somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডিএনএ'র ডার্ক লেডি: রোজালিন ফ্রাঙ্কলিনের জন্মশতবার্ষিকী স্মরণে !

২৫ শে জুলাই, ২০২০ রাত ৮:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জীবকোষের ক্রোমোসোমে ডিএনএ এর পুরো নাম ডিঅক্সিরাইবো নিউক্লিক এসিড। ডিঅক্সিরাইবোজ সুগারের সাথে যুক্ত থাকে ফসফেট গ্রুপ। ডিএনএ হলো নিউক্লিওটাইডের পলিমার। সেই সময়ের বিজ্ঞানীরা ডিএনএ এর রাসায়নিক উপাদান সম্পর্কে জানলেও আণবিক গঠন রহস্য উদঘাটন করতে পারছিলেন না। বিজ্ঞানীরা জানতেন ডিএনএ বংশগতির ধারক ও বাহক কিন্তু ঠিক কিভাবে ডিএনএ বংশগতিকে ধারণ করে তা ছিল অজানা। ফলে ডিএনএ নিয়ে গবেষণার আগ্রহ ছিল বিজ্ঞানীদের। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সবেমাত্রা শেষ হয়েছে, তবে তার ক্ষত শুকায় নি। বিভিন্ন দেশ নিজেদের সাজাতে চাইছে নতুন রূপে। চলছে প্রতিযোগিতা, রেষারেষি। তবে তার বেশ প্রভাব দেখা গিয়েছে বিজ্ঞান গবেষণায়। ডিএনএ আণবিক গঠনের রহস্য উদঘাটনে চলছে জোর গবেষণা। আটলান্টিকের একপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গবেষণা করছেন লিনাস পলিং। অন্যদিকে কেমব্রিজের ক্যাভেন্ডিজ ল্যাবরেটরিতে জেমস ওয়াটসন ও ফ্রান্সিস ক্রিক এবং লন্ডনের কিংস কলেজে রোজালিন ফ্রাঙ্কলিন ও মরিস উইলকিন্স। রোজানি ফ্রাঙ্কলিনদের নেতৃত্বে দিচ্ছেন সবচেয়ে কম বয়সে নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী স্যার লরেন্স ব্র্যাগ। রোজালিন ফ্রাঙ্কলিন এই গবেষণায় ‍তিন বছরের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছিলেন। ২৫ জুলাই ১৯২০ যুক্তরাজ্যের লন্ডনের নটিং হিলে জন্মগ্রহণ করা এই বিজ্ঞানী ছিলেন মূলত রসায়নবিদ। তবে কাজের ক্ষেত্র ছিল এক্সরে-ক্রিস্ট্রালোগ্রাফি। তিনি এক্স-রে ক্রিস্ট্রালোগ্র্যাফিতে অত্যন্ত দক্ষ ছিলেন। কিংস কলেজের ল্যাবরেটরিতে চুক্তিভিত্তিক কাজের অংশ হিসেবে তিনি এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে ডিএনএ’র আনবিক গঠন জানার চেষ্টা করছিলেন। ডিএনএ ফাইবারকে ক্রিস্টালে রূপ দিয়ে তিনি অনেক ছবি তুলেছিলেন। যদিও বর্তমান সময়ের মতো আধুনিক প্রযুক্তি না থাকায় ছবিগুলো অস্পষ্ট ছিল। আর ডিএনএর ছবি উঠানো ছিল খুব কষ্টসাধ্য কাজ। এরপরেও সফল হয়েছিলেন রোজালিন ফ্রাঙ্কলিন, চিহ্নিত করেছিলেন “প্লেট ফিফটি ওয়ান” হিসেবে। তবে তার গবেষণা যাত্রা ছিল বেশ মন্থর। কারণ অর্ন্তদ্বন্দ ছিল খোদ নিজের কিংস কলেজের ল্যাবরেটরিতে। একদিকে ক্যাভেন্ডিসের ল্যাবরেটরিতে কাজ করে যাচ্ছেন ওয়াটসন ও ক্রিক। অন্যিদিকে কিংস কলেজের গবেষণাগারে দুই ভিন্ন মানসিতকার মানুষ। একদিকে উইলকিন্স কাল্পনিক মডেল বানিয়ে তথ্য উপাত্ত মেলানোর চেষ্টা করেন। অন্যদিকে ফ্রাঙ্কলিন ছিলেন অনিসন্ধিতসু। ডিএনএর আসল চেহারা উন্মোচনের কাজটি করেছিলেন রোজালিন ফ্রাঙ্কলিন। এ বিষয়ে একটি সেমিনার করেন রোজালিণ, যেখানে ওয়াটসন উপস্থিত ছিলেন। সেমিনার থেকে ফিরে ওয়াটসন সহকর্মী ক্রিককে জানান বিস্তারিত। কিছুদিনের মধ্যে তারা একটি মডেল বানিয়ে কিংস কলেজের গবেষণাগারে কর্মরত তাদের বন্ধু উইলকিন্সকে জানান। খবরটা রোজালিনও জেনে যান। ফলে তিনি উইলকিন্সনে নিয়ে সোজা ক্যাভেন্ডিজ ল্যাবরেটরিতে হাজির। ক্রিকের বানানো মডেল দেখে বিরক্ত হন, গুরুতর ভুল ধরিয়ে দেন। লরেন্স ব্র্যাগ ঘোষণা দিলেন এই গবেষণা কিংস কলেজ চালাবে। ফলে ওয়াটসন ক্রিকের সাথে ঝামেলা মিটলেও রয়ে গেলো ঘরের শত্রু। গোপনে চালাতে লাগলেন গবেষণা। অনে স্পষ্ট ছবি তুললেন যা ইতিহাসে ফটো-৫১ নামে পরিচিত। এই ছবিটি উইলক্নিস থেকে গোপন রাখতে চেয়েছিলেন। তবে তার ছাত্র গসলিংয়ের হাত থেকে চলে যায় উইলকিন্সের হাতে, উইলকিকিন্সের হাত ধরে ওয়াটসনের টেবিলে। আর এই ছবি পেয়ে যেন ওয়াটসন-ক্রিক আকাশের চাঁদ হাতে পেলেন। কোনো কোনো তথ্য বলে কিংস কলেজে গবেষণার চুক্তি শেষ হয়োয় রোজালিন গবেষণাগার ছেড়ে আসেন এবং আসার আগে উইলকিন্সকে ছবিগুলো দিয়ে আসেন। তবে এই তথ্যটির যুক্তিসংগত সত্যতা পাওয়া যায় নি।
ওয়াটসনের কাছে তোর নিজের ছবি পৌঁছে গেলেও রোজালিন বসে নাই। ১৯৫৩ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ডিএনএ হেলিক্স যে দুটো পুরোপুরি বুঝে ফেলেছেন রোজালিন ফ্রাঙ্কলিন। বেসের জোড় মেলালেই গবেষণা চূড়ান্ত। মাস শেষ হতেই তা সম্পন্ন হবে। কিন্তু ২৮ ফেব্রুয়ারি সব হিসাব উল্টে গেলো। ওয়াটসন-ক্রিক ঘোষণা করলেন, তারা ডিএনএ গঠনের পূর্ণাঙ্গ মডেল তৈরি করেছেন। বিজ্ঞানে একটি রীতি আছে “পাবলিশ অর পেরিশ”। নেচার পত্রিকায়য় নিজেদের গবেষণা ফল পাঠালেন ওয়াটসন ও ক্রিক, ২৫ এপ্রিল প্রকাশিত হলো তাদের ডিএনএ মডেলের আবিষ্কারের তথ্য। যদিও রোজালিনের সেমিনার শুনে তাদের মডেল আঁকা শুরু, ফটো-৫১ শুধরিয়ে দেয় তাদের মডেলের ত্রুটি। যদিও প্রকাশিত প্রবন্ধে উইলকিন্সের নাম ছিল না, তবে ১৯৬২ সালে ওয়াটসন ও ক্রিকের সাথে তিনি নোবলে পুরস্কার লাভ করেনআর রোজালিন? চার বছর আগে ১৯৫৮ সালে মাত্র ৩৮ বছর বয়সে জরায়ু ক্যান্সারে মারা যান তিনি। যদি বেঁচে থাকতেন?
ওয়াটসন লিখেছেন:
‘নোবেল পুরস্কারের অলিখিত নিয়ম হলো এক বিষয়ে সর্বোচ্চ তিনজনকে বিজয়ী হিসেবে বিবেচনা করা। ফ্রাঙ্কলিন বেঁচে থাকলে তাকে না উইলকিন্সকে নোবেল দেয়া হবে তা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হতোই। নোবেল কমিটি হয়তো দুজনকেই যৌথভাবে সেবার রসায়নে নোবেল দিতে পারতেন।’
তবে প্রশ্ন থেকেই যায়? হয়তোবা বিতর্ক সৃষ্টি হতো । এমনকি মরণোত্তর নোবালের প্রচলন না থাকায় হয়তো চার বছর আগে দুনিয়া ছেড়ে চলে যাওয়া রোজালিন ফ্রাঙ্কলিন নোবেল পুরষ্কার পেতেন না। কিন্তু নোবেল ভাষণে কি ওয়াটসন-ক্রিক তাদের গবেষণার পিছনের আসল গল্প বলেছেন? কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেছেন রোজলিন ফ্রাঙ্কলিনের কাছে?
হয়তো এ কারণেই রোজালিনের জীবনীকার ব্রেন্ডা ম্যাডক্স জীবনীগ্রন্থটির নাম রেখেছেন ‘দি ডার্ক লেডি অব ডিএনএ’।
এভাবেই হয়তো সময়ের সময়ে হারিয়ে যাচ্ছে রোজালিন ফ্রাঙ্কলিক, ডিএনএ নাম শুনলেই চোখের সামনে ভাসে ওয়াটসন-ক্রিকের কথা, অন্যদিকে রোজালিন ফ্রাঙ্কলিন সম্পর্কে অনেকেই জানে না। এভাবেই অসংখ্য আবিষ্কারের পিছনের গল্প জানি না আমরা। জানি বিজ্ঞানে নারীদের অবদানের কথা। ভুলতে বসেছি হাইপেশিয়া, মেরি কুরি, লিস মিটনার, বারবারা ম্যাকক্লিনটক, ডরথি হজকিন, এস্থার লেডেরবার্গের মত বিখ্যাত বিজ্ঞানীদের। যদিও এসকল বিজ্ঞান সারথীদের গবেষণা ও অর্জন বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় নারীদের অংশগ্রহণ ও অগ্রযাত্রার বড় অনুপ্রেরণা ও প্রাণশক্তি।

সূত্র: বিবিসি, ফিজিক্স টুডে, নিউসায়েনটিস্ট, জাহাঙ্গীর সুরের আর্টিকেল

সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুলাই, ২০২০ রাত ৮:৪৪
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×