"প্রিয়/প্রিয়তর/প্রিয়তম",কোন বিশেষণে বিশেষিত করে তোমায় সম্বোধন করব বুঝে উঠতে পারছি না। এর আগে কখনো তোমায় চিঠি লেখা হয়নি তো তাই হয়তো আয়োজন করে লিখতে পারছি না। তাছাড়া এস-এম-এস কিংবা ই-মেইলেও কখনো সেভাবে সম্বোধন করিনি তাই আর অভ্যেসটা হয়ে ওঠেনি। আর তুমি তো আমাকে জানোই-আমি যে তোমার নিয়ম ভাঙ্গার নিয়ম। তাই কোন সম্বোধন ছাড়াই চিঠিটা শুরু করলাম।
তুমি নিশ্চয়ই ভাবছো ই-মেইল বা এস-এম-এস না করে আমি এ যুগে চিঠি লিখতে বসলাম-ই বা কেন ? কিন্তু এছাড়া উপায় কি বলো? তুমি তো তোমার নতুন মেইলিং এড্রেস আর ফোন নাম্বার কোনোটাই দাও নি। ঠিকানা দিয়েছো শুধু - আকাশ। আচ্ছা ধ্রুব, আকাশে তোমার কেমন লাগে? খুব ভালো, তাই না? তুমি কি আকাশের রংধনুটাকে ধরতে পারো? মেঘেদের ভেলায় ভাসতে পারো? নাকি শুধুই তারা হয়ে জ্বলতে পারো? ওখানে তোমার একা একা লাগে না? আমার কথা মনে পড়ে না? আমায় দেখতে ইচ্ছে করে না? একবারও কি মনে হয় না আমার হাতটা ধরে দেখতে? কিন্তু আমার যে ভীষণ কষ্ট হয় তোমায় ছাড়া। প্রতিটি মূহুর্ত শুধু তোমার কথা মনে পড়ে। ইচ্ছে হয় - ছুটে যাই তোমার কাছে,একটু ছুঁয়ে দিয়ে আসি তোমায়।
জানো ধ্রুব,আমার অবুঝ মন আজও ক্লাসের বাইরে সেই উদ্বিগ্ন, অপেক্ষারত চোখ দুটোকে খোঁজে। তখন তোমায় না দেখতে পেলে নিজেকে খুব একা লাগে,ভয় হয় যে ভীষণ! মন খারাপ করে যখন বাসায় ফিরি আর তোমার দেয়া কথা বলা ময়নাটা 'ভালোবাসি নীরা,ভালোবাসি নীরা' বলে চেঁচিয়ে ওঠে তখন নিমিষেই মনটা ভালো হয়ে যায়,মনে হয় তুমি আমার পাশেই আছো সবসময়।
একটা বিষয় ভেবে দেখেছো? তুমি কাছে থাকতে ব্যস্ততার মাঝে কখনও তোমায় চিঠি লেখার কথাটা মাথায় আসেনি! আমাদের দুবছরের সম্পর্কে এটাই তোমার কাছে লেখা আমার প্রথম চিঠি। কিন্তু দুর্ভাগ্য দেখো-এই চিঠিটাও কি তোমার কাছে পৌঁছানো সম্ভব হবে? আমার এই চিঠিটা পেলে তুমি কি খুব খুশি হবে নাকি বিস্মিত ?
একটু আগে ফোনে তারার সাথে কথা হল। তোমার ছোট্ট তারা এখন অনেক বড় হয়েছে। আমাকে বলে কি না-"আমাকে তো বড় হতে হবে,অনেক বড়। ভাইয়ার সব দায়িত্ত তো আমাকেই পালন করতে হবে,তাই না আপু? আমার জন্য দোয়া করবেন।"ওর এস.এস.সি আগামী বছর। তোমার বোনটা ঠিক তোমার মতই হয়েছে-শুধু শুধু টেনশন করে। আমি বলেছি ভয় না পেয়ে ভালো করে পড়ালেখা করতে। তুমি চলে যাবার পর আংকেল স্ট্রোক করে প্যারালাইজড হয়ে বিছানায়। সব দায়িত্ব এখন আন্টির একার কাঁধে। তুমি সবসময় ঠিকই বলতে- তোমার মা আসলেও অনেক আত্মবিশ্বাসী,সাহসী ও সংগ্রামী। অসুস্থ স্বামী,তার পেনশনের সামান্য কিছু টাকা আর একটি মাত্র কিশোরী মেয়ে নিয়ে কতই না কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন কিন্তু কখনই মুখ ফুটে কিছু বলেন না। ফোনে কথা হলে যখন জানতে চাই কেমন আছেন - তখন শুধুই বলেন আমি তো বেঁচেই আছি মা,শুধু আমার ধ্রুবটার জন্য দোয়া কোরো। ও যেন ওখানে ভালো থাকে।
ধ্রুব, তুমি ভালো আছো তো ??
আমার কোন কথা-চিঠি তোমার কাছে পৌঁছবে না জানি। পৌঁছলে শুধু এটুকুই বলতাম,"ভালো থেকো ভালোবাসা।" তুমি ভালো থাকলেই যে আমিও ভালো থাকব।
ইতি,
তোমার আমি
পুনশ্চ : তুমি ভালোবেসে আমায় মাঝে মাঝে "নীড়" বলে ডাকতে। বলতে তোমার নীড় একটাই-তা হলাম আমি। আমি তখন কিছুই বলতাম না,শুধু হাসতাম। আজ বলি-
"রও না যতই ক্রোশ দূরে,
রইবে এ অন্তর জুড়ে-
তোমার ছোট্ট নীড়ে।।"
ইতিকথা- আমার গত লেখাটা পড়ে অনেকেই বলেছেন,আমি খুব তাড়াতাড়ি লেখাটা শেষ করেছিলাম। পরে ভেবে দেখলাম আসলেও কথা সত্য।তাই "ভালো থেকো ভালোবাসা" কে টেনে এনে এখানে শেষ করলাম।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


