somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জাস্টিসের পক্ষে আছি, মবের পক্ষে নই!

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ দুপুর ২:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

♦أَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشِّيْطَانِ الرَّجِيْمِ (বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহ্'র নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি)
♦بِسْمِ ٱللَّٰهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ (পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহ্'র নামে)
♦ٱلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ (আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক)


(ছবি নেট হতে)

ব্লগে যেনো কেমন একটা মবের মনোভাব লক্ষ্য করছি। এভাবে যদি ব্লগারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবার আওয়াজ উঠতে থাকে তখন এই বিরানভূমি আরো নির্জীব হবে বলে মনে করি। এমনিতেই এখন মনে হয় না আপার বিকল্প নেই মনে করার মতো যারা মনে করেন সামুর বিকল্প নেই, তারা ব্যতীত আর তেমন কেউ এই ব্লগে আছেন। তাই বলে মব জাস্টিস কখনো কাম্য নয়। কারণ, কেউই দোষের উর্দ্ধে নই। একজনের চোখে যা দোষ, অন্যজনের চোখে তাই গুণ। তাই এই আপেক্ষিক বিষয়ে জাস্টিস সময়ের ব্যপার। এটা একান্তই আমার ব্যক্তিগত মতামত। তাই এই ব্যক্তিগত মতামতের ভিত্তিতে ক্যাঁচাল না করে আসুন দু'টো গল্প পড়ি।

গল্প ১:
বনের রাজা সিংহ এক দিন এক বড় গাছের নিচে বিশ্রাম নিচ্ছিল। সে গাছের মগডালে বসে ফল ছিঁড়ে খাচ্ছিল এক বানর। হঠাৎ একটা ফল নিচে বসে থাকা সিংহের মাথায় পড়ল। সিংহ রেগে গিয়ে বলল, এই বানর, তুই নিচে নেমে আয়, তোকে এখনই হত্যা করব।
বানর বলল, ভুল হয়ে গেছে রাজামশাই। ক্ষমা করে দিন।
অনেক মিনতি করার পর সিংহ বলল, ঠিক আছে। কিন্তু তুই এই জঙ্গল থেকে চিরদিনের জন্য চলে যাবি।
বানর বলল, কিন্তু কেন?
সিংহ বলল, আমি এই বনের রাজা। আমি নির্দেশ দিচ্ছি তাই তোকে তা মানতে হবে। তোকে এখান থেকে চলে যেতে হবে।

বানর তার পরিবার নিয়ে দুঃখী মনে জঙ্গল থেকে চলে যাচ্ছিল। পথে অন্য প্রাণীদের সঙ্গে দেখা হলো। তারা জিজ্ঞেস করতে বানর সবকিছু খুলে বলল।

বন মহিষ বলল, রাজা মশাইয়ের অত্যাচার দিন দিন বেড়ে চলেছে। সে প্রতিদিন তৃণভোজী প্রাণীদের ধরে ধরে খাচ্ছে। অন্য প্রাণীরা কেউ শান্তিতে বসবাস করতে পারছে না।
সবাই বলল, ঠিক ঠিক।
হরিণ বলল, রাজা বদলাতে হবে।
সবাই বলল, ঠিক ঠিক।
জিরাফ বলল, কিন্তু কীভাবে?
বন মহিষ বলল, ভোটের মাধ্যমে।

সবাই মিলে সিংহের কাছে গেল। সিংহ সব শুনে বলল, তোমরা আমাকে রাজা মানতে চাও না, তাইতো। আমি ছাড়া কে রাজা হবে?
ময়ূর বলল, বানর।
সিংহ হাসতে হাসতে বলল, তোমরা কি পাগল হয়ে গেলে? রাজা হয় বংশপরম্পরায়। রাজার ছেলে অর্থাৎ সিংহের ছেলেই রাজা হবে। আর রাজা হতে হয় শক্তিশালী কাউকে। বানর রাজা হলে তাকে কেউ ভয় পাবে না। জঙ্গল অরক্ষিত হবে।
বন মহিষ বলল, আপনি প্রাণী হত্যা করেন। তাই মাংসাশী নয় এমন কেউ রাজা হবে। বানর বুদ্ধিমান। কাউকে হত্যা করে না আর ওদের শারীরিক গঠনও মানুষের মতন। তাই বানরকেই আমরা রাজা হিসেবে চাই।
সিংহ বলল, তোমরা কি জানো না বনে রাজতন্ত্র চলে। হুট করে একজনকে রাজা বানাবে কীভাবে?
বন মহিষ বলল, ভোটের মাধ্যমে। আপনি যদি সবার ভালো চান তবে বানরের সঙ্গে ভোটে দাঁড়াবেন। যে জিতবে সে-ই রাজা হবে।

সবার চাপের মুখে সিংহ রাজি হলো। কিন্তু সে দুশ্চিন্তায় পড়ে গেল। সে জানে কেউ তাকে ভোট দেবে না। তাকে এত দিনের রাজত্ব হারাতে হবে। সে গেল মাস্টার মশাই অর্থাৎ শিয়ালের কাছে একটা পরামর্শের জন্য।

শিয়াল সব শুনে বলল, আমি আপনাকে পুনরায় রাজা বানাতে পারি। কিন্তু তাতে আমার কী লাভ হবে, সেটা আগে বলুন।
সিংহ বলল, আমি রাজা হলে তোমায় বনের দ্বিতীয় ক্ষমতাধর আসনে বসাব। তোমায় আমার মন্ত্রী বানাব।

শিয়াল প্রস্তাব শুনে রাজি হয়ে গেল। সে পাশের জঙ্গলে গিয়ে বাঘ, হায়েনা সব হিংস্র প্রাণীকে বলে এলো, তোমাদের এখানে তো খাদ্যের অনেক অভাব। তোমরা কেন আমাদের জঙ্গলে আসো না? আমাদের রাজামশাই তোমাদের দাওয়াত করেছেন। ওখানে শিকারের কোনো অভাব নেই।

সবাই শিয়ালের কথামতো এই জঙ্গলে এসে তৃণভোজী প্রাণী শিকার করতে লাগল। বনের তৃণভোজী প্রাণীর সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এলো। সবাই কোনো উপায় না দেখে প্রাণ বাঁচাতে রাজামশাইয়ের কাছে ছুটে গেল।

সবাই বলল, আপনি আমাদের বাঁচান। বাঘ ও অন্যান্য হিংস্র প্রাণীর সঙ্গে লড়াই করার ক্ষমতা আমাদের কারোরই নেই। আপনিই একমাত্র শক্তিধর যে তাদের সঙ্গে লড়াই করে জিততে পারবেন।
সিংহ বলল, তোমরা তো আমাকে রাজা মানো না। তোমরা অন্য কাউকে রাজা বানাতে চাও। আমি তোমাদের বিপদে কেন সাহায্য করব? কেন তোমাদের বাঁচাব?
সবাই সমস্বরে বলে উঠল, আপনিই আমাদের রাজা ছিলেন, আপনিই আমাদের রাজা থাকবেন। আমরা নতুন রাজা চাই না।
সিংহ বলল, ঠিক আছে, আমি দেখছি কী করা যায়।

সিংহ হুংকার দিয়ে অন্য জঙ্গল থেকে আগত হিংস্র প্রাণীদের দিকে তেড়ে গেল। বাঘ, হায়েনা সবে ভয়ে পিছপা হয়ে নিজেদের জঙ্গলে ফিরে গেল। সবাই আগের মতো শান্তিতে বসবাস করতে লাগল।

এবার শিয়াল সিংহের কাছে গিয়ে বলল, বনের সব প্রাণীর ডেকে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিন। সবাইকে বলুন, আমি আপনার রাজ্যের মন্ত্রী।
সিংহ ভয়ংকর এক হাসি দিয়ে বলল, তোকে মন্ত্রী বানাব। হা হা। বনের রাজা, মন্ত্রী, উজির, নাজির সবাই হবে সিংহের বংশধর। যা ভাগ এখান থেকে।

শিয়াল ভাঙা মন নিয়ে ফিরে এলো। কিন্তু সে-ও ছাড়ার পাত্র নয়, রাগে, ক্ষোভে জ্বলতে লাগল। শিয়াল মনে মনে ফন্দি আঁটল। সে পাশের গ্রামে গিয়ে হাঁস-মুরগি ধরে ধরে খেতে লাগল। গ্রামের মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠলো। এমন কি শিয়াল গ্রামের লোকদের দেখিয়ে দেখিয়ে দিনের বেলাও হাঁস, মুরগি, কবুতর ধরে খেত। যেই না লোকজন তেড়ে আসত, অমনি শিয়াল দৌড়ে বনের দিকে ছুটে পালাত।

এক দিন গ্রামবাসী শিয়ালকে তাড়া করে জঙ্গলে ঢুকে পড়ল। শিয়াল দৌড়াতে দৌড়াতে সিংহের কাছে এসে ঝোপের পেছনে লুকিয়ে পড়ল। গ্রামবাসী ছুটতে ছুটতে এসে সামনে একটা সিংহ দেখে আঁতকে উঠল। সবাই লাঠি দিয়ে পিটিয়ে সিংহকে হত্যা করল।

গ্রামবাসী চলে যাওয়ার পর শিয়াল ঝোপ থেকে বের হয়ে মৃত সিংহের কাছে এসে দাঁড়াল। মৃত সিংহকে উদ্দেশ করে বলল, রাজা হতে চাইলে শুধু শক্তিধর হলে চলে না, বুদ্ধিমানও হতে হয়।

গল্প ২:
বনের রাজা সিংহ তার বাচ্চাদের নিয়ে রোদ পোহাচ্ছিলো! এমন সময় বানর এসে তার লেজ ধরে দু’টা ঝাকি দিলো! সিংহ যতোটা না অবাক হলো, তার চেয়ে বিরক্ত হলো বেশি! বানর একটু দূরে দাঁড়িয়ে সিংহকে কয়েকটা ভেংচি কেটে হাসতে হাসতে চলে গেলো!

সিংহের বাচ্চা সিংহকে বললো, এত্তো বড় বেয়াদবী! আর আপনি তাকে কিছুই বললেন না বাপজান!
সিংহ বললো, বলার সময় এখনো ফুরিয়ে যায়নি! একটু সময় অপেক্ষা করো, সবকিছু দেখতে পাবে!

কয়েকদিন পর হঠাত করেই বাঁদর সিংহের সামনে পড়লো এবং এক থাপ্পরে তাকে শেষ করে দিলো সিংহ।
সিংহের বাচ্চা অবাক হয়ে সিংহকে জিজ্ঞেস করলো, বাপজান! সেদিন এতো অন্যায় করলো! কিন্তু আপনি কিছুই বললেন না তাকে! অথচ আজকে সে কিছুই করেনি! কিন্তু তাকে মেরে ফেললেন?

সিংহ জবাবে বললো, এটাই কৌশল বাবা ! সেদিনের পর বাঁদরটা ভালুক কে লাথি মেরেছে! হাতির শুড় ধরে দুলছে! গন্ডারের পিঠে চড়ে নাচছে! হায়নাকে সে কাতুকুতু দিয়েছে! জিরাফকে থাপ্পড় দিয়েছে!

আর সবাইকেই বলছে, রাজাকেই আমি মানি না! সেখানে তুমি কে? সেদিন ওরে মা-রলে সবাই আমাকে বলতো, ক্ষমতা দেখাইতেছি, স্বৈরাচারী এবং খুনী আমি! আজকে একটু পর দেখবি- সবাই এসে বলবে, থ্যাংক ইউ রাজা সাহেব! শোন মাঝে মাঝে লাই দিয়া মাথায় তুলতে হয়! যাতে শক্ত করে আছাড় দিলে বেশি ব্যথা পায় এবং আপদ শেষ হয়ে যায় একেবারে।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ দুপুর ২:৪০
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার একটা ব্যক্তিগত সমুদ্র থাকলে ভালো হতো

লিখেছেন সামিয়া, ২১ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ৮:২৭


আমি এসে বসছি
নরম বালুর উপর,
সামনে বিশাল সমুদ্র,
ঢেউগুলা আমারে কিছু একটা বলতে চাইতেছে,
কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না।

আমার মাথার উপর বিশাল আকাশ,
আকাশের নিচে শুধু পানি আর পানি,
আমি একলা,
আমার সামনে সমুদ্রের একলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। নভোচারীদের বহনকারী ক্যাপসুল

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২১ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ৮:৫০





ভারতীয় বংশোদ্ভূত মহাকাশচারী সুনীতা উইলিয়ামসকে নিয়ে নাসা ও স্পেসএক্স-এর স্পেসক্রাফ্ট ড্রাগন ক্যাপসুল পৃথিবীতে পৌঁছে গেছে। ক্যাপসুলের রং পুরোপুরি বদলে গেছে-এটি একেবারে কালো হয়ে গেছে।

এই ক্যাপসুলের অবস্থা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় নাগরিক পার্টি’ (এনসিপি)

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২১ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ৯:৪৭



জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে আত্মপ্রকাশ করতে যাওয়া নতুন রাজনৈতিক দলের নাম ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি’ (এনসিপি)। রাজনীতি করা ভালো। বোকা, সহজ সরল লোকদের রাজনীতি করা ঠিক না।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্তের এই মাতাল সমীরণে... সাজাই এ ঘর ফুলে ফুলে ...

লিখেছেন শায়মা, ২১ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ৯:৫৮


ওরে গৃহবাসী খোল দ্বার খোল লাগলো যে দোল
স্থলে জলে বনতলে লাগল যে দোল দ্বার খোল, দ্বার খোল....
বসন্তের আগমনে প্রকৃতিতে লাগে দোল। সাথে সাথে দোলা লাগে বুঝি আমাদের অন্তরেও।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের চ্যাপ্টার ক্লোজড ! নতুন করে ওপেন করার সুযোগ নেই......

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২১ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ১০:৪৫


..বলে মনে করেন জামায়াতের আমীর শফিকুর রহমান। বাংলাদেশের রাজনীতি আবার উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। প্রধান উপদেষ্টা সাম্প্রতিক সময়ে একটি স্বনামধন্য থিংক ট্যাংক ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের প্রধানের সাথে বৈঠকের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×