শান্তির রঙ সাদা, বেদনার রঙ নীল ; তাহলে অভিমানের রঙ কী ? সুখ , দুঃখ , বেদনার মতো সেটাও তো মানব অনুভূতি ! অভিমানের কোনো রঙ আছে কি না, জানি না । তবে অভিমানের যদি রঙ থাকতো তাহলে নিশ্চয়ই লাল হতো, নইলে বেরঙ্গীন । অভিমানী লাল চোখ দিয়ে যখন বেরঙ্গীন অশ্রুকণা ঝরে পড়ে তখন তো অভিমানী হিমালয়ের বরফখন্ডটাই গঙ্গা হয়ে বয়ে যায় । আর সেই গঙ্গাধারা রাঙ্গিয়ে দিয়ে যায় জীবনের সাদা-কালো মূহুর্তগুলোকে।
তবে সাড়ে তিন বছরের ভাগ্নীটা যখন খেতে না চাওয়ার জন্য বকা খেয়ে অভিমানী অশ্রুসিক্ত লাল চোখে দেয়ালের দিকে তাকিয়ে থাকে আর অবুঝ একটা প্রাণীর কাছে মিনতি করে - " তিকতিকি ! খা-মণিকে ধলো তো ! ", তখন মনে হয় অভিমান আসলে ওর গায়ের ঐ বেগুনী ফ্রকটার মতোই সুন্দর - আহা ! বেগুনী অভিমান ।
কিংবা মা যখন বাবার প্রিয় সাদা শার্টে নীল দিয়ে উজ্জ্বল করার প্রয়াসে পুরো শার্টটাকেই নীল করে ফেলার কৈফিয়ত দেয় বাবাকে - '' তোমার তো কোনো নীল শার্ট ছিল না , যাক ! একটা হলো । " , আর বাবা নীলাভ অভিমান নিয়েও হা-হা-হ্ করে হেসে ওঠে তখন ভাবি - এই নীল অভিমান নিয়েই তো জীবন ।
আবার যখন ফ্রেন্ডের বোনের গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে দুষ্টুমি করে ফ্রেন্ডের গালে হলুদ মাখিয়ে দিই আর সে চেঁচিয়ে ওঠে - "দিলি তো মেকাপটা নষ্ট করে !", তখন ওর হলদে আক্ষেপ আমায় শিখিয়ে দেয় - অভিমান হলুদও হয় !
অথবা যখন বোনদের সাথে আসমানী, সবুজ কিংবা কমলা রঙের জামাগুলো নিয়ে অকারণে খুনসুঁটি করি আর কাড়াকাড়িতে জিততে না পেরে ওরা গোল মুখ ফুলিয়ে বসে থাকে , তখন বুঝি অভিমানের কত্ত শত রঙ ।
এত শত অভিমানের ভীড়ে প্রায়ই ভাবি, জীবন এতটা সুন্দর হয়তো এই রংধনুর রঙ্গে রঙ্গীন অভিমানগুলোর কারণেই । কিন্তু এতো সুখের মাঝেও আঁতকে উঠি যখন অভিমানের ভয়ঙ্কর কালো রূপটা দেখি -
''আতিক ! হ্যাঁ ,আতিক-ই তো ছিল তার নাম ! ক্লাসে স্যারদের চোখের মণি । ক্যান্টিনে আড্ডার মধ্যমণি । কমিউনিটি সার্ভিস , দুর্নীতি কিংবা মাদকবিরোধী আন্দোলনে-সবচেয়ে তৎপর ছেলেটা ।''
বন্ধুদের কাছে যখন জানতে চাই, '' আতিকের খবর কিছু জানিস ? ঈদের ছুটির পর থেকে ওকে আর ক্লাসে দেখি না ! ও তো ক্লাস মিস দিতো না কখনও ! "
নিজের কানেই যেন বিশ্বাস হয় না যখন উত্তরে শুনি , '' তুই জানিস না ? ও তো ঈদের আগের দিন সুইসাইড করসে । ''
হতবাক আমি , '' কি বলিস ?!!! কিন্তু কেন ? ''
''পারিবারিক সমস্যা ছিল নাকি । যতটুকু জানি ওর মা না বাবা কার সাথে যেন কি একটা বিষয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে রুমের দরজা লক করে ফ্যানের সাথে ফাঁস টানায় । আঙ্কেল আন্টির অবস্থা এখন খুব খারাপ রে । হাজার হোক এক মাত্র ছেলে !"
বাবা-মায়ের সাথে সামান্য তর্কাতর্কিতে সদা হাস্যোজ্জ্বল , দুর্দান্ত সেই ছেলেটা বেছে নিল আত্মহত্যার মতো অন্ধকারাচ্ছন্ন পথ ! অভিমানের এ কেমন রঙ ?
ছেলের জন্য বোনা বাবা-মার রঙ্গীন স্বপ্নগুলো আজ শুধুই অশ্রু হয়ে ঝরে পড়ে - অভিমানের অশ্রু । এখন তাদের অভিমানের সেই রংধনু আর দেখা দেয় না নীলাকাশে, কারণ সে আকাশ যে আজ শুধুই ধূসর মেঘাচ্ছন্ন ।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


