somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সুরঞ্জনা

০৫ ই জুন, ২০১৩ রাত ৩:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মেয়েটিকে আমি প্রথম দেখি পারিবারিক ছবির একটি অ্যালবামে ।
খুব সম্ভবত তখন শীতকাল চলছিল । তাঁর গায়ে চাদর জড়ানো ছিল ।
মুখে স্ফটিক হাসি । ছবিতে তাঁর চুলগুলো লাগছিল ভেজা ভেজা ।
চোখ আদ্র , কোমল ।
এতো নিখুঁতভাবে কারো ছবি দেখা যায় আমি জানতাম না । আমার কেমন যেন লাগল ।
মনে হলে ভালোভাবে দেখে কিছু বের করা যায় নাকি !

কালো রঙের চাদর জড়ানো সে ছবিতে , ছবিতে কোনায় সে ,ফটোগ্রাফার তাঁকে ফ্রেম থেকে হয়তো বাদ দিতে চেয়েছিলেন , পরে দেননি । অথবা এমনও হতে পারে , ছবি তুলার সময় সে ছিলনা , কোন কাজে ছিল , হঠাৎ এসে যোগ দিলো ।

পারিবারিক সে ছবিতে সবার মধ্যে নিজেদের খুশি ঢেলে সাজানোর ব্যাপারটা ছিল ।
হাসির কারখানা , মেয়েটির ভেতর সেটি ছিলনা । কেন ?
নিজেকে কি সে আড়ালে রাখতে পছন্দ করে ?

লুকনো হাসির পুরো প্রমান যেন তাঁর দু'ঠোঁটে ! বাহ !! যেন জীবনানন্দের কবিতা থেকে উঠে আসা এক মায়াবী নারী ।

এমনভাবেই চলছিল , আমার দিন । রাতে নিশাচর হই , দিনে ঘুমাই । বিকেলে ঘুম থেকে উঠে বিরক্তমুখে সিগারেট ধরাই , মাঝে মাঝে ভাবি ছবিটির কথা । ক্যামেরা দেখলেই কারো হাতে ছবিটি নিয়ে আমি ভাবি ।

মাঝরাতে ঝুম বৃষ্টি নামলে মনে হয় , এইতো আর কদিন পরেই ছুটি । এরকম ব্যাপার ।

এতো সাধারন মেয়েও হয় ?
কীভাবে ? এতো আধুনিক এক ঘরের মেয়ে এতো সাধারন কীভাবে হয় ?
তাঁকে দেখলেই মনে হয় , পরম মমতা সে লালন করে ।
তাঁর ছবি দেখেই মনে হয় , যাকে সহজেই বলা যায় , আপা আমার ফোনে টাকা নেই , আপনার ফোনটা কি একটু দিবেন ?
নির্দ্বিধায় , অপরিচিত কাউকে সে সাহায্য করতে প্রস্তুত , এরকম ।

মনে মনে ভাবি , যে করে হোক তাকে খুঁজে বের করবই
কেন জানি সময় মিলেনা । একদিন নেটে সার্চ দিচ্ছি , তখন তাঁর ফেসবুক আইডি পেলাম । ছদ্মনামে তার আইডি ।
প্রোফাইলে ঢুকলাম । চমৎকার প্রাইভেসি । কিছুই দেখা যায়না ।

শুধু দেখা যায়
- জেন্ডার - ফিমেল ।

একদিন দেখা হয়ে গেলো । আমি বইয়ের দোকান থেকে বের হচ্ছি , সে একই বইয়ের দোকানে ঢুকে বলছে , আমাকে কি একটু শরৎচন্দ্র এর গৃহদাহ উপন্যাসটি দেয়া যায় ?

আমি অবাক হলাম । দোকানটি ছিল আমার পরিচিত । তখন দোকানের ছেলেটি পাশের দোকানে আমি যে বইটি দিয়েছিলাম সেটি আনতে গেছে । ক্যাশে বৃদ্ধ আছেন । আমি নিয়মিত যাই সে দোকানে । বৃদ্ধ আমাকে সাহায্য করতে বললেন - সেলফ দেখিয়ে দিলেন । মেয়েটি এতো কিছু খেয়াল করছে না । বই চেয়েই চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে । বইটি বের করে দিলাম । নিজেকে কেমন জানি অপেশাদার লাগছিল । সপ্নের মুখোমুখি ! এটা কি স্বপ্ন ? প্রেমেরই আল্পনা ?

সে তখন বলল , আমাকে একটু বইটা প্যাকেট করে দিবেন প্লিজ ? আমার বন্ধুকে বার্থডে গিফট দেবো । বৃদ্ধ দোকানদার একটি প্যাকেট দিলেন ।সে নিজেই প্যাকেটে ভরল । আমি মনে মনে ভাবছি - এখনো কি স্বপ্ন দেখছি ? এই স্বপ্ন কি এখনি ভেঙ্গে যাবে ?

প্যাকেটে ভরেই সে চলে গেলো । বৃদ্ধ আমাকে বলল , মেয়েটা টাকা দিতে ভুলে গেছে , গিয়ে দেখো আছে নাকি । আমি তাড়াহুড়া করে বের হলাম , কিছুক্ষণ খুজে দেখি রাস্তার অপাশে একটা কফিশপে সে বান্ধবী নিয়ে আড্ডা দিচ্ছে । আমি কাছে গিয়ে বললাম , আপনি বইয়ের টাকা দিতে ভুলে গেছেন ?
সে বলল , আমি জানি , দোকান থেকে বের হয়েই মনে পরেছে , আপনি না আসলেও যাওয়ার সময় দিয়ে যেতাম । তারপর সে বলল , কতো টাকা ?
আমি বললাম বইয়ে দাম লেখা আছে , দেখুন , ১০% কমিশন দেয় এসব বইয়ে , হিসেব করে দেন ।
সে বলল , আপনার জানার কথা , আপনি জানেন না ?

আমি বললাম , আমি দোকানের কেউ নয় , বই কিনতে এসেছি এখানে , আমার বই আনতে গেছে দোকানের ছেলেটা । তাই আপনার কাজটা আমি করেছি ।
মেয়েটি দেখে মনে হল লজ্জিত হল । আমি বললাম , লজ্জা পাবার কিছু নেই ।
মেয়েটি সরিও বললনা , আমি অবাক হলাম । চিন্তা করলাম আগ বাড়িয়ে কিছু আর বলব না । সে পার্স খুলে আমাকে টাকা বের করে দিলো । আমি নিয়ে চলে এলাম । তার নামটিও জিজ্ঞেস করলাম না ।

নেট ঘেঁটে বহু সাধনায় তাঁর সেই ছদ্মনামের আইডি খুঁজে বের করলাম । টাইমলাইনে কিছু ছবি ( ৩টি ) দেখা যাচ্ছে । একটি ছবি দেখে শকড হলাম । একটা ডিস্কোতে তাঁর ছবি , ছেলে একজন তাঁর সাথে , ছবিতে সবুজ আলোর খেলা , মেয়েটির কাঁধে তার হাত । বুকের ভেতর কেমন যেন মোচড় দিলো আমার ।

সেদিন মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলো , বুকের ভেতর হু হু বেদনার চর জেগে উঠলো ।
এতো স্বপ্ন , কল্পনা , পরবাস্তবতা , এক ছবিতেই শেষ ?


তারপর কিছুদিন পরের কথা , রাস্তায় হাঁটছি , আকাশের দিকে তাকিয়ে ,
মনে হচ্ছে বৃষ্টি হবে । আকাশ ঘিরে আছে মেঘ । সাদা আকাশটা একটু সাদা থাকে , একটু একটু পর পর একদল মেঘ এসে এসে তাকে অদৃশ্য বানাতে চায় , জড়িয়ে ধরে ।
তারপরেও হয়তো ঝড় কেটে গেলে আকাশ আবারো সাদা হয়ে নীলের বুক মেলে দেয় মানুষের চোখের সীমানাজুড়ে ।

আমার মনে হল চাদর জড়ানো মেয়েটিকে খুঁজে বের করতে হবে আবারো । সে আকাশ , তাকে মেঘ হয়ে জড়িয়ে রাখতে হবে , ক্ষণে ক্ষণে কতো মেঘ তাকে জড়িয়ে ধরবে , আকাশকে না জড়ালে কাকে জড়াবে ? তাকে বের করে বলতে হবে ।

সুরঞ্জনা, অইখানে যেয়োনাকো তুমি,
বোলোনাকো কথা অই যুবকের সাথে ;
ফিরে এসো সুরঞ্জনা ;
নক্ষত্রের রুপালি আগুন ভরা রাতে ;

ফিরে এসো এই মাঠে, ঢেউয়ে ;
ফিরে এসো হৃদয়ে আমার ;
দূর থেকে দূরে -- আরও দূরে
যুবকের সাথে তুমি যেয়োনাকো আর।

কী কথা তাহার সাথে? -- তার সাথে !
আকাশের আড়ালে আকাশে
মৃত্তিকার মতো তুমি আজ ;
তার প্রেম ঘাস হয়ে আসে।

সুরঞ্জনা,
তোমার হৃদয় আজ ঘাস ;
বাতাসের ওপারে বাতাস--
আকাশের ওপারে আকাশ।

রূপসী বাংলার কবি মেয়েদের জন্য কিছু লিখে যাননি
যা লিখেছেন , প্রেমিকদের জন্য
তাকে আমি খুবি অপছন্দ করি , যেসব কবিতা আমার লেখার কথা তা উনি ৮০-৯০ বছর আগে লিখে গেছেন । মেয়েটি কি আমার এই বেদনা বুঝবে ?
আচ্ছা , কবিতাটা কি সে বুঝবে ?

পরিশিষ্ট ;/ এটা সত্য ভাষণ । গল্পের আকার দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে । লেখক অসফল নিজেই তা বুঝতে পারছে । আপনাদের গল্প পরে যদি মনে হয় কারো সময় নষ্ট করা হয়েছে তাহলে দু’অক্ষরে গালি দিয়ে দেখতে পারেন ।

প্রিন্স মাহমুদ
৫/৬/২০১৩
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুন, ২০১৩ বিকাল ৪:০০
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×