somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিড়ালের দৃষ্টি ক্ষমতা কী মানুষের চেয়ে বেশি?

২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ১০:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রশ্নটি অদ্ভুত মনে হলেও এই প্রশ্ন আমাদের অনেকের মনে। বিড়াল পছন্দ করে না এমন মানুষের সংখ্যা নিতান্তই কম। বাসাবাড়িতে বিড়াল পোষা অনেকের কাছে শখের বিষয়। রাতের বেলা বিড়ালের আনাগোনা বা কক্ষের কোনো এক কোনায় রেখে আসা বিড়াল সকালবেলা বিছানায় পাওয়া যায়। একইসাথে ঘুটঘুটে অন্ধাকরে বাইরে বের হলে বিড়ালের মুখোমুখি হওয়ার অভিজ্ঞতা আমাদের অনেকের আছে। অনেক সময় রাতের বেলা বিড়ালের সাথে চোখাচোখি আঁতকে উঠেছে এমন খবর মেলে। মূলত কালো অন্ধকারের মধ্যে বিড়ালের জ্বলজ্বল চোখ অনেক সময় আতংকের কারণ হয়। এককথায় রাতের বেলা বিড়াল সক্রিয় থাকে। সন্ধ্যার পর থেকে ঘনিয়ে আসা অন্ধকারে মানুষ দেখতে না পেলেও বিড়াল ঠিকই পথ চিনে চলতে পারে। এর কারণ কী?
মূলত মানুষ এবং বিড়ালের দৃষ্টিশক্তির পার্থক্যের দরুণ এমনটি ঘটে। রাতে কোনো প্রাণী দেখতে পাবে কি পাবে না তা নির্ভর করে তার দৃষ্টিশক্তির উপর। আমরা জানি আলো এক প্রকার তড়িৎ চুম্বকীয় তরঙ্গ। এর একটি নির্দিষ্ট সীমার রয়েছে। বিভিন্ন দৈর্ঘ্যের তড়িৎ চুম্বকীয় তরঙ্গ বিভিন্ন নামে পরিচিত। যে তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের সীমার মধ্যে আমাদের চোখ দেখতে পায় তা আমাদের জন্য দৃশ্যমান আলো। মানব চোখ ৩৮০ থেকে ৭০০ ন্যানোমিটার দৈর্ঘ্য সীমার তরঙ্গ সনাক্ত করতে পারে। তাই বলে কী এই সীমার কম বা বেশি দৈর্ঘ্যের তরঙ্গ দৃশ্যমান নয়?
যদি কোনো চোখের গঠন এমনটি হয় তাহলে অবশ্যই দেখতে পারবে। আমাদের চোখের গঠন এমনি যে আমাদের গাঠনিক উপাদান ৩৮০-৭০০ ন্যানোমিটার সীমার তরঙ্গ অনুভব ও প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে। এই বিষয়ে ইউনিভার্সিটি অব ফ্লোরিডা কলেজ অব ভেটেরিনারি মেডিসিনের গবেষক ক্যারিন প্লামার বলেন, “বিড়াল মানুষের তুলনায় অনেক কম আলোতে কোনো বস্তুকে দেখতে পায়। বিড়ালের চোখের বিশেষ গাঠনিক বৈশিষ্ট্যের কারণে তাদের এমন সক্ষমতা রয়েছে। মানুষের তুলনায় বিড়ালের চোখে বেশি সংখ্যকে রড ফটোরিসিপটর থাকে। এর ফলে এরা খুব নিম্ন আলোর উপস্থিতিতে কোনো বস্তুর প্রতিচ্ছবি তৈরী করতে পারে।”
বিবর্তনের ধারায় বিড়ালের চোখের গঠন এমন হয়েছে। বিশেষ করে রাতের বেলায় খাবার সংগ্রহের প্রয়োজনে পরিবেশের পরিবর্তনের ধারায় তার চোখের গাঠনিক উপাদান পরিবর্তিত হয়েছে। বিড়াল অবলিগেট মাংসাশী (obligate carnivores) প্রাণী। এর অর্থ হলো বিড়ালকে পুরোপুরি সুস্থ থাকতে হলে অবশ্য মাংস ভক্ষণ করতে হবে। নিজ দেহ থেকে কিছু কিছু পুষ্টি উপাদান তৈরী হয় না। বাইরের কোনো উৎস থেকে তাদের দেহে এসব পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করতে হয়। বিড়ালের উপযোগী বা অধিক পছন্দের শিকার অন্ধকারে বা মৃদু আলোতে বিচরণ করে। ফলে এসকল প্রাণী শিকার করার জন্য বিড়ালের চোখের দৃষ্টিশক্তি এমন হওয়া প্রয়োজন যেন সে রাতে বা মৃদু আলোতে দেখতে পায়। বিড়ালের রাতে দেখতে পাওয়ার বিষয়টি নিশাচর প্রাণীদের মত নয়। বিড়ালকে নিশাচর প্রাণী বলা অমূলক। মূলত মৃদু আলো বা স্বল্প আলোতে বিশেষ করে গোধূলী বেলার আলোতে বিড়ালের দৃষ্টিশক্তি প্রকাশ করে। এর মাধ্যমে সকাল-সন্ধ্যার মৃদু আলোয় বিড়াল দেখতে পায়, যে আলোয় মানুষ দেখতে পায় না কিন্তু বিড়াল দেখতে পায় এবং শিকার করতে পারে। শিকারের ক্ষেত্রে তার শ্রবণ শক্তি ও ঘ্রাণ শক্তির সাথে দৃষ্টিশক্তির সমন্বয় ঘটে। তাহলে কী বিড়ালের দৃষ্টিশক্তি মানুষের চেয়ে প্রখর?
বিষয়টি আসলে এমন নয়। মৃদু বা স্বল্প আলোয় বিড়ালের দৃষ্টি শক্তি মানুষের তুলনায় বেশি হলেও দিনের বেলায় মানুষের দৃষ্টিশক্তি বিড়ালের চেয়ে বেশি। গবেষণায় দেখা গেছে দিনের আলোয় মানুষের দৃষ্টি ক্ষমতা বিড়ালের তুলনায় সাত গুণ বেশি। এছাড়াও বিড়ালের বর্ণ সনাক্তকরণ ক্ষমতা মানুষের চেয়ে ভিন্ন। এই বিষয়ে বিজ্ঞানী ক্যারিন প্লামার বলেন, “মানুষের তুলনায় বিড়ালের চোখে কোণ ফটোরিসেপ্টরের পরিমাণ কম, ফলে মানুষ যে পদ্ধতিতে বিভিন্ন রঙ বুঝতে পারে, বিড়ালের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি ভিন্ন।”
দিনের বেলার দর্শনের জন্য কোণ কোষ দায়ী। মানুষের চোখে তিন প্রকার কোণ কোষ থাকে যার ফলে মানুষ সহজে লাল, সবুজ ও নীল রঙ অনুধাবণ করে। পাশাপাশি এই তিনটি মৌলিক রঙ মিশ্রিত বিভিন্ন যৌগিক রঙ আমরা অনুধাবন করতে পারি। অন্যদিকে বিড়ালের চোখে দুই প্রকার কোণ কোষ থাকে। ফলে বিড়ালের চোখ মানুষের চোখে দৃশ্যমান দুইটি মৌলিক রঙ সবুজ ও লালকে ধূসর বর্ণ হিসেবে দেখে। একদল বিজ্ঞানী বিড়ালকে বর্ণান্ধ হিসেবে বিবেচনা করেন। তবে অন্য এক দল বিজ্ঞানী এই মতবাদকে সমর্থন করেন না। তাদের মতে বিড়ালের চোখের গাঠনিক দিক থেকে বিড়াল বর্ণান্ধ নয়। যদিও এই বিতর্ক আজ অবধি চলমান। তবে সার্বিক বিবেচনায় বলা হয়ে থাকে যে, বিড়াল নীল ও ধূসর বর্ণ দেখতে পায়। পাশাপাশি সামান্য পরিমাণ হলুদ ও সবুজ রঙ দেখতে পায়। যদিও এই বিষয়ে বিজ্ঞানী মহলে বিতর্ক রয়েছে। এককথায় মৃদু বা স্বল্প আলোয় বিড়াল দেখতে পায় ,শিকার ধরতে পারে। তবে দৃষ্টি শক্তি বিবেচনায় মানুষের মতো বিড়ালের চোখ শক্তিশালী নয়।

সূত্রঃ লাইভ সায়েন্স ডট কম



সর্বশেষ এডিট : ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ১০:৩৩
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×