ভালবাসা আসলেই কি তা তখন বোঝার বয়স ও হয়নি। কিন্তু এরই মাঝে যদি মনে ভালবাসা সৃষ্টি হয় তাহলে একে কি রকম ভালবাসা বলা যায়। না ! হাসি নয়। সত্যিই এক বেধনা বিভুর ভালবাসা। জানি আপনাদের মনে প্রশ্নের সৃষ্টি হচ্ছে। কিন্তু বিশ্বাস করুন সেই অব্যাক্ত ভালবাসা আজও আমাকে কাদায়। মনে হয় কেন আমি তাকে .. .. .. ।
ঘটনার সূত্রপাত ঃ
আমি তখন ৩য় শ্রেণীর ছাত্র। ঢাকায় বড় হওয়া এক দুরন্তপনা মন নিয়ে ভর্তি হই গ্রামের প্রতিষ্ঠিত এক স্কুলে। ছাত্র হিসেবে ভাল ছিলাম। তাই কাসের অধিকাংশের নজর ছিল আমার দিকে। বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে সহপাঠী সুজন, সেজুতি, রানু, নাহিদ, তনয়ার সাথে (ছদ্মনাম)। আমার নাম তনয়। আমরা সকলেই খুব ভাল স্টুডেন্ট ছিলাম। এর মধ্যে আমার এবং সুজন ও সেজুতির মধ্যে সবসময় ১ম স্থানের জন্য তুমুল লড়্ইা হত। এ স্থানটি আমার এবং সুজনের দখলেই প্রায় থাকত। প্রচন্ড দুষ্টুমি এবং মায়া মমতা ও ভালবাসার মধ্য দিয়ে ৩য় এবং ৪র্থ শ্রেণী উত্তীর্ণ হই। ৫ম শ্রেণীতে সেজুতি আমার প্রেমে পড়ে এবং সে আমাকে পাগলের মত পছন্দ করে। কিন্তু আমি তাকে বড়াবড়ই অবহেলা করি। কারন আমার ভাল লাগত অন্য জনকে। সেজুতির প্রেম দিন দিন নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যায়। এ জন্য আমি বেশ কয়েকবার তার গায়ে ও হাত তুলেছি। কিন্তু তাতে তার প্রেমের গভিরতা আরও বেড়ে যায়। অবশেষে আমি তার অভিবাকের কাছে বিচার দেই। সেজুতির বাবা ছিল আমাদের উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একজন সনাম ধন্য ইংরেজীর শিক। মান মর্যাদার ভয়ে তার বাসা থেকে তাকে প্রচন্ড রকম চাপ দেয়া হয়। কিন্তু ভালবাসার তীব্রতা বিন্দুমাত্র কমে নি। এরই মাঝে বৃত্তি পরীা শেষ করি। অত্যন্ত কৃতিত্বের সাথে ৫ম শ্রেণী অতিক্রম করে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হই। অন্য দিকে আমি আমার অব্যাক্ত ভালবাসার প্রতি দিন দিন অনেক দুর্বল হয়ে পড়ছি। মনোযোগ হারিয়ে ফেলছি পড়ালেখার প্রতি। সে ছিল খুব লাজুক। সে আমকে খুব বেশি ভালবাসত কিন্তু কখনও বলার সাহস পেতনা। এরই মাঝে অনেক ঘটনা ঘটে যায়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সকল বন্ধু এবং অন্যান্য স্কুলের ভাল স্টুডেন্টদের নিয়ে আমাদের বন্ধুত্বের পরিধি অনেক বড় হয়। আমরা ইংরেজী প্রাইভেট পড়ার সারের সাথে চুক্তি করি। আমার আব্বা ছিলেন স্কুলে একজন সম্মানি ব্যাক্তি। আমাদের বাড়ি ও স্কুলের সিমানা ছিল এক যা একটি প্রশস্থ সড়ক দ্বারা বিভাজিত হয়। সে হিসেবে সকল শিকগন আমার খুব পরিচিত ছিল। তারা আমাকে খুব বেশি পছন্দ এবং শাসন করতেন। যাক অবশেষে সবাই মিলে প্রাইভেট পড়তে যাই। আমরা ছিলাম স্কুলে সবচেয়ে ভাল স্টুডেন্ট এবং দুষ্টুমিতে ও সেড়া। তারই প্রভাব পড়ে স্যারের বাসায়। স্যারের মেয়ে ও ছিল আমাদের কাস মেট এবং ভাল বন্ধু। স্যারের বাসায় গিয়ে সবাই মিলে লাফা লাফি, গান গাওয়া, স্যারের ডাইনিং রুমে গিয়ে খাওয়া এবং আরো অনেক. .। এভাবে চলতে চলতে বয়সের সিমানা অনেক দূড় পেরিয়ে যায়। মনের মাঝে ভালবাসা ও তীব্র হয়ে ওঠে। সে আমাকে, আমি তাকে। একদিন কেউ অনুপস্থিত থাকলে সেদিন আর কারও পড়া হয়নি। দেখার জন্য ছুটে যেতাম তার বাড়ির পাশে। আমরা সকলেই জুনিয়র বৃত্তির জন্য নির্বাচিত হই। স্যারের বাসায় চলতে থাকে পুরোদমে প্রস্তুতি। কিন্তু জানতাম না এ প্রস্তুতির মাঝে আমার জীবনের সবচেয়ে বেধনা অন্তর্নিহিত রয়েছে।
বৃহস্পতিবার। বিকেলে প্রাইভেট। তাই দুপুরের খাবারের পরপরই আমরা সবাই স্যারের বাসায় চলে যেতাম। এদিকে প্রাইভেটের সময় হয়ে আসছে। কিন্তু আজ আর সে আসছে না। আমার মন খুব খারাপ। বন্ধুরা সবাই আমাকে নিয়ে নানারকম মজা করতে লাগল। এরই মাঝে হঠাৎ দেখি সে আসছে। আনন্দে আতœহারা হয়ে গেলাম। আটটি বছরের সঞ্চিত ভালবাসা আজ তাকে উপহার দেয়ার পুরো প্রস্তুতি নিয়ে আসছি। সে রুমে প্রবেশ করল এবং কারও সাথে কোন কথা না বলে চুপচাপ বসে আছে। আমি বন্ধুদের সাথে বাজি ধরি তাকে হাসাতে পারলে সবাইকে মিষ্টি খাওয়াবো। কিন্তু না সে হাঁসলো না। একটু পড় সে কেঁদে ওঠল। আমি হতবাক হয়ে গেলাম। তার কাছ থেকে বাড়বার কান্নার কারন জানতে চাইলাম। কিন্তু সে বললনা। সবাই তাকে অনুরোধ করলাম। অবশেষে সে বাড়িতে গ্লাস ভেঙ্গে ফেলার কারনে তার মা তাকে বকা দিয়েছে। কিন্তু এ কথা আমার বিশ্বাস হচ্ছে না। আবার মনে করলাম সে খুব আদরের মেয়ে মার সামান্য বকা মনে হয় সহ্য হয়নি। পড়া শেষ। সে চলে যাচ্ছে। বারবার আমার দিকে তাকাচ্ছে এবং কিছু একটা বলতে চাচ্ছে। আমার হাতে তাকে দেবার জন্য একটি চিঠি রয়েছে। কিন্তু তাকে দেয়ার সাহস পাচ্ছি না। অন্য দিন সে খুব দ্রুত হেটে বাড়ি চলে যায় কিন্তু আজ সে খুব আস্তে আস্তে হাটছে। আমি বাড়ি চলে আসছি। কিন্তু আমার কিছুই ভালো লাগছে না। তাই আবার তার সাথে কথা বলার জন্য জমির উপর দিয়ে দৌড়াতে লাগি এবং তার কাছে যাই। সে আমাকে বলে আমি জানতাম তুমি আসবে তাই তোমার অপোয় আছি। সে আমাকে বলে তনয় কিছু বল আমি জানতে চাই। সে আরও বলে তনয় কিছু বলা খুব দরকার। পড়ে আর . . . বলে সে চুপ করে রইল। আমি তার নিরবতা বুঝতে পারি নি। আমি চেয়েছিলাম সে আমাকে বলবে আমি তোমাকে ভালবাসি। তাই আমি আর তাকে কিছু বলতে পারি নি। অভিমান করে সে চলে গেল। সে যে গেল এমন ভাবে গেল আমার জীবনে আর ফিরে এলনা। সে আমার প্রান প্রিয় তনয়া। আজও আমি ভুলতে পারি নি তাকে। তার স্মৃতিগুলো নিয়ে আজও আমি কাদি। অপো করতাম সে কবে আসবে। আসলে সেদিন তার কান্নার কারন ছিল সে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টের একটি স্কুলে পড়ার জন্য এক বারে চলে যাচ্ছে। আজও আমি ভুলতে পারিনি তাকে। আমার ভালবাসা আমার কাছে অব্যাক্তই রয়ে গেল। ঈদে বাড়ি আসলে সে আমাকে দেখার জন্য খবর দিত। আমি ও ঢাকায় পড়ালেখা করি এবং ঈদে বাড়ি গেলে তাকে দেখতে যেতাম। দুজন শুধু দুজনার দিকে চেয়েই থাকতাম কিন্তু কখনও কেউ কিছু বলতে পাড়তাম না। কিছুদিন আগে তার বিয়ে হয়। তাই আমার ভালবাসা অব্যাক্তই রয়ে যায়।
. . . তনয়. . .

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



