ফারাহ আমার কলেজ জীবনের ক্লাসমেট । কেন জানিনা মাঝে মাঝে ওর চোখের ভাষা আমি বুঝি । ওর সাথে প্রথম দেখা ক্লাসেই । একটা ক্লাসে স্যার বিরক্ত হয়ে আমাকে দাড় করিয়ে রাখে । আমিও হাসিমুখে দাঁড়িয়ে থেকেছিলাম । পাশের সারির সিটে সে বসেছিল । দেখেই বুঝলাম অসম্ভব বড় লোকের মেয়ে । অল্পবয়সের খেয়াল আমার অন্যরকম ছিল । আমি ফিসফিস করে ওর দিকে তাকিয়ে বলেছিলাম , তোমার জামার চেয়ে উর্ণা বড় কেন ? নাক মুছার জন্য ? ঐটা দিয়ে আমার সিটটা একটু পরিষ্কার করে দাওতো । সে সোজা স্যারকে বলে দেয় । স্যার আমার দিকে দীর্ঘক্ষণ চেয়ে রইলেন । তারপর বললেন – কোন স্কুল থেকে এই কলেজে আসছ ? স্কুল থেকে না স্যার , বাসা থেকে আসলাম ।
বদমেজাজি গোঁফওয়ালা স্যার আর দেরি করেননি , সাথেসাথেই ঘাড়ট্যারা আমাকে ক্লাস থেকে বের করে দেন আমাকে । এরপরে অনেকদিন ক্লাসে যাইনা । একদিন কলেজের এক বন্ধুর সাথে দেখা হল , সে বলল ফারাহ তোকে পাগলের মতো সরি বলার জন্য খুজছে ।
ফার্স্ট ইয়ারের মাঝামাঝি সময়ের কথা । একদিন কাজিনকে তার স্কুলে দিতে গেছি । গিয়ে দেখি একটা সাদা রঙের গাড়ি থেকে ড্রাইভার নেমে আমাকে বলল , আপা আপনারে ডাকে । গিয়ে দেখি সে । বড়োলোকদের থেকে আমি একশ হাত দূরে থাকি ।
এঁদের ইগনোর করা আমার জন্য মামুলী ব্যাপার । তাকে কথা বলার কোন সুযোগ না দিয়েই বললাম , ১০টা টাকা দাওতো , ক্ষুধা লেগেছে , দুটো বিড়ি খাবো । সে চাপা বিস্ময় নিয়ে বলল ক্ষুধা লাগলে বিড়ি খায় ! আমি বললাম , আমাদের মতো মধ্যবিত্তরা বিড়ি খায় ক্ষুধা নষ্ট করার জন্য । তোমরা বড়োলোকরা এসি গাড়িতে বসে তা বুঝবেনা । সে ১০ টাকার একটা নোট পার্স খুলে দিল , আমি কাছের দোকান থেকে বিড়ির বদলে একটা বেনসন কিনলাম আট টাকা দিয়ে । দুই টাকা তারে ফেরত দিলাম । এতে বুঝালাম আমি বদ হলেও মানুষ সৎ । তার মনে হয় কিছু বলার ছিল । মেয়েদের বকবকানি শোনার কোন মানে হয়না । সাথে সাথে হাঁটা দিলাম ।
সেকেন্ড ইয়ারে কলেজের বাইরে একটা টঙ্গে পা তুলে বসে আছি । তারে দেখলাম সামনে দিয়ে যায় । আমি ব্যাঙ্গ সুরে গান ধরলাম , পড়েনা চোখের পলক , কি তোমার রূপের ঝলক । সে বলল , আমি তোমার সাথে কি করেছি ? আমার সাথে এমন করো কেন ? । আমি বললাম , তুমি আমার সাথে কিছু করোনি । তোমার সামনের বাসায় যেই সিনিয়ার ছেলেটা আছে , তার সাথে লিভটুগেদার করে অল্প বয়সে পেকে গেছো । পাকা মেয়েছেলের সাথে কেমন করে আমি জানিনা ।
সে বলল – এর সাথে তোমার সম্পর্ক কি ? মেয়েছেলে মানে ? একটা মেয়ে যখন ভালোবাসার ভেতর থাকে তার চেহারায় কোমলতা থাকে , সে যখন ভ্রান্তির ভেতর চলে যায় তার সেই কোমলতা চলে যায় । তখন তাকে সবাই মেয়েছেলে ভাবে । তুমিও একটা মেয়েছেলে । ফারাহর রাগ তখন চোখে মুখে , আশ্চর্যের ব্যাপার তার চেহারার মায়া চলে গেলেও আমার ওকে অপ্সরীর মতো লাগলো তখন ।
এরপর আরও কিছুদিন যায় – একরাতে একটা বিয়ের ক্লাবের নিচে একা বসে আছি । দাওয়াতবিহীন বিয়ে খাওয়ার প্ল্যান । অনেকদিন খাইনা । দেখি কলেজের এক বন্ধু আমাকে বলছে , কিরে বিয়েতে এসেছিস নাকি ? তুই কোন পক্ষ ? আমি বরপক্ষ । সুযোগ মিস না করেই বললাম , বর আমার দূর সম্পর্কেরমামা হয়রে । চল খাইয়া আসি ।
ক্লাবে ঢুকতেই দেখি ফারাহ আমার সেই বন্ধুটি বলছে , তুই এসেছিস ? একটু অপেক্ষা কর । মামা স্টেজে এখনো । একটা ফটো তুলে আসি । তখন বুঝলাম , বর তার মামা হয় । ফিরে এসে দেখে খাওয়ার টেবিলে তার সেই বন্ধুর পাশে আমি । সে কিছুই বলল না দেখে আমি বললাম , পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম । বড়লোকের অনুষ্ঠানে কতো অপচয় হয় , তাই নিজ দায়িত্তে অপচয় কমাতে আসলাম । বন্ধুটি বলল , কিরে বর না তোর দূরসম্পর্কের মামা হয় ? আমি বললাম , কোন বড়োলোক আমার কিছু হয়না । তারা গুয়ের মতো চপচপ করে সূপ খায় । এইডা আমার ভুয়া মামা । খাবার টেবিল থেকে উঠে যাচ্ছি যখন দেখি ফারাহও আমার সাথে উঠে এসেছে । সে বলল , শোন – একটা মেয়ের সাথে কেউ এভাবে কথা বলেনা । তুমি এখনো যথেষ্ট পরিমানে অভদ্র অসভ্য । কেন জানিনা তবুও প্রায় আমি তোমাকে ভাবি । আমাকে ইগনোর করতে চাইলে কখনো আমার সামনে আসবেনা প্লিজ ।
ঝলমলে বিয়ের আলোর ভেতর সাদা সালোয়ার পরা যে মেয়েটি আমাকে এই কথাগুলো বলছে তাকে ইরানী মেয়ের মতো লাগছে । চোখের কাজল তার চোখগুলোকে বরফের চাকের মতো করে ফেলেছে । তাকে কি আমার কষ্টগুলো বলা যায় ? তাকে কি বলা যায় আমার বড়োলোক বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করে আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন ? তাকে কি বলা যায় তাকে আমি ভালোবাসি ? তাকে কি বলা যায় প্রায় আমি তাকে সপ্নে দেখি ? তাকে কি বলা যায় সপ্নে প্রায় আমি আর তার মাঝখানে একটা পুতুলের মতো দেবশিশু তাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাতে দেখি ?
“আমি হাটি কোন পথ না মাড়ানো পথে কণ্ঠে কতো গান ,
কতো সুর তুমি আছো শত মাইল পথ জুড়ে একাকী বেদনা সয়না , সয়না ঘুম আসেনা , আ আ ঘুম আসেনা নারে না ঘুম আসেনা ”
গল্প ভালো হওয়ার কথা নয় , আমি গল্প লিখতে পারিনা তবুও চেষ্টা করলাম । ধন্যবাদ ।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


