--- হায়রে হরতাল ---
বাড়িতে ফিরতেই রিফাতের কাছে দৌড়ে আসলো তার মেয়ে মিমি। রিফাত সাথে সাথে কোলে তুলে নিল তার মেয়েটাকে। মেয়েটা দেখতে তার মায়ের মতই হয়েছে। মিমির মা কে প্রথম দেখেই প্রেমে পরেছিল রিফাত। মিমি বলল
-আব্বু। পাশের বাসার রুমকির খেলনা গাড়িটা খুব সুন্দর।
-মামনি। তোমার পছন্দ হয়েছে?
-হ্যা।
-তাহলে তোমাকেও কিনে দিবো।
-না। আব্বু। ওর টা পচা। ওটা আমার লাগবে না।
-আম্মু। এ মাসে টাকা পেলেই তোমার সব কিছু কিনে দিবো।
.
রিফাত একজন ছোটখাট ব্যাবসায়ি।
তার টেইলার্স এর ব্যাবসা। জামা কাপড় তৈরি করে বড় দোকানে সরবরাহ করে। আর এতেই রিফাতের সংসার চলে।
.
স্ত্রি লামিয়া আর মেয়ে মিমি কে নিয়েই রিফাতের ছোট সংসার। মেয়েটা তার মায়ের মত হয়েছে। কোনকিছু সহজে দাবি করে না।
জানে তার বাবার কাছে টাকা নেই।তাই কিছু চাচ্ছে না। শত কষ্ট হলেও রিফাত মেয়ের মুখে সবসময় হাসি রাখার চেষ্টা করে। অনেকদিন হরতালের কারনে দোকানে কাপড় সরবরাহ করতে পারছে না।তাই রিফাতের কাছে টাকা নেই। এবারে অনেক কাপড় জমা হয়ে আছে। অনেকদিন হরতালের কারনে কাপড়গুলো পৌছাতে পারে নি।
.
কিন্তু এভাবে আর কত চলবে?এবারে তো কাপড়গুলো দিতে হবে। রিফাত দোকানে গিয়ে সব কাপড়গুলো প্যাকেট করে রাখে। রিফাত কাপড়গুলো প্যাকেট করে সন্ধায় বাড়ি ফিরছে। রাস্তায় মোটামুটি ভালই গাড়ি চলছে। সাভাবিক।হরতালের তেমন সাড়াশব্দ নেই। বাড়ি ফিরে দেখে মেয়েটি ঘুমিয়ে পরেছে।
মেয়েটিকে ঘুমান দেখে রিফাতের আরো মায়া বেড়ে গেল।অনেকদিন মেয়েটির জন্য ভাল কিছু কিনে দিতে পারি না। মেয়েটি অনেকদিন ধরে একটা খেলনার কথা বলছে। অল্প দামের খেলনা। তবুও কিনে দিতে পারছে না।
কিভাবে কিনে দিবে হাতে তো টাকা নেই।
রিফাতের নিজের কাছেই খারাপ লাগে।
.
রিফাত লামিয়ার কাছে জিজ্ঞেস করে
-মেয়েটি খেয়ে ঘুমিয়েছে?
-না। এই খাবার আর কতদিন খাবে?
-কি করবো বল? টাকা না থাকার কারনে মেয়েটির জন্য ভাল খাবার ও কিনতে পারছি না।
-কাপড়গুলো না দিলে তো টাকা হবে না।
-আজকে সবকিছু তৈরি করে রেখেছি।কালকে মাল ডেলিভারি দিলেই টাকা পাবো।আর টাকা পেলেই সবকিছুই হবে।
-কালকে হরতাল নেই?
-হরতাল আছে।কিন্তু সবকিছু তো স্বাভাবিক ভাবেই চলছে।রাস্তায় তো গাড়ি চলছে। মানুষ ও আছে।
-কালকে তাহলে কাপড়গুলো ডেকিভারি দেবে?
-হ্যা। কালকেই দিবো। তুমি খেয়েছ?
-তুমি বাসায় না ফিরলে আমি কখনো খাই?
-বাহ। এখন ও এত প্রেম?
-কেন বয়স কি ফুরিয়ে গেছে? সবে তো এক সন্তানের মা হয়েছি। এখন ও তো বুড়ি হই নি।
-তা তো ঠিক। খেয়ে শুয়ে পরো।
-আচ্ছা আমি ভাত দিচ্ছি। তুমি হাত মুখ ধুয়ে আসো।
-তুমি ভাত দাও।আজকে আমি তোমাকে খাইয়ে দিবো।
.
বিয়ের অনেকদিন হলেও রিফাত আর লামিয়ার মাঝে ভালবাসা একটুও কমে নি। ভালবাসা বিয়ের আগের মতই আছে।
.
পরেরদিন দোকানে গিয়ে কাপড়গুলো গাড়িতে তুলে রিফাত রওনা দিলো। গাড়ির পিছনে কাপড়গুলো রাখা আছে।আর রিফাত সামনে বসে আছে। রাস্তায় তেমন লোকজন নেই। গাড়িতে বসে রিফাত ভাবছে
-আজ টাকা পেলে লামিয়ার জন্য একটা শাড়ি কিনবো। আর মেয়েটার জন্য অনেক কিছু কিনবো।
.
ভাবতে ভাবতে ভাবতে পিছনে কিছুর শব্দে বাস্তবে ফিরলো।পিছনে তাকিয়ে দেখে বোমা ফাটছে। তারাতারি গাড়ি ব্রেক করে থামানোর চেষ্টা করলো।থামাতে থামাতে একটা বোমা এসে গাড়িতে পরলো।
.
আর বোমা ফোটার সাথে সাথেই গাড়িতে আগুন লেগে গেল। সব কাপড় পুরতে থাকলো। আগুন এসে ঝলসে দিল রিফাতের শরির। রিফাতের সব সপ্ন আগুনে পুড়ে যাচ্ছে।ওদিকে আগুনে ঝলসে যাওয়া অবস্থায় রিফাতকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হল। আগুনে ঝলসে রিফাতের অবস্থা খুব খারাপ।রিফাত হাসপাতালের বেডে শুয়ে ছটফট করছে।
.
একটু পরে খবর পেয়ে ছুটে রিফাতের স্ত্রি। রিফাত কে দেখেই তার স্ত্রি আতকে উঠলো। তাকে দেখে তার মেয়েও কান্না শুরু করলো। মেয়েটা কেদে কেদে বলছে
-আব্বু।আমার খেলনা লাগবে না। শুধু আমাকে একবার কোলে নিয়ে আদর করো। আব্বু উঠো।
কিন্তু তার বাবার ওঠার ক্ষমতা নেই। রিফাত উঠতে পারছে না। অনেক কষ্টে রিফাতের চিকিৎসা করলো তার পরিবার।
.
কি অপরাধ ছিল রিফাতের? যার কারনে হারাতে হল তার সর্বস্ব। কি কারনে তাকে এত কষ্ট সহ্য করতে হল? রিফাত তো সরকারি দলেও না।আবার বিরোধি দলেও না।কি কারনে রিফাতের এমন হল?
সে তো দেশের একজন সাধারণ জনগন।
নাকি এই দেশের একজন জনগন হওয়া তার ভুল?তাহলে কেন তাকে এই হরতালের মুখে পরতে হবে?
.
প্রতিদিন এইরকম অনেক রিফাতের অনেক ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে এই হরতালের কারনে।
কিন্তু আর কত? আর কত এই ক্ষমতার খেলায় মাতা রাজনিতির কবলে পরে মরতে হবে সাধারন জনগনের।
ক্ষমতার খেলা হচ্ছে রাজনৈতিক দলের মধ্যে মাঝখান থেকে মরতে হচ্ছে সাধারন জনগনের।
.
হায়রে হরতাল।হরতাল অবরোধে কি দেশের ক্ষতি হচ্ছে না? কতদিন এই হরতাল অবরোধের কারনে ক্ষতি হবে এই দেশের?
.
আমি কোন দলের হয়ে বলছি না। সাধারন জনগন হিসেবে বলছি। এই হরতালের কারনে আর কত ক্ষতির শিকার হব আমরা? প্রশ্নটা সবার কাছে থেকে গেল।
.
--- Rabby Mondol

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



