনেক বড় কারন।

বেলা দশটা এগারোটার দিকে দোকানে একটা মহিলা ঢোকে। অদ্ভুৎ মহিলাটার শুধু একটা চোখ খোলা। আর পুরো চেহারাটা ওড়নায় ঢাকা। সোহেলের কাছ থেকে ফোন চেয়ে নিয়ে কোন একটা নাম্বারে ফোন লাগায় মহিলা। কথাবার্তায় মনে হয় তার ছেলে টেলে হবে। শুক্রবার সকালে লোকজনের এই ফোনালাপ সে আগ্রহ নিয়ে শোনে। সে বুঝতে পারে কি করে এই রকম বিরক্তিকর ব্যবসা মানুষ দিনের পর দিন করে যায়।

সোহেলের কাছ থেকে ওর দোকানের লোকেশন জেনে নিয়ে মহিলাটা কাউকে আসতে বলে। কথা বলতে বলতে মহিলার মুখের নেকাব একপাশে সরে যায়। তাকে দেখে চমকে ওঠে সোহেল। সে স্পষ্ট বুঝতে পারে মহিলাটার চেহারায় এসিড মারা হয়েছিল। এতো কাছ থেকে এসিডদগ্ধ কাউকে সে আগে দেখেনি।

কথা শেষ করে মহিলাটা বসে ছিল। কৌতুহল চেপে রাখতে না পেরে সোহেল জিজ্ঞেস করে, আপা কিছু মনে না করলে একটা কথা জানতে চাই।
- বলেন।
-আপনার চেহারায় কী হয়েছিল?
-কেন আপনি দেখে বুঝেন না? এসিড। বলেই মহিলাটা চুপ করে যায়।
কিছুক্ষন অস্বস্থিতে ভোগার পর আবার সোহেল জিজ্ঞেস করে, আপা কিছু মনে না করলে আরেকটা প্রশ্ন করতে চাই।
-করেন।
-আমাকে কী বলা যাবে, কী হয়েছিল? নিতান্ত কৌতূহল। কোন সমস্যা হলে বলতে হবে না।
একটু সময় চুপ থেকে মহিলাটা শুরু করে, আমার এলাকার মেম্বারের ছেলে আমাকে আমাকে বিয়ে করতে চেয়েছিল। রাজী হইনি বলে সে আমাকে এসিড মারে।
-আপনি রাজী হন নি কেন বলা যাবে? কোন সমস্যা থাকলে থাক।
- একটা বখাটে ছেলেকে কে বিয়ে করবে? আর আমি নিজেও একটা ছেলেকে ভালো বাসতাম।

মনের মধ্যে অনেক প্রশ্ন গিজগিজ করে সোহেলের। কিন্তু বলতে সাহস পায় না। এর মধ্যেই তারচে চার পাঁচ বছর ছোট একটা ছেলে আসে। সোহেল জিজ্ঞেস করে, এটা কে?
- আমার ছেলে।
- পরে আপনার কোথায় বিয়ে হয়েছিল?
- কেন? আমি যে ছেলেটাকে ভালোবাসতাম।
- এই ঘটনার পরেও সে আপনাকে বিয়ে করে?
-দেখতেই তো পাচ্ছেন আমার একটা ছেলে আছে।

স্তব্ধ হয়ে যায় সোহেল। নিজের কান কেই যেন বিশ্বাস করতে পারে না। মহিলা বেড়িয়ে যাচ্ছিল। হঠাৎ সোহেল জানতে চায়, আপনার স্বামীর নাম কী?
- জয়নাল।


সপ্তাহ খানেক আগে সোহেল একটা মেয়েকে নিয়ে ওদের বাসায় এসেছিল। বিয়ে করতে চায়। এখনই না। শুধু প্রস্তাব দিয়ে রাখতে চায়। কারন মেহেটা কালো। ওর বাবা ওকে বিয়ে দিয়ে দিতে চায়।কারন কালো মেয়েদের খুব বেশি সম্বন্ধ আসে না। যেকোন ভাবেই কালো মেয়ের বাবারা চায় মেয়েকে পাত্রস্থ করতে।

সোহেলদের বাসা থেকে একবাক্যে ওকে না করে দিয়েছে। কারন, মেয়ে কালো। কোন কালো মেয়ে ওদের বাসার বউ হতে পারবে না। এজন্য সেদিন থেকে ওর মন খারাপ। কেউ বুঝতে চায় না। কালো মেয়েটাকেই ওর ভালো লাগে। সে কী করবে তাও বুঝতে পারে না।

হঠাৎ তার মনে হয়, জয়নালের তাকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে কী করতে হবে। শুধুমাত্র ভালোবাসার জন্য জয়নাল যদি পারে, সে কেন পারবে না। বুকের ভিতর চেপে থাকা গুমোট কষ্টটা তার ঝলমল আনন্দে পরিনত হয়।

একটানে দোকানের সাটার নামায় সোহেল। তার আর তর সইছে না।তার ইচ্ছা করছে এক নিমিষেই যেন উড়াল দিয়ে তার ময়না পাখির কাছে চলে যায়। তাকে নিয়ে উড়ে বেড়ায়, সাতাঁর কাটে, দূর অজানায় হারিয়ে যায়।
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×