পথের মধ্যে স্যান্ডেলটা ছিড়ে গেলো।চরম বিরক্তি নিয়ে নীলা অন্য পাটি স্যান্ডেলের দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকালো।একটা দীর্ঘশ্বাস নেমে এলো তার বুক চিরে। তারপর কি না কি ভেবে ছেড়া স্যান্ডেল জোড়া হাতে তুলল এবং পাশে থাকা ডাষ্টবিনে ছুড়ে ফেলে দিলো। নতুন একজোড়া না কিনলেই নয়।একেবারেই গেছে।
ভাগ্যিস বাসার কাছাকাছি ঘটনাটা ঘটল না হলে কেলেঙ্কারি হয়ে যেত নিশ্চিত।তবে অসময়ে স্যান্ডেল ছিড়লো বলে তার কপালে খানিক দুঃশ্চিন্তার রেখা দেখা দিলো। মাসের শেষ এখন বাড়তি টাকার খুব আকাল। খুকুর পরীক্ষার ফি দিতে হবে এক সপ্তাহ ধরে চাইছে।কিন্তু অফিস যেতে হলে স্যান্ডেল তো লাগবেই। হাতে মোটে আছে তিনশত টাকা।
একটু আগে বেশ জাকিয়ে এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেছে।প্রকৃতিতে এখন এই রোদ্দুর আর এই মেঘের খেলা চলছে।কি মাস এখন? নীলা মনে মনে ভাবলো, ভাদ্র মাস মনে হয় ,গতকাল মা কি যেন বলছিলো?গরমটা বেশি ছিলো বলে বলছিলো ভাদুরে গরম পড়েছে।
জোরে পায়ে হেঁটে যাবে বলে পা বাড়াতেই কে যেন ডাকলো।
-কেমন আছো নীলা?
গলাটার খুব পরিচিত না তবে কানে এসে বাজলো মনে হয়।ডাকার ভঙ্গীটা বেশ পরিচিত। নীলা ঘুরে দাড়ালোে এবং থমকে গেলো হঠাৎ করেই।
নিয়াজ দাড়িয়ে আছে দুটো বাচ্চা ছেলে সহ,সাথে একজন ভদ্র মহিলা।মনে হচ্ছে এটা তার বউ, নিয়াজ বলল,
-আমাকে চিনেছো তো নীলা?
কোন কোন পরিচিত মুখের সাথে দেখা হলে বিব্রত হতে হয়।নিয়াজ হচ্ছে সেরকমই এক মুখ।নীলার মনটা বিষাদে ছেয়ে গেলো। তবু আর কি করা, কেউ একজন ভালো মন্দ জিজ্ঞসা করলে কথা বলতে হয়।এটা স্বাভাবিক ভদ্রতা।সে ভালো হোক আর মন্দ হোক।
নীলা মাথা নিচু করে বলল ,
-ভালো আছি, আপনি ভালো আছেন?
-হ্যাঁ ভালো আছি, আগে তো আপনি করে বলতে না ,এখন আপনি করে বলছো যে,আমার সাথে লজ্জা। হা হা হা.... এখানে কোথায় থাকো? তোমার বাসা কি কাছেই নাকি?
নীলা বলবে কি বলবেনা ভাবতে ভাবতে মুখ ফসকে বলে ফেলল,
-হ্যাঁ কাছেই।
-এতোদিন পরে দেখা তোমার বাসায় ইনভাইট করবে না?
নীলা ইতস্তত বোধ করতে লাগলো। কি জন্য যে এই লোকটার সাথে তার দেখা হলো আল্লাহই জানে।কথার ফাঁদে ফেলে পাশ কাটানোর শেষ চেষ্টা স্বরুপ সে বলল,
-আপনার সাথে ইনি কে?
-এর নাম শীলা । হা হা হা .... কেমন মিল না, তোমার নামের সাথে? তোমার থেকে বয়সে তো ছোট হবে আবার সস্পর্কেও ,শীলা সালাম করো, সম্পর্কে বা বয়সে তোমার বড় যেহেতু ওকে তুমি বড় আপা বলতে পারো । নীলার এতোটাই বিরক্ত লাগছিলো যে কি আর বলবে।
এখান থেকে পালাতে পারলেই সে বাঁচে। নিয়াজকে সে বরাবরই ভয় পেয়ে এসেছে। এখনো পায়।সত্যি বলতে নিয়াজের পুরো পরিবারকে সে ভয় পায়। গুন্ডা মাস্তানের পরিবার। ভয়ের কারণও আছে। এখনো তার সেই ভয় কাটেনি।তার বুকের মধ্যে টিপ টিপ করতে লাগলো।
-তারপর কি খবর?
-এই আছি?
-এই আছি মানে কি? বর কি করে?
- বিয়ে? বিয়ে তো করিনি।
-নাকি হয়নি? একা থাকো, অন্য কোন কিছু করো নাকি?
নীলা অসহায় দৃষ্টিতে তাকায়। কথাটার ভিতর একটা সুক্ষ খোচা আছে। এই পথে লোক চলাচল কম। নিয়াজ হয়তো দিন দুপুরে তাকে কিছু করবে না। তাছাড়া মানুষ যত খারাপই হোক না কেন? নিজের বউ বাচ্চার কাছে নিজের ইমেজ খারাপ করবে না। নিয়াজ তো বুদ্ধিমান। সে নিশ্চয় সে রকম কোন খারাপ আচরণও করবে না। মন চাইছে এখান থেকে এক ছুটে সে পালায়।
-পেছনে কি দেখো?
-কিছু না।
এইবার নিয়াজের সাথে থাকা মেয়েটি বলে আপা আপনে কেমন আছেন?
বড় আপা আপনের কথা নিয়াজগো বাড়িত শুনতে শুনতে আমার কান ঝালাপালা।আপনের খুব প্রশংসা আমার শ্বশুর বাড়িত।
নীলা কি বলবে কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। ভুলে যাওয়া অতীত থেকে পালিয়ে বাঁচতে এই শহরে আসা । ভাগ্যচক্রে এখানেও সেই অতীত এসে হাজির।তার সাথে সবসময় এরকম কেন হয়?
মেয়েটি বলে চলে।আপনেরে ও এতো ভালোবাসে যে আপনের সংঙ্গে মিলাইয়া আমার নাম রাখছে। আচ্ছা আপা আপনে কেন চইলা আইলেন? মায়ে আর আব্বায় কিন্তু এহনো আপনের গুনগান গায়।আপনেরে কিন্তু হেরা বহুত খুঁজছে।
নীলা কিছু না বলে হাটা শুরু করলো। বিভসৎ অতীতের কাছাকাছি থাকার চেয়ে পালিয়ে যাওয়াই ভালো। নিয়াজ ভালো থাক তার বউ বাচ্চা নিয়ে। সে নিয়াজের বাড়ির বউয়ের অধিকার আর ফিরে পেতে চায় না। সে আর অত্যাচারিত হতে চায় না।
© রফিকুল ইসলাম ইসিয়াক
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জুলাই, ২০২০ সকাল ১০:৫১