১।
চৌধুরি আরিফ মানুষ হিসেবে সিরিয়াস । এ ব্যাপারে উনার নাম আছে ।
১০টার অফিসে তিনি ৮টায় গিয়ে পৌঁছান । কলিগদের ধারনা ,সাংসারিক জীবনে তিনি অসুখি তাই পালিয়ে আসেন ।অতি সিরিয়াস হিসেবে তার শিক্ষাগত যোগ্যতা খুবি ভালো । চেহারায় বোকা বোকা ভাব আছে । সুক্ষ গোঁফের রেখাও আছে । দাড়ি না উঠার কারনে তিনি দাড়ি রেখে সুন্নত পালন করতে পারছেন না । থুতনির কাছে অল্প কিছু দাড়ি আছে । আড়ালে তার বাসার কাজের বুয়া এগুলোকে ছাগলা দাড়ি বলায় তিনি দাড়ি রাখতে পারছেন না ( তার কাজের বুয়া খালেদা কঠিন রসিক - প্রায় গ্রাম্য উচ্চারনে শহুরে ভাষা বলেন , বুয়া বলেছেন ছাগলইয়অ্যাঁ দাড়ি , যদিও তাকে দেখায় চেংড়া লোকের মত ) । তিনি রসিকতা নিতে জানেন না ।
এক রাতে তার বউ এর সাথে কিছুটা মতের পার্থক্য দেখা গেলো । বউ কেঁদে কেঁদে ব্যাগ গুছাচ্চে । অবাক হয়ে তিনি দেখলেন তার বউ কুসুম ব্যাগের ভেতর তার কাপড় ঢুকিয়ে দিচ্ছেন । তিনি জিজ্ঞেস করলেন , এগুলোর মানে কি ? তার বউ কুসুম কান্না থামিয়ে , মুখে পাসপোর্ট সাইজ হাসি এনে বলেন " আজ থেকে তুমি বাসায় থাকবে না - তোমাকে তাই ব্যাগ গুছিয়ে দিচ্ছি "
মহাজাগতিক সে ঘটনার পর থেকে তার ভেতর অস্থির ভাব প্রকাশ পাচ্ছে । তিনি লুকিয়ে রাখতে চেষ্টা করছেন , পারছেন না । সব কিছুতেই ভেতর থেকে বক্তব্য দিতে ইচ্ছে করছে । রাজনিতিক দলগুলোতে মিডিয়া কাভারের জন্য লোক দেয়া হয় , প্রফেশনটা উনার এখন লোভনীয় মনে হচ্ছে ।
২।
সোমবার সকালবেলায় অফিসে ঢুকে দেখেন পাশের টেবিলের করিম সাহেব পত্রিকা পড়ছেন । আরিফ সাহেবের সুচিবায়ু আছে । টাটকা পত্রিকা না হলে পরতে পারেন না । করিম সাহেবের হাতে পত্রিকা দ্যাখে তিনি মনে মনে বলছেন “ ঐ ফাজিল করিম , চশমা দিয়া পত্রিকা পরতেসস ক্যান ? তোরে ইদুরের মত দেখাচ্ছে শালা “
এসময় করিম সাহেব উনার দিকে তাকিয়ে বললেন , দেখলেন ভাই – এবি এম মুসা কি সব হাবিজাবি লিখতেছে ? আরে ব্যাটা যা লিখবি লেখ , কথায় কথায় ইতিহাস জানিস এটা দেখানোর কি আছে । আর তুই কে যে তোকে সব বিষয়ে মত দিতে হবে ?
আরিফ সাহেব বললেন , আপনি হঠাৎ চেতলেন ক্যান ভাই ?
করিম সাহেব বললেন , আরে ভাই , সব প্রবন্ধে দেখি ইতিহাস ঘাঁটাঘাঁটি করে , সঠিক ইতিহাস জানাতে চায়
আরিফ সাহেব বললেন , তো সমস্যা কি ?
করিম সাহেব বললেন , ভাই আমিতো আপনার মত মোটা মাথার মানুষ না , ইতিহাস বিজয়ীরা লিখছে , পরাজিতরা ইতিহাস লেখতে পারেনি । এই ব্যাটায় দেখি শুধু ময়লা ঘাঁটাঘাঁটি করে । আরিফ সাহেব উত্তর শুনে থতমত খেলেন । কি বলবেন বুঝতে পারছেন না । এতো বড় খোঁচা দেয়ার পড় করিম সাহেব আরিফ সাহেবের কোন উত্তর না পেয়ে মনে মনে বললেন “ ব্যাটা ! গভীর জলের পাঙ্গাস মাছ ”
৩।
সন্ধেবেলায় আরিফ সাহেব বাসায় গিয়ে দেখেন বউ কুসুম বাজারের ব্যাগ নিয়ে হাজির । সাথে বিশাল বাজারের লিস্ট । উনি বউয়ের দিকে বিরক্তির চোখে তাকালেন । বউ তাকে পাত্তাও না দিয়ে বলল , কাজের ছেলে বাড়িতে গেছে । সে না আসা পর্যন্ত তুমি এই দায়িত্ব পালন করবে । আরিফ সাহেব বেজার মুখে বাজারের পথ ধরলেন ।
বউ লিস্টে ইলিশের নাম লিখেছে । বৈশাখের শুরুতে ইলিশের দাম আকাশ নয় , মহাকাশ ছোঁয়া হয়ে যায় । তিনি তাই দেখলেন । ইলিশ নেয়ার সামর্থ্য তাঁর নেই । গতবছর কোরবানির সময় খুব চেয়েছিলেন একা একটা ছাগল কোরবানি দিবেন । পারেননি । ইলিশ নেয়ার সাহস তিনি করলেন না । আরও দেখলেন ইলিশের সাথে একই পাতে কিছু টেংরা মাছও আছে । তিনি তাই নিলেন ।
বউ দ্যাখে চোখ কপালে তুলে বলল , এগুলা কি ?
তিনি বললেন , ইলিশের ভাই বেরাদর
মানে ? এগুলা তো ইলিশ মনে হচ্ছে না
ইলিশ হলেই তো মনে হবে । এগুলা নিয়ু হিলশা টেংরা । দারুন ফ্লেবার
কুসুম বলল , এগুলা তুমিই খাবা , তোমার ফ্লেবার দরকার
সে রাতে আরিফ সাহেবের টেংরা মাছে সাথে ঝোল খেতে হল । লবনের দিকে হাত বাড়াতেই কুসুম বলল , লবন নিবে না । ইলিশের ফ্লেবারে লবন থাকারই কথা ।
৪।
বুধবার আরিফ সাহেব গেলেন মার্কেটে কেনাকাটার জন্য । কিছুক্ষন পর দেখেন মার্কেটে তুমুল হট্টগোল শুরু হয়েছে ।
খোঁজ নিতে গিয়ে দেখেন হিজড়ারা চাদা তুলছে । এক হিজড়ার তাঁর দিকে চোখ পরল , সে চাদা চাইল । আরিফ সাহেব খুবি কৃপণ মানুষ । তিনি চাদা দিলেন না ।
হিজড়ার মুখে রহস্যময় ধূর্ত হাসি দেখা গেলো ।
তিনি আরিফ সাহেবের জিপার ধরে টান দিলেন । তারপর কি হল আরিফ সাহেব বুঝতে পারলেন না । দ্রুত পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যাওয়ার মত ব্যাপার ( কক্সবাজার সৈকতে ঢেউয়ের সাথে পায়ের নিচের বালি সরে যায় )
আশেপাশের মানুষজন হাসতে হাসতে বিষম খেল । আরিফ সাহেব ভয়ে দিলেন দৌড় বাসায় । বাসার সামনে এসে পাশের বাড়ির আন্দালিব সাহেব বললেন , ভাই কি হইসে আপনার ?
কাঁচাবাজার থেকে আসছি , দেখলাম আপনি অলিম্পিকের উসাইন বোল্ট এর মতো দৌড় দিচ্ছেন । আরিফ সাহেব কিছু বলতে পারলেন না । এই আন্দালিব বদকে বললেই সে তা
কানে কানে সবাইকে বলে দিবে । তবে ইদানিন তার হাবভাব বদলাচ্ছে । খুব মিষ্টি ভাষায় কথা বলার চেষ্টা করে । চিনি বেবসা নাকি তাঁর পৈতৃক ব্যবসা । চিনির ব্যবহারে এমন হয়েছে কিনা কে জানে !
বাসায় ঢুকতেই দেখেন তাঁর মেয়ে নাফিজাকে । গম্ভীর গলায় তিনি মেয়েকে উপদেশ দিলেন , মা যখনই হিজড়াকে দেখবে তখনি দাঁড়িয়ে তাদের সম্মান জানাবে । বাবার এই উপদেশ মনে রাখবে ।
তাঁর মেয়ে নাফিজা জোর গলায় বলল “ ইয়েস! স্যার ”
আরিফ সাহেব মনে মনে চেতে গেলেন , তাঁর মেয়েটি বড্ড ইবলিশরূপী হয়েছে ।
৫।
আরিফ সাহেবের গ্রাম্য এক আত্মীয় ঢাকায় এসে কি কারনে পুলিশের খপ্পরে পরেছেন ।
সেই আত্মীয়কে তিনি দেখতে যাবেন । ( ঠ্যাকা ছাড়া কেউ পুলিশের পথ মাড়ায়না ) গাড়িতে উঠে সোজা থানার সামনে গেলেন ।
এদিকে তাঁর গাড়িতে হ্যান্ডকাফ ঝুলানো ছিল । তিনি ওসিকে ফোন দিয়ে বললেন , তিনি থানার সামনে । ওসি বললেন ,আমিতো এখনো থানায় আসিনি ,আপনি অপেক্ষা করুন ।
এই অপেক্ষায় হল আরিফ সাহেবের জন্য কাল । তিনি হ্যান্ডকাফ হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করতে লাগলেন । হাতের ভেতরে হ্যান্ডকাফ ঢুকালেন । তালা মারলেন । কিছুক্ষন এভাবে বসে রইলেন । এই অবস্থায় থানার ওসিকে ফোন দিয়ে বললেন , ভাই আপনি এসেছেন ?
ওসি বলল , হে এসেছি , আপনি আসুন
যখনই আরিফ সাহেব বের হতে গেলেন , তখনি দেখলেন হ্যান্ডকাফ খুলতে পারছেন না ।
তিনি তাঁর বউ কুসুমকে ফোন দিয়ে বললেন ,
হ্যান্ডকাফ এর চাবি খুঁজে পাচ্ছিনা । কই সেটা ?
তাঁরবউ বলল , ঐ জিনিস আমার চোখের বিষ , ফেলে দিসি মনে হয়
আরিফ সাহেব বিরক্ত হয়ে ফোন রেখে দিলেন । পরলেন মহাফ্যাসাদে ।
খুলতে পারছেন না হাত বন্ধ । ওসির সামনে যাবেন কীভাবে ?
এদিকে ওসি উনাকে ফোন দিলেন , ভাই আপনি কই ?
আরিফ সাহেব বললেন , পারকিং এখানে স্যার , আপনি একটু আসবেন ?
ওসি বলল ,আমি ঝামেলায় আছি । আচ্ছা – একজন কনস্টেবলকে পাঠাচ্ছি
সেই কনস্টেবল ছিল ফাজিলের গ্র্যান্ডমাস্টারদের একজন ।
হ্যান্ডকাফ পরা দ্যাখে আরিফ সাহেবকে তিনি তাঁর কোন কথা না শুনে আসামি পালাচ্ছিল অপবাদ দিয়ে জেলে ঢুকিয়ে দিলেন । ঢুকাবি তো ঢুকা – ছাগু বলে ট্যাগ দিয়ে দিলেন ( তখন ছাগু বসন্ত চলছিল , মানুষ যেভাবে পারে এই উপাধি গ্রহন করছিল ) ।
পরিশিষ্ট :/
আসামী অপবাদ নেয়ার কারনে তাঁর চাকুরি নেই । এলাকার বদ পুলাপাইন ইদানিং তারে দেখলেই শ্লোগান ধরে
আরিপ ছাহেবের চরিত্র
ডাস্টবিনের মত অপবিত্র
তুমার আমার ফ্রিয় কে ?
আরিপ ছাড়া আবার কে !
নিজে টেনেটুনে একটা ব্যবসা দাড় করাতে চাইছেন । কিছুটা এগিয়েও যাচ্ছেন । কিন্তু ক্যান জানি লাভবান হচ্ছেন না । মাছি মারা ছাড়া আর কোন কাজ এখন নেই । বিপুল এই অবসর কাটানোর জন্য তিনি সম্প্রতি ফেসবুকে একটা আইডি খুলেছেন । সেখানে নানারকম বাণী দেন । বিখ্যাত হওয়ার যে বাসনা তাঁর বুকের ভেতর ছিল যা বস , পুলিশ , কুসুম , হিজড়া কেউ বুঝতে পারেনি মনের ক্ষোভে তিনি সেই পথেই হাঁটছেন । তিনি আপাতত বিখ্যাত একজন । ইতিহাসের সেরা তিনজন রসিক মানুষের একজন তিনি । চার্লি চ্যাপলিনকে তিনি ফেলে দিয়েছেন । তাঁর সামনে এখন শুধু দুইজন ১। গোপাল ভাঁড় ২। নাসিরুদ্দিন হোজ্জা
গোপন খবর ১ :/ দেশের বিখ্যাত এক টুটপেস্ট কোম্পানি তাঁর সাথে চুক্তি করছে । তিনি জোকস বলবেন , মডেল হাসবে এই হল বিজ্ঞাপনের থিম ।
গোপন খবর ২ :/ সম্প্রতি মিরাক্কেলখ্যাত উপস্থাপক মীর , চৌধুরি আরিফ সাহেব জোকসগুলো এলিয়েনদের কাছ থেকে পেয়েছেন বলে দাবি করেন । যদি চাপাবাজি না হয় তাহলে তিনি আরিফ সাহেবকে মিরাক্কেলে গিয়ে বিজয়ী হওয়ার চ্যালেঞ্জ দিয়েছেন ।
আরিফ সাহেব তাঁর দাঁতভাঙ্গা জবাব দিয়েছেন । ( যদিও মীরের দাঁত দেখা যায়না , জিহ্বা দেখা যায় প্রায় সময় ) বলেছেন , আমি বাজারসউদা করি , মেয়েদের পড়া দেখিয়ে দেই কারন গৃহ শিক্ষক নেই , মসজিদে সুশীলদের সাথে নামাজ পড়ি ( সুশীলরা নামাজের সময় এদিকঅদিক তাকায়না তো ) , সমাজভাবনা করি , কাজের মেয়েদের উচ্চারন ঠিক করে দেই , কাজের ছেলে নেইতো , অফিস করি , গাড়ি চালাই নিজেই , নুতন কারো জন্ম হলেই তাঁর নামে ফেসবুকে একাওন্ট খুলি , ডিএসলার দিয়ে ছবি তুলি – কতো কাজ করি , আমার মিরাক্কলে যাওয়ার টাইম নাই । আপনারা চাইলে আমাকে ফলো করতে পারেন । দশে মিলে করি কাজ , হারি জিতি নাহি লাজ । আর আমার স্ত্রী , কন্যাগণ ছাড়া আমার কুনু এলিয়নের সাথে সম্পর্ক নাই ।
[ পুনশ্চ ঃ সেলিব্রিটি হওয়ার কোন বাসনা , কামনা আমার নেই । এই তত্তে আমি বিশ্বাসী না । যাদের সেলিব্রিটি বলা হয় তারাও হাগার জন্য বাথরুমে যায় , আমিও যাই । সে যদি বাথরুমে না হেগে অথবা খোলা মাঠে না হেগে অন্য অপ্রচলিত পদ্ধতিতে হাগামুতা করত তাহলে আমি মেনে নিতাম ]
[ কোন জীবিত , মৃত , অর্ধমৃত মানুষের সাথে এই গল্পের মিল খুঁজে পেলে নিজ দায়িত্তে খুজবেন । আমি দায়ী না । আমি একজন নাদান ছোট(!)গল্পকার । গল্প যেমন ছোট , তেমনি মানুষও , মনও ছোট আমার । আমাকে বড় করবেন না –প্রিন্স মাহমুদ ]

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


