somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধর্মীয় অজ্ঞতা ও বিবর্তন

১৯ শে অক্টোবর, ২০২২ ভোর ৪:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সুইডিশ বিজ্ঞানী সভান্তে পাবো মানুষের বিবর্তন নিয়ে তাঁর অসাধারণ গবেষণার জন্য এ বছর নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন চিকিতসাবিজ্ঞানে। তাঁর এই প্রাপ্তি মানব সভ্যতাকে এক ধাপ এগিয়ে দেয়ার স্বীকৃতি।

পাবোর কৌশল প্রয়োগ করে মানুষের জিনোমের সাথে অন্যান্য হোমিনিন যেমন নিয়ান্ডার্টাল ও ডেনিসোভানের সাথে তুলনা করা সম্ভব হয়েছে। উনিশ শতকের মাঝামাঝি নিয়ানডার্টালের যেসব ফসিল আবিষ্কার হয়েছিল সেগুলো থেকে দেখা যায় এরা আমাদের অর্থাৎ হোমো সেপিয়েন্সের সাথে খুবই সম্পর্কযুক্ত এবং উভয়েই প্রায় ৮ লক্ষ বছর আগে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। তারপর আবার বিভিন্ন সময় আমাদের প্রজাতির সাথে তাদের সহাবস্থান হয়। স্ভান্তে পাবো একটা অদ্ভুত ব্যাপার লক্ষ করলেন – আমাদের মধ্যে নিয়ানডার্টালের জিন রয়েছে যা থেকে প্রমাণ হয় এদের সাথে আমাদের পূর্বপুরুষদের কারো কারো মিলনের ফলে বাচ্চা-কাচ্চা জন্ম নিয়েছিল। নিয়ানডার্টালরা আফ্রিকায় ছিল না। তাই আফ্রিকার বাইরের মানুষের মধ্যে ১ থেকে ২ শতাংশ জিন নিয়ানডার্টাল থেকে পাওয়া। আমাদের ইমিউন সিস্টেমের অবস্থা যেমন আছে তেমনটা কেন ও কিভাবে হল তা বুঝার জন্য এই তথ্যগুলো দরকার।

সাইবেরিয়ায় একটি গুহা থেকে পাওয়া ছোট্ট একটা আঙ্গুলের হাড় থেকে মানুষের আরেক আত্মীয়ের সন্ধান পাওয়া যায়, এর নাম হচ্ছে ডেনিসোভান। ডেনিসোভানরা আবার নিয়ানডার্টালদের অধিকতর কাছের প্রজাতি, এরা ৬ লক্ষ বছর আগে পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। মজার ব্যাপার হচ্ছে এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার শতকরা ৬ ভাগ মানুষের মধ্যে বর্তমানে ডেনিসোভানের জিন পাওয়া যায়।

এই নোবেল প্রাপ্তির আনন্দের মধ্যেও মনটা খারাপ হয়ে যায় যখন দেখি এখনো আমাদের দেশে অধিকাংশ লোকের ভুল ধারণা রয়েছে বিবর্তন নিয়ে। বিবর্তন মানেই অনেকে মনে করেন মানুষ এসেছে বানর থেকে। অথচ সকল জীবই এক পুর্বপুরুষ থেকে এসেছে। পৃথিবীতে বিদ্যমান যেকোনো দুটো জীবেরই অতীতে গেলে এক সময় একই পুর্বপুরুষ পাওয়া যাবে।মানুষের কাছেকাছি প্রজাতি নিয়ানডার্টাল আর ডেনিসোভান এর কথা আগেই বলেছি। কিন্তু শুধু এ দুটো প্রজাতি না, এরকম প্রজাতির ফসিলের সন্ধান পাওয়া গেছে ডজন খানেকেরও বেশি। যেমন হোমো হেবিলিস, হোমো নালেডি, হোমো এন্টিসেসর, হোমো ফ্লোরেসিয়েনসিস ইত্যাদি। এদের অস্তিত্ব সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করে যে আমরা বিবর্তনের মাধ্যমে এসেছি। এভাবে প্রতিটি প্রজাতির কাছাকাছি অনেকগুলো প্রজাতি পাবেন।

বর্তমান সময় বিজ্ঞানের জগতে জীবের বিবর্তন নিয়ে কোন সন্দেহ নাই। পৃথিবীর প্রথম সারীর যে বিশ্ববিদ্যালয়ে জীববিজ্ঞান সম্পর্কিত কিছু পড়ানো হচ্ছে সেখানেই বিবর্তনের ব্যাপারটা আছেই। জীবের বিবর্তন নিয়ে গবেষণা হচ্ছে অসংখ্য নামীদামী বিশ্ববিদ্যালয়ে।

বিবর্তন ছাড়া আর কিছুই ব্যাখ্যা করতে পারেনা যে কেন জীব প্রজাতিগুলোর পরস্পরের সাথে এত মিল? কেন একটি শিম্পাঞ্জীর আচার-আচরণ, দৈহিক গড়ন সহ জিনোমের সাথে এত মিল আমাদের? কেন কুকুর আর নেকড়ের এত মিল? কেন এত ভিন্ন ভিন্ন ধরণের শেয়াল, বাঘ, বিড়াল, বানর ইত্যাদি? কিভাবে ১৭৫০০ প্রজাতির প্রজাপতি পৃথিবীতে উড়ে বেড়ায়? কত প্রজাতির মশা পৃথিবীতে আছে জানেন? উত্তর হচ্ছে তিন হাজার! বর্তমান পৃথিবীতেই এত বেশি প্রজাতি। অথচ জীবের শতকরা ৯৯ ভাগেরও বেশি প্রজাতি কিন্তু বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

এই যে জীবের এত এত প্রজাতি এরা যদি বিবর্তনের মাধ্যমে না আসে তবে কিভাবে এল? ধর্মান্ধদের সোজা উত্তর – ধপাস করে আকাশ থেকে পড়েছে খোদার হুকুমে, কী হাস্যকর! এসব ধপাসবাদিরা সবাই কিন্তু অশিক্ষিত না বা মাদ্রাসা পড়ুয়া না। কেউ কেউ নাকি লেখাপড়াও করেছে, কেউ কেউ তো বইও লিখেছে, অবশ্য এগুলো নিয়ে বর্তমানে সবাই হাসাহাসি করে।

সময়টা ধর্মান্ধদের জন্য খুবই খারাপ, ভবিষ্যতে আরো অনেক খারাপ হয়ে উঠবে। সকলের প্রতি আহবান, আসেন আমরা বিজ্ঞানের অগ্রগতির জন্য কাজ করি, সঠিক জ্ঞানের সন্ধান করি, নিজেদেরকে ধর্মীয় অজ্ঞতা থেকে রক্ষা করি। সমাজকে এগিয়ে নিতে হলে এর বিকল্প নাই।

সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে অক্টোবর, ২০২২ ভোর ৪:৫৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ভারতীয় আগ্রাসনবিরোধী বিপ্লবীর মৃত্যু নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



শরিফ ওসমান হাদি। তার হাদির অবশ্য মৃত্যুভয় ছিল না। তিনি বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, আলোচনা ও সাক্ষাৎকারে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি অনেকবার তার অস্বাভাবিক মৃত্যুর কথা বলেছেন। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও ভারতবিরোধী... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ডায়েরী- ১৭৩

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৩৪



গত কয়েকদিন আমি চিনি ছাড়া চা খাচ্ছি।
সারাদিনে মাত্র দুই কাপ চা। আগে চা খেতাম কমপক্ষে ৮ থেকে দশ কাপ। সবচেয়ে বড় কথা চা যেমন-তেমন, সিগারেট খাচ্ছি না।... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাকিস্তান ও চীন কি ভারত-বাংলাদেশ যুদ্ধ বাধাতে চায়?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৩১



ভারত-বাংলাদেশ যুদ্ধে পাকিস্তান ও চীনের লাভ আছে। যুদ্ধে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্থ্য হলে ভারত বিরোধীতায় তারা সহজে বাংলাদেশীদের তাদের পাশে পাবে। বাংলাদেশের নিরাপত্তার অযুহাতে এখানে তারা সামরিক ঘাটি স্থাপনের সুবিধার... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রচুর ব্লগিং করুন, কিন্তু......

লিখেছেন জটিল ভাই, ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৫৯

♦أَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشِّيْطَانِ الرَّجِيْمِ (বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহ্'র নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি)
♦بِسْمِ ٱللَّٰهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ (পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহ্'র নামে)
♦ٱلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ (আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক)


(ছবি নেট হতে)

তা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাত্রলীগের লুঙ্গির নিচে ছিল শিবির, এখন শিবিরের লুঙ্গির নিচে ঘাপটি মেরে আছে গায়ে বোমা বাঁধা সশস্ত্র জঙ্গিরা

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:১৫


"তাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আদেশ: চোখে যা দেখেছো, কানে যা শুনেছো, সেগুলো সঠিক নয়, সেসব ভুলে যাও।" - জর্জ অরওয়েল

অনেকদিন ধরে একটি পরিকল্পিত অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, বাংলাদেশে কোনো জঙ্গি নেই। এতদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×