somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রসালো সাক্ষাৎকার

১১ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ১০:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গতকাল এক নার্সিং ইন্সটিটিউটে এক্সটার্নাল হয়ে গিয়েছিলাম ইংরেজি বিভাগের ক্যান্ডিডেটদের শুধু অবজার্ভ করার জন্য। ইন্টারভিউ হচ্ছিল জুমে, আমার কাজ ক্যান্ডিডেটদের কোয়ালিটি যাচাই করা, যদিও প্রশ্ন করার কাজটি করছিলেন ঢাকার হর্তাকর্তারা। নার্সিং ইন্সট্রাকটর ও নার্সিং লেকচারাদের ইন্টারভিউ সঙ্গত কারণেই আগে নেয়া হয়েছে। তাদের চাকুরিও হয়েছে তৎক্ষণাৎ (যারা ইন্সটিটিউটের অফার করা স্যালারিতে রাজি হয়েছে তাদেরই চাকুরি হয়েছে, এক্ষেত্রে কোথা থেকে পাশ করেছে বা কোন ধরণের সাবজেক্ট রিলেটেড প্রশ্নও করা হয়নি)। আরেকটি মজার ব্যাপার হচ্ছে, চাকুরি যাদের হয়েছে তারা সবাই নারী। হয়ত শিক্ষার্থীরা (নার্সিং-এ যে প্রায় শতভাগ নারী তা বলার অপেক্ষা রাখে না) নারী শিক্ষকদের সাথে কমফোর্ট ফিল করবে বলেই নারীদেরকেই নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

ইংরেজি বিভাগের ভাইবা শুরু হয় বেলা ১ টার দিকে। ছয়জন ক্যান্ডিডেটদের মধ্যে ৪ জন নারী। প্রথম ক্যান্ডিডেড ছিলেন একজন সদ্য পাশ করা চনমনে যুবক। ভাইবা নিচ্ছিলেন হেড অফিসের দুইজন হর্তাকর্তা যাদের বয়স পঁচাত্তরের ঊর্ধ্বে। ক্যান্ডিডেডকে তারা একটাই প্রশ্ন করলেন নার্সিং ইন্সটিটিউটে কিসের আশায় চাকুরি করতে চান (হাবেভাবে বোঝাতে চাইলেন নারীদের দ্বারা বেষ্টিত থাকার জন্যই এখানে আসা কিনা)। ক্যান্ডিডেড বেশ স্মার্ট ছিল, তার উত্তর ছিল এরকম যে যেখানে সে শিক্ষক হিসেবে চাকুরি করবে সেখানে শিক্ষার্থীদের লিঙ্গ তার কাছে খুব একটা গুরুত্ব বহন করে না। এই উত্তরের পরে তার ইন্টারভিউ শেষ। এরপর একে একে নারী ক্যান্ডিডেডরা ঢোকা শুরু করলেন। এককালে ফ্লার্টিং কম বেশি সবাই করে থাকে, সেটাও হয়ত একটা নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত, একটা সীমা রেখে। পচাত্তরোর্ধ্ব এই ব্যাক্তিবর্গের নাতনীর বয়সী মেয়েদের সাথে রসকসের আলাপ শুনে আমার রীতিমত মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছে করছিল (বিবাহিত নারীদের তাদের স্বামী পরিতৃপ্ত করতে পারে কি না সেই ধরণের প্রশ্ন করা হচ্ছিল)। এদের অনেকেই আমার ভাগিনীদের বয়সী, আমার ভাগিনীদের কেউ এরকম প্রশ্ন করলে তার গালে কতগুলো জুতো মারব আমি বসে বসে সেই হিসাব করছিলাম। সেই সাথে নিজের উপর রাগ হচ্ছিল এখানে এক্সটার্নাল হিসেবে আসার জন্য। এই অসহায় মেয়েগুলোকে তারা বিষয়ভিত্তিক কোন প্রশ্নই করেনি এবং আমাকেও কোন প্রশ্ন করার সুযোগ দেয়নি। এদের মধ্যে আমার নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন মেয়ে ছিল (যদিও আমাদের অনেক জুনিয়র এবং স্বাভাবিকভাবেই সে আমাকে চেনে না)। শেষ ক্যান্ডিডেড ছিল একজন ছেলে। করোনাকালে এক নামি-দামি স্কুলের চাকুরি হারিয়ে নতুন করে ক্যারিয়ার শুরু করতে এসেছে। সে যখন ভাইবা রুমে ঢোকে তখন বড়বাবুদের লাঞ্চ আওয়ার প্রায় শেষের দিকে। মেয়েদের সাথে রসকসের আলাপ করে তারা তখন ক্ষুধার্ত (আল্লাহই জানে ক্ষুধাটা কিসের)। শেষ ক্যান্ডিডেড বসা মাত্র তাকে একটা ইংরেজি শব্দের অর্থ জিজ্ঞেস করা হল যেই বানানের কোন শব্দ ইংরেজির কোন অভিধানে নেই- Abbys। ছেলেটি উত্তর দিল যে এই বানানের কোন শব্দ অভিধানে নেই তবে আরেকটি শব্দ আছে কাছাকাছি বানানের- Abyss, যার অর্থ হল খাঁদ বা অতল গহবর। একশতে একশ দশ পাওয়ার মত উত্তর, অন্তত আমার কাছে তাই মনে হয়েছে। উত্তর পাবার পর বড়বাবু, যার এক পা কবরে চলে গেছে, তিনি আমাকে হুকুম দিলেন ক্যান্ডিডেডকে চলে যেতে বলার জন্য।

চাকুরির ভাইবাতে শুধু বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন করা হবে না সেটা স্বাভাবিক। অনেক সময় ক্যান্ডিডেডদের মনস্তত্ব যাচাই করার জন্যও অনেক ধরণের আজগুবি প্রশ্ন করা হয়। কিন্তু ভাইবার নামে ভার্বাল সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট বা নিয়োগ দেয়ার ইচ্ছা না থাকলেও কাউকে ভাইবার জন্য ডাকা কি ধরণের কালচার আমি বুঝতে পারি না। ক্যান্ডিডেডদের অনেকেই দূর-দূরান্ত থেকে আসেন- যাতায়াত খরচ, থাকা-খাওয়ার খরচ, এগুলো বহন করে একজন ক্যান্ডিডেড যদি দেখেন তার লিঙ্গ (উভয় ক্ষেত্রেই বলছি) সেখানের জন্য প্রযোজ্য না তবে হতাশা কোথায় যেয়ে ঠেকতে পারে অনুমান করা সহজ নয়। ইদানিং আরেকটি জিনিস লক্ষ্য করছি সেটা হল বড় বড় পোস্টে যারা কর্মরত আছেন, যারা নিয়োগ প্রক্রিয়ার সাথে সরাসরি যুক্ত তাদের কামনা। পেপার-পত্রিকায় আমরা অনেক ঘটনাই দেখেছি, কিন্তু পেপারে আসে কতগুলো? হয়ত শতকরা একভাগও না। সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট শুধু বাজে প্রস্তাবকেই বোঝায় না। একজন নারী/পুরুষের দেহের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে আকার-ইঙ্গিতে কথা বলা, গোপন অঙ্গের দিকে তাকিয়ে থাকা, যে কোন ভাবে স্পর্শ করা, বাজে মেসেজ বা ছবি পাঠানো, এমনকি বিপরীত লিঙ্গের কলিগকে বিশেষ উদ্দেশ্য লাঞ্চের জন্য দাওয়াত দেয়াও সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্টের অন্তর্ভুক্ত। অথচ আমাদের দেশে অধিকাংশ মেয়েদের এইগুলো, বিশেষ করে লাঞ্চের দাওয়ার ও অগ্রহণযোগ্য জোকসের শিকার হতে হয় অহরহ। আর ইন্টারভিউ বোর্ড, বিশেষ করে কিছু প্রাইভেট কোম্পানী বা ইন্সটিটিউট, তো হল ভার্বাল সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্টের উৎসব। বুঝতে পারছি না আমরা নৈতিকভাবে কোন পথে হাঁটছি।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ১০:০৭
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×