২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি কোনো এক দিন হবে,তারিখটা সঠিক মনে নেই । বইমেলা থেকে একগাদা বই কিনে ফিরছিলাম । সেদিন রোদটাও একটু কড়া ছিল । তাই ফেরার পথে টিএসসিতে বসে লাচ্ছি খাচ্ছিলাম - আমি আর আব্বু ।
হঠাৎ দেখি একটা ছেলে এক দৌড়ে রাস্তা পার হয়ে আমাদের দিকেই ছুটে আসছে । বয়স ৭/৮ হবে । পরনে একটা ছেঁড়া হাফ-হাতা শার্ট , নোংরা হাফ প্যান্ট । হাতে ছোট একটা বালতি আর বালতি ভর্তি লাল গোলাপ ।
ছুটে এসেই বলে উঠল , " আফা ! ৫ ট্যাহা ! একটা লন না !"
আমি একটু বিরক্তির সুরেই বললাম , " ফুল দিয়ে আমি কি করব ? লাগবে না । যাও।"
কিন্তু সেও নাছোড়বান্দা ! ফুল না নিলে ছাড়বেই না । ওর জ়েদাজ়েদি দেখে আব্বু প্রায় রেগে গিয়েই বলল, " দেখছো না ফুল নিবে না ? তো জালাচ্ছো কেন ? যাও তো রে বাবা ! "
এরপর যা হলো তা দেখে আব্বু আর আমি দুজনেই হতভম্ব !! পিচ্চিটা প্রায় চিৎকার করেই কেঁদে উঠল , " এতো ট্যাহা দিয়া এতোগুলান বই কিনছেন , মাত্র ৫ ট্যাহা দিয়া একটা ফুল লইতে পারেন না ? যার কাছেই যাই হ্যায় কয় - ফুল লাগব না । ফুল না লইলে আমি বাচুঁম ক্যামনে ? খামু কি ? "
আব্বু ওর কান্না থামানোর জন্য ২০ টাকা বের করে দিয়ে বলল , " এই নাও টাকা । কান্না থামাও আর সরো এখান থেকে । ফুল লাগবে না । "
এরপর ছেলেটা যা বলল তা শোনার জন্য আব্বু বা আমি কেউই প্রস্তুত ছিলাম না । অনেকটা অভিমান নিয়েই বলে উঠল , " ছার! আমি ভিক্ষা করি না ! ফুল বেইচ্যা পেট চালাই । ফুল নিলে লন নাইলে ট্যাহা লাগব না ! "
আব্বু তৎক্ষ্ণণাৎ ওর পিঠ চাপড়ে বলে উঠল , " সাবাস ব্যাটা !! এই না হলে বাঙ্গালি ?! জ্বলে, পুড়ে , মরে ছারখার তবু মাথা নোয়াবার নয় !! "
আব্বু সেদিন ওর কথায় এতোটাই খুশি হয় যে ওর বালতির সবগুলো ফুল কিনে নিয়ে আমায় দিয়ে বলে , " এই ফুলগুলো হয়তো দুদিনেই শুকিয়ে মরে যাবে, কিন্তু এই অনুভূতিটাকে কখনও মরতে দিয়ো না - তুমিও বাঙ্গালি , তুমিও বাংলাদেশি । কখনও কোনো কারণে কোনো কিছুর সামনে মাথা নত করবে না ।। "

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


